ধারে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নজরুল ইসলাম নামে এক দিনমজুর। সুদি কারবারি শিপন হাওলাদারের কাছ থেকে টাকাগুলো ধার করেন। এই টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাঁর সঙ্গে নজরুলের পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিশুটির ফুফু জাহানারা বেগম বেড়াতে নিয়ে গিয়ে এমন কাণ্ড করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী শিশুর বাড়ি কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের মধ্য টিয়াখালী গ্রামে। চল্লিশোর্ধ্ব বয়সী সুদি কারবারি শিপন বালিয়াতলী ইউনিয়নের লেমুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর প্রতিবেশী জাহানারা বেগম। শিশুটিকে দুই দফা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করায় ভুক্তভোগী পরিবারে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অভিযুক্তদের দাবি, ধারের টাকা পরিশোধ না করতেই তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় ৪ মাস আগে দিনমজুর নজরুল ইসলাম তাঁর বোন জাহানারার মাধ্যমে সুদি কারবারি শিপনের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার করেন। সময়মতো টাকাগুলো পরিশোধ করতে পারেননি বলে দাবি জাহানারার। ধারদেনায় জর্জরিত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নজরুল ইসলাম। এরই মধ্যে পাওনাদার শিপনকে নিয়ে একটি পরিকল্পনার ফাঁদ পাতেন জাহানারা বেগম। সেই অনুযায়ী মাসখানেক আগে ভাই নজরুলের পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়েকে বেড়ানোর কথা বলে প্রথমে লেমুপাড়া নিজ বাড়িতে নিয়ে যান জাহানারা। এর পর কলাপাড়া শহরের একটি বাড়িতে নিয়ে যান মেয়েটিকে। সেখানে আটকে ভয়ভীতি দেখিয়ে একজন মৌলভি ডেকে শিপনের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে দেন। এর পর শিশুটি বাড়িতে গিয়ে বাবা-মায়ের কাছে ঘটনা খুলে বলে কান্না জুড়ে দেয়। সম্প্রতি পাওনাদার শিপন ও জাহানারা ওই শিশু শিক্ষার্থীকে দুই দফায় তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালান। তবে এলাকাবাসীর বাধায় তাদের চেষ্টা পণ্ড হয়ে যায়।
ভুক্তভোগী শিশুটি জানায়, তাকে ভয় দেখিয়ে বিয়েতে বাধ্য করা হয়েছে। এর পর দুইবার জোর করে তুলে নিতে চাইলে এলাকাবাসী বাধা দেন। সে সময় অন্য একটি বাড়িতে পালিয়েছিল সে।
শিশুটির মা খাদিজা বেগম বলেন, ‘ননদ জাহানারার মাধ্যমে সুদি কারবারি শিপনের কাছ থেকে এক বছরের জন্য ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছি আমরা। কিন্তু এমন ষড়যন্ত্র করবে বুঝতে পারিনি। বউ-বাচ্চা থাকা সত্ত্বেও শিপন আমার মেয়ের সর্বনাশ করতে এমন অপকর্ম করেছে।’
তবে বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন শিপন ও জাহানারা। তাদের দাবি, ধারের টাকা পরিশোধ করবে না বলেই যড়যন্ত্র করে তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে।
টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো.

মাসুম বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখি কী হয়েছে? তার পর বলতে পারব।’ শিশুটির প্রতিবেশী রুবেল মিয়া জানান, রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের দিন অটোরিকশায় করে ৩-৪ জন লোক নিয়ে এসে মেয়েটিকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। সে সময় তিনি জানতে চান, কেন শিশুটির সঙ্গে জোরজবরদস্তি করছেন– জবাবে শিপন দাবি করেন মেয়েটি তাঁর স্ত্রী। সে সময় মেয়েটিকে তুলে নিতে বাধা দেন তিনিসহ আশপাশের লোকজন। এর পরও মেয়েটিকে তুলে নেবে বলে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন শিপন। 
এটি মারাত্মক অপরাধ। বাল্যবিয়ে নিয়ন্ত্রণ আইনে অভিযুক্তের এক মাসের সাজা হতে পারে। এ ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিচার কাজ সম্পন্ন করতে পারেন– এমনটিই জানিয়েছেন আইনজীবী খন্দকার নাসির উদ্দিন।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার বলেন, মেয়েটির নিরাপত্তা ও বাল্যবিয়ে রোধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
কলাপাড়া থানা পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। তার পরও খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউএনও রবিউল ইসলামের ভাষ্য, কোনোভাবেই যাতে এ বাল্যবিয়ে না হতে পারে, তার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হত য ল ইসল ম পর শ ধ ক রব র নজর ল

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় সামরিক অভিযান বাড়ানোর ঘোষণা ইসরায়েলের

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বেশির ভাগ অংশে শিগগিরই ‘জোরালোভাবে’ সামরিক অভিযান বাড়ানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ। 

প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজা উপত্যকার দক্ষিণে একটি ‘নিরাপত্তা অঞ্চলের’ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এটা রাফা ও খান ইউনিস শহরকে পৃথক করেছে।

এরই মধ্যে খান ইউনিস ও আশপাশের এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকা থেকে আকাশপথে হামলার কড়া জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যদিও হামাস কোনো হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

টানা দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে দিয়ে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় হামাসের ওপর আবারও হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর পর থেকে তারা গাজায় আরও বড় এলাকা দখল করেছে। হাজারো গাজাবাসীকে নতুন করে বাস্তুচ্যুত করেছে।

শনিবার কার্তজ বলেন, রাফা ও খান ইউনিসের মধ্যবর্তী সাবেক ইহুদি বসতি ‘মোরাগ এক্সিস’ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্পন্ন করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

এর মধ্য দিয়ে গাজার খান ইউনিস থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফা থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গাজা উপত্যকার প্রায় এক–পঞ্চমাংশ ভূমিজুড়ে রয়েছে রাফা।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, শিগগির গাজার আরও বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হামলা জোরদার করবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এসব এলাকার যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে মানুষদের সরিয়ে নিতে হবে। হামাসকে নির্মূল করা, জিম্মিদের মুক্ত করে আনা এবং যুদ্ধের অবসানের এটাই শেষ মুহূর্ত।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিতে হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। জিম্মি করে গাজায় আনা হয় ২৫১ জনকে। ইসরায়েলের সরকারি তথ্য এটা।

এর জবাবে ওই দিনই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী, যা এখনো চলছে। নির্বিচার হামলায় উপত্যকাটিতে এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে গড় ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর নিহত হয়েছে ১ হাজার ৫৬৩ জন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ