দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বারখ্যাত রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট। ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষকে প্রায় প্রতিবছর দুর্ভোগ পোহাতে হয় এখানে। আসন্ন ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ফেরি ও লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ নানা প্রস্তুতি নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া। এ পথ দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন ও হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। ঈদসহ নানা উৎসবে যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এতে সৃষ্টি হয় নানা দুর্ভোগ। এ বছর পবিত্র ঈদুল ফিতর ঝড়ের মৌসুমে হওয়ায় কিছুটা চিন্তার ভাঁজ আছে সংশ্লিষ্টদের কপালে। তাই ঈদ সামনে রেখে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি), স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষ বাড়তি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
জানা যায়, পদ্মা সেতু চালুর আগে ঈদ মৌসুমে প্রতিদিন দৌলতদিয়া প্রান্ত দিয়ে ৫ থেকে ৭ হাজার যানবাহন পদ্মা নদী পারাপার হলেও সে সংখ্যা এখন কমে এসেছে অর্ধেকে। বর্তমানে দৌলতদিয়া প্রান্তের সাতটি ফেরিঘাটের মধ্যে সচল রয়েছে তিনটি (৩, ৪ ও ৭ নম্বর) ঘাট এবং পাশাপাশি লঞ্চ ঘাট।
বর্তমানে এই রুট দিয়ে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার ছোট-বড় যানবাহন নদী পারাপার হলেও ঈদে এই যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যায় 
কয়েক গুণ। স্বাভাবিক সময়ে এই নৌপথে ১২টি ফেরি ও ২০টি লঞ্চ চলাচল করে। আসন্ন ঈদে অতিরিক্ত যানবাহন ও যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে এবার এই নৌপথে চলাচল করবে ছোট-বড় ১৭টি ফেরি ও ২২টি লঞ্চ।
এদিকে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকাসহ সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, মলম পার্টি, যাত্রী হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় রোধে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। মৌসুমি টিকিট কাউন্টার ও অবৈধ যানবাহনেও থাকবে নজরদারি। এ ছাড়া ঘাট এলাকার সড়কে অতিরিক্ত বাতি স্থাপন করে আলোর স্বল্পতা দূর করা হবে।
দৌলতদিয়া ঘাট সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সরোয়ার হোসেন জানান, ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পর্যাপ্ত যানবাহন থাকবে। তবে ঝড়ের মৌসুম হওয়ায় কিছুটা দুশ্চিন্তা রয়েছে। আবহাওয়া খারাপ হলে যাত্রীরা সাধারণত লঞ্চে যাতায়াত করেন না। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ ফেরি সচল রাখতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতু চালুর আগে ভোগান্তি থাকলেও দৌলতদিয়ায় এখন তা নেই। ঘাট কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এবার ঈদে কোনো ভোগান্তি হবে না বলে আশা করছেন তারা। ছিনতাই, মলম পার্টিসহ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের চালকরা বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর এখন আর আগের মতো ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় না। তবে ঈদের সময় যাত্রী ও যানবাহনের বাড়তি চাপ সামাল দিতে সব ফেরি ঠিকভাবে চালালে নির্বিঘ্নে পারাপার হতে পারবেন। কিন্তু এবার তিনটি ফেরিঘাটে চাপ সামলাতে পারবে না। কারণ একটি ফেরি আনলোড হয়, 
আরেকটি এসে অপেক্ষা করে। এ অবস্থায় ঘাটে পন্টুন খালি না থাকলে সময়মতো যাত্রীদের আনা-নেওয়া করা যাবে না।
দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাট ম্যানেজার আবুল হাশেম বলেন, ঈদে যাত্রী সুষ্ঠুভাবে পারাপারে তাদের এই রুটে ২২টি লঞ্চ চলাচল করবে। প্রতিটি লঞ্চের ফিটনেস ঠিক আছে। ঝড়ের মৌসুম হওয়ায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সতর্কতার মাধ্যমে লঞ্চ চলাচল করা হবে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি রাকিবুল ইসলাম বলেন, ঈদে ঘরমুখী মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় পুলিশ ছাড়াও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন থাকবে। ইতোমধ্যে ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এবারের ঈদে অতীতের চেয়ে আরও ভালোভাবে মানুষ গন্তব্যে যাতায়াত করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, আসন্ন ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে তারা ইতোমধ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। ঝড়ের মৌসুম হওয়ায় কিছুটা দুশ্চিন্তা থাকলেও তা কাটিয়ে ওঠার জন্য তাদের প্রস্তুতি রয়েছে। যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ করতে বাড়িতে যেতে ও ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরে আসতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শরীফ আল রাজীব বলেন, ঈদে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ ও যানবাহন দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আসা-যাওয়া করেন। সেদিক বিবেচনায় ঈদের আগে-পরে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন এবং যাত্রী হয়রানি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মলম পার্টি রোধে রাজবাড়ী জেলা পুলিশ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি করবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদয ত র ন র ব ঘ ন করত ঝড় র ম স ম প রস ত ত ব যবস থ দ লতদ য় ঈদয ত র ছ নত ই হওয় য়

এছাড়াও পড়ুন:

পেশাদারিত্ব সর্বাগ্রে

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলির মধ্যে নাগরিকের সর্বাপেক্ষা নিকটে থাকে বলিয়া পুলিশের জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তাও সর্বাধিক। বর্তমানে এহেন কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়িয়াছে বলিয়াই প্রতীয়মান। রবিবার প্রকাশিত সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুলিশের জনসম্পৃক্ত কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়িয়াছে। আমরা বিস্মিত, গত বৎসর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ভাঙিয়া পড়া পুলিশি ব্যবস্থা স্বাভাবিক হইতে যথায় কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম বৃদ্ধি জরুরি ছিল, ততায় উহা বন্ধ রহিয়াছে! পুলিশের সহিত জনগণের দূরত্ব বৃদ্ধির কারণেই যে আইন প্রয়োগ করিতে গিয়া বাহিনীটিকে বারংবার বাধার মুখে পড়িতে হইতেছে– উহা অস্বীকার করা যাইবে না।

আমরা জানি, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সহিত পুলিশের সংযোগ স্থাপনের মধ্য দিয়া আস্থার সম্পর্ক গড়িয়া তুলিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত ‘কমিউনিটি পুলিশিং’ কিংবা ‘বিট পুলিশিং’ প্রবর্তিত হইয়াছিল। জনসাধারণের সহিত মতবিনিময়ে সূচিত হইয়াছিল ‘ওপেন হাউস ডে’। কিন্তু পূর্বের শাসনামলে স্থানীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী ও সক্রিয় অনেকে অনুপস্থিত কিংবা নিষ্ক্রিয় হইবার কারণে এই সকল কার্যক্রমে ভাটা পড়িয়াছে। আমরা মনে করি, এই সকল কার্যক্রম অবিলম্বে সূচিত হওয়া জরুরি। বরং পূর্বাপেক্ষা অধিক হারে চালাইবার বিকল্প নাই। পুলিশের বিদ্যমান সংকটময় সময়ে এই ধরনের কার্যক্রম যত বৃদ্ধি পাইবে, মানুষের সহিত ততোধিক সম্পর্ক তৈয়ার হইবে। ইহাতে যদ্রূপ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হইবে, তদ্রূপ অঞ্চলভিত্তিক অপরাধীরাও ভীত থাকিবে। সর্বোপরি পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ভ্রান্ত ধারণা দূর হইবে।
আমরা দেখিয়াছি, রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতান ও আবাসিক এলাকার নিরাপত্তায় পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, তৎসহিত বেসরকারি কর্মীদিগের ‘অক্সিলারি ফোর্স’ তথা সহযোগী বাহিনীরূপে নিয়োগের কথা জানাইয়াছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ। এই সিদ্ধান্ত খুব বেশি সাড়া না ফেলিলেও কিছুদিন ধরিয়া ‘সিটিজেন ফোরাম’ গড়িয়া স্থানীয় বাসিন্দাদের সহিত সম্পর্কের ভিত তৈয়ারের চেষ্টা করিতেছে পুলিশ। উহাকে আমরা স্বাগত জানাই। 

আমরা দেখিয়াছি, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবেও ছাত্রদিগের সমন্বয়ে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা প্রবর্তনের সুপারিশ রহিয়াছে। কারণ যুক্তরাজ্য, ভারতসহ অনেক দেশেই ছাত্রদিগের মাধ্যমে কমিউনিটি পুলিশিং পদ্ধতি প্রচলিত। পূর্বে কমিউনিটি পুলিশিং শুধু অপরাধ দমনের কৌশলরূপে সীমাবদ্ধ রাখা হইত। ইহার সহিত অফিস ও বাড়িতে বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীদিগের পদ্ধতিগত কাঠামোর মাধ্যমে জনসম্পৃক্ত কার্যে যুক্ত করিলে নিরাপত্তা সুসংহত হইতে পারে। দেশে যেই গ্রাম আদালত ও চৌকিদারি ব্যবস্থা বিদ্যমান, উহাকে যথাযথরূপে কার্যকর করিলে অপরাধ দমন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহযোগী ভূমিকা পালন করিতে পারে। এই ক্ষেত্রে কমিশন কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার জন্য বাজেট বরাদ্দের যেই পরামর্শ দিয়াছে, উহা যথাযথ। 
অবশ্য স্মরণে রাখিতে হইবে, ইতোপূর্বে পুলিশকে যেইভাবে দলীয়করণ করা হইয়াছিল, উহাই সকল সংকটের মূল। গত বৎসরের ডিসেম্বরে প্রকাশিত ‘কেমন পুলিশ চাই’ শীর্ষক জনমত জরিপে দেখা গিয়াছে, পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অবসান চায় প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ। বিরোধী দল-মত দমনে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা পুলিশ সদস্যদিগের শাস্তিও দাবি করিয়াছে মানুষ। ‘গায়েবি’ মামলার অবসান চান সকলেই। একই সঙ্গে পুলিশের দুর্নীতি বন্ধও এখনকার জনদাবি। মানুষের সেই মতামতের প্রতিফলনরূপেও পুলিশকে পেশাদার বাহিনীরূপে দাঁড় করানো জরুরি। অন্যথায় সম্পূরক কিংবা সহযোগী সকল পদক্ষেপই গরল ভেল হইতে বাধ্য। উদ্ভিদের মূল কর্তন করিয়া অগ্রভাগে জলসিঞ্চনে ফল পাইবার সম্ভাবনা শূন্যই বটে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পেশাদারিত্ব সর্বাগ্রে
  • কক্সবাজারে মৃত ব্যক্তির নামে মামলা
  • বিভ্রান্তিকর বক্তব্য ছুড়ে পতিত ফ্যাসিস্টকে সহযোগিতা করা হচ্ছে: বাংলাদেশ জাসদ
  • ইউনূস সরকারের চেয়ে ভালো কী হতে পারত
  • আ.লীগের চালক খারাপ হতে পারে, কিন্তু গাড়ি তো খারাপ নয়: জি এম কাদের
  • আ.লীগের চালক খারাপ হতে পারে, কিন্তু গাড়ি তো খারাপ নয়: জিএম কাদের
  • এখন ওরা আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে চাচ্ছে: জি এম কাদের
  • দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে: জি এম কাদের
  • যৌথ বাহিনীর ৬ দিনের অভিযানে ২৪৯ জন গ্রেপ্তার