শনিবার সমকালের এক প্রতিবেদনে রাজধানীর পদচারী পথ তথা ফুটপাতে চাঁদাবাজির যেই চিত্র ফুটিয়া উঠিয়াছে, উহা শুধু উদ্বেগজনক নহে; বিস্ময়করও বটে। বিষয়টি উদ্বেগজনক, কারণ একদিকে এহেন চাঁদাবাজির কারণে সংশ্লিষ্ট পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায় বলিয়া চূড়ান্ত মাশুল গুনিতে হয় পদচারী পথে বিক্রীত সামগ্রীর ক্রেতাসাধারণকে– যাহাদের প্রায় সকলেই নিম্নআয়ের মানুষ। অন্যদিকে এই অবৈধ টাকার মূল ভাগীদার দুর্বৃত্ত রাজনীতিকেরা– যাহাদের দৌরাত্ম্যই বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ। আর বিষয়টি বিস্ময়কর, কারণ গণঅভ্যুত্থানের ধাক্কায় এহেন চাঁদাবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারী বিগত সরকারের পতনের পর ক্ষমতাগ্রহণকারী অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও উক্ত অপকর্ম অব্যাহত রহিয়াছে। অন্তর্বর্তী সরকার কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করিবার পাশাপাশি চাঁদাবাজির ন্যায় বিশেষত রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত অপরাধও নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দিয়াছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫ আগস্ট-পরবর্তী কিছুদিন রাজধানীর পদচারী পথে চাঁদাবাজি বন্ধ থাকিলেও সেই সুসময় অধিক দিন টিকে নাই। শুধু উহাই নহে, পূর্বাপেক্ষা বরং পদচারী পথ-রাজপথে হকার বাড়িয়াছে। ক্ষেত্রবিশেষে বৃদ্ধি পাইয়াছে চাঁদার অঙ্ক।
প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হইয়াছে, অনেক এলাকায় আওয়ামী লীগের স্থলে চাঁদাবাজের তালিকায় বিএনপি নেতাকর্মীর নাম উঠিয়াছে। এই অপকর্মের হোতা হিসাবে রাজধানীর দুই-একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামও সামনে আসিয়াছে। একটা নির্দলীয় সরকারের সময় এহেন চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য নিশ্চয় দুর্ভাগ্যজনক। বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক এই কারণেও যে, অপরাধসমূহ পূর্বের ন্যায় পুলিশের নাকের ডগায় ঘটিতেছে– যাহাদের সহযোগিতা করিবার জন্য সেনাসদস্যদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাও প্রদান করা হইয়াছে। অনস্বীকার্য, ৫ আগস্টের ধাক্কা হইতে পুলিশ অদ্যাবধি সম্পূর্ণ বাহির হইয়া আসিতে পারে নাই। সেই ট্রমা কাটাইয়া উঠিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রধান বাহিনীটির আর কত দিন লাগিবে, উহাও কেহ বলিতে পারে না। অন্যদিকে নাগরিকেরাই বা কতদিন এহেন অপরাধ সহ্য করিয়া যাইবে?
আমরা জানি, নগরীর রাস্তা যদ্রূপ যানবাহনের, তদ্রূপ পদচারী পথ পথচারীর জন্যই। সেই হিসাবে উপযুক্ত পুনর্বাসন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে হকারদের সড়ক ও পদচারী পথ হইতে সরাইয়া উক্ত স্থাপনা প্রকৃত মালিকদের ফিরাইয়া দিলে তাহাই হইত আলোচ্য সমস্যার সর্বোত্তম সমাধান। কারণ মধু থাকিলে মৌচাকে মৌমাছি ভিড় করিবে, ইহাই স্বাভাবিক। তদ্রূপ কাঁচা টাকার লোভে পদচারী পথে হকারদের কেন্দ্র করিয়া নানা দুর্বৃত্ত গোষ্ঠী গড়িয়া উঠাও অস্বাভাবিক নহে। আশা ছিল, অন্য বহু সমস্যার পাশাপাশি হকার পুনর্বাসনের বিষয়টিও অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকিবে। কারণ কেবল চাঁদাবাজি নহে, হকারদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে রাস্তা ও পদচারী পথ হকারমুক্ত করা গেলে যুগ যুগ ধরিয়া চলমান নগরীর যানজট সমস্যাও অনেকাংশে সমাধান করা যাইত। ইহাও বলিয়া রাখা প্রয়োজন, হকারদের ঘিরিয়া চাঁদাবাজির সমস্যা শুধু রাজধানীতেই সীমাবদ্ধ নহে, অন্য সকল নগর ও শহরেই দিনে দিনে ইহা প্রকট রূপ ধারণ করিতেছে। দুঃখজনক হইলেও সত্য, সেই দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের আদৌ কোনো দৃষ্টি আছে বলিয়া মনে হয় না।
যাহাই হউক, রাজধানীসহ সমগ্র দেশে অন্তত হকারদের ঘিরিয়া চলমান চাঁদাবাজি অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এই বিষয়ে কালক্ষেপণের কোনো সুযোগ নাই। অবিলম্বে সরকারের শীর্ষ মহলের যদ্রূপ এই বিষয়ে সক্রিয় হওয়া জরুরি, তদ্রূপ রাজনৈতিক দলসমূহকেও এহেন অপকর্ম হইতে স্বীয় নেতাকর্মীকে বিরত রাখিতে সচেষ্ট হইতে হইবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত ক সরক র র পদচ র ব ষয়ট সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
সারা দেশে ২ হাজার নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে: আযম খান
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “আপনারা লুটপাট, চাঁদাবাজি ও অপকর্মে জড়াবেন না। জনগণ যেন বলতে না পারে বিএনপি আওয়ামী লীগের মতো একই কাজ করছে।”
তিনি বলেন, “অপকর্মের দায়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত দুই হাজার নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একবার দল থেকে ছিটকে পড়লে আর উঠে দাঁড়াতে পারবেন না।”
শনিবার (১২ এপ্রিল) টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলা বিএনপির বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
কিছু উপদেষ্টার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার খায়েশ জন্মেছে: রিপন
ছাত্রদল নেতা মিলনের পরিবারের খোঁজ নিলেন তারেক রহমান
আযম খান বলেন, “এখন আর দিনের ভোট রাতে হবে না। সবাই নিরপেক্ষভাবে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।”
সখিপুর উপজেলার রফিক কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাজাহান সাজু সভাপতিত্ব করেন। এতে আরো বক্তব্য রাখেন- টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম মাস্টার, আমজাদ হোসেন মাস্টার, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি একব্বর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা বাছেত মাস্টার।
ঢাকা/কাওছার/মাসুদ