বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ। গণঅভ্যুত্থানে সামনের সারিতে ছিলেন। এক সময়ে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মামুন সোহাগ।

সমকাল: এই সময়ের ব্যস্ততা কেমন যাচ্ছে?

উমামা ফাতেমা: সময়গুলো খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে। এখন মনে হয় চব্বিশ ঘণ্টাও খুব কম সময়। জুন-জুলাই মাস থেকেই এমন একটা ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। দিন নেই, রাত নেই। প্রচুর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। একেকজনের একেক ধরনের সমস্যা। তবুও আমরা সৌভাগ্যবান। আল্লাহ হয়তো আমাদের নিজে থেকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন। সেটি যেন ঠিকমতো পালন করতে পারি, তবু ভয় কাজ করে।

সমকাল: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বর্তমান বাংলাদেশ কেমন আছে?

উমামা ফাতেমা: বাংলাদেশ বর্তমানে মিশ্র পরিস্থিতির মধ্যে আছে। চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই বেড়েছে, একটা ভয় কাজ করে। নাগরিক নিরাপত্তা অনেকখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে একটা পজিটিভ ইমপ্যাক্ট আছে। যেমন সরকার এবার রোজায় জিনিসপত্রের দামটা একটু কম রাখতে সক্ষম হয়েছে। রিজার্ভের পরিমাণও বেড়েছে। সরকার অনেক ক্ষেত্রে ভালো করছে। তবে জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রত্যাশা করেছিলাম দেশের সর্বক্ষেত্রে একটা সিস্টেম ডেভেলপ করবে (নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা চালু হবে)। প্রতিটি ক্ষেত্রে জাস্টিস (ন্যায়বিচার), অ্যাকাউন্টেবিলিটি (জবাবদিহি) কাজ করবে। জনগণ যাতে আদালতের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে না পারে। প্রশাসনের মধ্যে যে প্রতিক্ষেত্রে জবাবদিহির অভাব, সেটি এখনও আমরা দেখছি, সরকারের মধ্যে আছে। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী আমাদের একটি বড় ধরনের প্রত্যাশা ছিল, সরকার তা পূরণ করতে পারেনি। 

সমকাল: অন্তর্বর্তী সরকার আরও কী করতে পারত?

উমামা ফাতেমা: একদম শুরু থেকেই আমার অভিমত ছিল, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। জুলাই-আগস্টে যেসব থানা থেকে জনগণের ওপর গুলি করা হয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে তাদের ছাঁটাই করা বা গ্রেপ্তার করা যেত। যারা গুলি চালায়নি বা সহযোগী হিসেবেও ছিল না সেই থানাগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের অপারেশনে নিয়ে আসা যেত। একদম শুরুর দিকে সরকার যদি পুলিশকে ফাংশনাল করার চেষ্টা করত, তাহলে হয়তো এখানে পুলিশের যে একটা ‌‘ওভারল ইনঅ্যাক্টিভিটি’(সামগ্রিক নিষ্ক্রিয়তা) দেখতে পাচ্ছি, সেটি কিছুটা কমানো যেত। তবে এটি সরকার পরবর্তী সময়ে কিছুটা উপলব্ধি করেছে। নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে তারা আবার কিছুটা তৎপর হয়। সত্যি কথা বলতে কী, যদি একদম প্রথম দিকে একটা পরিকল্পনা থাকত তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও বেশি উন্নত থাকত। সরকারের পরিকল্পনাহীনতা আছে, আওয়ামী লীগের বিচার তারা কবে নাগাদ করবে? তারপর আমাদের যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশনগুলো হলো, কেন এই ১১টা সংস্কার কমিশন হলো? বাকি খাতগুলোর কী অবস্থা? বাংলাদেশের সব থেকে বড় সেক্টর শিক্ষা, সেই শিক্ষা নিয়ে কোনো সংস্কার কমিশন গঠন হয়নি। সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিচার এবং সংস্কারগুলোর সুরাহা না করে নির্বাচন হলে খুব বেশি লাভ হবে, তা জনগণের কেউই মনে করে না। তবে সরকারের উপযুক্ত রোডম্যাপ থাকা দরকার। 

সমকাল: এখন তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর কী করণীয়? 

উমামা ফাতেমা: আপনি যদি গত ১৫ বছরের লড়াইগুলো দেখেন শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট রেজিমের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর লড়াইয়ের ধরনটা কী ছিল? এখন নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। সংবিধান সভা বা গণপরিষদ নির্বাচন দিতে হবে। অনেক ধরনের লড়াই এখানে তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই অভ্যুত্থান-পরবর্তী যে যেভাবে অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছে সে তার আকাঙ্ক্ষাগুলো সামনে এনেছে। অভ্যুত্থান নির্বাচনের জন্যই হয়েছে, কেউ কেউ এ কথা বলার কারণে দেশের মানুষের ভেতরে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। ভারতের মতো একটি দেশ যেভাবে বাংলাদেশকে চাপে রাখার চেষ্টা করছে, তাদের সঙ্গে ফাইট করতে হলে আমাদের ইন্টারনাল ঐক্য থাকাটা জরুরি। সংস্কারের এবং বিচার প্রক্রিয়ার একটা সুনির্দিষ্ট অগ্রগতির মাধ্যমে নির্বাচনের প্রসেসের মধ্যে বাংলাদেশকে ঢুকতে হবে। তা ছাড়া এখানে দ্বন্দ্ব তৈরি হবে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে।

সমকাল: ছাত্র নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টিতে’ কেন গেলেন না?

উমামা ফাতেমা: আমি মনে করি এখনও জুলাই অভ্যুত্থানের অনেক কাজ বাকি আছে। নতুন দলে যারা গিয়েছেন তাদের জন্য সেখানে যাওয়াটাও জরুরি ছিল। বাংলাদেশে রাজনীতিতে বড় ধরনের ‘ভ্যাকুয়াম ক্রিয়েট’ হয়েছে, সেটা পূরণ করার দরকার আছে বলেই তারা পলিটিক্যাল পার্টি তৈরি করেছেন। আন্দোলনে আহত-নিহতদের পরিবারগুলো যে এখনও একটা মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আমাদের তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। আমাদের যত রাজনৈতিক দল আছে, যত ছাত্র সংগঠন আছে সবার মধ্যে জুলাইয়ের স্পৃহাকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটা করতে হবে, তাই মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে থাকাটা আমার জন্য জরুরি। 

সমকাল: সেটিকে কতটা সহজ মনে করেন?

উমামা ফাতেমা: প্রতিমুহূর্তে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। সবসময় আমি যেটা ভাবি, আমি যেভাবে চিন্তাটা করছি, আরেকজনের সঙ্গে আমার চিন্তা নাও মিলতে পারে। আমি কাজের প্রয়োজনে জেলায় জেলায় গিয়েছি, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই প্ল্যাটফর্মে থাকতে চায়। কাজ করতে চায়। আমার মনে হয় সবাইকে নিয়ে ভালো কিছু করতে পারব। 

সমকাল: তরুণরা এখন বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে কিনা?

উমামা ফাতেমা: তরুণদের মধ্যে আগে থেকেই অনেক ভাগ ছিল। তবে আন্দোলনে সবাই একই উদ্দেশ্যে এসেছিল। সবাই শেখ হাসিনার পতন চেয়েছিল। বিএনপিও ছিল, ইসলামী দলগুলোও ছিল। একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর মতো দলও ছিল। এই যে বিভিন্ন ধরনের সংগঠন এখানে একত্র হয়েছিল, তাদের সবার লক্ষ্য তো এক না। সবাই ভেবেছিল যে, শেখ হাসিনা চাইলে তাঁর ভুলগুলো শুধরে নেবেন। তবে সত্যি বলতে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল না। শেখ হাসিনা প্রতিটি জায়গাকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলেছিল।

সমকাল: ১৫ বছরের আন্দোলন আর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে বিভাজন দেখা যাচ্ছে কিনা?

উমামা ফাতেমা: বিএনপি ২০১৫ সালের পরে রাস্তায়ই নামতে পারত না। নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামতে না পেরে বিএনপি ওই সময়ে তেল-গ্যাসের দাম নিয়েও মাঠে নামে। তারপর বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বাড়তে থাকে। ২০২৩ সালে তারা ৩১ দফাতে পাবলিক ডিমান্ড একুমুলেট (জড়ো) করতে বাধ্য হয়। বিএনপি, গণসংহতি, জামায়াত বা যে দলই বলি না কেন সবাই বুঝেছিল জনগণের চাওয়াকে প্রাধান্য না দিলে কখনও শেখ হাসিনার পতন ঘটানো সম্ভব নয়। ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে লাখ লাখ মানুষ এসেছিল ঢাকাতে। এরপর কোথায় বিএনপি, জনগণ কি তাদের কথায় নেমেছে? যেদিন আবু সাঈদ বুক পেতে রাস্তায় মারা গেল, এর পর থেকেই জনগণ রাস্তায় নেমেছে। 

সমকাল: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা কতটুকু?

উমামা ফাতেমা: আওয়ামী লীগ যে গণহত্যা চালিয়েছে, দেশের সিভিলিয়ানদের ওপর তারা যে মরণঘাতী অস্ত্র দিয়ে হামলা করেছে, মানুষ মেরে ফেলেছে, শিশুদের হত্যা করেছে, ওই রাজনৈতিক দল কোনোভাবেই রাজনীতিতে ফেরার অধিকার রাখে না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার মতো যথেষ্ট পরিমাণে গ্রাউন্ড তৈরি হয়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাধা পাচ্ছি। তবে নিষিদ্ধের কার্যক্রমে বাংলাদেশের জনগণের সম্মতি রয়েছে। 

সমকাল: দেশে হঠাৎ নারী নিপীড়ন বেড়ে গেল কেন?  

উমামা ফাতেমা: নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। নারীরা বর্তমানে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে ভয় পান, অন্ধকারে যাওয়া-আসা করতে ভয় পান। অনেক জায়গায় ছেলেরা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে রাত ১১-১২টার পরে বের হয়, সেই প্রবণতাটা এখন কমেছে। রাত ১০টার পরে কোনো পরিবারও বাইরে যেতে ভয় পায়। জনগণ সরকারের কাছে চায় আশ্বাস। জনগণ পুলিশকে জানালে তারা বলছে, আমাদের লোক নেই, অন্য কাউকে বলেন, সেনাবাহিনীকে বলেন। সবার কাছে তো আর সেনাবাহিনীর যোগাযোগ থাকে না। 

সমকাল: জুলাই-আগস্টেও তো নারীরা নির্ভয়ে রাস্তায় নেমেছিল!

উমামা ফাতেমা: নারীকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, আমাদের অধিকারের কথা বলতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় নারীরা কথা বলেছে। তারা লেখালেখি করেছে, রাস্তায় নেমেছে। নির্দ্বিধায় তারা কথা বলেছে। যে কোনো পোশাকেই তারা নেমে গেছে। তো আজকে এসে কেন তাহলে এই ভয়টা পেতে হবে? 

সমকাল: আপনাকে ধন্যবাদ।

উমামা ফাতেমা: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন সরক র র জনগণ র ক জ কর আম দ র ব এনপ ন করত ধরন র সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

আমেরিকা-পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনীতি কে চালাবে

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার পর থেকে আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের এজেন্ডা এবং সে এজেন্ডা আমেরিকা, আর্থিক বাজার ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে নিয়মিতভাবে মন্তব্য করে আসছি।

ট্রাম্প আসার পর অস্থিরতার অভাব হয়নি, তবে তা ছিল অনেকটাই প্রত্যাশিত। কারণ, ট্রাম্পের নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়া যে অগোছালো ও অপ্রত্যাশিত হবে, তা আগেই বোঝা গিয়েছিল।

আমি ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে উল্লেখ করেছিলাম, ট্রাম্পের আগ্রাসনের জবাবে অন্যান্য অর্থনীতি যদি নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা ও আর্থিক বাজারের ওপর নির্ভরতা কমায়, তাহলে এটি ইতিবাচক একটি দিক হতে পারে। এই বিশৃঙ্খলার মধ্যেও আশার কথা হলো, ইউরোপ ও চীন ইতিমধ্যেই এ ধরনের পরিবর্তনের দিকে এগোতে শুরু করেছে। জার্মানি তাদের ‘ঋণসীমা’ কিছুটা শিথিল করে অতিব্যবস্থাপনার বাইরে গিয়ে জরুরি বিনিয়োগের অনুমতি দিচ্ছে। আর চীন বলছে, তারা অভ্যন্তরীণ ভোক্তা খরচ বাড়ানোর উপায় খতিয়ে দেখছে।

যে দেশগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বাজারের ওপর নির্ভর করে, তাদের জন্য এটা পরিষ্কার, যদি যুক্তরাষ্ট্র তার বাণিজ্যযুদ্ধের নীতি একটু কমায়ও, তারপরও নতুন ধরনের বাণিজ্যিক ব্যবস্থার দরকার হবে। অনেক দেশ এখন নিজেদের মধ্যে বেশি বাণিজ্য করতে চাচ্ছে এবং দ্রুত বাড়তে থাকা সেবা খাতে যেসব নিয়মকানুন বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, সেগুলো কমাতে তারা নতুন চুক্তি করার চেষ্টা করছে।

একটি জোট হিসেবে জি-৭-এর বাকি দেশগুলো (কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান ও যুক্তরাজ্য) একত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সমান শক্তিশালী। এর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ‘ইচ্ছুকদের জোট’-এর অন্য সদস্যদের যোগ করলে ট্রাম্পের আনা অনেক ক্ষতিই পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হতে পারে।

একইভাবে যদি চীন তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) ভারত ও অন্যান্য বড় উদীয়মান অর্থনীতির সঙ্গে সমন্বয় করে পুনর্গঠন করতে পারে, তাহলে তা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ডেকে আনতে পারে।

এ ধরনের পদক্ষেপগুলো যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি ও হুমকির প্রভাব কিছুটা কমাতে পারবে। তবে এ কাজগুলো সহজ হবে না, যদি সহজ হতো, তাহলে ইতিমধ্যেই হয়ে যেত। আজকের বাণিজ্য ও আর্থিক কাঠামো গড়ে উঠেছে নানা রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতে এবং চীনের উপকারে আসতে পারে, এমন যেকোনো পরিবর্তন ট্রাম্প প্রশাসন ঠেকাতে চাইবে।

বড় বড় অন্য অর্থনীতিগুলো কীভাবে নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ায়, বিনিয়োগ সক্রিয় করে এবং নতুন বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলে, তা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি ব্রুগেল নামের থিঙ্কট্যাংক ও নেদারল্যান্ডসের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আয়োজিত এক সম্মেলনে (গ্লোবালাইজেশন ও ভূ-অর্থনৈতিক বিভাজন) আমি আবার মনে করিয়ে দিলাম, ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি কতটা একপাক্ষিকভাবে হয়েছে।

২০০০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বার্ষিক নামমাত্র জিডিপির একটি সরল বিশ্লেষণে দেখায়, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরো জোন ও ভারত—এই চারটি দেশ মিলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির প্রায় ৭০ শতাংশের জন্য দায়ী, যার মধ্যে আবার যুক্তরাষ্ট্র ও চীনই প্রায় ৫০ শতাংশ শেয়ার করেছে।

এ তথ্য আবারও প্রমাণ করে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হুমকির জবাব হিসেবে অন্যত্র আরও বেশি অভ্যন্তরীণ চাহিদা তৈরি করতে হবে। তবে বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব অর্থনীতিতে অংশ কমে যাওয়ার ক্ষতি একা পুষিয়ে দিতে সক্ষম একমাত্র দেশ চীন।

কিন্তু যদি চীন একা কাজ না করে? ধরো, ইউরোপ যেমন এখন বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা খাতে খরচ বাড়াচ্ছে, এতে শুধু ইউরোপ নয়, বরং যুক্তরাজ্যের মতো অন্য দেশগুলোরও উপকার হবে। আর ভারতও গত কয়েক বছরে অনেক দেশের তুলনায় বেশি গতিতে এগোচ্ছে, তাই ওরাও চাইলে দেশের ভেতরে চাহিদা বাড়ানোর কিছু সুযোগ পেতে পারে। তাহলে যদি এই দেশগুলো একসঙ্গে মিলে পরিকল্পনা করে আর একে অপরের সঙ্গে নীতি ঠিক করে নেয়, তাহলে কি আরও ভালো কিছু হতে পারে না?

এ ধরনের সমন্বয় হয়তো ২০০৯ সালের লন্ডন জি-২০ সম্মেলনের মতো বিশাল বৈশ্বিক প্রভাব ফেলবে না, যেখানে বৈশ্বিক আর্থিক সংকট ও তার পরিণতি মোকাবিলায় ব্যাপক সংস্কার ও নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল। তবে যদি এই দেশগুলো বিশ্বকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে তারা নিজেদের মধ্যে অর্থনৈতিক নীতি সমন্বয় ও অভিন্ন লক্ষ্যে পৌঁছাতে পরামর্শ চালিয়ে যাচ্ছে, তাহলে সেটি বিশ্বজুড়ে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

সর্বশেষ কথা হলো, ব্রুগেল সম্মেলনে উপস্থাপিত একটি বিষয় আমার মনে গেঁথে আছে। এটি ছিল ব্রুগেলের সিনিয়র ফেলো আন্দ্রে সাপিরের উপস্থাপিত একটি চার্ট। সেই চার্টে জাপানের অর্থনৈতিক উত্থান এবং চীনের বর্তমান উত্থানের মধ্যে সাদৃশ্য তুলে ধরা হয়। ১৯৯০-এর দশকে জাপানের জিডিপি যখন যুক্তরাষ্ট্রের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছিল, তখন আমেরিকার বড় একটি ভয় ছিল—তারা পিছিয়ে পড়বে। এখন চীনকে নিয়েও একই ভয় দেখা যাচ্ছে।

কিন্তু আসলে যুক্তরাষ্ট্র কী চায়? তারা কি শুধু এই প্রমাণ দিতে চায়, নামমাত্র হিসাবে তাদের অর্থনীতি সবচেয়ে বড়, নাকি তারা নিজেদের নাগরিকদের জন্য ধনসম্পদ ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চায়?

এই দুটি বিষয় এক নয়। বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের যে বিষয়টি বোঝার দরকার, তা হলো অন্য দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন আসলে আমেরিকানদেরও আরও বেশি সম্পদশালী করে তুলতে পারে। হয়তো একদিন আমেরিকার নাগরিকেরা এমন কোনো নেতৃত্ব বেছে নেবে, যারা এই মৌলিক অর্থনৈতিক বাস্তবতাটি বুঝতে পারবে। তবে আপাতত তারা হয়তো আরও অনেক বছর অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তায় ভুগতেই থাকবে।

জিম ও’নিল গোল্ডম্যান স্যাকস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক অর্থমন্ত্রী

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার কথা আমি বলিনি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • মডেল মেঘনার সঙ্গে এই আইন প্রথম ব্যবহৃত হচ্ছে না: খোদা বখস চৌধুরী
  • মডেল মেঘনার সঙ্গে এ আইন প্রথম ব্যবহৃত হচ্ছে না: খোদা বখস চৌধুরী
  • মেঘনা আলমের সঙ্গে প্রথম এই আইন ব্যবহার হচ্ছে না: প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী
  • গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি ড্রোন শো’র মাধ্যমে শ্রদ্ধা
  • সুরে-গানে-তালে বৈশাখকে বরণ করল রাবি
  • দাবি আদায়ে অনড় কুয়েট শিক্ষার্থীরা, সন্ধ্যায় সিন্ডিকেট সভা
  • আমেরিকা-পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনীতি কে চালাবে
  • শোভাযাত্রায় তরমুজের মোটিফ দিয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি
  • রাবিতে বর্ষবরণের শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা, আয়োজন সীমিত