মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় এক গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এলাকায় যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত এক যুবকের বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটে বলে জানিয়েছেন ওই নারী। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গতকাল শনিবার বিকেলে ওই গৃহবধূ ও তাঁর স্বামীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অন্যত্র সরিয়ে রেখেছে অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিবারের লোকজন।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ (১৪) ও তাঁর স্বামীর (২৫) বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। আলু তোলার মৌসুমে কাজ করার জন্য তাঁরা টঙ্গিবাড়ীতে এসেছিলেন। আর অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম রিভান আহম্মেদ ওরফে বাবু মোল্লা। তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন যুবলীগের নেতা হিসেবে। গত বছরের ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের সময় নিজেকে ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে নৌকার প্রার্থী সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির পক্ষে পোস্টারও সাঁটিয়েছিলেন রিভান।

ওই গৃহবধূর স্বামী বলেন, আলুর মৌসুমে এই উপজেলায় শ্রমিকের কাজ করতে এসেছিলেন তিনি। রান্নাবান্নায় সহযোগিতার জন্য স্ত্রীকেও সঙ্গে এনেছিলেন। যুবলীগ নেতা রিভানের এক আত্মীয়ের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তাঁরা। শুক্রবার বিকেলে স্ত্রীকে ঘরে একা রেখে কাজের টাকা আনতে যান স্বামী। তখন ওই বাড়িতে কোনো মানুষ ছিল না। এ সময় একা পেয়ে তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন রিভান।

ওই ব্যক্তি গতকাল শনিবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি কাউকে বললে তাঁদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন রিভান। এখন বিচার–সালিস করে বিষয়টি মীমাংসা করতে চাচ্ছেন তাঁরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার দুপুরের পর থেকে ভুক্তভোগী দম্পতিকে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে যায় রিভান আহম্মেদের পরিবারের লোকজন। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, রিভানের পরিবার খুব প্রভাবশালী। সরকার পতনের পরও তাঁর পরিবার বহাল তবিয়তে আছে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে রিভান আত্মগোপনে। তাঁর বাবা ওই নারী ও তাঁর স্বামীকে হুমকি দিয়ে এলাকা থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রিভানের মুঠোফোনে ফোন করলে সাংবাদিক পরিচয়ে পেয়ে ফোন কেটে দেন তিনি। পরে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। এ বিষয়ে টঙ্গিবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

মহিদুল ইসলাম গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি জানতে পেরে ওই পরিবার যেখানে থাকত, সেখানে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। তবে পরিবারটি সেখানে ছিল না। তাঁদের কোনো হদিসও পাওয়া যাচ্ছে না। পরিবারটিকে খুঁজে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পর ব র য বল গ গ হবধ

এছাড়াও পড়ুন:

চৈত্রের শেষ দিনে জাবিতে ব্যাঙের পানচিনি ‘বিয়ে’ 

দিনভর প্রবল উত্তাপের শেষে বাংলা বছরের শেষ সূর্যের মেজাজ তখন কিছুটা হালকা হয়ে এসেছে। গাছের নতুন পাতায় সূর্যের আলোর প্রতিবিম্ব উৎসবের সাজ দিয়েছে৷ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে ফুটে ওঠেছে উৎসবের আমেজ।

উৎসবের পালে নতুন হাওয়া দিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পুরাতন কলা ভবনের সামনে চলছে তখন পানচিনির আয়োজন। সবার মাঝে বিয়ের আমেজ। মঞ্চের একপাশে সেজেগুজে বসে আছে কনে। বরপক্ষের আগমনের অপেক্ষায় কনেপক্ষ। বিকেল ৫টার দিকে এক র‍্যালি নিয়ে হাজির বরপক্ষ। বরের মাথায় এক ঢাউস ছাতা।

হলুদ, ধান ও দূর্বা দিয়ে কনেপক্ষ বরপক্ষকে বরণ করে নিল। চলল আশীর্বাদ আদান-প্রদান। মন্ত্র পাঠের আগে অভিভাবকরা কথা দিলেন, আসছে আষাঢ়ে তাদের বিয়ে হবে। বরের বাবা হলেন কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, অন্যদিকে কনের বাবার দায়িত্বে ছিলেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক রশীদ হারুন৷

তবে এটি কোনো মানুষের বিয়ে নয়। ব্যাঙের বিয়ে। খরা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টির প্রত্যাশায় কলা ও মানবিকী অনুষদ চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই ‘ব্যাঙের পানচিনি’র আয়োজন করেছিল। পানচিনি অনুষ্ঠান মূলত বিয়ের অঙ্গীকার প্রদান, আশীর্বাদ আদান-প্রদান এবং বর-কনের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর আয়োজন।

ব্যাঙের এই পানচিনি সম্পর্কে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শরণ এহসান জানান, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা অঞ্চলে প্রচণ্ড দাবদাহে যখন মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়, সেসময় বর্ষার আবাহন হিসেবে ব্যাঙের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়৷ প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ তাদের একটা কৃত্য হিসেবে চৈত্র সংক্রান্তির দিনে বৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা করে ব্যাঙের বিয়ে সম্পন্ন হয়৷ বর্তমান সময়ে মানুষের সাথে প্রাণ-প্রকৃতির যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে তা নিরসনের প্রত্যাশায় প্রতি বছর চৈত্রসংক্রান্তির দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ব্যাঙের পান-চিনি’ আয়োজন করা হয়।

ব্যাঙের পানচিনিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সেজেছিলেন বরপক্ষের সাজে। আর পুরাতন কলা ভবন কনেপক্ষ। বাঁশ আর রঙিন কাগজ দিয়ে বানানো হয়েছিল ব্যাঙ-যুগলের বিশাল দুটি প্রতিকৃতি। গতরাতেই কনেপক্ষ বরপক্ষের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে গিয়ে আলাপটা সেরে এসেছিলো।

সকাল থেকেই উভয়পক্ষের বাড়িতে চলছিল সেই প্রস্তুতি। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে নেচে-গেয়ে বরপক্ষ হাজির হয় পুরাতন কলা ভবনের কনেপক্ষের বাড়িতে। কনেপক্ষ হুই-হুল্লোড় করে ‘গেট ধরলে’ চলে মধুর দর-কষাকষি। এরপর জমে ওঠে প্রীতি কথার লড়াই। কারও হার না মানা অবস্থায় মঞ্চে পাশাপাশি বসার সুযোগ হয় হবু বর-কনের।

বরপক্ষ ও কনপক্ষের এ মধুর লড়াই চলে বেশ সময় ধরে। কেউ কাউকে নাহি ছাড়৷ কারো মতে, বিয়ের দেনমোহর হওয়া উচিত কোটি টাকায়। কারো মতে, আরও কম৷ কেউবা বলছেন, ব্যাঙের বিয়ে হওয়া উচিত যে কোনো ধর্ম মেনে৷ তবে কনেপক্ষের মত, মানুষের ধর্ম নয়, ব্যাঙের ধর্ম মেনেই হবে ব্যাঙের বিয়ে৷ শেষ পর্যন্ত সমঝোতায় পৌঁছে দুই পক্ষ। আংটি বদলের মধ্য দিয়ে শেষ হয় চৈত্র সংক্রান্তির ব্যাঙের বিয়ে৷ 

ব্যাঙের পানিচিনি নিয়ে কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বৈশাখ থেকে প্রকৃতির পরিবর্তন হতে থাকে৷ ফলে প্রকৃতির এই পরিবর্তন আমাদের মানব মনে নাড়া দেয়৷’

সম্পর্কিত নিবন্ধ