১৯৯৮ সালে ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএফএ) সদস্যপদ লাভ করে। তারপর থেকে ফিফা ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারিত্বে চোখ বন্ধ করে আছে। ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি ফিফার কথিত অঙ্গীকারের প্রকাশ্য লঙ্ঘন করেই চলেছে। ইসরায়েল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (আইএফএ) কয়েক দশক ধরে অবৈধভাবে ফুটবল ক্লাবগুলো দখল করে নিচ্ছে। এটি ফিফার আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এতে বলা হয়েছে, ‘সদস্য সমিতি ও তাদের ক্লাবগুলো অন্য সদস্য সংস্থার অনুমোদন ছাড়া তাদের ভূখণ্ডে খেলতে পারবে না।’
এদিকে ফিফার নিয়ম লঙ্ঘন করে ইসরায়েলি সমর্থকদের তীব্র নিন্দা দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষা করা হচ্ছে। পাঁচ বছর আগে দি ইকোনমিস্ট বেইতার জেরুজালেমকে ‘ইসরায়েলের সবচেয়ে বর্ণবাদী ফুটবল ক্লাব’ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দেয়। এতে বলা হয়, ক্লাবটির ভক্তরা “প্রতিপক্ষ দলের হয়ে খেলা আরবদের প্রতি ‘সন্ত্রাসী’ উপাধি ব্যবহার করে।”
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজার ফুটবল অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ইসরায়েলি বাহিনী ৩৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি ফুটবলারকে হত্যা করেছে। ৪২ বছর বয়সী প্লেমেকার এবং ফিলিস্তিনি অলিম্পিক ফুটবল দলের কোচ হানি আল-মাসদার ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন। দুই মাস পর পেশাজীবনে ১০০টিরও বেশি গোলদাতা মোহাম্মদ বারাকাত রমজানের প্রথম দিন তাঁর বাড়িতে বোমা হামলায় প্রাণ হারান, যিনি ‘খান ইউনিসের কিংবদন্তি’ বলে পরিচিত।
গাজা সিটিতে ইয়ারমুক স্পোর্টস এলাকাটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, যা একসময় ৯ হাজার আসনের ফুটবল স্টেডিয়াম ছিল। কিছু সময়ের জন্য ইসরায়েল বাহিনী এই স্থানটি অস্থায়ী আটক শিবির হিসেবে ব্যবহার করেছিল। ট্যাঙ্কগুলো স্টেডিয়ামটি ঘিরে রাখার সময় কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিকে অন্তর্বাস খুলে হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে দেখা গেছে, যাদের হাত পেছন থেকে বেঁধে রাখা হয়েছে। অন্যদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা নির্যাতন করা হয়েছে।
২০২৪ সালের মে মাসের মধ্যে ছিটমহলের একমাত্র অক্ষত জায়গা ছিল ফুটবল স্টেডিয়াম। এটিই উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার মানুষের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছিল। তখন ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফ্যান্টিনো ঘোষণা করেছিলেন, তিনি ইসরায়েলি ফুটবলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য পিএফএর আহ্বান মূল্যায়ন করতে স্বাধীন আইনি পরামর্শ চাইবেন। প্রায় এক বছর পরেও ফিফা এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
১৯০৪ সালে ইউরোপীয় শক্তি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ফিফা একটি ঔপনিবেশিক বসতিকে বৈধতা দেওয়ার জন্য কাজ করেই চলেছে, যা গ্লোবাল সাউথকে পশ্চিমের অধীনস্থ করে রেখেছে। আন্তর্জাতিক ফুটবল দীর্ঘকাল ধরে ‘নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা’র দ্বন্দ্বগুলোর ওপর জোর দিয়েছে, যা সমতা রক্ষার ধারেকাছে ছিল না। তাদের এই মডেল বিশ্বের এক অংশ থেকে অন্য অংশে সম্পদ এবং সম্পদ নিষ্কাশনের জন্য ডিজাইন হিসেবে কাজ করেছে। গাজার ফুটবল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করার জন্য ইসরায়েলি প্রচেষ্টাকে ফিলিস্তিনি অস্তিত্ব বিলীন করে দেওয়ার তৎপরতা, যা ফিলিস্তিনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর যুদ্ধের লক্ষণ হিসেবে বুঝতে হবে।
এই সহিংসতার মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনি জনগণের দৃঢ় প্রতিজ্ঞাই প্রতিফলিত হয়েছে। মাসদার হত্যার কয়েকদিন পর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় দল প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের নকআউট পর্বে তাদের স্থান নিশ্চিত করে ইতিহাস তৈরি করে। জাতিগত নির্মূলের এই প্রতিরোধ ফুটবল বিশ্বের সংহতির দাবি জানাই।
গত মাসে গ্লাসগোর সেল্টিক এফসির সমর্থকরা ফিফার ‘ইসরায়েলকে লাল কার্ড দেখানোর’ জন্য একটি প্রচারণা শুরু করে। গ্রিন ব্রিগেডের এই আহ্বান তখন স্পেন থেকে মরক্কো, আয়ারল্যান্ড পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সাম্রাজ্যবাদের অপরাধকে বৈধতা দিতে কয়েক দশক ধরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকলেও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন করে।
কল ম্যাককেইল: স্কটল্যান্ডের একজন লেখক ও কর্মী; মিডল ইস্ট আই থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আমিরাতে ২৫ ভারতীয়কে মৃত্যুদণ্ড
সংযুক্ত আরব আমিরাতে আরো ২৫ জন ভারতীয়কে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের এই দণ্ড এখনো কার্যকর হয়নি। বৃহস্পতিবার ভারতের পার্লামেন্টে এমনটাই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
গত মাসেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে একই দিন তিন জন ভারতীয়ের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল। এবার রাজ্যসভায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিংহ জানালেন, আরো ২৫ জন ভারতীয়ের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া বাকি রয়েছে আমিরাতে।
কোন দেশের জেলে কত জন ভারতীয় বন্দি রয়েছেন, তা নিয়ে রাজ্যসভায় জানতে চাওয়া হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। তাদের মধ্যে কত জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া বাকি রয়েছে এবং তাদের প্রাণ বাঁচাতে কী পদক্ষেপ করছে কেন্দ্র, তা-ও জানতে চাওয়া হয়।
জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, বিভিন্ন দেশে বর্তমানে মোট ১০ হাজার ১৫২ জন ভারতীয় জেলবন্দি রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেক বিচারাধীন বন্দিও রয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয়দের তথ্য দেওয়ার সময়ে নির্দিষ্টভাবে আটটি দেশের কথা জানান কীর্তিবর্ধন। তালিকায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় বন্দি রয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এছাড়া সৌদি আরবে ১১ জন, মালয়েশিয়াতে ছয় জন, কুয়েতে তিন জন এবং ইন্দোনেশিয়া, কাতার, আমেরিকা ও ইয়েমেনে এক জন করে ভারতীয়ের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া বাকি রয়েছে।
গত পাঁচ বছরে (২০২০-২০২৪) কোনো প্রবাসী ভারতীয়ের বিদেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন করা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। জবাবে মন্ত্রী জানান, কুয়েত এবং সৌদিতে ২০২৪ সালে তিন জন করে ভারতীয়ের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। ২০২৩ সালে কুয়েত এবং সৌদিতে পাঁচ জন করে ভারতীয়ের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এছাড়া ২০২৩ সালে মালয়েশিয়ায় এক জন এবং ২০২৪ সালে জিম্বাবুয়েতে এক জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
ঢাকা/শাহেদ