রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে দিন দিন তাপমাত্রা বাড়ছে। গত বছর ভয়ংকর এক এপ্রিল দেখেছে বাংলাদেশ– যেন মরুভূমির লু হাওয়া। ওই মাসে তাপমাত্রা ছিল ৭৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত টানা ৩৫ দিন তাপপ্রবাহ চলে। এক মাসের প্রবল গরমে জীবন ও সম্পদের বড় ক্ষতি হয়েছে। নিভে গেছে শতাধিক প্রাণ। এবারও তাপমাত্রার চোখরাঙানি দেখছেন আবহাওয়াবিদরা। প্রকৃতির এমন রুদ্ররূপেও সরকারের বিভিন্ন দপ্তর বন্যা-ঘূর্ণিঝড়ের মতো তাপপ্রবাহকে আমলে নিচ্ছে না। এখনও তাপপ্রবাহকে ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ ঘোষণা করা হয়নি। ফলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা, নীতি ও বাজেট তৈরি করেনি।
এমন পরিস্থিতিতে আজ রোববার পালিত হচ্ছে বিশ্ব আবহাওয়া দিবস।
এবার তাপপ্রবাহ কেমন হবে
আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, চলতি বছর মাসব্যাপী টানা তাপপ্রবাহের আশঙ্কা কম থাকলেও স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা বরাবরের মতো বেশি থাকবে। আবহাওয়াবিদ ড.
কালাম মল্লিক বলেন, এবার বজ্রঝড়ের সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে আগের বছরের মতো চরম পরিস্থিতি দেখা না গেলেও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে।
ইইউ কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের সর্বশেষ মাসিক ক্লাইমেট বুলেটিনে বরাত দিয়ে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, আবহাওয়া সম্পর্কিত পরিসংখ্যানের রেকর্ড শুরুর পর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি সবচেয়ে উষ্ণতম। ফেব্রুয়ারিও ছিল বিশ্বব্যাপী রেকর্ডের তৃতীয় উষ্ণতম ফেব্রুয়ারি। ২০২৪-২০২৫-এর শীত মৌসুমে জানুয়ারি মাসে বিশ্বের ৪৪ শতাংশ অঞ্চলে ৩০ বছরের (১৯৯১-২০২০ সালের) শীত মৌসুমের গড় তাপমাত্রা অপেক্ষা বেশি তাপমাত্রা ছিল।
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্পর্কিত বিভিন্ন সূচক বিশ্লেষণ করে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে এপ্রিল ও মে-তে বাংলাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরম পড়বে। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিসংখ্যক কালবৈশাখী অতিক্রম করতে পারে। দেশের ওপর দিয়ে প্রথম তাপপ্রবাহ অতিক্রমের আশঙ্কা করা যাচ্ছে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে। এপ্রিলে দুই থেকে তিনটি তাপপ্রবাহ অতিক্রমের আশঙ্কা রয়েছে।
প্রস্তুতি কতটা
অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩ সালে প্রকাশিত এক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের পাঁচ প্রধান নগরের ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ প্রবল গরমে বিপর্যস্ত। নগরগুলো হলো– ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট। এর মধ্যে ঢাকার ৭৮ শতাংশ বা ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষ এ ঝুঁকিতে রয়েছেন। ইউনিসেফের সহায়তা নিয়ে উষ্ণতাজনিত অসুস্থতা চিকিৎসার নির্দেশিকা তৈরি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এতে বলা হয়েছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তাপপ্রবাহের সময় ২২ শতাংশ মৃত্যু বেশি হয়। গবেষকরা অবশ্য এ হিসাবের মধ্যে মাতৃমৃত্যু ও দুর্ঘটনাজনিত
মৃত্যুকে অন্তর্ভুক্ত করেননি। ২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে তাপের কারণে দেশে ১ থেকে ৩ শতাংশ মৃত্যু বেড়েছিল।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বলছে, ২১ জেলার অধিবাসীরা তাপপ্রবাহের উচ্চঝুঁকিতে রয়েছেন। দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ সবচেয়ে কষ্ট ও বিপদে আছেন।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, তাপপ্রবাহকে ঘিরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কোনো দপ্তরের
কাজ নেই। জরুরিভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে নিয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, তাপপ্রবাহের পূর্বাভাসের ওপর ভিত্তি করে স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার বিষয়ে সরকারকে এখন থেকে স্পষ্ট নীতি গ্রহণ করতে হবে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠলেই স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাতে অন্যান্য বছরের মতো হিটস্ট্রোক করে কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থী মারা না যায়। এখন থেকে
সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাপপ্রবাহের সময় করণীয় নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো শুরু করতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক এজাজ আহমেদ বলেন, এপ্রিলের ভয়াবহতা ঠেকাতে বেশ কিছু পরিকল্পনা করে ফেলেছি। ঢাকায় প্রায় ১০০ একরের ওপর জলাধার রয়েছে। ইতোমধ্যে ১৯টি জলাধার ও খাল মুক্ত করেছি। এপ্রিলের তীব্র গরম ঠেকাতে আমরা বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে স্প্রিংলার (কৃত্রিম বৃষ্টি) লাগিয়ে পরিবেশ শীতল করার উদ্যোগ নিচ্ছি। রাস্তার মোড়ে মোড়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা, জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ঈদের পর আমাদের প্রচারণা শুরু করা হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আসিয়ানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বাড়ানোর তাগিদ
বাংলাদেশকে আসিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব এগিয়ে নিতে সংস্থাটির সদস্য দেশগুলোর কূটনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান। সম্প্রতি আসিয়ান কূটনীতিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) বিষয়ে কাজ করার আহ্বান জানান মাহবুবুর রহমান। গতকাল রোববার সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশন্সের (আসিয়ান) সদস্য হতে গত জানুয়ারি মাসে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এ সহযোগিতা চান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এর আগে
গত বছরের নভেম্বরে এ বিষয়ে ইন্দোনেশিয়ার সহযোগিতা চান তিনি।
আসিয়ান কূটনীতিকরা গত ২০ মার্চ ঢাকায় আইসিসিবি বাংলাদেশ কার্যালয় পরিদর্শন করেন। আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সহসভাপতি এ. কে. আজাদ ও নাসের এজাজ বিজয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা।
আসিয়ান কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ও আসিয়ানের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে জোটের দেশগুলোতে বাংলাদেশের স্বল্প রপ্তানি। এ বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে তিনি আসিয়ান দেশগুলোকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি বাড়ানোর আহ্বান জানান।
বৈঠকে আসিয়ান ঢাকা কমিটির চেয়ারম্যান ও ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত ই এনগুয়েন মাঙ্ক কুয়াং বলেন, আসিয়ান বাংলাদেশকে সম্ভাবনাময় রপ্তানি বাজার হিসেবে দেখে। তবে বাংলাদেশকে পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে হবে এবং আসিয়ান দেশগুলোতে তার পণ্য সম্পর্কে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
কূটনীতিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত নিনা পি. কাইংলেট, ব্রুনাই দারুসসালামের হাইকমিশনার হাজি হারিস বিন হাজি ওথমান, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ কিয়াও সোয়ে মো, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত, থাই দূতাবাসের মিনিস্টার কাউন্সিলর পানোম থোংপ্রায়ুন এবং ইন্দোনেশিয়ান দূতাবাসের অর্থনৈতিকবিষয়ক তৃতীয় সচিব এম রব্বি ফিরলি হারখা।