Samakal:
2025-04-15@13:23:49 GMT

এত অস্ত্র গেল কোথায়

Published: 22nd, March 2025 GMT

এত অস্ত্র গেল কোথায়

২০২৪ সালের ১৬ জুলাই। নগরের মুরাদপুর এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়েছিলেন যুবলীগ কর্মী মো. ফিরোজ। এতে নিহত হয়েছিলেন দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজন। একই বছরের ২৪ অক্টোবর তাঁকে আটক করে র‍্যাব। ছাত্র আন্দোলন দমনে তাঁর ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 
১৮ জুলাই নগরের বহদ্দারহাট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি চালিয়েছিলেন তৌহিদুল ইসলাম ওরফে ফরিদ। ওইদিনও গুলিতে দুই শিক্ষার্থীসহ চারজন নিহত হন। গত ২২ নভেম্বর তাঁকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর স্বীকার করেছিলেন একাই তিনি ২৮টি গুলি ছুঁড়েছেন। তাঁর ব্যবহৃত অস্ত্রটিরও হদিস পায়নি পুলিশ। 
শুধু ফিরোজ আর তৌহিদ নন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ব্যবহার হওয়া একটি অস্ত্রও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছবি বিশ্লেষণ করে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা গেছে এর মধ্যে রয়েছে শটগান, শাটারগান, বিদেশি পিস্তল, এলজি, একে-৪৭ সদৃশ্য রাইফেল ও রিভলবার। অস্ত্রধারীদের সবাই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মী।
২০ অস্ত্রধারী শনাক্ত: গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অর্ধশতাধিক অস্ত্রধারীকে গুলি চালাতে দেখা গেছে। ছবি দেখে তাদের মধ্যে থেকে অন্তত ২০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অস্ত্র ব্যবহার করেছেন যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর। শটগান ব্যবহার করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক উপসমাজসেবা সম্পাদক ফরহাদুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে রিন্টু। একে-৪৭ সদৃশ রাইফেল ব্যবহার করেছেন যুবলীগ নেতা সোলাইমান বাদশা। যুবলীগ কর্মী তৌহিদুল ইসলাম ওরফে ফরিদ ব্যবহার করেছেন শাটারগান। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো.

দেলোয়ার ব্যবহার করেছিলেন শটগান। ছাত্রলীগ নেতা এনএইচ মিঠু ও যুবলীগ কর্মী মো. জাফর ব্যবহার করেছিলেন পিস্তল। রিভলবার ব্যবহার করেছেন এক ছাত্রলীগ নেতা।
এ ছাড়াও অস্ত্র ব্যবহার করেছেন আওয়ামী লীগের উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আকবর আলী, বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মিজান সিকদার, আওয়ামী লীগ কর্মী মো. জালাল, যুবলীগ নেতা সহীদুল ইসলাম শামীম, তৌহিদুল ইসলাম, ছাত্রলীগ কর্মী এনএইচ মিঠু, যুবলীগ কর্মী মো. জাফর, টুটুল নন্দী, মো. মিজান, ছাত্রলীগ নেতা হোসাইন অভি, মোহাম্মদ ফয়সাল, মো. তাহসীন, হাবিবুর রহমান হৃদয় ও মহিউদ্দিন ফরহাদ। অস্ত্রধারী সহযোগীদের সঙ্গে দেখা গেছে তারা হলেন, ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবদুস সবুর লিটন ও ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনকে। তাদের মধ্যে যুবলীগ নেতা মো. ফিরোজ, সোলাইমান বাদশা, মিজান, মোহাম্মদ ফয়সাল, তৌহিদুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান হৃদয়সহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 
১৬ জুলাই ফিল্মি স্টাইলে গুলি করেছে পাঁচজন : গায়ে ছাই রঙের টি-শার্ট। পরনে কালো প্যান্ট। কোমরে ঝুলছে চাবি। মুখে মাস্ক। মাথায় হেলমেট। হাতে এলজি। দলবল নিয়ে ছুটছেন। করছেন গুলিও। ফিল্মি স্টাইলে গুলি করছিলেন তিনি কোটাবিরোধী আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর। আশপাশে ছিল পুলিশও। সবাই ছিলেন নীরব দর্শক। 
গত ১৬ জুলাই এমন নির্বিচার গুলিতে নিহত হয়েছেন তিনজন। তারা হলেন, চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী মো. ওয়াসিম আকরাম, ওমরগণি এমইএস কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ শান্ত ও ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী মো. ফারুক নিহত হন। সংঘর্ষের পরদিন দৈনিক সমকালসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঁচজন অস্ত্রধারীর ছবি প্রকাশিত হয়। তাদের মধ্যে চারজনকে শনাক্ত করেছেন স্থানীয় লোকজন, তারা হলেন-যুবলীগ নেতা দাবিদার মো. ফিরোজ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংগঠক মো. দেলোয়ার ও ছাত্রলীগ কর্মী এন এইচ মিঠু। 
১৮ জুলাই অস্ত্রধারী ছিলো চারজন : ১৮ জুলাই নগরের বহদ্দারহাটে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলকারীদের সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এখানেও গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন, আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া, মুদি দোকানের কর্মচারী ১৪ বছর বয়সী মো. সাইমন ও আরেক দোকান কর্মচারী শহিদুল ইসলাম শহিদ। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। এ ঘটনায় চান্দগাঁও থানার এসআই পল্লব কুমার ঘোষ বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করা হলেও তাতে অস্ত্রধারীদের কাউকে আসামি করা হয়নি। অথচ সংঘর্ষের পরদিন দৈনিক সমকালসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে চারজন অস্ত্রধারীর ছবি প্রকাশিত হয়। তাদের মধ্যে তিনজনকে শনাক্ত করেছেন স্থানীয় লোকজন। তারা হলেন, মহিউদ্দিন ফরহাদ, মো. জালাল ও মো. তৌহিদ। 
সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন : বহদ্দারহাটে গুলিতে নিহত হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া। তার বাবা রতন চন্দ্র তরুয়া বলেন, ‘আমার একটাই পোলা ছিলো, এখানে পড়তে পাঠাইলাম। আর ফেরত আইল না। আমার ছেলের লাশটা ফিরে পাইলাম। কারা আমার ছেলেকে গুলি করেছে তা পত্রপত্রিকায় এসেছে। এরপরও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, ‘অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার ও খুনের ঘটনায় ব্যবহার করা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা। অস্ত্রধারীর ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলে এ ধরণের ঘটনা আরও বাড়বে। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় থাকবে।’ 
জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মো. রইছ উদ্দিন বলেন, ‘১০ জন অস্ত্রধারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার ভিডিও, ছবি দেখে অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারেও নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।’
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ব যবহ র কর ছ ব যবহ র কর ছ ন ত হ দ ল ইসল ম য বল গ ন ত ল গ কর ম ন য বল গ র করত চ রজন আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ফতুল্লা বাজার পরিদর্শনে সদর ইউএনও’র অসন্তোষ 

ফতুল্লা বাজারের উন্নয়ন কাজ পরিদর্শনে এসে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জাফর সাদিক চৌধুরী। মঙ্গলবার দুপুরে তিনি ফতুল্লা বাজার পরিদর্শন করেন।

এসময় তিনি বাজারের অবকাঠামো, চারপাশের চিত্র দেখেন এবং বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেন। ব্যবসায়ীদের নানা সমস্যা শুনেন এবং সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন। 

এছাড়াও তিনি বিগতদিনে যারা বাজারের উন্নয়ন কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাঁদের সমালোচনা করেন। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাসের পরিচালক ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোঃ চৌধুরী, ফতুল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবদুর রহিম, সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোঃ মাসুম, রিপোটার্স ক্লাবের সদস্য সচিব মনির হোসেন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন শিকদার, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জাকির হোসেন রবিন, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক আঃ খালেক টিপু,  ফতুল্লা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক আঃ আলিম লিটন,  ফতুল্লা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য কাজী মাঈনউদ্দীন প্রমুখ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ