Samakal:
2025-04-14@07:31:15 GMT

সরোয়ারের সততার দৃষ্টান্ত

Published: 22nd, March 2025 GMT

সরোয়ারের সততার দৃষ্টান্ত

বাজারে সবকিছুর দামই বাড়তি। চারদিকে মুনাফালোভী মানুষের ভিড়। এমন সময়ে ব্যতিক্রম কেবল সরোয়ার আলম। রমজানকে পুঁজি করে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী যেখানে বেপরোয়া; সেখানে রোজাদারদের সুবিধার্থে প্রতি কাপ চায়ের দাম তিন টাকা কমিয়ে বিক্রি করছেন ষাটোর্ধ্ব মানবিক মানুষটি। চট্টগ্রাম নগরের কাজির দেউড়ি স্টেডিয়ামপাড়ার একপাশে ভাসমান দোকানের সামনে তিনি টাঙিয়েছেন ‘পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে ১৫ টাকার চা ১২ টাকা’সংবলিত একটি পোস্টারও। 
তাঁর এমন অনন্য উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন চট্টগ্রামের তরুণ থেকে বয়স্ক অনেকেই। সরোয়ার আলমের কাছ থেকে অসাধু ব্যবসায়ীদের শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন ক্যাবসহ সংশ্লিষ্টরা। সততার কারণে চা বিক্রির টাকায় এরই মধ্যে হজ করেছেন মানুষদের কাছে ‘মিটা কাকু’ হিসেবে পরিচিত সরোয়ার আলম। দাম কমিয়ে দেওয়ায় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখন প্রতিদিন তাঁর আয় কম হচ্ছে। এতে মোটেও চিন্তিত নন তিনি। বরং পবিত্র রমজানে কিছুটা কম দামে গ্রাহককে চা খাওয়ার সুযোগ করে দিতে পেরে তিনি আনন্দিত। অসাধু ব্যবসায়ীদের ভিড়ে তাঁর এমন মানবিকতা স্পর্শ করছে অনেককে। 
ভালো মানের গুঁড়া দুধ, লাল চিনি ও চা পাতা ব্যবহার করার কারণে ‘ভালো চা বিক্রেতা’ হিসেবে বেশ সুনাম রয়েছে সরোয়ারের। রোজার মাসে ইফতারের পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চা বিক্রি করেন তিনি। বর্তমানে প্রতিদিন ৪০০ কাপের বেশি চা বিক্রি হয়। 
নগরের কাজির দেউড়ির তরুণসহ অনেকের আড্ডাস্থল হিসেবে পরিচিত মুক্তমঞ্চের সড়কের পাশে ছোট একটি টেবিল আর চেয়ার নিয়ে চা বিক্রি করছেন সরোয়ার আলম। টেবিলে রাখা হয়েছে চা বানানোর নানা সামগ্রী। সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রেখেছেন চায়ের বেশকিছু কাপ। স্টেডিয়ামপাড়ার চারপাশে অন্তত অর্ধশতজন চা বিক্রি করলেও ইফতারের পর পর তাঁর দোকানেই পছন্দের চা খেতে বেশির ভাগ রোজাদারকে ভিড় করতে দেখা যায়। এর  কারণ অন্যরা বেশি লাভের আশায় চা বানাতে কনডেন্সড মিল্ক ও সাদা চিনি ব্যবহার করলেও তিনি ব্যবহার করেন পাউডার দুধ ও স্বাস্থ্যসম্মত লালচিনি। 
পাশের একটি রেস্টুরেন্টে ইফতার সেরে পাঁচ বন্ধুকে নিয়ে চা খেতে আসেন ব্যাংকার আরমান হোসেন। তিনি বলেন, ‘লেখাটি প্রথম দেখাতে বিশ্বাস করতে পারিনি। কারণ রমজান শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই বেশির ভাগ পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। অনেকে রমজানকে পুঁজি করে চার দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। সেখানে এই চাচা উল্টো প্রতিকাপ চায়ের দামে তিন টাকা কমিয়েছেন। নিঃসন্দেহে তাঁর এমন উদ্যোগ সাধুবাদ পাওয়ার মতো। তাঁকে দেখে মনে হয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীর ভিড়ে এখনও ভালো মানুষ আছেন।’ তরুণ আইনজীবী মো.

ফোরকান রাসেল বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে প্রতি কাপ চায়ের দামে তিন টাকা কমিয়েছেন তিনি। এখানে টাকাটা সামান্য হলেও মুনাফালোভী ব্যবসায়ীর ভিড়ে তাঁর এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ভালো।’ গণমাধ্যমকর্মী এফএম মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলে সৎ থেকেও ভালো কিছু করা যায়। তাঁর বড় উদাহরণ তিনি। কারণ চা বিক্রি করে তিনি এরইমধ্যে হজ পালন করেছেন। চা খেতে আসা বেশির ভাগ মানুষই তাঁর এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন।’
সরোয়ার আলম বলেন, ‘বর্তমান বাজারে চাল, ডাল, তেলসহ প্রায় ভোগ্যপণ্যেরই দাম চড়া। ঈদ পোশাকের দামও বাড়তি। এই অবস্থায় নিদারুণ কষ্ট পাচ্ছেন বেশিরভাগ মানুষ। যাদের একটি বড় অংশ আবার খেটে খাওয়া, দিনমজুর ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত। বিষয়টি উপলব্দি করে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রতি কাপ চায়ের দামে তিন টাকা কমিয়ে দিয়েছি। এই তিন টাকাও অনেকের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তির হবে বলে বিশ্বাস আমার।’
 তিনি আরও বলেন, ‘রমজান মাসে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে ভোগ্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম কমিয়ে দেওয়া হয়। সেই বিষয়টি উপলব্দি করে নিজেও কিছু করতে চেয়েছি। মানুষকে দেখাতে বা কারও বাহবা পেতে দাম কমাইনি।’
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘মুনাফালোভীদের ভিড়ে চা বিক্রেতা সরোয়ার আলম ব্যতিক্রম। তাঁর কাছে থেকে অন্যদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইফত র ব যবস য় রমজ ন র এমন

এছাড়াও পড়ুন:

হুমকি না থাকলেও বর্ষবরণে সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

উৎসবমুখর পরিবেশে সারা দেশে পালিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ। এ উৎসবকে ঘিরে কোনো ধরনের হুমকি না থাকলেও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

সোমবার (১৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী রাইজিংবিডিকে এ তথ্য জানান। 

ডিএমপি কমিশনার বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা বটমূলসহ পুরো ঢাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ঢাকার প্রধান সড়ক থেকে অলি গলিতেও গোয়েন্দা নজরদারি করছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।”

এদিকে, প্রতিবারের মতো এবারও নববর্ষে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। নববর্ষের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে সারা দেশে র‌্যাবের সব সদস্য নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় কাজ করছেন। 

সকালে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, “র‌্যাব সদর দপ্তরে কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করা হচ্ছে।”

তিনি জানান, র‌্যাব সারা দেশে ২২৪টি পিকআপ টহল, ১২২টি মোটরসাইকেল টহলসহ সর্বমোট ৩৪৬টি টহল ও সাদা পোশাকে ৪১৩ জন সহ সর্বমোট ২৪৪৯ জন র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোন উগ্রবাদী গোষ্ঠী, অন্যান্য নিষিদ্ধ সংগঠন এবং রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী কুচক্রী মহল যাতে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। 

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, “বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে কোনো ধরণের নাশকতার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবুও আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। গোয়েন্দা নজরদারি ও সাইবার জগতে মনিটরিং বৃদ্ধির মাধ্যমে নাশকতাকারীদের যেকোনো ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে প্রস্তুত রয়েছে র‌্যাব।”

ভার্চুয়াল জগতে নববর্ষকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের গুজব, উস্কানিমূলক তথ্য, মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য র‌্যাব সাইবার মনিটরিং টিম নজরদারি অব্যাহত রেখেছে বলেও তিনি জানান।

ঢাকা/এমআর/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ