ঢাকায় ফিরলে আমাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে: রংপুরে জি এম কাদের
Published: 22nd, March 2025 GMT
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) রংপুরে এক ইফতার পরবর্তী দলীয় আলোচনা সভায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, তাঁকে ঢাকা থেকে একজন আজ ফোন করে বলেছেন, তিনি ঢাকায় ফিরলে গ্রেপ্তার হতে পারেন।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির রংপুর মহানগর ও জেলা কমিটি এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের নিয়ে ইফতার–পরবর্তী এক আলোচনা সভায় জি এম কাদের এই আশঙ্কার কথা জানান। চার দিনের সফরে গতকাল শুক্রবার রংপুরে আসেন জি এম কাদের।
জি এম কাদের বলেন, ‘আমাকে ঢাকা থেকে একজন আজ বলেছে, উনি কতটুকু রিলায়েবল জানি না, ঢাকায় গেলে আপনাকে অ্যারেস্ট (গ্রেপ্তার) করা হবে; আপনি বরং রংপুরে থাকেন। রংপুরের লোকের সামনে আপনাকে অ্যারেস্ট করতে সরকার সাহস পাবে না। আমার অন্তর থেকে এই জিনিসটাকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করেছি। আমি অ্যারেস্ট হওয়ার জন্য ভয় করি না।’
রংপুর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ইফতার–পরবর্তী আলোচনা সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে জিএম কাদের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ছাত্রদের নেতৃত্বের নানা দিক নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন। প্রায় ৪০ মিনিটের বক্তব্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির মতো রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে জি এম কাদের অভিযোগ করেন।
জি এম কাদের বলেন, ‘ওনাদের (ছাত্রদের নতুন দল) মধ্যে একটা সুন্দর বন্দোবস্ত চিন্তা করেছেন, আমরা একটা দল করব। সরকারের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এই দলকে ক্ষমতায় আনতে হবে। ক্ষমতায় আসতে হলে প্রতিযোগী কম হতে হবে। প্রতিযোগী কে আছে, আওয়ামী লীগ। সে তো গর্তে ঢুকে গেছে। গর্ত থেকে যেন না বেরোতে পারে। সেকেন্ড (দ্বিতীয়) প্রতিযোগী জাতীয় পার্টিকে তো কোনো দিক দিয়ে প্যাঁচানো যাচ্ছে না। ওই যে প্রচারণা চালিয়েছিল এত দিন দোসর, দোসর, দোসর করে এদের বাদ দাও।’
‘দোসর’ বলে প্রচারণা করে জাতীয় পার্টিকে রাজনীতি থেকে বের করে দেওয়ার একটি বন্দোবস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘সবাই জানে, আন্দোলনে ওনারা (জাতীয় পার্টি) ছিল, তার পরও কেন আমাদের রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। আমাদের মিটিং-মিছিলে বাধা দেওয়া হবে। আমাদের পার্টি অফিসে হামলা করা হবে। আমাদের ইফতার মাহফিলে হামলা করা হবে। আমরা যেন জনগণের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই, জনগণ যেন আমাদের ভুলে যায়, আমাদের নেতারা যেন হতাশ হয়ে যান, এটা ছিল উদ্দেশ্য। এখনো এই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছেন তাঁরা।’
ছাত্র নেতৃত্বের মধ্যে ক্ষমতার লোভ এসেছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘আমি জিনিসটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছি, তাঁরা কেন হঠাৎ বন্ধু থেকে শত্রু বানাচ্ছে। পরে বুঝতে পারলাম, যে রোগটা আমাদের সকলের হয়, বাংলাদেশের সব নেতার হয়েছে, সেই রোগটা আমার তরুণ বন্ধুদের মধ্যে হয়ে গেছে। কী সে রোগ? আমরা ছোটবেলায় শুনেছি, জিনের আসর পড়ে, ভূতের আসর পড়ে। এদের হয়েছে ক্ষমতার আসর। ক্ষমতার নেশা তাঁদের পেয়ে বসেছে। ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছে এবং এই ক্ষমতার স্বাদ দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য তাঁরা এ ধরনের পলিসি গ্রহণ করছে।’
পুলিশের মতো সেনাবাহিনীতেও তাঁরা হাত করতে চায় মন্তব্য করে জিএম কাদের বলেন, ‘পুলিশের মতো যদি আজকে সেনাবাহিনীও হয়ে যায়, ওনারা যেভাবে করছেন, একে ধরবেন, ওকে মারবেন, নিজস্ব কিছু লোক সেট করবেন, তাহলে বাংলাদেশের মানুষের কোনো ধরনের কোনো নিরাপত্তা থাকবে না। রাস্তাঘাটে চলাচল করতে পারবে না। পুলিশ নষ্ট করেছে, সেনাবাহিনী নষ্ট করবে। তাঁরা ক্ষমতায় যাবে এভাবে। যাতে সবকিছু তাঁদের নিয়ন্ত্রণে থাকে।’
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের অতিরিক্ত মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। সভা সঞ্চালনা করেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ইয়াছির।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ষমত র আম দ র ইফত র
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় সীমা হত্যা নাটকে এসআই শাহ আলমের কারাদণ্ড
দুর্নীতি দমন কমিশেনের (দুদক) করা মামলায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) বরখাস্তকৃত এসআই মো. শাহ আলমকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে আলাদাভাবে ৭ হাজার টাকা জরিমানা এবং তা অনাদায়ে আরো দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রবিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে খুলনার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. আশরাফুল ইসলাম মামলার রায় ঘোষণা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) কামরুল হোসেন জোয়ার্দার।
খুলনার খালিশপুরের মুজগুন্নী আবাসিক এলাকায় মিল্কিওয়ে আইসক্রিম ফ্যাক্টরির মালিক মাসুদ হাসানের বাসার গৃহকর্মী সীমা হত্যার নাটক সাজানো এবং ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে হওয়া মামলার পৃথক দুটি ধারায় তাকে এ দণ্ড দেন বিচারক।
আরো পড়ুন:
যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে হত্যা, স্বামী গ্রেপ্তার
ভিক্ষুককে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গণধোলাই
মামলা সূত্রে জানা যায়, মিল্কিওয়ে আইসক্রিম ফ্যাক্টরির মালিক মাসুদ হাসান ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন ২০০৯ সালে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার চর দৌলতপুর গ্রামের মৃত ওলিয়ার রহমানের ৯ বছরের মেয়ে সীমাকে গৃহপরিচারিকা হিসেবে নিয়ে আসেন। দীর্ঘদিন কাজ করার পর সীমা ওই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের ঘটনায় সীমার মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে মাসুদ হাসান, মোহাম্মদ আলী খন্দকার ও মো. মাসুদ শেখকে আসামি করে ২০১২ সালের ৭ মে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।
মামলার তদন্ত করতে গিয়ে খালিশপুর থানার তৎকালীন এসআই শাহ আলম এই পরিবারটির কাছে তিন লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন। উৎকোচ দিতে রাজি না হওয়ায় এসআই শাহ আলম নিখোঁজের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘হত্যা নাটক’ সাজান। পরবর্তীতে ডুমুরিয়া উপজেলার লাইন বিল পাবলার একটি খাল থেকে বস্তাবন্দী ২৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী একটি নাম না জানা লাশকে যাচাই বাছাই না করে সীমা হিসেবে শনাক্ত করে তদন্ত কর্মকর্তা পরবর্তীতে মামলার তদন্ত কার্যক্রম চালান। তদন্ত কার্যক্রমে এই পুলিশ কর্মকর্তা শাহ আলম ও তার স্ত্রীকে অভিযুক্ত করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর অ্যাডভাকেট কামরুজ্জামান ভূইয়া আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সীমাকে ফেরত দেওয়ার জন্য হাইকোর্ট বিভাগে রিট করেন।
২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর আদালত সীমাকে উদ্ধারের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীর বাসা থেকে সীমাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে আদালত দুদককে তদন্তের দায়িত্ব দেন।
গৃহকর্মী সীমা হত্যা নাটক ও জীবিত উদ্ধার ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে এসআই মো. শাহ আলমের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তকালে ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। সর্বশেষ গত বছরের ৩১ আগস্ট খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ওই মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন (নং-১৭০)।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ২০১২ সালের ৭ মে দায়েরকৃত নারী ও শিশু-২৫৭/১২ নম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে খালিশপুর থানার তৎকালীন এসআই শাহ আলম নগদ ৩০ হাজার টাকা গ্রহণ ছাড়াও মাসুদ হাসানের কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। ওই টাকা না পেয়ে কাজের মেয়ে সীমা হত্যার কল্পকাহিনী তৈরি করে মাসুদ হাসান দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেন। কথিত অপহরণ মামলায় মাসুদ হাসানের নাম উল্লেখ থাকলেও তার স্ত্রীর নাম ছিল না। তারপরেও তাদেরকে গ্রেপ্তার করেই এসআই শাহ আলম দ্রুত সাংবাদিকদের ছবি তুলে তাদেরকে আসামি হিসেবে আদালতে পাঠান। এরপর ডুমুরিয়ার একটি নাম না জানা লাশ নিয়েই তৈরি করা হয় সীমা হত্যার ‘কল্পকাহিনী’।
দুদকের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, বরখাস্তকৃত এসআই শাহ আলম অপহরণ মামলা তদন্তকালে জনৈক মাজেদা বেগম ও দিপালী সরকারকে দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারা মতে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট বক্তব্য প্রদানের ব্যবস্থা করেন।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ