পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের ছাংথাই ইয়াংজি নদীর ওপর একটি সেতু তৈরি হচ্ছে। এই সেতুর প্রধান কাঠামো তৈরির জন্য চীন একটি বিশেষ রোবট বানিয়েছে। রোবটটি কাদা পানিতেও পরিষ্কার দেখতে পারে এবং প্রয়োজন মতো ড্রিল করতে পারে। এর ফলে, সেতুর পানির নিচের ভিত্তি তৈরির কাজ অনেক দ্রুত শেষ করা সম্ভব হয়েছে।

এই উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে সেতুর পানির নিচের ভিত্তি নির্মাণের সময় অনেক কমে গেছে। এর ফলে, সেতুটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্প্যান কেবল-স্থির সেতু হওয়ার পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রচলিত ড্রিলিং পদ্ধতি দিয়ে সেতুটির ভিত তৈরি করা সম্ভব ছিল না। কারণ, এই সেতুর প্রধান টাওয়ারগুলো নদীর পানির নিচে বসানো হচ্ছে, যা অন্য সেতুর চেয়ে আলাদা। নদীর নিচে ভিত্তি স্থাপনের জন্য বিশাল নলাকার কাঠামো ব্যবহার করা হয়েছে, যার প্রতিটির ওজন ২৩ হাজার টন। এই ওজন আইফেল টাওয়ারের চেয়েও তিনগুণ বেশি এবং এর আয়তন ১৩টি বাস্কেটবল কোর্টের সমান।

আরো পড়ুন:

চীনের অধরা সংস্কৃতির পুনরুদ্ধারে অদম্য ইয়াং

তাইওয়ানের আকাশে ৫৯ চীনা বিমান শনাক্ত

৫.

৯ মিটার লম্বা ও ৩.৬ মিটার উঁচু এই বুদ্ধিমান ক্যাসন রোবটটি চীনের তৈরি প্রথম বিশেষ ধরনের রোবট, যা পানির নিচে ছোট ট্রাকের মতো কাজ করে। এই উন্নত রোবটটি বিশাল আকারের পানির নিচের কাঠামোকে শক্ত করে ধরে রাখতে সাহায্য করে, যাতে সেগুলো নড়াচড়া না করে।

রোবটটির আর্ম ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরতে পারে, তাই এটি সমানভাবে পলি সরাতে পারে। ৩০০ মিটার লম্বা ক্যাসনগুলোকে শক্ত করে ধরে রাখার জন্য এটা খুব জরুরি। এই রোবটটি পানির নিচে পলি সরানোর পদ্ধতিতেও নতুনত্ব এনেছে। আগে মানুষ বায়ু সাকশন মেশিন দিয়ে পলি সরাতো, যা খুব কঠিন কাজ ছিল এবং এতে খনন কাজ অসম হওয়ার ও ক্যাসন কাত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকত। রোবট এই সমস্যাগুলো দূর করেছে।

বুদ্ধিমান ক্যাসন রোবটের সাহায্যে, নির্মাণ দল নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই সেতুর জন্য মূল টাওয়ার ক্যাসন খননের কাজ শেষ করেছে। এর ফলে মূল টাওয়ারটি আরো শক্তভাবে স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে।

ছাংথাই ইয়াংজি নদীর সেতুটি এই বছরই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে ছাংথাই ও থাইচৌয়ের মধ্যে যাতায়াতের সময় কমে মাত্র ২০ মিনিটে নেমে আসবে।

সূত্র: সিএমজি, সিসিটিভি

ঢাকা/হাসান/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটছে মনিপুরী তাঁতিদের 

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় ঈদকে সামনে রেখে শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মনিপুরী পাড়ার তাঁতিরা। তবে আগের মতো চাহিদা না থাকায় লাভের আশা কমে গেছে। তবুও তাদের ঐতিহ্যের শিল্পকে ধরে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এ শিল্পের কারিগররা।

মনিপুরী তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, ‘‘টেকনোশিয়ানরা সিন্ডিকেট করে আমাদের হাতেবুনা শিল্পের ধস নামানোর চেষ্টা করছেন। তাদের হাতে চলে যাচ্ছে আমাদের আদি শিল্প। এখন আসল মনিপুরী শাড়ি কপি করা হচ্ছে।’’

মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ উপজেলার ১৪ থেকে ১৫টি গ্রামে মনিপুরী সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। এরসঙ্গে ১৫ হাজার মুসলিম মনিপুরীদের বসবাস রয়েছে এখানে। বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক ঋণ সহজ করায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে এখন সবার ঘরে ঘরে হস্তচালিত তাঁত মেশিন সচল রয়েছে। প্রতি পরিবারের নারীরা মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করেন। এই আয়ের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাঁত শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, ঋণের কিস্তি দিয়ে বাকি টাকায় সংসার চালান তারা।

রবিবার (২৩ মার্চ) কমলগঞ্জ উপজেলার মনিপুরী অধ্যুষিত এলাকার কান্দিগাও, মাঝের গাও, বন্দরগাও, ঘোড়ামারা, আলীনগর ও মধাবপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সব বাড়িতে মনিপুরী নারীরা সাংসারিক কাজের ফাঁকে ঈদকে সামনে রেখে তাঁতের শাড়ি বুনতে ব্যস্ত রয়েছেন।

কথা হয় অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মৌমিতার সঙ্গে। তিনি বলন, ‘‘এক সময় আমাদের আয়ের বড় একটা অংশ আসত তাঁতশিল্প থেকে। ৯০ দশকের শেষের দিকে এসে ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পের নিপুণ কারিগর মনিপুরী নারীরা অনেকটা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ২০০০ সালের শুরুতে মনিপুরী তাঁতের শাড়িসহ অন্যান্য কাপড়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘুরে দাড়াঁয় এ শিল্প।’’

এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত লুবনা আক্তার বলেন, ‘‘আমি বাণিজ্যিকভাবে তাঁতের শাড়ি তৈরির জন্য ৫০টি তাঁত মেশিন স্থাপন করেছি। ২৫টি সচল রয়েছে। সুতার দাম বৃদ্ধি, মজুরির খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ কমে গেছে।’’

বন্দরগাঁও গ্রামের সুফিয়া আক্তার বলেন, ‘‘এখন মনিপুরী পাড়ার প্রতিটি ঘরে ঘরে হস্তচালিত তাঁতের মেশিন আছে। সাংসারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে ২-৩ দিনের মধ্যে একটি শাড়ি তৈরি করা যায়। ঈদকে সামনে রেখে আমরা মুসলিম মনিপুরীরা ব্যস্ত সময় পার করছি। প্রতিটি শাড়ি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বিক্রি করে পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করব।’’

মাঝের গাঁও গ্রামের সুনীতি সিং বলেন, ‘‘শাড়ি কম বিক্রি হচ্ছে। এখন বাজারে মনিপুরী শাড়ির কপি চলে এসেছে। এতে আসল মনিপুরী শাড়ির কদর কমে গেছে।’’

ভানুবিল কমিনিটি ব্যাজ ট্যুরিজমের উদ্যোক্তা নারায়ণ সিং জানান, আসল মনিপুরী শাড়ি বুনুনকারীদের হাত থেকে টেকনোশিয়ানদের হাতে গিয়ে কপি হচ্ছে। এতে মনিপুরী শাড়ির দাম ও মান কমে যাচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী হরেন্দ্র সিং ও তিলকপুর গ্রামের সাখাওয়াত মিয়া বলেন, ‘‘আমরা স্থানীয়ভাবে শাড়ি সংগ্রহ করে বিভিন্ন মহাজনদের কাছে সরবরাহ করি। কিন্ত সিজনের সময় তারা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে দেয়। পর্যটকদের কাছে মনিপুরী শাড়ির চাহিদা অনেক বেশি। মধ্যস্বত্বভোগীরা ভাগ বসিয়ে দেয়। এতে শাড়ি বুননকারীরা লোকসানে পড়েন। আসল মনিপুরী শাড়ি কিনতে হলে মনিপুরীদের হাত থেকে কেনা উচিত।’’

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘‘মনিপুরী শাড়ি কমলগঞ্জের ঐতিহ্য। এটা ধরে রাখার জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা আসলে আমি তাদের সহযোগিতা করব।’’

ঢাকা/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ