পথশিশু ও গৃহহীনদের নিয়ে ইফতার আয়োজন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) হিউম্যান রাইটস সোসাইটি। 

শনিবার (২২ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষ্কর্য চত্বরে প্রায় অর্ধশতাধিক পথশিশু ও গৃহহীন মানুষের সঙ্গে ইফতার করেন সংগঠনের সদস্যরা। এতে ভিক্টোরিয়া পার্ক ও সদরঘাট এলাকার পথশিশু ও গৃহহীনরা অংশগ্রহণ করেন।

সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান কায়েস বলেন, “এটি শুধু একটি ইফতার আয়োজন নয়, বরং সমাজের অসহায় ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধের প্রতিফলন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন এ ধরনের মানবিক কার্যক্রমে অংশ নেয়, তখন তা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”

তিনি বলেন, “এ উদ্যোগ পথশিশু ও গৃহহীনদের প্রতি সহমর্মিতার বার্তা পৌঁছে দেবে এবং অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে। এ ধরনের কার্যক্রম নিয়মিত আয়োজনের মাধ্যমে সমাজে মানবাধিকার চর্চার সংস্কৃতি আরো বিস্তৃত হবে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকে এ ধরনের উদ্যোগে এগিয়ে আসা উচিত।”

সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ মাসুদ বলেন, “খাদ্য মানুষের মৌলিক মানবাধিকার। আজ যখন ফিলিস্তিনে হাজারো পথশিশু অনাহারে দিন কাটাচ্ছে, আমরা হয়তো চাইলেও তাদের কাছে সরাসরি খাবার পৌঁছে দিতে পারি না। তবে আমরা আমাদের আশেপাশে থাকা ক্ষুধার্ত শিশু ও গৃহহীন মানুষদের জন্য কিছু করতে পারি। তাদের খাদ্যের নিশ্চয়তা দেওয়া, মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের উচিত নিজেদের পরিবেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা।”

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র ইফত র পথশ শ

এছাড়াও পড়ুন:

ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় সাভারে ট্যানারি শ্রমিকদের বিক্ষোভ, লাগাতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

ট্যানারিশিল্পের শ্রমিকদের জন্য পাঁচটি গ্রেডে সরকারঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়িত না হওয়ার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শ্রমিকেরা। ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় চামড়াশিল্প নগরে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ব্যানারে আজ রোববার শ্রমিকেরা এসব কর্মসূচি পালন করেন। সমাবেশ থেকে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়িত না হলে ঈদের পর কর্মবিরতিসহ লাগাতার কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

আজ বেলা ১১টার দিকে চামড়াশিল্প নগর বিভিন্ন ট্যানারির শ্রমিকেরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। পরে তাঁরা সেখানে সমাবেশ করেন। সমাবেশে ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেকসহ বিভিন্ন ট্যানারির শ্রমিক প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।

শ্রমিক রঞ্জু মিয়া বলেন, সরকার ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করছে, কিন্তু মালিকেরা সেই মজুরি দিচ্ছেন না। তাঁরা কোনো ধরনের ভাঙচুর কিংবা সড়ক অবরোধ করতে চান না। ট্যানারি বন্ধ থাকুক, সেটাও চান না। বর্তমানে যে টাকা বেতন পান, সেটা দিয়ে চলা সম্ভব নয়। ন্যূনতম মজুরি যেটা সরকার ঘোষণা করছে, সেটি ন্যায়সংগতভাবে পূরণ করার দাবি জানান তিনি।

শ্রমিক মো. মোস্তফা গাজী বলেন, ‘সরকার মজুরি ঘোষণা করছে। এটা পাওয়ার জন্য আমাদের আন্দোলন কেন করতে হবে? তারপরও আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। আন্দোলনে তারাই আমাদের নামতে বাধ্য করতেছে। যত দিন দাবি আদায় না হবে, তত দিন আমরা আন্দোলন করব। তবে ভাঙচুর বা খারাপ কোনো আন্দোলন আমরা করব না।’

ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক বলেন, সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষের ঐকমত্যের ভিত্তিতে গত বছরের ২১ নভেম্বর ট্যানারি শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে সরকার। ২১ নভেম্বর থেকে এটি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখনো সেটি কার্যকর হয়নি।

সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন এই শিল্পের স্বার্থে শান্তিপূর্ণভাবে সব দাবি আদায়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ শিল্পে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা মালিক, শ্রমিক, সরকার সবার দায়িত্ব। আমরা লক্ষ করেছি, ট্যানারির মালিকদের অধিকাংশই সরকারঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করতে ইচ্ছুক। কিছু মালিক আছেন, তাঁরা এটি মানতে চাচ্ছেন না। তাঁরা ভুল পথে গিয়ে কারও প্ররোচনায় এই শিল্পে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইলে, এর দায় তাঁদেরই নিতে হবে।’

আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, ‘কারও কারও ব্যবসা ভালো চলছে না। বিভিন্ন অজুহাতে কারখানা বন্ধ করে দিতে চাইছেন। তাঁরা শ্রমিক অসন্তোষের দোষ দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেউলিয়া হওয়ার পাঁয়তারা করছেন—এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এ সুযোগ আমরা তাঁদের দেব না। এ ছাড়া কোরবানির ঈদে শ্রমিকেরা ছুটি পান না। তাই ঈদুল ফিতরে পরিবারের সঙ্গে যেন শ্রমিকেরা কাটাতে পারেন এবং মজুরি প্রদানে আন্তরিক কারখানাগুলোকে ঈদের আগে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা কর্মসূচি করছি। দাবি আদায় না হলে ঈদের পর শ্রমিকদের নিয়ে বসে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, ট্যানারিশিল্পের শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য ন্যূনতম মজুরিসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ট্যানারি বা চামড়াশিল্প খাতের নতুন মজুরিকাঠামোতে সর্বোচ্চ বা প্রথম গ্রেডে আছেন স্কিন সিলেক্টর বা হ্যান্ড মেজারার, বৈদ্যুতিক ও মেশিন মেরামত মিস্ত্রি, হ্যান্ড ফ্রেশারম্যান, বয়লার অপারেটরসহ ১৩ ধরনের শ্রমিক। বিভাগীয় শহর ও সাভারে এই গ্রেডের শ্রমিকের নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪ হাজার ১৬৮ টাকা, যা ২০১৮ সালে ছিল ২৫ হাজার ৪০০ টাকা। বিভাগীয় শহর ও সাভার এলাকার ট্যানারি শ্রমিকের নিম্নতম মজুরি বাড়িয়ে দ্বিতীয় গ্রেডে ২৮ হাজার ৩৮৮ টাকা; তৃতীয় গ্রেডে ২৪ হাজার ২ টাকা ও চতুর্থ গ্রেডে ২০ হাজার ৯৯৩ টাকা করা হয়েছে। এই চার গ্রেডের বাইরে অদক্ষ সাধারণ ও অন্য শ্রমিকেরা রয়েছেন সর্বশেষ বা পঞ্চম গ্রেডে। এই গ্রেডের নিম্নতম মজুরি বিভাগীয় শহর ও সাভারে ১৮ হাজার ১ টাকা ও অন্যান্য এলাকায় ১৭ হাজার ৪৮ টাকা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ