কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থানে সাংবাদিকতা শেষ হয়ে যাবে নাকি এর পুনর্জন্ম হবে, প্রযুক্তি ও সংবাদপত্র দুনিয়ায় সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এর মধ্যেই সাংবাদিকতার জগতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ইতালির সংবাদপত্র ইল ফোইও। বিশ্বে প্রথমবারের মতো এই সংবাদপত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে লেখা ‘এআই সংস্করণ’ প্রকাশ করছে। এ সংস্করণের প্রতিটি লেখা এআই ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। ইল ফোইওর পরিচালক ক্লডিও সেরাসা গত বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, সাংবাদিকতাকে খুন করতে নয় বরং এর পুনর্জন্ম দিতে তাঁরা পরীক্ষা চালিয়েছেন।

ইল ফোইও ইতালির বেশ পরিচিত পত্রিকা। এর প্রচারসংখ্যা ২৯ হাজার। পত্রিকার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে তারাই বিশ্বের প্রথম পুরো ছাপা সংস্করণের সংবাদগুলোয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করেছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এখনো নতুন প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে ইতিমধ্যে এটি বার্তাকক্ষ পরিচালনার ধরনে পরিবর্তন এনেছে।

গত মঙ্গলবার ইল ফোইও চার পাতার দৈনিক এআই সংস্করণ ছাপা শুরু করে। একই সঙ্গে তা অনলাইনেও ব্যবহার করা হয়। এ চার পাতায় ২২টি খবর ও ৩টি সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়। পত্রিকাটির নিয়মিত সংস্করণের পাশাপাশি এআই সংস্করণ প্রকাশ করা হয়। এসব পাতায় খবরের মধ্যে ঠাঁই পেয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির বক্তব্যের বিশ্লেষণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাম্প্রতিক ফোনালাপ নিয়ে সম্পাদকীয়, ফ্যাশন দুনিয়ার খবরের মতো নানা বৈচিত্র্যময় খবর।

ইল ফোইওর পরিচালক ক্লডিও সেরাসা এআই নিয়ে পরীক্ষার বিষয়টি এএফপির কাছে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দুটি উদ্দেশ্যে এ পরীক্ষা চালানো হয়। একটি হচ্ছে তত্ত্বকে বাস্তবে রূপান্তরিত করা। অন্যটি হচ্ছে, নিজেদের পরীক্ষা করা এবং এআইর সীমা বোঝা। পাশাপাশি এর সুযোগ ও সীমাবদ্ধতাগুলো খতিয়ে দেখা।

ক্লডিও বলেন, ‘আমাদের মতো একটি বিশেষ সংবাদপত্র থেকেই এসবের উদ্ভব হতে পারে। কারণ, আমাদের সংবাদপত্রটিতে বিদ্রূপাত্মক ও সৃজনশীল লেখা তৈরি করা হয়। আমরা এমন কাজ করি যা যন্ত্র দিয়ে সহজে তৈরি করা যায় না। আমাদের লক্ষ্য ছিল, বিশেষত্ব প্রদর্শনের সঙ্গে কিছু নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ইচ্ছা যা বিশ্বের কেউ কখনো করেনি।’

এটা কীভাবে সম্ভব হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে ক্লডিও বলেন, সম্পাদকীয় সভায় অনেক বিষয় উঠে আসে। এসব বিষয় নিয়মিত সংস্করণের পাশাপাশি এআই সংস্করণে প্রকাশ করা হয়। প্রতিটি প্রশ্ন এআইকে করার আগে তাকে বিশেষ কিছু নীতি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি ইল ফোইওর স্টাইল ধরে এআইকে লিখতে বলা হয়। ক্লডিও বলেন, ‘খুব বেশি ভুল থাকলে এআইকে আবার পরিবর্তন করতে বলা হয়। তবে সামান্য কিছু ভুল থাকলে তা গণ্য করা হয়নি। কারণ, আমরা এআইয়ের সীমা বুঝতে চেয়েছি।’

গত কয়েক দিনের এআই সংস্করণ ছাপিয়ে কী শিক্ষা পাওয়া গেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ক্লডিও বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সব প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। আমরা শিখেছি, এটি এমন কিছু করতে পারে, যা মানুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতার সমতুল্য। কিন্তু আমরা আরও শিখেছি যে দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিযোগিতায় আরও বেশি দক্ষতা তৈরি করতে হবে। উদ্ভাবনকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। কারণ, এটিকে বন্ধ করতে পারবেন না। এটিকে বুঝতে হবে, পরিচালনা করতে হবে এবং সুযোগে রূপান্তরিত করতে হবে।’

এআইয়ের এমন কাজে সাংবাদিকেরা উদ্বেগে রয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না। সবাই খুশি। প্রত্যেকে অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে এটি নিয়েও জানতে আগ্রহী। এ ছাড়া এআই সংস্করণ প্রকাশ করে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো গেছে। এআইকে ধন্যবাদ, ঐতিহ্যবাহী পত্রিকাকে নতুন করে আবিষ্কার করার জন্য। এআই সংস্করণ প্রকাশের প্রথম দিনেই পত্রিকার বিক্রি ৬০ শতাংশ বেড়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে পাঠকেরা কীভাবে নিচ্ছেন? এর জবাবে ইল ফোইওর পরিচালক বলেন, পাঠকদের ৯০ শতাংশ খুশি। ১০ শতাংশ উদ্বেগে রয়েছেন। তাঁরা স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করার আগে বিষয়টি নিশ্চিত হতে বলেন। তবে কেউই এ পরীক্ষাকে বোকা বা অর্থহীন হিসেবে দেখছেন না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত এআই স স করণ ব যবহ র কর স ব দপত র স স করণ র পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পত্রিকার ‘এআই সংস্করণ’ প্রকাশ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থানে সাংবাদিকতা শেষ হয়ে যাবে নাকি এর পুনর্জন্ম হবে, প্রযুক্তি ও সংবাদপত্র দুনিয়ায় সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এর মধ্যেই সাংবাদিকতার জগতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ইতালির সংবাদপত্র ইল ফোইও। বিশ্বে প্রথমবারের মতো এই সংবাদপত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে লেখা ‘এআই সংস্করণ’ প্রকাশ করছে। এ সংস্করণের প্রতিটি লেখা এআই ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। ইল ফোইওর পরিচালক ক্লডিও সেরাসা গত বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, সাংবাদিকতাকে খুন করতে নয় বরং এর পুনর্জন্ম দিতে তাঁরা পরীক্ষা চালিয়েছেন।

ইল ফোইও ইতালির বেশ পরিচিত পত্রিকা। এর প্রচারসংখ্যা ২৯ হাজার। পত্রিকার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে তারাই বিশ্বের প্রথম পুরো ছাপা সংস্করণের সংবাদগুলোয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করেছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এখনো নতুন প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে ইতিমধ্যে এটি বার্তাকক্ষ পরিচালনার ধরনে পরিবর্তন এনেছে।

গত মঙ্গলবার ইল ফোইও চার পাতার দৈনিক এআই সংস্করণ ছাপা শুরু করে। একই সঙ্গে তা অনলাইনেও ব্যবহার করা হয়। এ চার পাতায় ২২টি খবর ও ৩টি সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়। পত্রিকাটির নিয়মিত সংস্করণের পাশাপাশি এআই সংস্করণ প্রকাশ করা হয়। এসব পাতায় খবরের মধ্যে ঠাঁই পেয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির বক্তব্যের বিশ্লেষণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাম্প্রতিক ফোনালাপ নিয়ে সম্পাদকীয়, ফ্যাশন দুনিয়ার খবরের মতো নানা বৈচিত্র্যময় খবর।

ইল ফোইওর পরিচালক ক্লডিও সেরাসা এআই নিয়ে পরীক্ষার বিষয়টি এএফপির কাছে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দুটি উদ্দেশ্যে এ পরীক্ষা চালানো হয়। একটি হচ্ছে তত্ত্বকে বাস্তবে রূপান্তরিত করা। অন্যটি হচ্ছে, নিজেদের পরীক্ষা করা এবং এআইর সীমা বোঝা। পাশাপাশি এর সুযোগ ও সীমাবদ্ধতাগুলো খতিয়ে দেখা।

ক্লডিও বলেন, ‘আমাদের মতো একটি বিশেষ সংবাদপত্র থেকেই এসবের উদ্ভব হতে পারে। কারণ, আমাদের সংবাদপত্রটিতে বিদ্রূপাত্মক ও সৃজনশীল লেখা তৈরি করা হয়। আমরা এমন কাজ করি যা যন্ত্র দিয়ে সহজে তৈরি করা যায় না। আমাদের লক্ষ্য ছিল, বিশেষত্ব প্রদর্শনের সঙ্গে কিছু নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ইচ্ছা যা বিশ্বের কেউ কখনো করেনি।’

এটা কীভাবে সম্ভব হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে ক্লডিও বলেন, সম্পাদকীয় সভায় অনেক বিষয় উঠে আসে। এসব বিষয় নিয়মিত সংস্করণের পাশাপাশি এআই সংস্করণে প্রকাশ করা হয়। প্রতিটি প্রশ্ন এআইকে করার আগে তাকে বিশেষ কিছু নীতি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি ইল ফোইওর স্টাইল ধরে এআইকে লিখতে বলা হয়। ক্লডিও বলেন, ‘খুব বেশি ভুল থাকলে এআইকে আবার পরিবর্তন করতে বলা হয়। তবে সামান্য কিছু ভুল থাকলে তা গণ্য করা হয়নি। কারণ, আমরা এআইয়ের সীমা বুঝতে চেয়েছি।’

গত কয়েক দিনের এআই সংস্করণ ছাপিয়ে কী শিক্ষা পাওয়া গেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ক্লডিও বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সব প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। আমরা শিখেছি, এটি এমন কিছু করতে পারে, যা মানুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতার সমতুল্য। কিন্তু আমরা আরও শিখেছি যে দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিযোগিতায় আরও বেশি দক্ষতা তৈরি করতে হবে। উদ্ভাবনকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। কারণ, এটিকে বন্ধ করতে পারবেন না। এটিকে বুঝতে হবে, পরিচালনা করতে হবে এবং সুযোগে রূপান্তরিত করতে হবে।’

এআইয়ের এমন কাজে সাংবাদিকেরা উদ্বেগে রয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না। সবাই খুশি। প্রত্যেকে অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে এটি নিয়েও জানতে আগ্রহী। এ ছাড়া এআই সংস্করণ প্রকাশ করে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো গেছে। এআইকে ধন্যবাদ, ঐতিহ্যবাহী পত্রিকাকে নতুন করে আবিষ্কার করার জন্য। এআই সংস্করণ প্রকাশের প্রথম দিনেই পত্রিকার বিক্রি ৬০ শতাংশ বেড়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে পাঠকেরা কীভাবে নিচ্ছেন? এর জবাবে ইল ফোইওর পরিচালক বলেন, পাঠকদের ৯০ শতাংশ খুশি। ১০ শতাংশ উদ্বেগে রয়েছেন। তাঁরা স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করার আগে বিষয়টি নিশ্চিত হতে বলেন। তবে কেউই এ পরীক্ষাকে বোকা বা অর্থহীন হিসেবে দেখছেন না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ