সাংবাদিকতার স্বাধীনতার জন্য সংবিধান ও আইন সংষ্কারের সুপারিশ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের
Published: 22nd, March 2025 GMT
স্বাধীন ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার ওপর গুরুত্বারোপ করে নানা ধরনের সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে জবাবদিহির ওপরও গুরুত্ব দিয়েছে তারা। সাংবাদিকতার স্বাধীনতার জন্য সংবিধান ও আইন সংস্কার এবং কোনো কোনো আইনের ধারা বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন আজ শনিবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদসহ অন্য সদস্যরা তাঁদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেন।
পরে যমুনার সামনে সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন কমিশনপ্রধান কামাল আহমেদ। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে কমিশনের সুপারিশগুলো সাংবাদিকদের দেওয়া হয়।
গত বছরের ১৮ নভেম্বর গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। গণমাধ্যমকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষ্যে এই ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হয়। প্রায় চার মাস কাজ করার পর কমিশন আজ তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে।
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের সংশোধন প্রয়োজন। যাতে করে বাক্স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় জাতীয় নিরাপত্তা ও বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তিসংগত বিধিনিষেধের বিষয়টি শুধু যুদ্ধাবস্থায় প্রযোজ্য হবে। কমিশনের ভাষ্য সাংবাদিকতার স্বাধীনতার বিষয়ে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে সংবিধানে আলাদা ও সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। যেমন সুইজারল্যান্ডের সংবিধানে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ ও সূত্রের গোপনীয়তা রক্ষা ও সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন না করার অধিকার নিশ্চিত করেছে। সুইডেনের সংবিধানে ফ্রিডম অব প্রেসের অনুরূপ গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানেও সুইজারল্যান্ডের সংবিধানের মতো সাংবাদিকতার স্বাধীনতার গ্যারান্টির প্রশ্নটি সুনির্দিষ্টভাবে ও বিশদে লিপিবদ্ধ করা সমীচীন।
কমিশন বলেছে, ফৌজদারি মানহানির সব আইন যেমন ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৯, ৫০০ এবং ৫০২ ধারা এবং ২০২৩ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারা বাতিল করা উচিত। সেই সঙ্গে সাংবাদিকদের মানহানি–সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে প্রস্তাবিত গণমাধ্যম কমিশনের ওপর ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।
অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৫ ধারা সংশোধন করে কেবল জাতীয় নিরাপত্তার ওপর জোর দেওয়া উচিত এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য জনস্বার্থের প্রশ্নে আইনি সুরক্ষার ব্যবস্থা সংযোজন করা উচিত।
এ ছাড়া কমিশন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের ১৪ অনুচ্ছেদের অধীন ন্যায়বিচারের অধিকার এবং নির্দোষের স্বীকৃতি রক্ষার জন্য ১৯২৬ সালের আদালত অবমাননা আইন পুনর্বিবেচনা করতে বলেছে। তারা বলেছে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য–সংক্রান্ত দণ্ডবিধির ২৯৫ ক এবং ২৯৮ ধারা ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৮ ধারা বাতিল করা উচিত।
তথ্য অধিকার আইনের ৭ নম্বর ধারা সংশোধন করে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সংগতি রেখে বিধান যুক্ত করা উচিত। যাতে তথ্য প্রকাশের ফলে বিচারকাজ, জাতীয় নিরাপত্তা বা কোনো ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণ্ন না হয়; কিন্তু জনস্বার্থে তথ্য প্রকাশ করা অত্যাবশ্যক হলে এই বাধাগুলো অতিক্রম করার জন্য একটি ‘ব্যতিক্রমের’ বিধান থাকা উচিত হবে। এ ছাড়া জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ এবং অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ২০১৭ পুনর্বিবেচনা উচিত।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কৃষি ঋণ বিতরণের আগে সিআইবি রিপোর্ট যাচাইয়ের নির্দেশ
শস্য ও ফসল ঋণের মঞ্জুরি বা বিদ্যমান ঋণ নবায়নে সিআইবি রিপোর্ট সংগ্রহের বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনায়, নতুন কৃষি ঋণ মঞ্জুরি বা বিদ্যমান ঋণ নবায়নের ক্ষেত্রে সিআইবি রিপোর্ট যাচাই করতে বলা হয়েছে। আগে নতুন ঋণ মঞ্জুরি বা বিদ্যমান ঋণ নবায়নের জন্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত শস্য ও ফসল ঋণের ক্ষেত্রে সিআইবি রিপোর্ট সংগ্রহের প্রয়োজন হতো না।
রবিবার (২৩ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, সিআইবি রিপোর্ট যাচাই ব্যতীত ঋণ প্রদান করা হলে একজন গ্রাহক বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিমাণের একাধিক শস্য ও ফসল ঋণ গ্রহণ করলেও তা ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকের পক্ষে জানা সম্ভব হচ্ছে না। এ প্রক্রিয়ায় খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে সিআইবি প্রতিবেদন সংগ্রহ করা পূর্বের তুলনায় অনেক সহজ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি সার্ভার ব্যবহার করে দ্রুত ঋণ আবেদনকারীর সিআইবি রিপোর্ট সংগ্রহ করতে পারছে।
এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোকে কৃষি ও পল্লী ঋণের (এমএফআই লিংকেজ ব্যতীত) আওতাভুক্ত সকল খাতে যে কোন পরিমাণের নতুন ঋণ মঞ্জুরি বা বিদ্যমান ঋণ নবায়নের জন্য সিআইবি রিপোর্ট যাচাই করতে হবে। এ নির্দেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
ঢাকা/এনএফ/এনএইচ