ভায়াবহ শিল্পদূষণ, সুতাং নদীর পানি-মাছে মিলছে মাইক্রোপ্লাস্টিক
Published: 22nd, March 2025 GMT
হবিগঞ্জে ভয়াবহ শিল্পদূষণে সুতাং নদীর পানি ও মাছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়া নদীর পানির ভৌত-রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সুতাং নদীর পানি ও মাছের উপর একটি গবেষণা পরিচালনা করছেন। প্রায় এক দশক ধরে শিল্পদূষণের শিকার এই নদীর দূষণের মাত্রা নির্ধারণের জন্য গবেষকরা নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে পানি, মাছ ও পলির নমুনা সংগ্রহ করছেন।
গবেষণা প্রকল্পের প্রধান এবং পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো.
গবেষক দলের সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক ইফতেখার আহমেদ ফাগুন বলেন, “পরীক্ষাগার বিশ্লেষণে ইতোমধ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, পানি ও মাছের নমুনায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি রয়েছে। এছাড়াও, শিল্পদূষণের ফলে নদীর পানির ভৌত-রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলে নদীর নিম্নপ্রবাহে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে।”
প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, নদীতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা অত্যন্ত কম, যা স্বাদুপানির মাছের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক নিচে। এছাড়া, গবেষকরা অক্সিডেশন-রিডাকশন পোটেনশিয়াল-এর এমন একটি মান পেয়েছেন, যা নদীতে হ্রাসকারক অবস্থা নির্দেশ করে। নদীর পানির পরিবাহিতা এবং মোট দ্রবীভূত কঠিন পদার্থের মাত্রাও স্বাদুপানির বাস্তুতন্ত্রের উপযুক্ত সীমার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি পাওয়া গেছে।
নমুনা সংগ্রহের সময় গবেষকরা দেখতে পান যে, নদীর নিম্নপ্রবাহে মাছের সংখ্যা অত্যন্ত কম। বিশেষ করে শৈলজোড়া খালের সংযোগস্থলের আশপাশের এলাকাটি সবচেয়ে উদ্বেগজনক ছিল, যেখানে শিল্পবর্জ্য নদীতে প্রবাহিত হয়। এই অঞ্চলে কোনো মাছ বা জলজ প্রাণি পাওয়া যায়নি।
খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তোফাজ্জল সোহেল বলেন, “কৃষিজমি, প্রাকৃতিক গ্যাস ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজলভ্যতার জন্য এই অঞ্চলে দ্রুত বিস্তৃতি লাভ করেছে বৃহৎ ও মাঝারি কলকারখানার। কারখানাগুলো অপরিশোধিত বর্জ্য নিক্ষেপ করে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটিয়ে আসছে। যত্রতত্র কৃষিজমি, খাল, ছড়াসহ সকল প্রকার জীবন জীবীকা দূষণের শিকার হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “কৃষিজমি ধ্বংস, ফসলের ক্ষতি, নিরাপদ পানির অভাবসহ ক্রমাগত দূষণের কারণে চরম পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে সুতাং পাড়ের মানুষের মাঝে।”
তিনি বলেন, “২০১৫ সালের শুরুতে কৃষিকাজে সেচ ব্যবস্থার নামে শৈলজুড়া নামক খালটি পুনঃখনন করে কয়েকটি কারখানার সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়। ফলে কোম্পানি-গুলোর অপরিশোধিত বর্জ্য সহজে খালের মাধ্যমে সুতাং নদীতে ছাড়া হচ্ছে। সুদূর মেঘনা পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে এই দূষণ।”
সম্প্রতি নদীর দূষণ এলাকার ১২টি স্থানে ৩০ বারের অধিক ঝাঁকি জাল ফেলে ৩টি ছোট পুঁটি মাছ, একটি ছোট টাকি মাছ ও একটি খলসে মাছ পাওয়া যায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ- মাছ, ব্যাঙসহ নদীর পানিতে কোন জলজ প্রাণি নেই। শামুক, ঝিনুক পর্যন্ত মরে গেছে। নদীর দূষণ এলাকায় প্রাণের অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে।
তোফাজ্জল সোহেল আরো বলেন, “দেশের সবথেকে ভয়াবহ দূষণের নদী হিসেবে সুতাং নদী পরিচিতি পেয়েছে। মাটি, পানি, বাতাসের ভয়াবহ দূষণের কারণে নদীপাড়ের জীবন জীবিকা চরম দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও দুর্গন্ধের ভেতর দিয়ে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে গ্রামবাসী। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা পরিবেশ বিমুখ এই শিল্পায়ন উন্নয়ন নয়, বরং এই অঞ্চলে ধ্বংস ডেকে এনেছে। চলমান দূষণ প্রক্রিয়া দ্রুত বন্ধ না করলে পরিবেশ ও জনসাস্থ্য মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে।”
ঢাকা/মামুন/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ র প ন র জন য পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
নিখোঁজের ৩ দিন পর পদ্মায় মিলল কিশোরের লাশ
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলায় নিখোঁজের তিন দিন পর নীরব শেখের (১৭) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার (২৩ মার্চ) সকালে উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের পদ্মা নদী থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত নীরব শেখ (১৭) একই ইউনিয়নের হরিণবাড়িয়া গ্রামের জিয়ারুল শেখের ছেলে।
নিহতের স্বজনেরা জানান, গত বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাতে নীবর বাড়ির পাশে মাধবপুর বাজারে যায়। গভীর রাত হয়ে গেলেও বাড়িতে না ফেরায় স্বজনেরা খোঁজ করতে থাকে। পরের দিন খোঁজ না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সন্ধান চেয়ে পোস্ট দেন। এর কিছু সময় পর অপরিচিত নম্বর থেকে নীরবের বাবার কাছে ফোন আসে। ফোনে ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে নীরবকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেন। টাকা নিয়ে পাংশা উপজেলার ব্রিজের কাছে যেতে বলে ফোন কেটে দেন। এরপর থেকে ওই নম্বর বন্ধ। শনিবার (২২ মার্চ) স্বজনেরা কালুখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। রবিবার (২৩ মার্চ) সকালে স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে নদীতে লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে ঘর থেকে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের মরদেহ উদ্ধার
হাসপাতালে টয়লেটের পাইপে নবজাতক
কালুখালী থানার ওসি মুহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, শনিবার ছেলেটির বাবা সাধারণ ডায়েরি করেন। পুলিশ এ বিষয়ে কাজও করছিল। সকালে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। কেন এই হত্যাকাণ্ড সেই বিষয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা/রবিউল/বকুল