সুন্দরবনের আগুন নেভানো শুরু হবে সকাল থেকে
Published: 22nd, March 2025 GMT
বাগেরহাটের সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগের কলমতেজী এলাকায় লাগা আগুন এখনো নেভানো শুরু হয়নি। আগামীকাল রবিবার (২৩ মার্চ) সকাল থেকে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে শনিবার (২২ মার্চ) বিকেল পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও পানি সংকটের কারণে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।
তবে আগুন যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে এজন্য ঘটনাস্থলের চারিদিকে ফায়ার লাইন কাটা হয়েছে। সন্ধ্যা নেমে আসায় এবং পানির উৎস ঘটনাস্থল থেকে দূরে থাকার কারণে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করীম জানান, আগুনের আশপাশে ফায়ার লাইন কাটা হয়েছে যেন আগুন বিস্তৃত হতে না পারে। ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী পানির উৎস প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে থাকায় আজ আগুন নেভানোর কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, “আগুন নেভানোর জন্য প্রস্তুতি চলছে। আশা করছি, রবিবার (২৩ মার্চ) সকাল থেকে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস সম্মিলিতভাবে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে পারবে।”
ঢাকা/শহিদুল/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বনবিবির খোঁজে প্রকৃতির শিল্পী
রাজধানীর কলাকেন্দ্রে যখন চলছে সাইদুল হক জুইসের প্রদর্শনী বনবিবির খোঁজে, তখন কাছে দূরে বহু স্থানে, সুন্দরবনে তো বটেই, চলছে বনভূমি ধ্বংসের কাজ। যদি বন না থাকে, বনবিবি মিলবে কোথায়?
হাজার বছর ধরে মানুষের বিশ্বাসে বেঁচে আছে বনদুর্গা বা বনবিবি। এখন শিকারিরা নিজের প্রতিও সহানুভূতিহীন। স্বার্থপরতা তো আত্মহত্যার মতোই। মানুষ এখন আত্মহত্যা করছে। বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। বনবিবি নেই। পেলে তো আর শিল্পী বনবিবির খোঁজে বেরোতেন না।
শিল্পীর কাজ জড়ের জগৎকে জীবনের জগতে পরিণত করা। কলাকেন্দ্রে চলমান সাইদুল হক জুইসের বনবিবির খোঁজের ছবি, ভাস্কর্য, উপস্থাপনাকর্ম দেখে মনে হলো, খোঁজ মিলতে চলেছে। ভক্তের আহ্বানে মা অলক্ষ্যে এসে উপস্থিত হবেন– এটাই স্বাভাবিক।
শিল্পকর্মগুলোর নামের ভেতর অভিযান ও অনুসন্ধানী মেজাজ স্পষ্ট। বনবিবির খোঁজে, কোথায় খুঁজে পাব, কোথায় খুঁজে পাব তারে, সুন্দরবনের ইতিকথা এমন শিরোনামের আড়ালে প্রাকৃত নারীশক্তির অধিষ্ঠান দেখি। নারী তো প্রকৃতি। প্রকৃতির মতোই সে উর্বরা, রূপসী, অবরোধবিনাশিনী, জন্মদায়িনী। মানুষের শিল্পী মানুষের মাঝেই তো প্রাকৃত দেবীকে খুঁজবেন, এ আর বিস্ময়ের কী। নারীরা অবাধে স্থান পেয়েছেন কোলাজে। যেহেতু শিল্পকর্ম মানেই সেখানে শিল্পীর নিজস্ব জগতের আইনের অধিষ্ঠান থাকতে হবে, প্রতি আঁচড়ে ফুটে উঠতে হবে মৌলিক ক্ষত, সুতরাং দর্শকের চোখ সেই নারীচয়ের চতুর্পাশে শিল্পীর হৃদয়মাধুরী প্রকাশ করে এমন রংরঙিন আঁচড় দেখতে পাবেন অসংখ্য। এ কাজগুলো লক্ষণীয়। বনের একেবারেই প্রাকৃত আকৃতি এখানে প্রকাশিত।
শিল্প মানেই কিন্তু তথাকথিত ‘সুন্দর’ নয়, শিল্পী এই বিশ্বাস করেন। জানতে পারি কথাসাহিত্যিক সাগুফতা শারমীন তানিয়ার লেখা থেকে। নান্দনিক সেই ভূমিকায় তিনি শিল্পী সাইদুল হক জুইসের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পচিন্তা চিহ্নিত করেছেন। চিন্তাকে আকার দেওয়াও শিল্প। এইখানে সাইদুল হক জুইস সম্ভবত জড় জগৎ নির্মিত ভাস্কর্যকর্ম কিংবা আঁচড়ভিত্তিক স্কেচগুলোর ভাষায় সাহিত্যের সঙ্গে সদালাপে বসে গেলেন। সাহিত্য তো চিন্তারই শিল্পীত রূপ। সেখানে চিন্তার বাহন ভাষা। রং কিংবা ধাতু নয়। সাইদুল হক জুইস শিল্পকে সহজবোধ্য, সাধারণের সঙ্গে যোগাযোগসক্ষম রাখতে চান।
প্রকৃতি শিল্পীর অন্তর দেগে দিতে ভালোবাসে। শিল্প প্রাকৃত। সুতরাং শিল্পী প্রকৃতির বিনিয়োগের খাতায়। শিল্পীর অন্তরে ওই দেগে দেওয়াটাই প্রকৃতির মূলধন। আশির দশকের মাঝামাঝি স্নাতকোত্তর সাইদুল হক জুইসের অন্তরে প্রকৃতি কম বিনিয়োগ করেনি। সর্বশেষ বিনিয়োগটি কভিড মহামারি। এর ভয়াবহ নিঃসঙ্গতার বোধ তাকে ক্রমশ কারণসন্ধানী করে তোলে। মানুষের অতিনিয়ন্ত্রণের নেশা যেভাবে অনিয়ন্ত্রণের জন্ম দিচ্ছে, নরক করে তুলছে পার্থিব স্বর্গকে, এসবের কার্যকারণ আবিষ্কারে তো নিজের দিকে তাকানোর পর্যাপ্ত সময় দিতে হয়। সেই সময়টা কভিড শিল্পীদের দিয়েছে। এমন সময় তারা চাননি, কিন্তু পেয়েছেন। প্রকৃতির পৃথক রূপ পৃথকভাবে তাঁর মাতা ও প্রেয়সী। ছোটবেলার প্রকৃতি-সন্নিধানই তাকে কখনও সেই আদর, সেই মমতা ভুলতে দেয়নি। নয়তো জন্মস্থান রংপুরে তিনি কারুপণ্যের দপ্তরকে এমন বিশ্বমানের উদ্ভিজ স্বর্গে পরিণত করেন কী করে? যারা কারুপণ্যের কারখানা দেখেননি, রংপুর গেলে সাইদুল হক জুইসের সেই কাজ, দেখে আসতে পারেন।
শিল্পকর্মে বনদেবীর অধিষ্ঠান দেখতে হলে আসতে হবে কলাকেন্দ্রেই। বেশি সময় কোথায়। ২০ এপ্রিলের পর পর্দা নেমে যাবে এ প্রদর্শনীর।