দুই বছর পর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের আবার নিয়ন্ত্রণ নিল সুদানের সেনাবাহিনী
Published: 22nd, March 2025 GMT
সুদানের সেনাবাহিনী দুই বছর পর রাজধানী খার্তুমে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। দুই বছর আগে দেশটিতে সংঘাতের শুরুর দিকে আধা সামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) প্রাসাদটি দখল করেছিল।
সেনাবাহিনীর সদস্যরা সম্প্রতি প্রাসাদের কাছাকাছি চলে আসে। এ অবস্থায় সেনাসমর্থিত সরকার গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঘোষণা দিল।
সুদানের তথ্যমন্ত্রী খালেদ আল-আইসার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘আজ (শুক্রবার) আমরা পতাকা উত্তোলন করেছি, প্রাসাদ এখন আমাদের হাতে। বিজয় সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে সেনাসদস্যদের প্রাসাদ কমপ্লেক্সে উল্লাস করতে দেখা গেছে।
২০২৩ সালের এপ্রিলে সুদানে সংঘাতের শুরুর দিকে আরএসএফ প্রাসাদ কমপ্লেক্স এবং রাজধানী খার্তুমের বড় অঞ্চল দখল করে নেয়।
আরএসএফ প্রাসাদ কমপ্লেক্স দখলে নেওয়ার পর সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বাধীন সরকার রাজধানী ছেড়ে লোহিত সাগরের উপকূলীয় শহর পোর্ট সুদানে সরে যেতে বাধ্য হয়।
প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ কমপ্লেক্সে দুটি ভবন রয়েছে। মূলটি ওসমানী-মিসরীয় প্রজাতন্ত্রের প্রাসাদ, যা তৈরি করা হয়েছিল ১৮২৫ সালে। পরে ২০১৫ সালে সেখানে সবচেয়ে বড় প্রাসাদটি তৈরি করেন দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির।
আদি ভবনটি ছোট হলেও সেটি প্রতীকীভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ, এটাকে তখন প্রজাতন্ত্রের প্রাসাদ বলা হতো। নিজেকে ইমাম মাহদি এবং মিসরের শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারী মুহাম্মদ আহমদ বিন আবদুল্লাহর অনুসারীরা ১৮৮৫ সালে বিখ্যাত ব্রিটিশ মেজর জেনারেল চার্লস জর্জ গর্ডনকে রিপাবলিকান প্রাসাদের সিঁড়িতে হত্যা করেছিল।
চার্লস জর্জ গর্ডন ইতিহাসে ‘গর্ডন পাশা’ হিসেবে পরিচিত। তাঁর হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে ওসমানি-মিসরীয় শাসনের অবসান ঘটে।
দুই বছর আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নতুন ও পুরোনো দুটি ভবনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ড্রোন হামলা
নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে একটি ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে আরএসএফ। এতে তিনজন সাংবাদিক নিহত হন। তাঁরা সুদানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের জন্য সেখানে কাজ করছিলেন।
আরএসএফ জানিয়েছে, তারা প্রাসাদের আশপাশেই রয়েছেন। লড়াই এখনো ‘শেষ হয়নি’।
গত কয়েক মাসে সুদানের মধ্যাঞ্চলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান নিয়ন্ত্রণে নেয় সেনাবাহিনী। এতে সেখানে আরএসএফ ক্রমে কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
তবে পশ্চিম দিকের অঞ্চল দারফুরে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করেছে আরএসএফ। আধা সামরিক বাহিনীটি সেখানে গণহত্যা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর সুদানের সেনাবাহিনীর সদস্যদের উল্লাস। রাজধানী খার্তুমে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে, ২১ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র স দ কমপ ল ক স দ ই বছর
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখলে নিল সুদানের সেনাবাহিনী
সুদানের নিয়মিত সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের দিকে অগ্রসর হয়েছিল। শুক্রবার সেনাবাহিনী খার্তুমে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রায় দুই বছর আগে এই প্রাসাদটি আধা সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিল। সুদানের রাষ্ট্রীয় টিভি এবং সামরিক সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, আধা সামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) সদস্যদের ধাওয়া করার জন্য সুদানের নিয়মিত সেনাবাহিনী প্রাসাদের আশপাশের এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। এ বিষয়ে আরএসএফের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, রাজধানী খার্তুমের কিছু কেন্দ্রীয় এলাকায় মাঝেমধ্যে গুলিবর্ষণের শব্দ শোনা গেছে।
জাতিসংঘের মতে, এই সংঘাত বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকটের দিকে পরিচালিত করেছে।
যার ফলে দেশজুড়ে বেশ কয়েকটি স্থানে দুর্ভিক্ষ এবং রোগব্যাধি দেখা দিয়েছে। আধা সামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এবং সুদানের নিয়মিত সেনাবাহিনী উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্যদিকে আরএসএফের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগও আনা হয়েছে। উভয় পক্ষই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
২০২৩ সালের এপ্রিলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আধা সামরিক বাহিনী দ্রুত প্রাসাদ এবং রাজধানীর বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়।
কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সুদানের সশস্ত্র বাহিনী আবার ফিরে এসেছে এবং নীল নদের তীরে প্রাসাদের দিকে অগ্রসর হয়েছে।
আরএসএফ খার্তুম এবং প্রতিবেশী ওমদুরমান এবং পশ্চিম সুদানের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। সেখানে তারা দারফুরে সেনাবাহিনীর শেষ শক্ত ঘাঁটি আল-ফাশির দখলের জন্য লড়াই করছে।
রাজধানী দখল করলে সেনাবাহিনীর মধ্য সুদানের সম্পূর্ণ দখল দ্রুত নিতে পারবে এবং দুই বাহিনীর মধ্যে দেশের পূর্ব-পশ্চিম আঞ্চলিক বিভাগ আরো শক্ত হতে পারে। উভয় পক্ষই দেশের অবশিষ্ট অংশের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং শান্তি আলোচনার কোনো প্রচেষ্টা বাস্তবায়িত হয়নি।
বেসামরিক শাসনে পরিকল্পিত রূপান্তরের আগে সুদানের সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।
সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তার সাবেক ডেপুটি ও আরএসএফ কমান্ডার মোহাম্মদ হামদান দাগলোর মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। শুধু বৃহত্তর খার্তুম অঞ্চল থেকেই ৩৫ লাখের বেশি মানুষ নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে, যা যুদ্ধের আগের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি।
এই সংঘাত সুদানকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। উত্তর ও পূর্ব অংশ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, আর পশ্চিম ও দক্ষিণের বেশির ভাগ এলাকা আরএসএফের দখলে।
ঢাকা/এনএইচ