সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী ফরেস্ট টহল ফাঁড়ি এলাকায় লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে বনের মধ্যে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ফায়ার লাইন (শুকনা পাতা ও মাটি সরিয়ে নালা তৈরি) কাটা হয়েছে। তবে কাছাকাছি পানির উৎস না থাকায় শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে পানি দেওয়া যায়নি।

আজ সকালে কলমতেজী টহল ফাঁড়ি-সংলগ্ন বনের টেপার বিল এলাকায় ধোঁয়া দেখতে পান পাশের এলাকার বাসিন্দারা। পরে বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দারা একসঙ্গে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। বিকেলের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিস।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, বন বিভাগের সঙ্গে শত শত স্থানীয় বাসিন্দা আগুন নিয়ন্ত্রণে বনের মধ্যে শুকনা পাতা ও মাটি সরিয়ে নালা তৈরি করে ফায়ার লাইনের কাজ করেন। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায়ও বনের বেশ কয়েকটি স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়। তবে ঘন গাছপালার ভেতর দিয়ে যাতায়াত ও পানির পাইপ নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। বিকেলে বন বিভাগ ভোলা নদীতে নিজস্ব পাম্পমেশিন বসিয়ে পাইপ টানতে শুরু করে। সাড়ে চারটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিস। তবে সন্ধ্যা নামায় তারা বন থেকে বের হয়ে এসেছে।

ঘটনাস্থল ঘুরে আসা পশ্চিম রাজাপুর গ্রামের এইচ এম জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বনের বেশ ভেতরে আগুন লেগেছে। প্রায় তিন কিলোমিটার পথ হাঁটতে হবে। গাছপালার মধ্যে হাঁটা যায় না। এখানে বনের মধ্যে ভালো ছিলাও (পায়ে হাঁটার পথ) নেই। গাছের কারণে কিছু জায়গা দিয়ে নিচু হয়ে চলতে হয়। এর মধ্য দিয়ে পাইপ টানতেও কষ্ট হয়েছে।’

আরও পড়ুনসুন্দরবনে আগুন, পানির উৎস পেতে বেগ৩ ঘণ্টা আগে

রাজাপুর এলাকার ইউপির সাবেক সদস্য পান্না মিয়া বলেন, সকালে সুন্দরবনের টেপার বিল এলাকার ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। পরে দুপুর থেকে স্থানীয় শত শত মানুষ আগুন নিয়ন্ত্রণে বন বিভাগের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। তিনিও সেখানে গিয়েছিলেন। বেশ দুর্গম পথ। আশপাশে কোনো নদী-খাল নেই। তাই পানি নিতে দেরি হচ্ছে। আগুন যেন না ছাড়ায়, সে জন্য সরু পথ (ফায়ার লাইন) কাটা হয়েছে এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকায়। সেখানে প্রচুর শুকনা পাতা, এটাই ভয়। যদিও দাউ দাউ করে কোথাও জ্বলছে না।

সুন্দরবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে বনের মধ্যে পানি নিতে পাশের ভোলা নদীতে নিজেস্ব পাম্প মেশিন বসিয়েছে বন বিভাগ। দুর্গম পথ হওয়া পাইপ নিতে দেরি হচ্ছে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দরবন বন ব ভ গ র এল ক এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

বনবিবির খোঁজে প্রকৃতির শিল্পী

রাজধানীর কলাকেন্দ্রে যখন চলছে সাইদুল হক জুইসের প্রদর্শনী বনবিবির খোঁজে, তখন কাছে দূরে বহু স্থানে, ‍সুন্দরবনে তো বটেই, চলছে বনভূমি ধ্বংসের কাজ। যদি বন না থাকে, বনবিবি মিলবে কোথায়?  
হাজার বছর ধরে মানুষের বিশ্বাসে বেঁচে আছে বনদুর্গা বা বনবিবি। এখন শিকারিরা নিজের প্রতিও সহানুভূতিহীন। স্বার্থপরতা তো আত্মহত্যার মতোই। মানুষ এখন আত্মহত্যা করছে। বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। বনবিবি নেই। পেলে তো আর শিল্পী বনবিবির খোঁজে বেরোতেন না।
শিল্পীর কাজ জড়ের জগৎকে জীবনের জগতে পরিণত করা। কলাকেন্দ্রে চলমান সাইদুল হক জুইসের বনবিবির খোঁজের ছবি, ভাস্কর্য, উপস্থাপনাকর্ম দেখে মনে হলো, খোঁজ মিলতে চলেছে। ভক্তের আহ্বানে মা অলক্ষ্যে এসে উপস্থিত হবেন– এটাই স্বাভাবিক। 
শিল্পকর্মগুলোর নামের ভেতর অভিযান ও অনুসন্ধানী মেজাজ স্পষ্ট। বনবিবির খোঁজে, কোথায় খুঁজে পাব, কোথায় খুঁজে পাব তারে, সুন্দরবনের ইতিকথা এমন শিরোনামের আড়ালে প্রাকৃত নারীশক্তির অধিষ্ঠান দেখি। নারী তো প্রকৃতি। প্রকৃতির মতোই সে উর্বরা, রূপসী, অবরোধবিনাশিনী, জন্মদায়িনী। মানুষের শিল্পী মানুষের মাঝেই তো প্রাকৃত দেবীকে খুঁজবেন, এ আর বিস্ময়ের কী। নারীরা অবাধে স্থান পেয়েছেন কোলাজে। যেহেতু শিল্পকর্ম মানেই সেখানে শিল্পীর নিজস্ব জগতের আইনের অধিষ্ঠান থাকতে হবে, প্রতি আঁচড়ে ফুটে উঠতে হবে মৌলিক ক্ষত, সুতরাং দর্শকের চোখ সেই নারীচয়ের চতুর্পাশে শিল্পীর হৃদয়মাধুরী প্রকাশ করে এমন রংরঙিন আঁচড় দেখতে পাবেন অসংখ্য। এ কাজগুলো লক্ষণীয়। বনের একেবারেই প্রাকৃত আকৃতি এখানে প্রকাশিত। 
শিল্প মানেই কিন্তু তথাকথিত ‘সুন্দর’ নয়, শিল্পী এই বিশ্বাস করেন। জানতে পারি কথাসাহিত্যিক সাগুফতা শারমীন তানিয়ার লেখা থেকে। নান্দনিক সেই ভূমিকায় তিনি শিল্পী সাইদুল হক জুইসের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পচিন্তা চিহ্নিত করেছেন। চিন্তাকে আকার দেওয়াও শিল্প। এইখানে সাইদুল হক জুইস সম্ভবত জড় জগৎ নির্মিত ভাস্কর্যকর্ম কিংবা আঁচড়ভিত্তিক স্কেচগুলোর ভাষায় সাহিত্যের সঙ্গে সদালাপে বসে গেলেন। সাহিত্য তো চিন্তারই শিল্পীত রূপ। সেখানে চিন্তার বাহন ভাষা। রং কিংবা ধাতু নয়। সাইদুল হক জুইস শিল্পকে সহজবোধ্য, সাধারণের সঙ্গে যোগাযোগসক্ষম রাখতে চান। 
প্রকৃতি শিল্পীর অন্তর দেগে দিতে ভালোবাসে। শিল্প প্রাকৃত। সুতরাং শিল্পী প্রকৃতির বিনিয়োগের খাতায়। শিল্পীর অন্তরে ওই দেগে দেওয়াটাই প্রকৃতির মূলধন। আশির দশকের মাঝামাঝি স্নাতকোত্তর সাইদুল হক জুইসের অন্তরে প্রকৃতি কম বিনিয়োগ করেনি। সর্বশেষ বিনিয়োগটি কভিড মহামারি। এর ভয়াবহ নিঃসঙ্গতার বোধ তাকে ক্রমশ কারণসন্ধানী করে তোলে। মানুষের অতিনিয়ন্ত্রণের নেশা যেভাবে অনিয়ন্ত্রণের জন্ম দিচ্ছে, নরক করে তুলছে পার্থিব স্বর্গকে, এসবের কার্যকারণ আবিষ্কারে তো নিজের দিকে তাকানোর পর্যাপ্ত সময় দিতে হয়। সেই সময়টা কভিড শিল্পীদের দিয়েছে। এমন সময় তারা চাননি, কিন্তু পেয়েছেন। প্রকৃতির পৃথক রূপ পৃথকভাবে তাঁর মাতা ও প্রেয়সী। ছোটবেলার প্রকৃতি-সন্নিধানই তাকে কখনও সেই আদর, সেই মমতা ভুলতে দেয়নি। নয়তো জন্মস্থান রংপুরে তিনি কারুপণ্যের দপ্তরকে এমন বিশ্বমানের উদ্ভিজ স্বর্গে পরিণত করেন কী করে? যারা কারুপণ্যের কারখানা দেখেননি, রংপুর গেলে সাইদুল হক জুইসের সেই কাজ, দেখে আসতে পারেন।
শিল্পকর্মে বনদেবীর অধিষ্ঠান দেখতে হলে আসতে হবে কলাকেন্দ্রেই। বেশি সময় কোথায়। ২০ এপ্রিলের পর পর্দা নেমে যাবে এ প্রদর্শনীর। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে জেলে গুলিবিদ্ধ
  • বনবিবির খোঁজে প্রকৃতির শিল্পী