বিটিভি, বেতার ও বাসসকে একীভূত করে একটি সংস্থা করার সুপারিশ
Published: 22nd, March 2025 GMT
বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) একীভূত করে একটি প্রতিষ্ঠান করার সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। এই প্রতিষ্ঠানের নাম হতে পারে ‘বাংলাদেশ সম্প্রচার সংস্থা বা জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা’। এই প্রতিষ্ঠানের বার্তা বিভাগ হিসেবে বাসসকে একীভূত করতে বলেছে কমিশন। এ ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানে তিনটি বিভাগ থাকবে। এগুলো হলো টেলিভিশন, বেতার ও বার্তা বিভাগ।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন আজ শনিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদসহ অন্য সদস্যরা প্রতিবেদন জমা দেন।
পরে যমুনার সামনে সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন কমিশন প্রধান কামাল আহমেদ। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ সাংবাদিকদের কাছেও দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনগণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে : প্রধান উপদেষ্টা১ ঘণ্টা আগেবর্তমানে বিটিভি, বেতার ও বাসস স্বতন্ত্র ব্যবস্থাপনায় চলে। কমিশনে সুপারিশে বলা হয়েছে, সম্প্রচারমাধ্যম হিসেবে টেলিভিশন ও বেতার এক ছাদের নিচের একটি সংঘবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের দুটি শাখা হিসেবে কাজ করলে উভয় প্রতিষ্ঠানের সম্পদ, দক্ষতা ও সৃজনশীলতার সর্বোত্তম ব্যবহার হবে। এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে বিবিসি ও ডয়চে ভেলে। এটা সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে সংবাদ ও সাময়িক প্রসঙ্গের অনুষ্ঠানমালার ক্ষেত্রে। ভিডিও ফরম্যাটে ধারণকৃত প্রতিবেদন বা অনুষ্ঠানের অডিও ফরম্যাটকে আলাদা করা খুব কঠিন কিছু নয়। আবার বেতারের অনেক অনুষ্ঠানই এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের জন্য ভিডিও স্ট্রিমিং করা হয়। বাংলাদেশ বেতার ঢাকা ও আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলো তা নিয়মিত করছে। এ বাস্তবতায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশের বেতারের মধ্যে সহযোগিতার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
কমিশন বলছে, বিটিভি ও বেতার উভয়ের বার্তাকক্ষ মোটেও পেশাদার সাংবাদিকতার সঙ্গে পরিচিত নয়, বরং পুরোটাই সরকারি তথ্যবিবরণী, রাষ্ট্রীয় আচার-অনুষ্ঠানের খবর এবং উন্নয়ন বার্তা প্রচারে অভ্যস্ত। প্রধানত সরকারি তথ্য (সম্প্রচার) কর্মকর্তারা বার্তা বিভাগের নেতৃত্ব দেন এবং রিপোর্টার হিসেবে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাঁদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ একেবারেই থাকে না। বিপরীতে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সংস্থা বাসসে বিভিন্ন ত্রুটিবিচ্যুতি ও দুর্বলতা সত্ত্বেও একটি পেশাদার বার্তাকক্ষ রয়েছে। তবে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও দলীয়করণের কারণে সংস্থাটি আজ পর্যন্ত একটি আদর্শ বার্তা সংস্থায় পরিণত হতে পারেনি। প্রথম প্রেস কমিশনের রিপোর্টে সরকারের মালিকানায় কোনো বার্তা সংস্থা থাকা উচিত নয় বলে মতামত দেওয়া হয়েছিল। বিশ্বের বহু দেশেই কোনো রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা নেই।
আরও পড়ুন‘ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়ার’ সুপারিশ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের৪ ঘণ্টা আগেএ বাস্তবতায় কমিশন মনে করেছে, স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকিয়ে রাখার চেয়ে বাসসকে বিটিভি ও বেতারের নতুন সম্মিলিত প্রতিষ্ঠানের ‘বার্তা বিভাগ’ হিসেবে একীভূত করাই হবে রাষ্ট্রীয় সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার। এই কেন্দ্রীয় বার্তা কক্ষের তৈরি খবর বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত হবে। বিটিভি, বেতার ও বাসসের সমন্বয়ে নতুন প্রতিষ্ঠানকে ‘বাংলাদেশ সম্প্রচার সংস্থা বা জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা’ নামকরণ করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এই প্রতিষ্ঠানে তিনটি বিভাগ থাকবে। এগুলো টেলিভিশন, বেতার ও বার্তা বিভাগ। নতুন সম্প্রচার সংস্থায় বার্তা বিভাগ তার বর্তমান গ্রাহকদের প্রদত্ত সেবা অব্যাহত রাখবে। প্রতিটি বিভাগের প্রধান হিসেবে একজন পরিচালক থাকবেন এবং নতুন একীভূত সম্প্রচার সংস্থার প্রধান হবেন একজন মহাপরিচালক।
এ ছাড়া গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল এবং প্রস্তাবিত সম্প্রচার কমিশনের পরিবর্তে বাংলাদেশ গণমাধ্যম কমিশন করার সুপারিশ করেছে। প্রস্তাবিত গণমাধ্যম কমিশন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি আইনের খসড়াও করে দিয়েছে সংস্কার কমিশন।
আরও পড়ুনসাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন বিসিএস নবম গ্রেডের মতো ও যোগ্যতা স্নাতক করার সুপারিশ৪ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর র স প র শ অন ষ ঠ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সেহরির সময় মুসলিমদের জাগিয়ে তোলেন অমুসলিম যাদব
ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রমজান মাস। গোটা মাস জুড়েই সুবহে সাদিকের আগে সেহরি এবং সূর্যাস্তের পর ইফতার করে থাকেন মুসলিমরা। আর গ্রামের মুসলমানরা সেহরির জন্য যাতে সময়মতো ঘুম থেকে উঠতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে চেষ্টার কোনো কমতি নেই স্থানীয় এক হিন্দু পরিবারের।
গোটা গ্রামের হিন্দুরা যখন গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন থাকে, তখন ওই রমজান মাসে ঘুমকে বিলাসিতা হিসাবেই মনে করে উত্তর প্রদেশের আজমগড় জেলার ছোট গ্রাম ‘কৌরিয়া’র হিন্দু ধর্মাবলম্বী গুলাব যাদবের পরিবার।
৪৫ বছর বয়সী গুলাব যাদব এবং তার ১২ বছর বয়সী ছেলে অভিষেক। রমজান মাসে ঘুম পরিত্যাগ করে
প্রতিদিন রাত ১টায় হাতে টর্চ এবং লাঠি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বাবা ও ছেলে। পায়ে হেঁটে গ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে যেতেই প্রতিটি মুসলিম বাড়িতে থামেন এবং হাঁক দেন। ওই পরিবারগুলো সেহরির জন্য জেগে আছে এই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই বাপ-বেটা পরের দরজায় গিয়ে হাঁক দেয়।
আর এভাবেই গত ৫০ বছর ধরে এই গুরু দায়িত্ব পালন করে আসছে যাদবের পরিবার। ১৯৭৫ সালে গুলাবের বাবা চিরকিত যাদবের শুরু করা একটি ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন পরবর্তী প্রজন্ম।
অতীতে রমজানের সময় বেশিরভাগ মসজিদে লাউডস্পিকার ব্যবহার করে রোজাদারদের জাগিয়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়ে আসছিল, কিন্তু শব্দদূষণ নিয়ে শীর্ষ আদালতের সাম্প্রতিক নির্দেশের ফলে ধর্মীয় স্থানগুলোতে শব্দদূষণের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
সেক্ষেত্রে, যাদবের এই নিবেদিত প্রচেষ্টা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নিজের শৈশবের কথা স্মরণ করে গুলাব যাদব বলেন, ছোটবেলায় তিনি কখনই পুরোপুরি বুঝতে পারেননি কেন তার বাবা রাতে বাইরে যেতেন, সেহরির জন্য লোকদের জাগিয়ে তুলতেন। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে এই ঐতিহ্যের পিছনের গভীর অর্থ বুঝতে পেরেছিলেন গুলাব। তিনি বলেন, “এখন আমি এটা করে অনেক শান্তি পাই।”
পেশায় একজন দিনমজুর গুলাব যাদব বছরের বেশিরভাগ সময় দিল্লিতে কাজ করে কাটান। কিন্তু রমজান এলে তিনি তার পরিবারের পাঁচ দশকের পুরোনো রীতিনীতি বজায় রাখার জন্য তার গ্রামে ফিরে আসেন। এমনকি গুলাবের বাবা যেমন তার জন্য করেছিলেন, ঠিক সেভাবেই তিনিও তার সন্তান অভিষেকের মধ্যেও সেই দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলার প্রত্যাশা নিয়ে চলেছেন। প্রতি রাতে, তিনি অভিষেককে সাথে নিয়ে বের হন এবং তাকে মুসলিমদের পরিবারের পবিত্র বিভিন্ন রীতিনীতির ঐতিহ্যের গুরুত্ব শেখান। গুলাবের অভিমত, “বাবার পর আমি যেমন এই দায়িত্বটা পালন করে আসছি, তেমনি আমি চাই আমার পরে আমার ছেলেও এই কাজটি চালিয়ে যাক।”
গুলাব যাদব জানান, “বাবা মারা যাওয়ার পর, আমার বড় ভাই কয়েক বছরের জন্য এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তার দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে সেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর থেকে আমি সেই দায়িত্ব গ্রহণ করে চলেছি এবং প্রতি রমজান মাসে আমি এই কাজটি করার জন্যই গ্রামে ফিরে আসব।”
স্বাভাবিকভাবেই একদিকে গুলাব যাদবের এই কর্মকাণ্ড বা প্রচেষ্টা যেমন গ্রামের মধ্যে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে তেমনি তার মুসলিম প্রতিবেশীরাও তাকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে দেখে আসছে। যাদবের প্রতিবেশী শফিক জানান, “সেহরির জন্য মানুষকে জাগিয়ে তোলা একটি মহৎ কাজ। গুলাব ভাই নিশ্চিত করেন যে সেহরিতে অংশ নিতে কেউ যেন বাদ না পড়েন। গোটা গ্রামে প্রায় দুই ঘণ্টা ঘুরে দেখার পর ফের আরেক রাউন্ড ঘুরে দেখে নিশ্চিত করেন যে তারা সবাই সেহরি খেয়েছে কিনা। এর চেয়ে পবিত্র আর কী হতে পারে?”
যাদবের কাজকে প্রশংসা করে শফিকের প্রশ্ন, যখন গীতা এবং কোরআন- উভয়ই প্রেমের বার্তা দেয়, তখন হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে কেন বিভেদ থাকবে? তার অভিমত, যেহেতু রমজান ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ, তাই পবিত্র রমজান মাসে রোজা রাখতে সাহায্য করে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের একটি অনুপ্রেরণামূলক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন গুলাব যাদব।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ