কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকা সত্ত্বেও যারা আয়কর রিটার্ন দেন না, তাদের নোটিশ দেওয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। তিনি বলেন, আমরা নোটিশ দেওয়া শুরু করেছি। এখন লোকজন হয়তো বলা শুরু করবে যে আমরা তো খুব ঝামেলায় আছি।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও জানান, আগামী বাজেটে নতুন করে কোনো কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, আমরা চিন্তা করেছি, বিদ্যমান কর অব্যাহতিও কমাব, উঠিয়ে দেব এবং যারা কম হারে দেয়, তাদের বাড়িয়ে দেব। নতুন কোনো কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না।

আজ শনিবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) মিলনায়তনে আয়োজিত ‘অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন তিনি। ইআরএফ ও রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‍্যাপিড) যৌথভাবে এ কর্মশালা আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো.

আবদুর রহমান খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র‍্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক আবু ইউসুফ। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন।

অনুষ্ঠানে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন, আগামী বাজেট কেমন হতে পারে। জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, প্রকৃত অর্থে আগামী বাজেট হবে ব্যবসাবান্ধব ও জনকল্যাণমুখী। কিছুদিন ধরে এনবিআর যে কাজগুলো করেছে, এর মাধ্যমে বিষয়টি আপনারা টেরও পেয়েছেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, এ বছর দুবার সয়াবিন তেলের শুল্ক কমানো হয়েছে; দুবার চিনির শুল্ক কমানো হয়েছে। এ ছাড়া খেজুর, ডাল, ডিম, চাল, পেঁয়াজ প্রভৃতি পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছি। তার সুফলও পাওয়া গেছে। আবদুর রহমান খান বলেন, ‘এতে (শুল্কছাড়ের ফলে) আমরা কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। তবে আমরা সেগুলো চিন্তা করিনি। আমরা জনস্বার্থ চিন্তা করেছি।’

অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন বলেন, বিগত সময়ে কর ব্যবস্থাপনা নিয়ে যেসব চিন্তাভাবনা হয়েছিল, তা ছিল অনেক বেশি গতানুগতিক। সেগুলোর কিছুটা দাতাদের ইচ্ছায়, কিছুটা (সরকারের) যা মনে হয় সেভাবে; কিছুটা চাপ থেকে এবং কিছুটা যেমন ইচ্ছা সেভাবে। তবে এখন সুযোগ এসেছে পরিকল্পিতভাবে কিছু করার; নতুন করে চিন্তাভাবনা করার। যারা আয়কর দেন না, তাদের টিআইএনের আওতায় এনে ধরা গেলেই কর-জিডিপি হার বাড়বে।

শওকত হোসেন আরও বলেন, সমস্যা হচ্ছে আমরা বিভিন্ন ব্যবস্থা বা নিয়মের কথা বলি; কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারি না। আবার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া এনবিআরের পক্ষেও বড় কোনো সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব না।

মূল প্রবন্ধে র‍্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক আবু ইউসুফ বলেন, দেশের আর্থিক উন্নতি, পরনির্ভরশীলতা কমানো ও আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে দেশের ভেতরে কর আহরণ বৃদ্ধি করা অত্যাবশ্যক; কিন্তু কর আহরণ ও কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে অবকাঠামো সমস্যার কারণে দেশের কর-জিডিপি হার এখনো অনেক কম।

দেশে রাজস্ব-জিডিপির হার বেশ কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে উল্লেখ করে আবু ইউসুফ বলেন, গত বছর এটি আরও কমে ৮ শতাংশের নিচে নেমেছে। প্রত্যক্ষ কর আহরণ কম হওয়ায় রাজস্ব আহরণের জন্য সরকার ভ্যাট ও বাণিজ্যকেন্দ্রিক রাজস্ব আদায়ে বেশি নির্ভর করছে, যা নিম্ন আয়ের মানুষদের প্রভাবিত করছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ র রহম ন খ ন

এছাড়াও পড়ুন:

করনীতিতে সংস্কার চান ব্যবসায়ী নেতারা

বর্তমান করনীতি ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব নয় বলে মনে করেন ব্যবসায়ী নেতারা। তাই এ নীতি সংস্কার করে ব্যবসাবান্ধব করার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট বৈঠকে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা। 
অর্থ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এ সভায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সংগঠনের বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন। লিখিত এ প্রস্তাবনায় সংগঠনটি বলেছে, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক নীতি সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। কর্মসংস্থানের স্বার্থে বিনিয়োগ, দেশীয় শিল্প ও সেবা এবং কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পে কর যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনতে হবে। 

এফবিসিসিআই করহার কমিয়ে আয়কর ও মূসকের আওতা সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন, পণ্য খালাস এবং সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ত্বরান্বিত করতে এসাইকুডা সিস্টেমের সার্বিক উন্নয়নসহ সিঙ্গেল উইন্ডো সংক্রান্ত কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা নিশ্চিতের পাশাপাশি বিনিয়োগ বাড়াতে সুদের হার কমিয়ে আনার প্রস্তাবও দিয়েছে সংগঠনটি। 
একই সঙ্গে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগামী বাজেটে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা চেয়েছে এফবিসিসিআই। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক খরচ কমানোর বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। এ ছাড়া রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নগদ সহায়তার বিকল্প সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে। 
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম লিখিত প্রস্তাবনায় বলেন, বর্তমান করনীতি কোনোভাবেই ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব নয়। তাই এটি সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব নীতি প্রণয়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংগঠনটির প্রস্তাব হচ্ছে, তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য উৎসে কর আদায়কে চূড়ান্ত কর আদায় হিসেবে গণ্য করে আগামী পাঁচ বছরের জন্য এ হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করতে হবে।  

বিকেএমইএ বলেছে, বর্তমানে রপ্তানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনার পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য। তারপরও এ প্রণোদনা পেতে উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্টেশন এবং অডিট প্রক্রিয়ায় হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রক্রিয়াটি সহজ করে রপ্তানির বিপরীতে অর্থ প্রত্যাবাসনের সময় হিসাব করে রপ্তানিকারককে সরাসরি দিতে হবে। একই সঙ্গে প্রণোদনার ওপর আয়কর অব্যাহতি দিতে হবে। 
সভা শেষে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সাংবাদিকদের বলেন, কর পদ্ধতি সহজ করতে অনেক দিন ধরেই দাবি জানানো হচ্ছে। এবার একটা পরিবর্তন আসবে বলে আশ্বাস পাওয়া গেছে। এখন ১ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) নিচ্ছে সরকার। তবে এটি চূড়ান্ত হিসাব নয়। আবার এই অর্থ পুরোপুরি সমন্বয় হচ্ছে না বা ফেরত দিচ্ছে না। এক কোটি টাকা এআইটি নিলেও ওই ব্যবসায়ী যখন ২০ লাখ টাকা করের রিটার্ন দাখিল করছেন, তখন অগ্রিম আয়কর কেটে রাখলেও তা ফেরত দিচ্ছে না। এতে করহার কত দাঁড়াচ্ছে তা সুনির্দিষ্ট নয়। এটা পরিবর্তন প্রয়োজন। 
বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, মোট বিক্রির ভিত্তিতে কর প্রক্ষেপণ করে এনবিআর, যা যৌক্তিক নয়। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চর্চাও অনুসরণ করা হয় না। পোশাক খাতকে ১ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হচ্ছে। যদিও এটা চূড়ান্ত হিসাব নিষ্পত্তি নয়। লোকসান হলেও ১ শতাংশ দিতে হয়। বেশ কিছু ক্ষেত্রে দ্বৈতকর হয়ে যায়। এসব কিছু বিষয়ে নিষ্পত্তিতে একমত হয়েছে এনবিআর। 

অর্থ উপদেষ্টা ড. সাহেলউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। ব্যবসা উপযোগী করনীতি প্রণয়নের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর উদ্যোগও থাকবে। তিনি বলেন, করের ব্যাপারে মতামত এসেছে। কিছু খাতে সুবিধা কম রয়েছে। ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়েছেন, কর কাঠামোর প্রক্রিয়া যেন অনলাইনে করা হয়। এ ছাড়া পেমেন্ট নিয়ে যে জটিলতা তা সমাধান চেয়েছেন তারা। এসব বিষয় নিয়ে কাজ করবে সরকার।     
বৈঠকে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা তাদের প্রস্তাব তুলে ধরেন। এ সময় অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • `সাজা মাইন্যা নিছি, কিন্তু ন্যায্য বিচার পাইনি’
  • টিআইএন থাকলেও রিটার্ন দেন না, তাদের নোটিশ দেওয়া শুরু
  • হাতিরঝিলে ৫ কোটি টাকার ইয়াবা জব্দ, চারজন গ্রেপ্তার
  • কথিত ৭৩০ কোটি টাকা রেমিট্যান্সে কী কী ‘অনিয়ম’ থাকতে পারে
  • করনীতিতে সংস্কার চান ব্যবসায়ী নেতারা
  • ঋণ পরিশোধে বিরতি চান ব্যবসায়ীরা