সাগরে মাছ নেই, জেলে পরিবারে ঈদ আনন্দ ম্লান
Published: 22nd, March 2025 GMT
ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। ঈদকে সামনে রেখে সারা দেশে চলছে উৎসবের প্রস্তুতি। প্রিয়জনের জন্য বিভিন্ন ধরনের পোশাক ও প্রসাধনী কিনতে মানুষজন ভিড় করছেন শপিংমল-ফুটপাতের ওপর থাকা দোকানগুলোতে। তবে, দীর্ঘদিন ধরে সাগরে মাছের আকাল থাকায় এবার ঈদ উৎসব ম্লান হতে চলেছে জেলে পরিবারগুলোর।
পটুয়াখালীর লতাচাপলী ইউনিয়নের পশ্চিম খাজুরা গ্রামের আবাসনের বাসিন্দা রাসেল হাওলাদার (৪০)। সেখানকার জরাজীর্ণ একটি ঘরে পরিবারের চার সদস্য নিয়ে তার বসবাস। প্রায় ৩ মাস ধরে তিন দফা সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ফিরছেন খুবই কম সংখ্যক মাছ নিয়ে। এই মাছ বিক্রি করে যা টাকা পেয়েছেন, তা দিয়ে সংসারের বাজার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। তাই এবার ম্লান হতে যাচ্ছে তার পরিবারে ঈদ আনন্দ।
শুধু রাসেল হাওলাদারই নয়, একই অবস্থা ওই আবাসনের ১২৭ পরিবারসহ জেলার অধিকাংশ জেলে পরিবারের। অনেক জেলে ঋণগ্রস্থ। ফলে এই পল্লীর শিশু থেকে শুরু করে সবার চোখে মুখে লক্ষ্য করা গেছে হতাশার ছাপ।
আরো পড়ুন:
পায়রায় জাহাজে কাটা পড়ছে জাল-দড়ি, নিঃস্ব হচ্ছে জেলেরা
‘রমজানে মাছের ঘাটতি হবে না’
রাসেল হাওলাদার বলেন, “একটি ট্রলারে আমরা ১০ জেলে তিন দফা সাগরে গেছি। ইলিশ একেবারেই পাইনি। কিছু হাছড়া মাছ পেয়েছি। সেই মাছ বিক্রি করে আমাদের বাজার খরচই ওঠেনি। বর্তমানে ঈদের কেনাকাটা তো দূরের কথা ঘরের বাজার চালানো দায় হয়ে পড়েছে।”
সোলেমান গাজী নামে অপর জেলে বলেন, “সাগর-নদীতে কোথাও মাছ নেই। তিনদিন আগে সাগর থেকে এসেছি, শুধুমাত্র তেল খরচ উঠেছে, বাজার খরচ ওঠেনি। এখন ঠিকমতো ঘরের বাজার করতে পারছি না। ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। ঈদে বাচ্চাদের কোনো কিছু কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই।”
জেলে হোসেন মিয়া বলেন, “আমি ২০ হাজার টাকার মতো দেনা হয়েছি। সাগরে মাছ না থাকায় এ দফায় আর সাগরে যাওয়া হয়নি। আসলে জেলে কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজও পারি না। তাই আমাদের ঈদ আনন্দে এবার মাটি হয়ে যাবে।”
কলাপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে সাগর ও নদীতে মাছের প্রাপ্তিতা অনেক কম রয়েছে। তাই জেলেরা বর্তমানে অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। জেলেদের সহযোগিতার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।”
ঢাকা/ইমরান/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ ঈদ উৎসব পর ব র আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদ আর বিজুর বিক্রি একসঙ্গে
পাহাড়ে ঈদ আর বৈসাবির কেনাকাটা চলছে একসঙ্গে। মুসলমানের ঈদ আর পাহাড়ি সম্প্রদায়ের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি কাছাকাছি সময়ে হওয়ায় রাঙামাটির মার্কেটগুলোতে কেনাকাটা জমে উঠেছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন দুই উৎসবকে কেন্দ্র করে জেলায় শতকোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে এবার। দিনে পাহাড়ি সম্প্রদায়ের ক্রেতা আসেন বেশি, ইফতারের পর বাঙালি ক্রেতার পদচারণায় মুখর থাকে মার্কেট।
শহরের বিএম শপিং মার্কেট, দীপ্তি প্লাজা, আলিফ মার্কেট, রিজার্ভ বাজারের শপিং কমপ্লেক্স, এলকে টাওয়ার, ছলক মার্কেটে ঈদের বাজার জমে উঠেছে। সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত মার্কেটগুলোতে ক্রেতার ভিড় রয়েছে। নারী ক্রেতারা শাড়ি, থ্রি পিস, লেহেঙ্গা, প্রসাধনী আর ছেলেরা পাঞ্জাবি, শার্ট কেনায় ব্যস্ত।
ক্রেতা জহুরা বেগম বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বেশিও না আবার কমও না। যে যার সাধ্য অনুযায়ী কিনছেন। দোকানিরা তাদের লাভ অনুযায়ী বিক্রি করছেন।’ সালেহা বেগম জানান, দাম এবার আওতার মধ্যে রয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর মার্কেটে লোকজন বেশি, কেনাকাটাও প্রচুর হচ্ছে।
আগামী ৩১ মার্চ বা ১ এপ্রিল ঈদ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ১২ এপ্রিল থেকে তিন দিনব্যাপী বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু উৎসব শুরু হচ্ছে। এবার ঈদুল ফিতর, পহেলা বৈশাখ ও বৈসাবি কাছাকাছি সময়ে হওয়ায় আনন্দ বেশি হবে। ইতোমধ্যে বিজু উৎসবকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি সম্প্রদায়ের লোকজন আগেভাগে কেনাকাটা শুরু করেছেন।
ড্রেস পয়েন্টের স্বত্বাধিকারী নিলয় মজুমদার বলেন, ‘এবার যেহেতু গরমকালে ঈদ পড়েছে, তাই ক্রেতার জন্য কটন কাপড়ের বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক রাখা হয়েছে। ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। ঈদের পর পর বিজু উৎসব রয়েছে।’
রূপমেলা প্রসাধনী দোকানের ব্যবস্থাপক মো. রুবেল জানান, তাঁর দোকানে লেডিস ব্যাগ, জুতা ও প্রসাধনসামগ্রী বেশি বিক্রি হচ্ছে। ফেসবুক দোকানের তোফাজ্জল হোসেন জানান, ঈদুল ফিতর ও বিজু উৎসব ঘিরে মানুষ কেনাকাটা করছেন।
বিএম শপিং কমপ্লেক্সের রমণী শাড়িবিতানের মালিক আব্দুল কাদের জানান, রোজার শেষ সময়ে এখানে বেচাকেনা বেড়ে যায়। মালেক শাহ ক্লথ স্টোরের মালিক মো. মামুন জানান, জিনিপত্রের দাম গতবারের চেয়ে একটু বেশি হলেও, অতিরিক্ত নয়।
ভিন্ন কথা বললেন বিএম শপিং কমপ্লেক্সের তানহা ফ্যাশনের মালিক মো. জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, ‘গত বছর এই সময়ে ক্রেতা বেশ ভালোই ছিল। এ বছর তা অর্ধেকেরও কম। সীমিত দরে আমরা কাপড় বিক্রি করছি, তারপরও ক্রেতা মিলছে না। গত বছর এই সময়ে দিনে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার বিক্রি হলেও এ বছর দিনে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।’
দোকানি মো. খোরশেদ আলম জানান, গতবারের চেয়ে এবারের দাম একটু সামান্য বাড়তি। দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী আগে যেটা দুই হাজার টাকায় বিক্রি হতো, এখন অর্ধেক দামে চাইছেন ক্রেতারা। শলক মার্কেটের মোনালিসা স্টোরের মালিক মন্টি চাকমা জানান, বিজু উৎসবকে কেন্দ্র করে ভালো ডিজাইনের মালপত্র সংগ্রহে রাখা হয়েছে।
বনরূপা উত্তর বাজার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি বিজয়গিরি চাকমা জানান, বিজুকে কেন্দ্র করে আগে বনরূপা বাজারে জাঁকজমকভাবে বেচা-বিক্রি হতো। এবার তা কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে মানুষের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থা। তিনি আরও জানান, এবারে বিজুকে কেন্দ্র করে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার বেচা-বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, ‘রাঙামাটি পার্বত্য জেলাটি একটি মিশ্র সংস্কৃতির এলাকা। এখানে আমরা ঈদ ও বিজু উৎসব কিংবা চৈত্রসংক্রান্তি উৎসব একসঙ্গে উদযাপন করি। এসব উৎসবকে কেন্দ্র করে পুরো শহর এখন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে।’