দিনটি ছিল মঙ্গলবার। ২২ মার্চ। ১৯৭৭ সাল। সকালের জোয়ারের সময় সাগর থেকে জেটিতে আনা হয় ‘এসএস টেনাসিটি’ জাহাজ। জাহাজটি জেটিতে ভেড়ার সময় বন্দরকর্মীদের ছিল ব্যাপক আগ্রহ। কারণ এই জাহাজে প্রথমবারের মতো আনা হয় ধাতব কনটেইনার, যেটিকে তখন বলা হয়েছিল ‘জাদুর বাক্স’।

প্রথমবার আসা সেই জাহাজে ছয়টি কনটেইনার নামানোর জন্য কোনো যন্ত্র ছিল না। না জাহাজে, না জেটিতে। কীভাবে নামানো হবে সেই কনটেইনার, তা নিয়ে গলদঘর্ম অবস্থা তখনকার বন্দর কর্মকর্তাদের। সে সময় ভরসা হয়ে আসে বন্দরে জেটি পুনর্নির্মাণের কাজে থাকা নির্মাণকাজের একটি ক্রেন। সেই ক্রেন দিয়ে দিনভর কৌশল করে নামানো হলো ছয়টি কনটেইনার।

এত দিন শুধু বাল্ক বা ব্রেক বাল্ক জাহাজের হ্যাচ বা খোলে করে খোলা বা বস্তায় ভরে আনা হতো পণ্য। জাহাজ কিংবা জেটিতে থাকা ছোট ছোট ক্রেন দিয়ে তা নামানো হতো। বন্দরের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রার পর এভাবেই কেটে গেছে ৮৯টি বছর। এখন নতুন করে যোগ হতে যাচ্ছে কনটেইনার।

বন্দরকর্মীদের ভাবনায় ফেলে দেওয়া এই ‘জাদুর বাক্স’টি আবিষ্কার করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তা ম্যালকম ম্যাকলিন (১৯১৩-২০০১)। শুরুতে ছিলেন ট্রাকচালক। পরে ট্রাক কোম্পানির কর্ণধার। ট্রাকে করে এনে জাহাজে পণ্য ওঠানো-নামানোর ঝামেলা, ঝুঁকি ও খরচ কমাতেই ধাতব বাক্সে পণ্য পরিবহনের ধারণার উদ্ভাবন করেছিলেন তিনি।

দিনটি ছিল ১৯৫৬ সালের ২৬ এপ্রিল। সেদিন নিউ জার্সির নিউয়ার্ক বন্দর থেকে ‘এসএস আইডিয়াল এক্স’ ট্যাংকারের ডেকে ৫৮টি কনটেইনার নিয়ে টেক্সাসের হিউস্টেন বন্দরে যাত্রা শুরু হয়। ম্যাকলিন দেখলেন, জাহাজের খোলে করে পরিবহন হলে প্রতি টনে খরচ পড়ত ৫ দশমিক ৮৩ ডলার। কনটেইনারে তা নেমে আসে টনপ্রতি প্রায় ১৬ সেন্টে। কমে এল পণ্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। চুরির শঙ্কাও থাকল না।

ম্যাকলিনের ‘সি ল্যান্ড সার্ভিসেস’ শিপিং কোম্পানি ১০ বছর পর ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কনটেইনারে পণ্য পরিবহন ছড়িয়ে দেয় ইউরোপে। প্রায় ২১ বছরের মাথায় বিশ্বঘুরে তা পৌঁছে যায় বাংলাদেশেও। প্রথমবার কনটেইনার পরিবহন শুরুর পর সে সময় বন্দরের ভাবনাচিন্তা কী ছিল, তা জানা যায় বন্দরের সাবেক কর্মকর্তা হাদী হোসাইনের মুখে। কনটেইনারের যাত্রা শুরুর বছর ১৯৭৭ সালে তিনি বন্দরের পরিকল্পনা বিভাগে যোগদান করেছিলেন। অবসরে যান ২০১২ সালে।

৪৮ বছর আগের কাহিনি স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরে আমি বন্দরে যোগ দেওয়ার আগে টেনাসিটি জাহাজ থেকে ছয় কনটেইনার নামানো হয়েছিল। তখন আসলে পরীক্ষামূলকভাবে কনটেইনার পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছিল। প্রথম যে জাহাজে করে কনটেইনার আনা হয়, সেটি ছিল বাল্ক জাহাজ। কনটেইনার নামানো হয় বাল্ক জাহাজের পণ্য ওঠানো-নামানোর জেটিতে। যন্ত্রপাতিও ছিল না। পরের বছরই মূলত কনটেইনার জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯১ সালে তৈরি হয় প্রথম কনটেইনার জেটি-সিসিটি।’

প্রায় ৬৯ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে লোহা দিয়ে তৈরি এই কনটেইনার পাল্টে দিয়েছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এই যেমন যে দেশে আবিষ্কার হয়েছিল কনটেইনার, সেই যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনের পরিবর্তে সমুদ্রপথে ১০ হাজার নটিক্যাল মাইল দূরে বাংলাদেশ থেকে অন্তর্বাস বানিয়ে নিতেও খরচ কম পড়ছে। বাংলাদেশে কোনো আপেল উৎপাদন না হলেও সুদূর চীন থেকে কনটেইনারে এনে ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। বিমানভাড়ার চেয়ে কমে পৌঁছানো যাচ্ছে আস্ত ১৪ টন পণ্যের এক কনটেইনার পণ্য। বাংলাদেশে রপ্তানির বড় অংশই কনটেইনারে করে বিশ্বের নানা গন্তব্যে নেওয়া হচ্ছে।

৪৮ বছর আগে ছয় কনটেইনার দিয়ে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম বন্দরে এখন বছরে ৩০ লাখের বেশি কনটেইনার পরিবহন হচ্ছে। বিশ্বের সেরা ১০০ বন্দরের তালিকায় রয়েছে এই বন্দরের নাম। গতবার ছিল ৬৭তম অবস্থানে। দেশ হিসেবে কনটেইনার পরিবহনে এই অবস্থান আরও এগিয়ে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাডের হিসাবে তা ৪১তম অবস্থানে।

তবে কনটেইনারের সংখ্যায় বাংলাদেশ যত এগিয়ে যাবে ততবার ফিরিয়ে আনবে ২২ মার্চের কথা। কারণ এদিন পণ্য পরিবহনের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল এ দেশে। তিন-চার দশক আগে পিটার হান্টারের দ্য ম্যাজিক বক্স: অ্যা হিস্ট্ররি অব কনটেইনারাইজেশন কিংবা জন এইচ হোয়াইটের দ্য ম্যাজিক বক্স: জেনেসিস অব দ্য কনটেইনার বই লিখে জানিয়ে দিয়ে গেছেন সত্যিকারের ‘জাদুর বাক্স’ কনটেইনার-ই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হয় ছ ল অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

বেরোবিতে রাবি ও কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) প্রথমবারের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া একই শিক্ষাবর্ষের কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (১২ এপ্রিল) বেলা ১১টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আঞ্চলিক পাঁচটি কেন্দ্রে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে বেরোবিসহ রংপুর অঞ্চলের দুইটি কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে ২ হাজার ৯৩২ জন এবং রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ১ হাজার ৯৭২ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। দুই কেন্দ্রে মোট উপস্থিত পরীক্ষার্থীর হার ৮৮.৩১ শতাংশ।

এছাড়া বিকেলে ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত কৃষি গুচ্ছভুক্ত ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা রংপুর অঞ্চলের তিনটি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩ হাজার ১৮২ জন, দি মিলেনিয়াম স্টারস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ১ হাজার ৪৩৮ জন এবং ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ৩ হাজার ৫৪৫ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। তিন কেন্দ্রে মোট উপস্থিত পরীক্ষার্থীর হার ৯৬.১৮ শতাংশ।

বেরোবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. শওকাত আলী পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা প্রথমবারের মতো বেরোবি কেন্দ্রে উৎসবমূখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রংপুরসহ সমগ্র উত্তর অঞ্চলের পরীক্ষার্থীরা বেরোবিতে পরীক্ষা দিতে পারায় তাদের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে আগত অভিভাবকবৃন্দের জন্য প্রশাসনের উদ্যোগে প্রধান ফটকের পাশে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে পরীক্ষা শেষ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

পরিদর্শন চলাকালে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মো. ইলিয়াছ প্রামানিক, প্রক্টর মো. ফেরদৌস রহমান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো. তানজিউল ইসলাম, সেন্ট্রাল লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টারের গ্রন্থাগারিক মো. মনিরুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ম্যাক্সওয়েল আর কত টাকা নষ্ট করবেন
  • প্রথমবারের মতো বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে জবি
  • প্রথমবারের মতো ইউআইইউ’তে হার্ভার্ড এইচএসআইএল হ্যাকাথন অনুষ্ঠিত
  • যবিপ্রবিতে ভুয়া বেতন বিল তৈরি অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন
  • শিল্পকলায় প্রথমবার চৈত্রসংক্রান্তির আয়োজনে ব্যান্ড শো
  • বেরোবিতে রাবি ও কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
  • প্রথমবারের মতো মালয়েশিয়া গেলেন গবির ইন্টার্ন চিকিৎসকরা