‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ নিয়ে তুলসীর বক্তব্য অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য কতটা উদ্বেগের
Published: 22nd, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড দিল্লিতে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও ইসলামি মৌলবাদের উত্থান নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে দুই দেশের পত্রপত্রিকায় বেশ আলোচনা হচ্ছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমে অনেক আগে থেকেই অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের ব্যাপারে ভারতীয় প্রশাসনের অবস্থানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাংলাদেশকে একটি মৌলবাদী ও পাকিস্তানপন্থী রাষ্ট্র হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। তাদের জন্য তুলসীর মন্তব্য প্রায় হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো। একটি পত্রিকা সোল্লাসে মন্তব্য করেছে, তুলসীর কথায় ইউনূস সরকার ভয়ে কাঁপছে।
অথচ তুলসী গ্যাবার্ড এমন কিছুই বলেননি, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অথবা হোয়াইট হাউসে তাঁর মুখপাত্র আগে বলেননি। প্রথম আলোর কাছে এক লিখিত মন্তব্যে ওয়াশিংটনের উলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান তুলসীর বক্তব্যকে ‘পরিচিত ও পুরোনো’ বলে বর্ণনা করেছেন।
‘তুলসী গ্যাবার্ড নিজেই বলেছেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিষয়টি দীর্ঘদিনের পুরোনো একটি উদ্বেগ। এখানে মূল শব্দটি হলো “দীর্ঘদিনের” (তুলসীর ভাষায় “লংস্টান্ডিং”)। অথচ সেই কথাকেই বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের সমালোচকেরা এই সরকারের বিরুদ্ধে নিন্দা হিসেবে তুলে ধরেছেন।’
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন থেকেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সমালোচনা করে আসছে। ক্ষমতা ত্যাগের মাত্র এক সপ্তাহ আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে শুধু উদ্বেগই নয়, তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো সহিংসতার জন্য ইউনূস সরকার দায়ী থাকবে, এমন কথাও বলেছিলেন।
কুগেলম্যান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বিষয়ে মার্কিন উদ্বেগ আজকের নয়। শেখ হাসিনার আমলেও নানা সময়ে তারা এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এক দশকের বেশি সময় আগে মার্কিন প্রশাসন হাসিনা আমলে ধর্মীয় উগ্রবাদের বৃদ্ধি সংখ্যালঘু ও প্রগতিশীল জনগোষ্ঠীকে যেভাবে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিল, সে ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
২০১৫ সালে শেখ হাসিনার শাসনামলে অন্তত পাঁচজন ‘সেক্যুলার ব্লগার’ ও প্রকাশক উগ্রপন্থীদের হামলায় নিহত হলে যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছিল। পাশাপাশি হুমকির মুখে থাকা ব্লগারদের যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছিল।
কুগেলম্যান মনে করেন, ‘তুলসী গ্যাবার্ড মার্কিন সরকারের দীর্ঘদিনের যে নীতির কথা বলেছেন, তা থেকে কেউ কেউ হয়তো এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন যে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতের মতামতই অনুসরণ করবে। তবে আমার কাছে মনে হয়, তুলসীর মন্তব্য শুধু ইউনূস সরকারকে নিয়ে নয়, বাংলাদেশে বিগত একাধিক সরকারের ব্যাপারেও। এদের মধ্যে ভারতের প্রিয় (আওয়ামী লীগ) সরকারও রয়েছে।’
শেখ হাসিনা নিজে ও তাঁর প্রবাসী সমর্থকেরা আশায় আছেন, অধ্যাপক ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘কিছু একটা করবেন’। এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ‘এক্স’ হ্যান্ডলে দেওয়া এক মন্তব্যে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের সংবাদে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তখনো ভারতীয় গণমাধ্যমে সে মন্তব্য ঘিরে একই রকম উত্তেজক বক্তব্য ছড়ানো হয়েছিল।
ভারতীয় গণমাধ্যমের এমন সংবাদে সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত হয়েছিলেন বিদেশে বসবাসরত বিগত শেখ হাসিনা সরকারের সমর্থকেরা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি ওয়াশিংটন সফরে এলে তাঁরা সদলবল প্ল্যাকার্ড–ফেস্টুন হাতে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।
এই ভেবে শেখ হাসিনার সমর্থক এসব প্রবাসী আশান্বিত হয়েছিলেন যে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আদায় করে নেবেন। বাস্তবে তা তো ঘটেনি, উল্টো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনে মার্কিন ‘ডিপ স্টেটের’ কোনো ভূমিকা নেই বলে ভারতীয় সাংবাদিকের দাবি সরাসরি নাকচ করে দিয়েছিলেন।
তুলসী গ্যাবার্ডকে নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের মধ্যে একই রকম উত্তেজনা। আওয়ামী লীগের একজন নেতা নিউইয়র্কের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলকে এমন কথাও বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন শিগগিরই অধ্যাপক ইউনূসকে পানামার সাবেক একনায়ক ম্যানুয়েল নরিয়েগার মতো চ্যাংদোলা করে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পুরবেন।
দুই দিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র বলেছিলেন, সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তায় ইউনূস সরকার যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে মার্কিন সরকার সন্তুষ্ট।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউন স সরক র সরক র র ব ত লস র
এছাড়াও পড়ুন:
সুশান্ত সিংয়ের মৃত্যুর তদন্ত ইতি টানল সিবিআই
বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর ৫ বছর কেটে গেলেও তাঁর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। খুন নাকি আত্মহত্যা এবার সে প্রশ্নের খোলাসা করে দিয়েছে সিবিআই।
শনিবার মুম্বাই আদালতকে এই মামলার অন্তিম রিপোর্ট জমা দিল সিবিআই। জানিয়ে দিয়েছে, আত্মহত্যাই করেছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত।
প্রাথমিকভাবে, মামলাটি আত্মহত্যা বলেই জানানো হয়েছিল। অন্তিম রিপোর্টেও সিবিআই নিশ্চিত করেছে, আত্মহত্যাই করেছিলেন অভিনেতা। তদন্তে অন্য কোনো দিক উঠে আসেনি।
সিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, বান্দ্রা আদালতে সিবিআই এই মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তদন্তে আত্মহত্যা ছাড়া অন্য কোনও তথ্য উঠে আসেনি। তবে কী কারণে মামলার নিষ্পত্তি করা হল সেই বিষয়ে কিছু বলতে চাননি সিবিআই-য়ের ওই কর্মকর্তা।
সিবিআই অন্তিম রিপোর্টের সমস্ত তথ্য ও সাক্ষীদের নাম নথিভুক্ত করেছে। আগামী ৮ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
সুশান্তের মত্যুর ঠিক সাত দিন আগেই মৃত্যু হয়েছিল অভিনেতার অফিস সহায়ক দিশা সালিয়ানের। মেয়ের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করতে সম্প্রতি নতুন করে তদন্ত চেয়ে বম্বে হাইকোর্টে পিটিশন দায়ের করেছেন দিশার বাবা। সতীশের নিশানায় রয়েছেন শিবসেনা নেতা আদিত্য ঠাকরে। অন্যদিকে, সুশান্তের তুতো ভাই নীরজ কুমার সিং বাবলুও নতুন করে তদন্তের দাবি করেছিলেন।
কিন্তু এর মধ্যেই তদন্তে ইতি টানার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে সিবিআই।