১৬ বছর বয়সে ভোটার আর ২৩ বছরে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব এনসিপির
Published: 22nd, March 2025 GMT
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটার হওয়ার বয়স ১৬ বছর এবং নূন্যতম ২৩ বছর বয়সে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য হলো, এবারের গণঅভ্যুত্থানকে সারাবিশ্বে জেন-জির অভ্যুত্থান বলা হচ্ছে। ফলে এত বড় স্টেক থাকার পরেও শুধুমাত্র বয়সের কারণে তাদের মতামত দিতে না পারা যৌক্তিক নয়।
রোববার দুপুর দুইটার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনে অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে প্রাথমিক সংস্কার প্রস্তাব জমা দেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সেখানে তারা জোর গলায় এ প্রস্তাব করবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন এনসিপির সংস্কার সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক এবং যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার।
শনিবার রাজধানীর বাংলামোটরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব তথ্য তুলে ধরেন। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার এবং পুলিশ সংস্কার বিষয়ে স্পেডশিটে কেন রাজনৈতিক দলের কাছে মতামত চাওয়া হয়নি সে বিষয়েও তারা জানতে চাইবেন বলে জানান।
গত ৬ মার্চ সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে মতামত চেয়ে ৩৭টি রাজনৈতিক দলকে চিঠি ও ‘স্প্রেডশিট’ পাঠিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন।
সংবাদ সম্মেলনে সারোয়ার তুষার বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন চায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ন্যূনতম বয়স ২১ বছর। এনসিপি মনে করে, এটা খুবই কম বয়স। এটা ২৩ বছর হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভোট দেওয়ার বয়স ১৬ বছর হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা এটি জোর গলায় বলব। কারণ, এবারের গণঅভ্যুত্থানে মূলত সারাবিশ্ব এটাকে জেন-জির অভ্যুত্থান হিসেবে বলা হচ্ছে। এই যে তাদের এত বড় স্টেক গণঅভ্যুত্থানে তৈরি হয়েছে। এর পরবর্তী বাংলাদেশ বা আসন্ন নির্বাচনে তারা মতামত দিতে পারবে না শুধুমাত্র ১৮ বছর নিচে বয়সের কারণে। এটা আমরা যৌক্তিক মনে করছি না। লাতিন আমেরিকা, অস্ট্রিয়াসহ বিভিন্ন দেশে এটির নজির আছে।
বর্তমানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ন্যূনতম বয়স ২৫ বছর। সেখান থেকে কমিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বয়স ২১ বছর করার প্রস্তাব করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন।
সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশ এবং গণপরিষদ অথবা কিংবা গণপরিষদ হিসেবে নির্বাচিত আইনসভা সংসদ—দুটো পদ্ধতিতে এনসিপি থাকছে জানিয়ে তুষার বলেন, যে সক সংশোধনীর ক্ষেত্রে সংবিধানের কোনো সম্পর্ক নেই, সেগুলো নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশ কিংবা প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমরা শুরুর থেকে বলেছি, গণতান্ত্রিক সংবিধান অথবা সংবিধান পুনর্লেখন চাই। যার জন্য চাই গণপরিষদ নির্বাচন।
সংস্কার প্রস্তাবের ক্ষেত্রে শহীদ পরিবার এবং আহতদের আকাঙ্ক্ষা জানতে চেয়েছেন বলে জানান সারোয়াত তুষার। তিনি বলেন, একজন শহীদের মা বলেছেন- পুলিশ যেন কোনো আন্দোলনে গুলি চালাতে না পারে। সেটি তারা কীভাবে প্রতিফলন ঘটানো যায় সেই চেষ্টা করবেন।
তিনি আরও বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা পুরোপুরি একমত হয়েছি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা আংশিক একমত হয়েছি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা একমত হতে পারিনি। আবার কিছু ক্ষেত্রে বাড়তি মন্তব্য প্রয়োজন মনে হয়েছে সেটি আমরা মন্তব্যে ফর্মে করেছি। এর বাইরে আরও বিস্তারিত লিখিতভাবে তাদের কাছে দেওয়া হবে।
সারোয়ার তুষার বলেন, একটি বক্তব্য দেখেছি- কমিশনের কাছে ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ১১১টি সুপারিশ কোনোরকম সংলাপ ছাড়াই বাস্তবায়ন করা যাবে বলে মনে করছে। আমরা জানতে চাইবো, কীসের ভিত্তিতে আলোচনা ছাড়া ১১১টি বাছাই করলেন। কারণ সেখানে অনেক বিষয়ে গ্রেটার আলোচনার সুযোগ আছে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার এবং পুলিশ সংস্কার প্রস্তাব কেন স্পেডশিটে নেই, এটা আমরা জানতে চাইব।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস প স স ক র প রস ত ব হওয় র এনস প র বয়স সরক র মত মত
এছাড়াও পড়ুন:
ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে একমত নয় বিএনপি
আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার যে তাগিদ দিয়েছেন, তার সঙ্গে একমত নয় বিএনপি। তারা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়। বিএনপি এর বাইরে অন্য কোনো সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ।
আজ শনিবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বৈঠক করেন। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা এ তাগিদ দেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। এরপর রাতে বিএনপির বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব তৈরির সঙ্গে যুক্ত সালাহ উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে এ প্রতিক্রিয়া জানান।
এর আগে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। তখন সালাহ উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যদি তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) এ কথা বলে (ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য) থাকেন, তাহলে সেটাকে আমরা পজিটিভলি দেখছি।’
তবে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, উনি ডিসেম্বরে নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন, নির্দেশনা দেবেন এবং যথাযথ প্রক্রিয়ায় জাতির সামনে সে ঘোষণা দেবেন।’
পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বক্তব্য সংশোধন করে জানানো হয়, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
এ বিষয়ে পরে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার তাগিদের বিষয়ে আমরা একমত নই। আমরা এ বছরের ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন দাবি করি। আশা করি, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেবেন।’
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের কাছে পূর্বে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তিনি সব কার্যক্রম চালাচ্ছেন। আমরা সেটা জাতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর অনুরোধ করেছিলাম, যাতে জাতি আশ্বস্ত হয়, গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি যাতে কোনো ষড়যন্ত্রের সুযোগ না পায়। কিন্তু তিনি অন্য একটি ফোরামে গিয়ে নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে করার কথা বলেন। আমরা এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। উনি এখনো সে কথা বললে আমরা তাঁর সঙ্গে একমত নই।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যদি ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে থাকেন, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে তাঁদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তাঁরা কোনো কর্মসূচি দেবেন কি না।
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আগামী ১৬ এপ্রিল আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বসব। আমরা জানতে চাইব, আসলে উনি কী চাইছেন।’