রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র রমজান। নাজাত মানে মুক্তি। রমজানের নাজাতের অর্থ হলো, এই মাসে মানুষ পাপ-তাপ থেকে মুক্ত হবে, পাপের আকর্ষণ থেকে মুক্ত হবে, জাহান্নাম থেকে মুক্ত হবে। 

মানুষের সফলতার পথে তিনটি প্রধান বাধাস্বরূপ অপশক্তি রয়েছে—জিন শয়তান, মানুষ শয়তান ও নফস শয়তান। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি বলো “আমি আশ্রয় গ্রহণ করি মানুষের প্রতিপালক, মানুষের মালিক, মানুষের মাবুদ (আল্লাহ) এর নিকট, প্ররোচনাদাতা খন্নাস (শয়তান) এর অনিষ্ট থেকে; যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। সে জিন হতে এবং মনুষ্য হতে।”’ (সুরা নাস, আয়াত: ১-৬)

‘আর অবশ্যই আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং আমি জানি তাকে তার নফস যে বিষয়ে প্ররোচনা দেয়।’ (সুরা কাফ, আয়াত: ১৬) ‘নিশ্চয়ই নফস মন্দের প্রতি নির্দেশ করে।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৫৩)

রমজানে জিন শয়তান বন্দী থাকলেও মানুষ শয়তান ও নফস শয়তান সক্রিয় থাকে। তাই মানুষ পাপাচার থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারে না। এ কারণে নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 

দ্বিতীয়ত, মানুষকে শয়তানের প্রভাবমুক্ত হওয়ার জন্য অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করে সৎ সঙ্গ অর্জন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আর সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ১১৯)

নফসের তিন অবস্থা রয়েছে—নফসে আম্মারা, নফসে লাওয়ামা ও নফসে মুতমাইন্না। নফসে আম্মারা হলো ‘পাপাসক্ত সত্তা’, যা পাপে আসক্ত ও পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত। (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৫৩)

নফসে লাওয়ামা হলো ‘অনুতপ্ত সত্তা’, যা শয়তানের ধোঁকা বা রিপুর তাড়নায় অথবা পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রভাবে সাময়িক পাপে লিপ্ত হয়, কিন্তু পরে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে। (সুরা কিয়ামাহ, আয়াত: ২)

নফসে মুতমাইন্না হলো ‘প্রশান্ত সত্তা’, যার পাপের প্রতি বিরাগ এবং নেকির প্রতি অনুরাগ থাকে। (সুরা ফজর, আয়াত: ২৭-৩০) 

নফসে আম্মারা ও নফসে লাওয়ামাকে নফসে মুতমাইন্নায় পরিণত করাই রমজানের অন্যতম উদ্দেশ্য।  

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর তাকে তার অসৎ কর্ম ও সৎ কর্মের জ্ঞান দান করেছি। সে সফল হলো যে তার নফসকে পরিশুদ্ধ করল; আর সে ব্যর্থ হলো যে নফসকে কলুষিত করল।’ (সুরা শামস, আয়াত: ৮-১০)

নাজাতের অর্থ হলো সব দোষ-ত্রুটি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা ও পবিত্রতা অর্জন করা এবং সৎ গুণাবলি অর্জনের মাধ্যমে স্থায়ী মুক্তি নিশ্চিত করা। যাতে নফসে মুতমাইন্নার অবস্থা থেকে পুনরায় লাওয়ামা বা আম্মারার দিকে ফিরে না যায়। 

নাজাত বা মোহমুক্তির অন্যতম উপায় হলো তওবা ও ইস্তিগফার করা। তওবা অর্থ হলো পাপ ত্যাগ করে পুণ্যের প্রতি মনোনিবেশ করা। ইস্তিগফার হলো কৃত অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পুনরায় সেই অপরাধ না করার অঙ্গীকার করা ও দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা। 

জাগতিক সব মোহ-মায়া ও আকর্ষণ থেকে মুক্ত হওয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো ইতিকাফ। এতে বান্দা সবকিছু থেকে মুক্ত হয়ে একান্তভাবে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। 

পাপের অকল্যাণ ও ভয়াবহ পরিণতি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য, পাপের আকর্ষণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য এবং পবিত্র শবে কদর লাভের জন্য ইতিকাফ অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল। রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়াহ।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম ম র র জন য আল ল হ রমজ ন শয়ত ন

এছাড়াও পড়ুন:

বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

গাজীপুরে প্রবল বর্ষণ উপেক্ষা করে বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার শ্রীপুরের জৈনাবাজার এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নেমে আসেন তারা। এ সময় দুদিকের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। 
শ্রমিকরা প্রায় আড়াই ঘণ্টা ব্যস্ততম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখায় দুদিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেন। এরপর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। 
শ্রমিকরা জানান, এইচডিএফ অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার মালিকপক্ষ তাদের বেতন-বোনাস দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ঈদের আগেই ছুটি দিয়ে দেয়। ছুটি শেষে তারা কাজে যোগ দিতে গিয়ে কারখানা বন্ধ পান। ১২ দিন ছুটি শেষে গত ১০ এপ্রিল কারখানা খোলার কথা ছিল। কিন্তু কাজ না থাকার অজুহাত দেখিয়ে মালিকপক্ষ ছয় দিন ছুটি বাড়িয়ে ১৭ এপ্রিল খোলার ঘোষণা দেয়। 
বৃহস্পতিবার সকালে কাজে যোগ দিতে এসে শ্রমিকরা দেখেন, ছুটি বাড়িয়ে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। তারা বলছেন, ঈদুল ফিতরের বোনাস, দুই মাসের বকেয়া বেতন ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে তারা বিক্ষোভ করেছেন। 
এইচডিএফ অ্যাপারেলস কারখানার মালিক হুমায়ুন চৌধুরী বলেন, ‘কারখানায় কাজ না থাকায় সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমন খবর পেয়ে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। আমরা অল্প সময়ের মধ্যে তাদের সব দাবি পূরণ করব।’ শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর চেষ্টায় আড়াই ঘণ্টা পর শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নিয়েছেন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ