সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার সাংহাই হাওরের বুক চিরে ফসলি জমি নষ্ট করে সড়ক নির্মাণের ঘটনায় প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর নির্মাণাধীন সড়কটি পরিদর্শন করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা। তাঁরা স্থানীয় কৃষক ও গ্রামবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করে তাঁদের বক্তব্য শোনেন এবং লিখিত মতামত নেন।

মতবিনিময়ে কৃষকেরা সরকারের কাছে জমি ও ফসলের ক্ষতিপূরণ চাওয়ার পাশাপাশি বর্ষাকালে যাতে হাওরের পানিপ্রবাহ ও নৌ-চলাচল স্বাভাবিক থাকে, সেই নিশ্চয়তা চেয়েছেন। এ সময় সচিব জমিতে লাগানো ধানসহ মাটি কেটে সড়কে ফেলার বিষয়টি জেনে তাৎক্ষণিকভাবে ঠিকাদারের প্রতিনিধিকে ডেকে ফসলি জমির মাটি না কাটার নির্দেশ দেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার প্রথম আলোয় ‘হাওরের বুক চিরে হচ্ছে সড়ক, কৃষক-ফসলি জমির সর্বনাশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.

মোস্তাফিজুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রেজওয়ানুর রহমান, প্রকল্প পরিচালক মুজিবুর রহমানসহ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে শান্তিগঞ্জে আসেন।

পরে তাঁরা নির্মাণাধীন সড়কের হাসনাবাদ এলাকায় যান এবং স্থানীয় কৃষক ও গ্রামবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কর্মকর্তারা সড়ক ঘুরে দেখার সময় কৃষকেরা ধান লাগানো জমি থেকে জোর করে মাটি কাটার বিষয়টি তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মতবিনিময়ে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সমর কুমার পাল, শান্তিগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. গোলাম রব্বানী চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুনহাওরের বুক চিরে হচ্ছে সড়ক, কৃষক-ফসলি জমির সর্বনাশ ১৮ মার্চ ২০২৫

মতবিনিময়ে হাসনাবাদ গ্রামের কৃষক ইউসুফ আলী বলেন, সড়কের কারণে তাঁর ৩৩ শতক জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এবার জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন। জমির ধানসহ মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। একই গ্রামের কৃষক শওকত আলী জানান, হাওরে তাঁর ২৫ বিঘা জমি আছে। এর মধ্যে সড়কের কারণে চার বিঘা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

কৃষক লিলু মিয়া (৭০) জানান, তাঁর সবচেয়ে বেশি জমির ক্ষতি হয়েছে ১৪ বিঘা। তিনি বলেন, ‘সড়কের কাজ করব আমরারের আগে কুনতা জিগাইছে না। এখন দুই দিন ধইরা কয়। আমরা কইছি, তোমরা তো লাভবান অইরায়, আমরার জমির ক্ষতিপূরণ দেও।’

কৃষকেরা জানান, সড়কে যেভাবে কাজ হচ্ছে তাতে উজানে জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ও নৌ-চলাচল বাধাগ্রস্ত হবে। চার কিলোমিটার সড়কে মাত্র তিনটা ছোট কালভার্ট রাখা হয়েছে। এখন লোকজন কথা বলায় বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে।

কৃষকদের বক্তব্য শুনে সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, একটি পত্রিকায় সড়ক নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সরকার তাঁকে এখানে পাঠিয়েছে। সবার বক্তব্য নিয়ে তিনি একটি প্রতিবেদন দেবেন। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তিনি কাজ বন্ধ করেছেন। এখন এলাকাবাসী চাইলে আবার কাজ হবে। সড়কটি স্থানীয় মানুষের সুবিধার্থেই করা হচ্ছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। তবে মানুষের মতামত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেবেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ নানা মত দিয়েছেন। উপস্থিত বেশির ভাগই রাস্তাটি দরকার বলেছেন। আবার কেউ কেউ না বলেছেন। তবে তাঁরা জমির ক্ষতিপূরণ ও জমির ক্ষতি যেন কম হয়, সেটি চান। আমি সবই ওপরে জানাব।’

প্রকল্প পরিচালক মুজিবুর রহমান জমি অধিগ্রহণে কোনো বরাদ্দ নেই বলে জানান। তবে মাটি কেনায় বরাদ্দ থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঠিকাদার যে টাকায় কাজ নিয়েছে, দূর থেকে মাটি কিনে এনে কাজ করলে তাঁর পোষাবে না। এসব রাস্তা সাধারণত স্থানীয় লোকজনকে বুঝিয়ে অথবা পাশের খাসজমি থেকে মাটি নিয়েই করা হয়।’

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ প্রকল্পে সাংহাই হাওরে একটি সড়কের কাজ হচ্ছে। হাওরটি একটি বড় ধানের হাওর। বর্ষায় হাওরে পানি থই থই করে। তখন অনেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। শুকনো মৌসুমে ধান হয়। ওই হাওরের বুক চিরে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চার কিলোমিটার একটি সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। ঢাকার জেবি ইনোভেশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি বাস্তবায়ন করছে। সড়ক ও দুই পাশে মাটি তুলে খালের মতো করায় প্রস্থে প্রায় ১০০ ফুটের মতো করে ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে।

আরও পড়ুনকার স্বার্থে এমন বিনাশী প্রকল্প২০ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র রহম ন প রকল প সড়ক র ক র একট

এছাড়াও পড়ুন:

ওয়ালটন নিয়ে এলো নতুন ৩ মডেলের আর্ক ব্র্যান্ডের অনলাইন ইউপিএস

প্রযুক্তি-নির্ভর প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন ধরনের অফিস ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে ওয়ালটন বাজারে নিয়ে এসেছে নতুন তিনটি অনলাইন ইউপিএস।

শক্তিশালী পারফরম্যান্স এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি ব্যাকআপ সমৃদ্ধ আর্ক ব্র্যান্ডের এই অনলাইন ইউপিএস তিনটির মডেল হলো যথাক্রমে ইউওএন১, ইউওএন২ এবং ইউওএন৩। কম্পিউটার, সার্ভার, মেশিন এবং মেডিকেল যন্ত্রপাতির মতো গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রদানে ওয়ালটনের এই অনলাইন ইউপিএসগুলো আদর্শ। 

উল্লেখ্য, অনলাইন ইউপিএস এমন একটি ডিভাইস যা মূলত নিরবিচ্ছিন্ন পাওয়ার সাপ্লাই নিশ্চিত করে। এটি এসি কারেন্টকে ডিসি কারেন্টে পরিণত করে এবং পুনরায় এসি কারেন্টে পরিণত করে ইউপিএস এর সাথে সংযুক্ত যন্ত্রপাতিতে সরবরাহ করে। এই পুরো প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে কোনো রকম বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই একটি স্থিতিশীল পাওয়ার সাপ্লাই নিশ্চিত করা যায়। এজন্য ভারী প্রযুক্তিপণ্য বা প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রাংশ নিরাপদ রাখতে ব্যবহার করা হয় অনলাইন ইউপিএস। 

আরো পড়ুন:

স্বাধীনতা দিবস ওয়ালটন আন্তর্জাতিক রেটিং দাবা
অষ্টম রাউন্ড শেষেও শীর্ষে মিনহাজ-সুব্রত

স্বাধীনতা দিবস ওয়ালটন আন্তর্জাতিক রেটিং দাবা
সাত রাউন্ড শেষেও শীর্ষে মিনহাজ-সুব্রত

ওয়ালটনের আর্ক ব্র্যান্ডের নতুন ইউপিএস মডেলগুলো সরাসরি ব্যাটারি ও রেকটিফায়ার থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, যার ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট বা ভোল্টেজ ওঠানামার কারণে সংযুক্ত ডিভাইসগুলোতে কোনো প্রভাব পড়ে না। এতে ২২০/২৩০ ভোল্টের স্থিতিশীল আউটপুট নিশ্চিত করা হয়, যা কম্পিউটার, সার্ভার, মেডিকেল যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতির নিরাপত্তা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ইউওএন১ মডেলটি ১০০০ ভোল্ট-অ্যাম্পিয়ার বা ৯০০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন, যা ছোটো এবং মাঝারি পরিসরে ব্যবহারের জন্য আদর্শ। এটি অফিস এবং বাসার কম্পিউটার বা অন্যান্য যন্ত্রপাতির জন্য উপযুক্ত। ইউওএন২ মডেলটি ৩০০০ ভোল্ট-অ্যাম্পিয়ার বা ২৭০০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন যা বড় প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়িক ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। এটি একাধিক ডিভাইস পরিচালনায় সক্ষম। বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং ডাটা সেন্টারের জন্য উপযুক্ত ইউওএন৩ মডেলটি ৬০০০ ভোল্ট-অ্যাম্পিয়ার বা ৫৪০০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন যা ভারী লোড বহনে সক্ষম। এছাড়াও ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী আরো বেশি লোডের ইউপিএসও তৈরি করে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। 

ওয়ালটন কম্পিউটারের চিফ বিজনেস অফিসার তৌহিদুর রহমান রাদ বলেন, “ওয়ালটনের নতুন এই অনলাইন ইউপিএসগুলো আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি যা গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে তাদের মূল্যবান যন্ত্রপাতি সুরক্ষিত রাখবে। উন্নতমানের ব্যাটারি, নিখুঁত ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ, এলসিডি ডিসপ্লে এবং মাল্টিপল কানেক্টিভিটি অপশনের কারণে এই ইউপিএসগুলো সব ধরনের বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য আদর্শ।”

তিনি জানান, ওয়ালটনের নতুন এই ৩ মডেলের অনলাইন ইউপিএসে ১০% বিশেষ ছাড় চলছে। ইউওএন১, ইউওএন২ এবং ইউওএন৩ মডেলের অনলাইন ইউপিএসের রেগুলার মূল্য যথাক্রমে ২৯ হাজার ৭৫০, ৫৪ হাজার ৮৫০ এবং ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা। 

ওয়ালটনের নতুন এই অনলাইন ইউপিএস সিরিজ এখন ওয়ালটন প্লাজা ও ওয়ালটনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (https://waltondigitech.com/products/power/online-ups) থেকে ক্রয় করা যাবে। প্রতিটি মডেলের সাথেই থাকছে ১ বছরের ওয়ারেন্টি যা গ্রাহকদের জন্য দিচ্ছে বাড়তি নির্ভরযোগ্যতা।

ঢাকা/অগাস্টিন সুজন/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ