শিশু ধর্ষণ মামলার বাদীর ভুলে এক আয়ুবের সাজা ভোগ করছেন আরেক আয়ুব আলী। জাতীয় পরিচয়পত্রে দুজনের নামই মো. আয়ুব আলী। তবে মা ও বাবার নামে কোনো মিল নেই। 

তাদের একজনের বিরুদ্ধে শিশু অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। ওই মামলার এজাহারে একটি ভুল করেন বাদী। আসামি আয়ুবের বাবার ভুল নাম উল্লেখ করেন তিনি। ভুল নামটি আবার মিলে যায় আয়ুবের বাবার নামের সঙ্গে। বাদীর সেই ভুলের খেসারত দিচ্ছেন নিরপরাধ আয়ুব। ওই মামলায় সাজা ভোগ করছেন তিনি।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি হয়েছিল ২০১৭ সালের ৪ জুন, পাবনার সুজানগর থানায়। অভিযোগটি ছিল, পঞ্চম শ্রেণির এক শিশুকে অপহরণের পর ধর্ষণ। মামলায় মাগুরা পৌরসভার মো.

আয়ুব আলী (এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে মো. আয়ুব শেখ) ও দুই নারীকে আসামি করা হয়। ওই দুই নারী সম্পর্কে বাদীর পুত্রবধূ ও তার (পুত্রবধূ) মা। আর মূল অভিযুক্ত আয়ুব বাদীর পুত্রবধূর ভগ্নিপতি।

২০২৪ সালের ১৪ জুলাই মামলার রায় দেন পাবনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে আয়ুবকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। অন্য দুই আসামিকে খালাস দেন আদালত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আসামি ও বাবার নামে মিল থাকায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মূল আসামির বদলে মাগুরা পৌরসভার নিজনান্দুয়ালীর বাসিন্দা তেজপাতা ব্যবসায়ী মো. আয়ুব আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি পাবনা জেলা কারাগারে সাজা ভোগ করছেন।

আসামি আয়ুবের বাবার নাম মো. যদন আলী খান হলেও ভুল করে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছিল ওমেদ শেখ। স্থানীয় সূত্র জানায়, যদন আলী খানদের মূল বাড়ি জেলার মহম্মদপুর উপজেলার ঘুল্লিয়া গ্রামে। তবে দীর্ঘদিন তার ছেলে আয়ুব আলী পৌরসভার নিজনান্দুয়ালীর কাটাখালী আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা ছিলেন। 

বছর চারেক আগে আশ্রয়কেন্দ্রের পাশে জায়গা কিনে বাড়ি করেছেন। ওই একই আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েকটি ঘর ব্যবধানে থাকতেন বর্তমানে কারাগারে থাকা আয়ুব আলীর বাবা মো. ওমেদ আলী ওরফে ওমেদ শেখ।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল আয়ুব তার (বাদী) পাবনার সুজানগর থানা এলাকার বাড়িতে যান। সেদিন সকাল ১০টার দিকে স্কুলে যাওয়ার সময় তার মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ৭ এপ্রিল মেয়েটি বাড়ি ফিরে জানায় আয়ুব তাকে ধর্ষণ করেছে। ঘটনার প্রায় ২ মাস পর ওই বছরের ৪ জুন মামলা করেন শিশুটির মা।

আয়ুব আলীর ছেলে মো. শিমুল শেখ গত ১৩ মার্চ বলেন, “আমার বাবার নামে এমন মামলা কখনই হয়নি। মামলার বাদী, ভুক্তভোগী তাদের কাউকেই আমরা চিনি না। এই মামলার আসামি অন্য ব্যক্তি। পুলিশ ভুল করে আমার বাবাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।”

মামলার নথিতে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ২১ জুন এই মামলায় মো. আয়ুব আলী খান নামের একজন গ্রেপ্তার হন। ওই সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক এ কে এম শফিকুল আলম আদালতে দেওয়া নথিতে উল্লেখ করেন, মামলার এজাহারে আসামির বাবার নাম ভুল রয়েছে। ২০২১ সালের ২১ মার্চ তার জামিন হয়। জামিননামায় ওই ব্যক্তির বাবার নাম লেখা হয় মো. যদন আলী খান। স্থানীয় জামিনদার হিসেবে তার জামিননামায় স্বাক্ষর করেন তার ছেলে সাগর খান।

জানতে চাইলে মামলার বাদী গত শনিবার বিকেলে মোবাইলফোনে জানান, তিনি মামলা করেছিলেন আয়ুবের নামে। আসামি তার দূরসম্পর্কের আত্মীয়। আসামি অনেক দিন জেল খেটে জামিন পেয়েছেন। কয়েক দিন আগে তিনি শুনেছেন পুলিশ আরেকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি নাকি আসল আয়ুব নন। তবে তিনি এ বিষয়ে সঠিক কিছু জানেন না।

আসামি আয়ুব আলীর বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। তারা দুজনই ওই মামলায় আয়ুব আলীর আসামি হওয়া এবং প্রায় দুই বছর কারাগারে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্বামী কোথায়- জানতে চাইলে আয়ুব আলীর স্ত্রী বলেন, “একটু আগেও বাড়িতে ছিলেন। এখন বাড়ির বাইরে গেছেন।” 

তিনি আরো বলেন, “পারিবারিক বিরোধের জেরে আমার বাবার অন্য পক্ষের মেয়ের শাশুড়ি ষড়যন্ত্রমূলক এই মামলা করে। আমার স্বামী ওসব কিছুই করেনি। পুরো ঘটনা বানোয়াট, সাজানো।”

কারাগারে থাকা মো. আয়ুব আলীর আইনজীবী মো. মাহবুবুল আকবর বলেন, “মামলার এজাহারে আসামির বাবার নামে ভুল থাকলেও জামিননামায় তার আসল বাবার নাম উল্লেখ করা হয়। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওই আসামির বাবার নাম ভুল লিখেই অভিযোগপত্র দেন। এই গাফিলতির কারণে আসল আসামির বদলে একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে জেল খাটতে হচ্ছে।”

পাবনা সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবর রহমান মোবাইলফোনে জানান, কিছুদিন আগে তিনি সুজানগর থানায় যোগ দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি তার জানা থাকার কথা নয়। এটা এখন আদালতের বিষয়। তবে তিনি এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেবেন বলে জানান।

ঢাকা/শাহীন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স জ নগর থ ন আয় ব র

এছাড়াও পড়ুন:

সিইও হিসেবে ইলন মাস্কের পদত্যাগ চান টেসলার দীর্ঘদিনের বিনিয়োগকারী রস গার্বার

যুক্তরাষ্ট্রের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদ থেকে ইলন মাস্ককে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘদিনের বিনিয়োগকারী রস গার্বার। তিনি বলেছেন, তাঁর মনোযোগ বিভক্ত হয়ে পড়ায়, বিশেষ করে হোয়াইট হাউসের ভূমিকায় টেসলা সংকটে পড়ছে।

গার্বার কাওয়াসাকি ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের সিইও গার্বার স্কাই নিউজকে বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, তিনি (মাস্ক) সরকারি চাকরির ব্যাপারে নিবেদিতপ্রাণ, সেখানেই তাঁর সময় ব্যয় করছেন। তিনি টেসলা চালাচ্ছেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, টেসলার একজন নতুন সিইও দরকার। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা অবহেলিত হয়ে আছে।’

মাস্কের নেতৃত্বে টেসলাকে এক দশকের বেশি সমর্থন দিয়ে এসেছেন গার্বার কাওয়াসাকি। যদিও তাঁর প্রতিষ্ঠান কাওয়াসাকি ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট টেসলার বৃহত্তম অংশীদারদের অন্তর্ভুক্ত নয়, তবু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টেসলায় এটির ২ লাখ ৬২ হাজার ৩৫২টি শেয়ার রয়েছে। সংস্থাটি ২০২৩ সাল থেকেই টেসলায় তার শেয়ার ক্রমাগত কমিয়ে চলেছে।

মাস্কের নেতৃত্বে টেসলাকে এক দশকের বেশি সমর্থন দিয়ে এসেছেন গার্বার কাওয়াসাকি। যদিও তাঁর প্রতিষ্ঠান কাওয়াসাকি ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট টেসলার বৃহত্তম অংশীদারদের অন্তর্ভুক্ত নয়, তবু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টেসলায় এটির ২ লাখ ৬২ হাজার ৩৫২টি শেয়ার রয়েছে। সংস্থাটি ২০২৩ সাল থেকেই টেসলায় তার শেয়ার ক্রমাগত কমিয়ে চলেছে।

টেসলার পরিচালনা বোর্ডে পরিবর্তন আনার দাবিতে সোচ্চার হওয়া ব্যক্তিদের অন্যতম রস গার্বার। ক্রমেই আরও বেশি মাস্কের সমালোচক হয়ে উঠছেন তিনি, বিশেষ করে হোয়াইট হাউসে মাস্ক যুক্ত হওয়ার পর থেকে।

আরও পড়ুনকী হয়েছে ইলন মাস্ক ও টেসলার, কেন কমছে শেয়ারের দাম১৯ ঘণ্টা আগে

স্কাই নিউজকে রস গার্বার বলেন, ‘টেসলা গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু করছে। তাই ইলনের অন্য চাকরি ছেড়ে হয় টেসলায় ফিরে আসা ও এটির সিইও হওয়া উচিত (সিইওর কাজ সম্পাদন করা), না হয় সরকারেই মনোযোগ দেওয়া এবং যা করছেন তা-ই করে যাওয়া উচিত। কিন্তু টেসলার একজন যোগ্য সিইও খোঁজা দরকার।’

পুঁজিবাজারে টেসলার দর কমা অব্যাহত আছে। গত পাঁচ দিনে এটির দর কমেছে ৫ শতাংশ। রস গার্বার গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্বে পরিবর্তন দরকার।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি নিয়ে এবার ইলন মাস্কের টেসলার উদ্বেগ১৫ মার্চ ২০২৫

গার্বার আরও যুক্তি দেন, টুইটারে (বর্তমানে এক্স) মাস্কের সম্পৃক্ততা তাঁর মনোযোগ (টেসলা থেকে) অন্যদিকে সরিয়ে দিয়েছে। এটি টেসলার নেতিবাচক প্রচার বয়ে এনেছে। তিনি বলেন, ‘ইলন মাস্ক প্রতিষ্ঠানটির সুনাম নষ্ট করে ফেলেছেন। বেচাবিক্রি কমছে। এটা একটা সংকট। সিইওর মনোযোগ যখন এতটা বিভক্ত, তখন আপনি আক্ষরিক অর্থেই বাজারে সেরা পণ্যটি বিক্রি করতে পারবেন না।’

আরও পড়ুনইলন মাস্ক যেভাবে বিশ্বের ১ নম্বর সমস্যা হয়ে উঠলেন০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েলি হামলায় হামাসের শীর্ষ নেতা নিহত
  • ৮২ বছর বয়সেও লড়াকু রানী হামিদ
  • নাফ নদীতে ৩৩ বিজিবি সদস্য নিখোঁজের বিষয়টি গুজবনির্ভর অপপ্রচার: বিজিবি
  • সাবাশ বাংলাদেশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
  • থিয়াগো আলমাদা: রাস্তা থেকে উঠে এসে যেভাবে মেসির উত্তরসূরি
  • আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধে সময় বেঁধে দিলেন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা
  • ‘শোনেন শোনেন সভাজন ভাই, আবার হবে নির্বাচন’
  • আরাকান আর্মির গুলিতে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে দুজন গুলিবিদ্ধ
  • সিইও হিসেবে ইলন মাস্কের পদত্যাগ চান টেসলার দীর্ঘদিনের বিনিয়োগকারী রস গার্বার