চাকরি স্থায়ীকরণের শুরুতে সাংবাদিকের বেতন প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা অর্থাৎ, বিসিএস ক্যাডারদের সমান করার সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন।

আজ শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কাছে সংস্কার প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়। সেখানে এই সুপারিশ করা হয়েছে।

সুপারিশে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমের সংখ্যাধিক্য ও দেশের ক্রমবর্ধমান শিক্ষিত বেকারত্বের পটভূমিতে সাংবাদিকতা পেশায় বেতন-ভাতা ক্রমেই কমছে বা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রবণতা বাড়ছে, যেখানে প্রাপ্য বিভিন্ন ভাতা বাদ পড়ছে এবং চাকরির স্থায়িত্ব অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।

অথচ জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা ছাড়া সাংবাদিকতায় আপসকামিতা ও দুর্নীতির ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, যা বস্তুনিষ্ঠ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি। এ ধরনের অনিশ্চয়তা রাজনৈতিক ও স্বার্থবাদী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি তোষণবাদী হতে উৎসাহিত বা বাধ্য করে। 

এ পরিস্থিতির অবসানে সব সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, বেতার ও অনলাইন মাধ্যমের সাংবাদিক ও অন্য সংবাদকর্মীদের জন্য যেসব পদক্ষেপ আবশ্যক—

১.

কোনো গণমাধ্যম নিয়োগপত্র ও ছবিসহ পরিচয়পত্র ছাড়া এবং বিনা বেতনে কোনো সাংবাদিককে অস্থায়ী, স্থায়ী কিংবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করতে পারবে না।

২. সাংবাদিকদের শিক্ষানবিশ চাকরির মেয়াদ এক বছরের অধিক হবে না। এ ক্ষেত্রে তাকে সম্মানজনক শিক্ষানবিশ ভাতা প্রধান করতে হবে।

৩. সারা দেশের সাংবাদিকদের স্থায়ী চাকরির শুরুতে একটি অভিন্ন ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করা প্রয়োজন, যা হবে সরকারি প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার মূল বেতনের সমান। ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় অত্যধিক বেশি হওয়ার দরুন ঢাকায় নিয়োজিত সাংবাদিকেরা মূল বেতনের সঙ্গে ‘ঢাকা ভাতা’ (অ্যালাউন্স) প্রাপ্য হবেন।

তিন বছর সংবাদদাতা (রিটেইনার) হিসেবে কাজ করার পর ঢাকার বাইরের সাংবাদিকেরা নিজস্ব প্রতিবেদক (স্টাফ করেসপনডেন্ট) হিসেবে পদোন্নতি লাভ করবেন। ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা ও মর্যাদার এই বৈষম্য দূর করার প্রয়োজনীয়তার কথা প্রথম প্রেস কমিশন রিপোর্টেও বলা আছে।

৪. মূল বেতনের বাইরে সাংবাদিকেরা বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, মূল বেতনের সমপরিমাণ উৎসব ভাতা, ঝুঁকি ভাতা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), ফোন বিল, ইন্টারনেট বিল, প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং অবসর ভাতা কিংবা গ্র্যাচুইটি প্রাপ্য হবেন।

৫. প্রতি বছরের শুরুতে পূর্ব বছরের গড় মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাংবাদিকদের বেতন বৃদ্ধি হবে। অন্যান্য ভাতার ক্ষেত্রেও অন্তত দুই বছর পরপর মূল্যস্ফীতি সামঞ্জস্য করে পুনর্নির্ধারণ করতে হবে।

৬. ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের জন্য আলাদা একটি নিয়োগবিধি এবং একটি ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করতে হবে। অর্থাৎ বিনা পারিশ্রমিকে কাউকে কাজ করানো যাবে না।

৭. কোনো গণমাধ্যমে সাংবাদিককে সার্কুলেশন তদারকি এবং বিজ্ঞাপন সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত করা যাবে না।

৮. কর্মক্ষেত্রে সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিত করার জন্য নিউজ পেপার এমপ্লয়িজ (কন্ডিশনস অব সার্ভিসেস অ্যাক্ট) ১৯৭৩ এবং শ্রম আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে।

৯. গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান আলোকচিত্রী বা ভিডিও সাংবাদিকদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করবে।

১০. গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান সব সাংবাদিকের প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নিরাপত্তাসামগ্রী ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করবে। পেশাগত কারণে যে কোনো মামলা-মোকদ্দমা নিরসনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের আইনি সহায়তা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে হবে।

১১. গণমাধ্যমের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা (সাংবাদিক নন) বর্তমানে যে হারে বেতন-ভাতা প্রাপ্ত হন, তা সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির সঙ্গে সমানুপাতিক হারে (রেশিও অনুসারে) বৃদ্ধি পাবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব স এস

এছাড়াও পড়ুন:

কল মার্জিং প্রতারণা কী, নিরাপদ থাকবেন যেভাবে

অপরিচিত নম্বর থেকে আসা মাত্র একটি ফোনকল গ্রহণ করলেই হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ চলে যেতে পারে প্রতারকদের দখলে। শুনতে অবাক লাগলেও ‘কল মার্জিং’ নামের এ প্রতারণার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ই–মেইল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টসহ ব্যাংক থেকে অর্থ চুরি করছে একদল প্রতারক।

কল মার্জিং প্রতারণা কী

কল মার্জিং প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ওটিপি (ওয়ান–টাইম পাসওয়ার্ড) সংগ্রহ করে থাকে প্রতারকেরা। এরপর সেই ওটিপি কাজে লাগিয়ে অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অর্থ ও তথ্য চুরি করে তারা। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বোকা বানাতে প্রথমে পরিচিত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ভুয়া নাম–পরিচয় ব্যবহারে ফোনকল করে থাকে প্রতারকেরা। এসব ফোনকলে সাধারণত বিশেষ অফারসহ নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের আস্থা অর্জন করা হয়। এরপর ফোনকলটিতে গুরুত্বপূর্ণ বা পরিচিত কোনো ব্যক্তিকে যুক্ত করার জন্য কল মার্জ করতে বলা হয়। কল মার্জ করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ওটিপি নম্বর শোনা যায়। প্রতারকেরা ফোনকলে যুক্ত থাকায় ওটিপি নম্বরটি তারাও শুনতে পায়। এর ফলে ওটিপি নম্বরটি কাজে লাগিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পাশাপাশি অর্থ ও তথ্য চুরি করে থাকে প্রতারকেরা।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, চিকিৎসক, উচ্চপদস্থ সরকারি–বেসরকারি কর্মকর্তারাই মূলত এ ধরনের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। কারণ, তাঁদের পরিচিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা কাজে লাগিয়ে প্রতারকেরা আরও বেশি মানুষকে ফাঁদে ফেলতে পারে।

নিরাপদ থাকার উপায়

কল মার্জিং প্রতারণা থেকে নিরাপদ থাকতে অপরিচিত নম্বর থেকে কোনো ব্যক্তি কল মার্জ করার অনুরোধ করলে সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে আলাদাভাবে দুই ব্যক্তিকে ফোন করা যেতে পারে। এ ছাড়া অপরিচিত নম্বর থেকে আসা ফোনকল এড়িয়ে চলার পাশাপাশি সন্দেহজনক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা ফোন নম্বর ব্যবহার করতে হবে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ