২০২৫ আইপিএলের ধারাভাষ্যকারদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে গতকাল। ভারত ও ভারতের বাইরের বর্তমান ও সাবেক ৫০-এর বেশি ক্রিকেটার ম্যাচে ধারাভাষ্য দেবেন। তবে দীর্ঘ এই তালিকায় ভারতের সাবেক অলরাউন্ডার ইরফান পাঠানের নাম নেই। আগের আসরগুলোয় কাজ করলেও এবার পাঠানকে না রাখায় বিস্মিত অনেকেই।

ভারতের ক্রীড়া সংবাদমাধ্যম ‘মাই খেল’ বলছে, ভারতীয় কিছু ক্রিকেটার পাঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় তাঁকে ধারাভাষ্য প্যানেল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ওই ক্রিকেটারদের দাবি, ইরফান ব্যক্তিগত রোষ থেকে ধারাভাষ্যে তাঁদের নিয়ে সমালোচনামূলক কথা বলেন। এমনকি এক তারকা ক্রিকেটার পাঠানের ফোন নম্বর ব্লকও করে রেখেছেন।

সূত্রের বরাতে মাইখেল লিখেছে, পাঠান ধারাভাষ্যে ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা থেকে নেওয়া সিদ্ধান্ত টেনে আনেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্রিকেটারেরা। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া সফরে পাঠানের নির্দিষ্ট এক ক্রিকেটারকে নিয়ে সমালোচনামূলক কথা সেই তারকা ভালোভাবে নেননি। ওই ক্রিকেটার তাঁকে ফোনে ব্লক করেছেন বলে জানিয়েছে সেই সূত্র। সংবাদমাধ্যমটি এ বিষয়ে পাঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও মন্তব্য পায়নি।

সূত্র আরও জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক ও আইপিএল ম্যাচে নির্দিষ্ট কিছু ক্রিকেটারের সঙ্গে আলাপচারিতায় সময় পাঠানের প্রচুর ‘অ্যাটিটিউড’ দেখানো ভালোভাবে নেয়নি বিসিসিআই। সূত্রটি বলেছেন, ‘এসব না হলে তার নাম (ধারাভাষ্য প্যানেলে) থাকত। গত দুই বছর ধরেই সে এটা করছে, নির্দিষ্ট কিছু খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত এজেন্ডা কায়েম করছে, যেটা ভালোভাবে নেওয়া হয়নি।’

ধারাভাষ্যকার হিসেবে বিসিসিআইয়ের অফিশিয়াল সম্প্রচারকদের কাছে চুক্তিপত্র না পাওয়া একমাত্র ব্যক্তি নন ইরফান। এর আগে ভারতের সঞ্জয় মাঞ্জরেকার ও হার্শা ভোগলেও ধারাভাষ্য প্যানেল থেকে বাদ পড়েছিলেন কিছু ক্রিকেটারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে। ধারাভাষ্যে তাদের কথায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি সেসব ক্রিকেটার।

ধারাভাষ্য প্যানেল থেকে বাদ ইরফান পাঠান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইরফ ন

এছাড়াও পড়ুন:

জর্জ ফোরম্যান: কাঠমিস্ত্রি থেকে কিংবদন্তি বক্সার

এই প্রজন্মের অনেকের কাছেই হয়তো তিনি শুধুই ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা। যার নামে বিশ্ববিখ্যাত কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স ব্র্যান্ড ‘জর্জ ফোরম্যান গ্রিল’ রয়েছে। তবে গত শতকের বেড়ে ওঠা প্রজন্মের কাছে তিনি কেবলই কিংবদন্তি এক হেভিওয়েট বক্সার। যিনি কিনা দরিদ্রতা জয় করে বক্সিং রিংয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পিছিয়ে পড়া এক জনগোষ্ঠীর মুখ হিসেবে। দু’বার বিশ্বজয়ী হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন ও অলিম্পিক পদক জয়ী সেই বক্সার জর্জ ফোরম্যান এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন কাল। 

শুক্রবার রাতে পরিবারের পক্ষ থেকে ৭৬ বছর বয়সী ‘বিগ জর্জ’ খ্যাত বক্সারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। তাঁর অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রামে ঘোষণা আসে, ‘আমাদের হৃদয় আজ বিক্ষিপ্ত। গভীর শোকের সঙ্গে আমরা আমাদের প্রিয় জর্জ এডওয়ার্ড ফোরম্যান সিনিয়রের প্রয়াণের খবর জানাচ্ছি। তিনি ছিলেন একজন নিবেদিত যাজক, একজন দয়ালু স্বামী, একজন প্রিয় বাবা।’

জীবনের শেষ সময়ে অর্থের প্রাচুর্যের মধ্যেই কেটেছে তাঁর। তবে প্রথম জীবনে প্রচণ্ড দরিদ্রতার মধ্যেই বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। ১৯৪৯ সালে টেক্সাসে তাঁর জন্মের পর পরই বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ছয় ভাইবোনের সংসারে স্কুলে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি তাঁর। সেই সময়ে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। ১৬ বছর বয়সে জেল থেকে বেরিয়ে মায়ের কাছেই আবদার করেন স্কুলে যাওয়ার। 

আমেরিকায় তখন সরকারি সহায়তায় অসহায় ছেলেমেয়েদের জন্য ভোকেশনাল কিছু কোর্স চালু করেছিল। সেখানেই কাঠমিস্ত্রির কাজ শেখেন। কখনও রাজমিস্ত্রির কাজও করতেন ফোরম্যান। এভাবেই কিছুদিন যাওয়ার পর টেক্সাস থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় এসে বক্সিংয়ের টানে পড়ে যান। শুরুটা অ্যামেচার হিসেবেই হয়েছিল তাঁর। তবে রিংয়ে তাঁর ক্ষিপ্রতা আর শক্তি দেখে পেশাদার রিংয়ে নিজের জায়গা করে নেন। গত দশকের ষাট ও সত্তর দশকে বক্সিংয়ে নাম ছড়িয়ে পড়ে ফোরম্যানের।

১৯৭৩ সালে আরেক কিংবদন্তি জো ফ্রেজিয়ারের বিপক্ষে প্রথম হেভিওয়েট টাইটেল জিতে নেন ফোরম্যান। মাত্র দুই রাউন্ডেই ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রেজিয়ারকে নকআউট করে দেন। তার আগে ১৯৬৮ মেক্সিকো অলিম্পিকে স্বর্ণ জেতেন। সেই সময় ক্রীড়া বিশ্বে আলোড়ন তোলা এক ইভেন্ট আয়োজন করা হয় ফোরম্যান ও মোহাম্মদ আলির সঙ্গে। বর্তমানের কঙ্গোতে আয়োজিত সেই হেভিওয়েট লড়াইয়ের নাম দেওয়া হয় ‘রাম্বল ইন দ্য জঙ্গল’। ঐতিহাসিক সেই লড়াইয়ে তিনি তাঁর প্রথম বিশ্ব টাইটেল হারান আলির কাছে। জিমি ইয়াংয়ের কাছে পরাজিত হয়ে ১৯৭৭ সালে রিং থেকে অবসরের ঘোষণাও দেন। ফিরে আসেন তারও ২২ বছর পরে ১৯৯৪ সালে। মাইকেল মুরারকে হারিয়ে ফিরে পান তাঁর হেভিওয়েট টাইটেল। 

বছর পঁয়তাল্লিশে এসেও এভাবে রিংয়ে ফিরে চ্যাম্পিয়ন হওয়টা অনুপ্রাণিত করেছিল অনেককে। তাঁর সেই কাহিনি নিয়েই হলিউডে সিলভেস্টার স্ট্যালোনের বিখ্যাত ‘রকি বলবায়ো’ সিনেমা নির্মিত হয়। ৮১ ম্যাচের ক্যারিয়ারে মাত্র ৫ ম্যাচে হেরেছিলেন ফোরম্যান। ৭৬ ম্যাচে জয়ের ক্ষেত্রে ৬৮ ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে নকআউট করেন। জয়ের হিসাবে যা ছিল মোহাম্মদ আলির চেয়ে দ্বিগুণ। আলি পৃথিবী ছেড়েছেন তাও প্রায় ৯ বছর হতে চলল। এবার র‍্যাম্বাল ইন দ্য জঙ্গলের আরেক কিংবদন্তিও বিদায় নিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ