একজন শিশুশিল্পী হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন তিনি, আজ সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। তবে এই যাত্রা মোটেই সুখকর ছিল না, একাধিকবার অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল অভিনেত্রী অবনীত কৌরের সামনে। দীর্ঘ এই অভিনয় ক্যারিয়ারে নানা সময় যৌন হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম হাউটার ফ্লাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন অবনীত।

অভিনেত্রী বলেন, ‘আমার তখন আট বছর বয়স। নাচের মহড়ায় আমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে স্পর্শ করা হয়েছিল। আমি আমার মাকে গোটা বিষয় বলি। আমার মা আমাকে খারাপ স্পর্শ আর ভালো স্পর্শের মধ্যে পার্থক্য বোঝান। আট বছর বয়সে হয়তো এটা আমার না বুঝলেও চলত, কিন্তু আমার মা আমাকে সবকিছু খোলাখুলিভাবে জানান। মায়ের বলা কথা শোনার পর থেকে আমি সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতাম।’

অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘তবে শুধু যৌন নিগ্রহ নয়, একবার মানসিক নির্যাতনও করা হয়েছিল আমাকে। তখন ১১ কি ১২, একটা ঘটনা এমন ঘটেছিল, যা আমাকে সত্যিই ভয় পাইয়ে দিয়েছিল। শুটিং চলাকালে আমি একটা জিনিস বারবার ভুল করছিলাম, তখন হঠাৎ করে মাইক অন করে আমাকে কড়া ভাষায় তিরস্কার করতে শুরু করেন পরিচালক।’

অবনীত বলেন, ‘মাইক অন করে পরিচালক বলেন, আমি কিছুই করতে পারব না। ইন্ডাস্ট্রিতে কোনো দিন সফল হতে পারব না আমি। আমাকে গালিগালাজও করা হয়েছিল সেদিন। মা–বাবা সেটে না থাকায় আমি ভীষণভাবে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পরে সবকিছু মা–বাবার কাছে খুলে বলেছিলাম, তবে আত্মবিশ্বাস ভেঙে গিয়েছিল অনেকটাই।’

আট বছর বয়সে রিয়ালিটি শো ‘ড্যান্স ইন্ডিয়া ড্যান্স লিটল মাস্টার’ শোয়ের হাত ধরে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন অবনীত। ২০১২ সালে ‘মেরি মা’ সিনেমায় অভিনেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। বেশ কয়েকটি টিভি শোয়ে শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করতে দেখা যায় তাকে।

২০১৪ সালে ‘মর্দানি’ সিনেমায় কাজ করে প্রথম বড় পর্দায় কাজ শুরু করেন অভিনেত্রী। ২০২৩ সালে ‘পিকু ওয়েডস শেরু’ সিনেমায় প্রথম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেত্রী। সূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ন হয়র ন অভ ন ত র কর ছ ল ন অবন ত

এছাড়াও পড়ুন:

তিন দশক ধরে সাহ্‌রিতে ডেকে যাচ্ছেন বাহার

রাত তিনটার আগে আগে ঘরে থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। হাতে মাইক। হেঁটে হেঁটে গেয়ে শোনান বাংলা, উর্দু ও আরবির মিশেলে কাসিদা। ফাঁকে হাঁক ছেড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের জানিয়ে দেন সাহ্‌রি খাওয়ার শেষ সময়। চট্টগ্রাম নগরের কুসুমবাগ আবাসিক এলাকায় সাহ্‌রি খাওয়ার জন্য এভাবে ঘুম ভাঙে বাসিন্দাদের।

প্রতিদিন যে মানুষটি এ কাজ করে যান, তাঁর নাম মোহাম্মদ বাহার মুন্সি। প্রায় তিন দশক ধরে প্রতি রমজানেই এটা রুটিন কাজ বাহারের। মাঝবয়সী বাহার কাজটি করেন স্ব–উদ্যোগে।

বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, উনিশ শতকের শেষের দিকে বাংলাদেশে রমজান উপলক্ষে কাসিদা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। রোজার রাতে পাড়ার মানুষদের ঘুম থেকে জাগাতে তরুণেরা ঢাকঢোল পিটিয়ে উর্দু ও ফারসি ভাষায় কাসিদা গাইত। সে সময় সাহ্‌রির সময় এই কাসিদা শুনেই মানুষের ঘুম ভাঙত।

৮ মার্চ মোহাম্মদ বাহারকে নিয়ে নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে দেশের টেলিকম খাতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি গ্রামীণফোন। সেখানে মোহাম্মদ বাহারের ছবি দিয়ে তাঁর সম্পর্কে জানায় তারা। বাহারকে সেখানে উল্লেখ করা হয় ‘সাহ্‌রি ডাকার ফেরিওয়ালা’ হিসেবে।

গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে কুসুমবাগ আবাসিক এলাকায় পাওয়া গেল বাহারকে। এলাকায় তিনি পরিচিত ‘বাহার ভাই’ নামে। জানা গেল, বাহার ভাই পেশায় একজন চা–বিক্রেতা। অন্য সময় ভাসমান চা–বিক্রেতা হলেও রমজানে এলাকায় সড়কের পাশে একটি অস্থায়ী দোকানে চা বিক্রি করেন তিনি।

নগরে জিইসি এলাকার অদূরে কুসুমবাগ আবাসিক এলাকা। এর পাশেই বায়তুল আমান হাউজিং ও শাহ গরীবুল্লাহ হাউজিং সোসাইটি। তিন আবাসিক এলাকা মিলিয়ে কমবেশি প্রায় এক লাখ মানুষের বসবাস এখানে। কুসুমবাগ আবাসিক এলাকার প্রায় শেষ প্রান্তে আয়েশা মসজিদের পাশে মোহাম্মদ বাহারের চায়ের দোকান।

আশপাশে তাঁর নাম বলতেই দেখিয়ে দিলেন তাঁর দোকান। সেখানেই কথা হয় মোহাম্মদ বাহারের সঙ্গে। দিনের শেষ কয়েক কাপ চা বানাতে ব্যস্ত তিনি। কথা বলতে চাইলে হাসিমুখেই রাজি হলেন বাহার। এরপর ক্রেতাদের হাতে চায়ের কাপ দিয়ে এবার বাহার বলতে শুরু করলেন। জানালেন ঠিক কীভাবে এই কাজে যুক্ত হয়েছেন তিনি।

‘আমার জন্ম এই এলাকায় ১৯৮২ সালে। এই এলাকায় আতাউর রহমান নামের একজন কাসিদা গাইতেন। তিনি টিন বাজিয়ে এ কাজ করতেন। ১৯৯৪ সালের দিকে আমি তাঁর সঙ্গে যোগ দিই নিজের ভালো লাগা থেকে। ২০০৬ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে এই দায়িত্ব তিনি আমাকে দেন। এরপর থেকে আমিই চালিয়ে যাচ্ছি।’ বলছিলেন মোহাম্মদ বাহার।

মোহাম্মদ বাহার বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় তিন-চার কিলোমিটার এলাকা ঘুরি হেঁটে হেঁটে। ২টা ৫০ এ শুরু করে ৪টা ১০–এ ঘরে ঢুকি।’

মা, দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে কুসুমবাগেই ভাড়া বাসায় থাকেন মোহাম্মদ বাহার। ছোট ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। বড় ছেলে বর্তমানে কাজ করে। সাহ্‌রিতে আগে টিন বাজিয়েই কাসিদা গাইতেন বাহার। স্থানীয় এক নারী তাঁকে একটি হ্যান্ড মাইক কিনে দেন ২০১৬ সালের দিকে। এখন সেটি ব্যবহার করেই কাসিদা গান তিনি।

কথা বলার ফাঁকে এগিয়ে এলেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। মোহাম্মদ আবদুল হক নামের এক প্রবীণ জানালেন, ২০ বছরের বেশি সময় ধরে বাহারকে চেনেন তিনি। তারাবিহর নামাজের পর তাঁর দোকানে গিয়ে পাড়ার মুরব্বিরা চায়ের আড্ডা জমান। তরুণেরাও থাকেন এক পাশে। এরপর আবার সেই বাহারের ডাকেই সাহ্‌রিতে ওঠা।

মোহাম্মদ বাহারের বয়স এখন প্রায় ৪৩ বছর। ১২ বছর বয়সে শখ থেকে শুরু করা কাসিদার কাজ করে যাচ্ছেন এখন। হিসাব করলে তিন দশক পার করেছেন। তবে একা একা এ দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন দুই দশক ধরে। বিদায় নেওয়ার আগে মোহাম্মদ বাহার বললেন, ‘এই কাজ করতে আমার ভালো লাগে। আমার ডাকে একজন ব্যক্তিও যদি উঠে রোজা রাখে, এটাই আমার শান্তি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ