২০০৮ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ম্যাচ দিয়ে আলোর মুখ দেখেছিল আইপিএল। ১৭ বছর পরে আবারও এই দুদলে মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে আজ (২২ মার্চ) মাঠে গড়াচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় টি-টোয়েন্টি লিগের ১৮তম আসর।

কালের পরিক্রমায় আইপিএল এখন মহা প্রভাবশালী। বিশ্বের সকল টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলো এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ চলার সময় তাদের খেলা বন্ধ রাখার চেষ্টা করে। প্রায় দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা আইপিএলের ১৮তম আসর। ১৩টি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ৭৪টি ম্যাচ।

বলা হয় আইপিএলের ভাগ্য গড়ে দিয়েছিল প্রথম ম্যাচেই করা ব্র্যান্ডন ম্যাককালামের ১৫৮ রানের ইনিংসটি। সে ম্যাচটি বেঙ্গালুরের চিন্নাস্বওমী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হলেও, আজকের খেলা হবে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে। তারা যে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। ম্যাচ শুরুর আগে থাকবে চোখ ধাঁধানো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

আরো পড়ুন:

রাম নবমীর জন্য নিরাপত্তাহীনতায় আইপিএলের ম্যাচ!

ম্যাচ খেললেও নিয়মিত অধিনায়ক স্যামসন নেতৃত্বে নেই!

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কিছুরই ভরসা নেই। এই কথাটা আবারও সত্য প্রমাণ করল নাইট রাইডার্স। দশ মৌসুম পরে তাদেরকে শিরোপা জেতানো শ্রেয়াস আইয়ারকেই তারা ধরে রাখেনি। কলকাতা শিবিরকে এবার নেতৃত্ব দিবেন আজিঙ্কা রাহানে। বেঙ্গালুরুর দায়িত্বে থাকবেন রজত পাতিদার। সবমিলিয়ে মোট পাঁচটি দল পরিবর্তিত অধিনায়ক নিয়ে খেলতে নামবে। পাঞ্জাব কিংসে থাকবেন শ্রেয়াশ আইয়ার, দিল্লির ক্যাপিটালসে অক্ষর প্যাটেল ও লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টের কাপ্তান ঋষভ পন্থ।

পিচগুলো হবে বরাবরের মতো ফ্ল্যাট। তাই দর্শকরা এবারও দেখবে রান বন্যা। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা তো বলছেন এবার ১২০ বলের খেলায় ৩০০ রানও দেখা যেতে পারে।

এবার আগের যে কোন আসরের চেয়ে বেশি ভ্রমণ করতে হবে দলগুলোকে। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের সবচেয়ে কম শারীরিক ধকল যাবে, এরপরও তাদের সাড়ে আট হাজার কিলিমিটার পথ ভ্রমণ করতে হবে। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি সতের হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিতে হবে বেঙ্গালুরুকে, যা হায়দ্রাবাদের দ্বিগুণ। বাকি সব দলকেই পোহাতে হবে দশ হাজারের কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণের ঝাক্কি।

বরাবরই আইসিসিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো আইপিএল এবারের আসরে এনেছে বেশ কিছু পরিবর্তন। বলে লালা মাখানোতে আর কোন বাঁধা নেই। এমনকি থাকছে না স্লো ওভাররেটের কারণে অধিনায়কের নিষিদ্ধের নিয়মও। এমনকি প্রতিটি ওয়াইড এবং নো বলের সিধান্ত নেওয়া হবে ‘হক আই’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এমনকি ক্রিকেটারদের অসন্তষের মাঝেও বহাল থাকবে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার পদ্ধতি।
 

ঢাকা/নাভিদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কলক ত

এছাড়াও পড়ুন:

গাজার শিশুর আর্তনাদ শুনতে কি পাও

ফিলিস্তিনের গাজা বহুদিন ধরেই এক মৃত্যু উপত্যকা। শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না ইসরায়েলি মৃত্যুদানবের হাত থেকে। ইসরায়েলের বর্বর গণহত্যার শিকার হয়ে শহীদ হয়েছে গাজার হাজার হাজার শিশু। যেসব শিশু বেঁচে আছে; মৃত্যুভয়, অবর্ণনীয় দুর্দশা, খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে তারাও যেন জীবন্মৃত। ইসরায়েল এতটাই নির্দয় যে, ফিলিস্তিনে কোনো মানবিক সহায়তাও প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। কত শিশু বাবা হারিয়ে এতিম হয়ে গেছে; কত শিশু মা, ভাইবোন হারিয়ে নির্বাক; ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে কত শিশু; কেউ জানে না। তাদের শৈশব বলে কিছু নেই। শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই জানুয়ারিতে বলেছিলেন, ইসরায়েল গাজার সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বোমা হামলা চালিয়েছে। ৯০ শতাংশের বেশি স্কুল ধ্বংস করেছে। এমনকি স্কুল ভবনে আশ্রয় নেওয়া নারী-শিশুরাও হামলা থেকে রক্ষা পায়নি। পুরো গাজাই যেখানে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে; গাজাবাসীর জীবন বাঁচানোই যেখানে দায়; তাদের শিশুর শিক্ষার কথা চিন্তা করা অকল্পনীয়। 

গাজাস স্টোলেন চাইল্ডহুড বা গাজার চুরি হয়ে যাওয়া শৈশব শিরোনামে আলজাজিরা ২৬ মার্চ একটি ‘লংফর্ম স্টোরি’ প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইসরায়েল প্রতি ৪৫ মিনিটে গাজার একটি শিশুকে হত্যা করছে। তার আগের প্রায় সাড়ে পাঁচশ দিনে প্রতিদিন প্রায় ৩০টি শিশু হত্যা করেছে। সে হিসাবে ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর থেকে সাড়ে ১৭ হাজার শিশুকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। যার মধ্যে সাড়ে ১৫ হাজার শিশুকে চিহ্নিত করা গেছে, বাকিদের কবর হয়তো হয়েছে ধ্বংসস্তূপের নিচে। এর মধ্যেও কেউ বেঁচে আছে কিনা, কে জানে! 
ইসরায়েলি বোমায় এমন হাজারো শিশু শহীদ হয়েছে, যারা প্রথম জন্মদিনও পালন করতে পারেনি। ১ বছর পূর্ণ হওয়ার পর শহীদ হয়েছে মোহাম্মদ, যার গল্প তুলে ধরেছে আলজাজিরা। যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ১৮ মার্চ যখন ইসরায়েল গাজায় পুনরায় বোমা হামলা শুরু করে, তার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ৩৩৬ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারায়। এর মধ্যে ১৮৩ শিশু, যেখানে ১ বছরের মোহাম্মদ তার সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা মায়ের সঙ্গে শহীদ হয়। আল মাওয়াসি ক্যাম্পে বিমান হামলায় তারা শহীদ হয়। এটি এমন ক্যাম্প, যাকে ইসরায়েল বলেছিল ‘সেফ জোন’। এমন আরও বহু কথিত নিরাপদ পরিসরে ফিলিস্তিনি শিশু ও নিরীহ নাগরিক প্রাণ হরিয়েছে। এভাবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ৫০ সহস্রাধিক মানুষকে শহীদ করেছে ইসরায়েল। যেখানে এক-তৃতীয়াংশ শিশু ছাড়াও আছে নারী, সাংবাদিক, নিরাপত্তাকর্মী, মানবিক সহায়তাকারী, শিক্ষক, চিকিৎসক। হামলা থেকে রেহাই পায়নি হাসপাতাল, এমনকি রোগীরাও।

দেড় বছরের অধিক সময় ধরে ইসরায়েল গাজায় এমন গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। ছোট্ট কাফন মোড়ানো কফিন নিয়ে হাজারো পিতা-মাতা-স্বজনের আর্তনাদ আমরা দেখছি। সাধারণ বিবেকসম্পন্ন মানুষ এমন একটি হত্যাকাণ্ডও মেনে নিতে পারে না। অথচ ইসরায়েল একটি প্রজন্মকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে– কী করছে বিশ্ববিবেক। কেবল এই দেড় বছরই নয়; ইসরায়েল নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে যুগ যুগ ধরে। গায়ের জোরে ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল করে সেই ফিলিস্তিনিদের ওপরেই গণহত্যা চালানোর পর ইসরায়েলের কিছুই হচ্ছে না কেন? কারণ ইসরায়েলের খুঁটির জোর আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব। পশ্চিমা বিশ্বের মিডিয়াও ইসরায়েলের পক্ষে সাফাই গাইছে। অথচ তারাই কিনা সারা পৃথিবীকে শান্তির সবক দিচ্ছে!
নিষ্পাপ, নিরীহ ইসরায়েলি শিশুরা প্রতিদিন শহীদ হচ্ছে, তাতে এমনকি মুসলিম বিশ্বেরও টনক নড়ছে না। মুসলমানদের কয়েকটি দেশ নামকাওয়াস্তে কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে, তাতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অথচ ইসরায়েল ঘিরে আছে মুসলিম বিশ্ব। মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ হলে ইসরায়েলে এমন আগ্রাসন চালানো কি সম্ভব হতো?
আমরা জানি না, আরব বিশ্বের নেতাদের কবে ঘুম ভাঙবে। ইসরায়েলি বর্বরতার সরাসরি সম্প্রচার আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি। গাজার প্রাণ হারানো মায়ের হাহাকার কি মুসলিম বিশ্বের নেতাদের কর্ণকুহরে পৌঁছে না?

শিশু হত্যাসহ ইসরায়েলের মানবতাবিরোধী অপরাধের হাজারো দলিল বিশ্বের মিডিয়ায় বিরাজমান। মানবাধিকার ও মানবতাবাদী সংগঠনগুলোও ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন প্রকাশ করে যাচ্ছে। এমনকি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলাও হয়েছে। তাতেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কিছুই হচ্ছে না। জাতিসংঘ মহাসচিবও বারবার নিন্দা জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ১৮ মার্চের পর বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যেন আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন যেন তাঁকে ফিলিস্তিনিদের হত্যার সব লাইসেন্স দিয়েছে। অথচ বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণপ্রতিবাদ কম হচ্ছে না। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। সারাবিশ্বের কোটি কোটি মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করছে। যুক্তরাষ্ট্র এই বিশ্ব-জনমত বোঝার চেষ্টা করছে না।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যখনই ভোট হয়; যুক্তরাষ্ট্রসহ ৪-৫টি দেশ বাদে প্রায় সবাই  ইসরায়েলের বিপক্ষে ভোট দেয়। কয়েকটি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। কিন্তু জাতিসংঘ যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো শক্তির কাছে অসহায়। ভেটোধারী অন্য দেশগুলোও কার্যকর কিছু করছে না। এ বিশ্ব ব্যবস্থা নিয়মভিত্তিক হয় কীভাবে? 
ইসরায়েলি হতভাগা শিশুরা আজ হয়তো ঐশ্বরিক শক্তির দিকেই তাকিয়ে আছে। বোমার আঘাতে মৃত্যুর আগে সিরিয়ার এক শিশু বলেছিল– আমি আল্লাহকে সব বলে দেব। ফিলিস্তিনি শিশুরাও কি বলে দেবে না? এত রক্ত, এত প্রাণহানি, এত জুলুম! প্রকৃতিইবা সইবে কীভাবে? আমরা অসহায় গাজার শিশুদের পাশে দাঁড়াতে পারছি না। আমরা হতাশ মুসলিম বিশ্ব নিয়ে। আমরা বিস্মিত পশ্চিমা বিশ্বের মানবাধিকার নিয়ে। তবে এই জুলুমের শেষ হবে; হতেই হবে। না হলে এ যে আর মানুষের পৃথিবী থাকবে না।

মাহফুজুর রহমান মানিক: 
জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.manik@gmail.com

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে কণ্ঠস্বর ইসরায়েলের মিথ্যাচার ব্যর্থ করে দিচ্ছে
  • ঢাকায় পাকিস্তানি গায়ক মুস্তাফা জাহিদের কনসার্ট হয়নি, আয়োজক লাপাত্তা
  • গাজার শিশুর আর্তনাদ শুনতে কি পাও
  • আর্জেন্টিনাকে গুঁড়িয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে নতুন করে যা বললেন রাফিনিয়া