এভারেস্টজয়ী বাবর এবার বিপজ্জনক পথে পা বাড়াচ্ছেন, জানেন, কোন সে পথ?
Published: 22nd, March 2025 GMT
একের পর এক কঠিন চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন পর্বতারোহী বাবর আলী। গত বছরের ১৯ মে সকালে বাবর আলী দেশের গণমাধ্যমের খবর হয়েছিলেন। সেদিন পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পা রেখেছিলেন তিনি। দুই দিন পর লোৎসে পর্বতের শীর্ষও ছুঁয়েছিলেন। এবার আরও বিপজ্জনক পথে বাড়াচ্ছেন এই তরুণ। কোথায় যাচ্ছেন তিনি?
বাবরের নবযাত্রার আদ্যোপান্ত জানার আগে চলুন একটু পেছনে ফিরে যাই। গত বছরের ৩০ মার্চ এমন এক ক্ষণে চট্টগ্রাম নগরের প্রেসক্লাবে হাজির হয়েছিলেন তিনি। সেদিন নতুন এক রেকর্ড গড়ার ঘোষণা দেন। এর আগে দেশের কোনো পর্বতারোহী একই অভিযানে পর পর দুটি আট হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার পর্বতে পা রাখেননি। বাবর সেদিন বলেছিলেন, কঠোর পরিশ্রম করে তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি একই অভিযানে দুটি আট হাজারি শৃঙ্গের চূড়ায় দাঁড়াবেন। এরপর ১৯ মে সকাল সাড়ে আটটায় এভারেস্টের (৮৮৪৮ মিটার) চূড়ায় ও ২১ মে লোৎসে পর্বতের শীর্ষ (৮৫১৬ মিটার) ওঠেন।
দুই ঘটনার পর শোরগোল পড়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাবরকে নিয়ে স্ট্যাটাস দেন তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। এই দুই অভিযান নিয়ে প্রথম আলোতে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। নেপাল থেকে ফিরে এসে বাবর নিজেও প্রথম আলোতে তাঁর অভিজ্ঞতার বৃত্তান্ত তুলে ধরেন। অবশ্য এরপর অনেক দিন বাবর কোথায় যেন ডুব দিয়েছিলেন। তাঁকে পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বাবরের সঙ্গে দেখা হলো। তিনি এসেছিলেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে। জানালেন কী সেই বিপজ্জনক অধ্যায় শুরু হচ্ছে। বাবরের ‘অন্নপূর্ণা-যাত্রা’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে অভিযানের উদ্যোক্তা সংগঠন পর্বতারোহণ ক্লাব ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স’।
এতে বাবর জানান, উচ্চতার দিক দিয়ে পৃথিবীর দশম স্থানে রয়েছে অন্নপূর্ণা-১ পর্বত, উচ্চতা ৮ হাজার ৯১ মিটার। এই পর্বতের পরতে পরতে বিপদ লুকিয়ে থাকে। এবার বিপজ্জনক এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়াতে যাচ্ছেন তিনি। অভিযানের জন্য ২৪ মার্চ সকালে নেপালের উদ্দেশে দেশ ছাড়বেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাবর বলেন, প্রয়োজনীয় অনুমতি ও নানা সরঞ্জাম কেনা শেষে কাঠমান্ডু থেকে পোখারা হয়ে তাতোপানির উদ্দেশে রওনা দেবেন। দিন চারেকের ট্র্যাক শেষে পৌঁছাবেন অন্নপূর্ণা নর্থ বেস ক্যাম্পে। এখান থেকেই শুরু হবে মূল অভিযান। ৩০ মার্চ থেকে মূল অভিযান শুরু করার আশা করছেন তিনি। ওঠানামায় অন্তত এক মাস সময় লাগবে। আর পুরো অভিযান শেষ করতে সময় লাগবে অন্তত ৪০ দিন।
সংবাদ সম্মেলনে বাবর আলীর হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের সদস্যরা। আজ দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মহানবীর (সা.) ইতিকাফ
মহানবী (সা.) রমজানে ইতিকাফ পালন করতেন একান্ত কিছুটা সময় আল্লাহর সান্নিধ্যে যাপন করার জন্য। প্রতি বছর রমজানে তিনি মদিনার মসজিদে ইতিকাফ করতেন। তার ইন্তেকালের পর তার স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন। (বুখারি, হাদিস: ২,০৪১)
তিনি মৃত্যু-পূর্ব পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন (বুখারি, হাদিস: ২,০২৬)। কেন? তিনি নিজেই জানিয়েছেন, ‘আমি কদরের রাত্রির সন্ধানে প্রথম দশ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী দশদিনে। পরে ওহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হলো যে, তা শেষ দশ দিনে। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ করবে, সে যেন (এ-সময়) ইতিকাফ করে। ফলে, লোকজন তার সঙ্গে ইতিকাফ অংশ নিল। (মুসলিম, হাদিস: ১,১৬৭)
তবে আবু হোরাইরা (রা.) জানান যে, যে-বছর তিনি পরলোকগত হন, সে বছর ইতিকাফে কাটিয়েছেন তিনি বিশ দিন (বুখারি, হাদিস: ২,০৪৪)
আরও পড়ুনরমজানের নেয়ামত শবে কদর২০ এপ্রিল ২০২৩কোথায় অবস্থান করতেন
ইতিকাফকালে রাসুল (সা.) মসজিদে সবার থেকে আলাদা করে একটি তাঁবু-সদৃশ টানিয়ে দেওয়ার আদেশ দিতেন। আবু সাইদ (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) এক তুর্কি তাঁবুতে ইতিকাফে বসলেন, যার প্রবেশমুখে ছিল একটি চাটাইয়ের টুকরো। (একবার) তিনি চাটাইটি হাতে ধরে একপাশে সরিয়ে রাখলেন এবং চেহারা বের করে লোকজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করলেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১,৭৭৫)
বিশ তারিখের দিবসের সূর্যাস্তের পর একুশ তারিখের রাতের সূচনালগ্নে তিনি ইতেকাফগাহে প্রবেশ করতেন এবং বের হতেন ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর। আয়েশা (রা.) জানান যে, নবীজি (সা.) ফজর আদায় করে ইতেকাফগাহে প্রবেশ করতেন। (মুসলিম, হাদিস: ১,১৭৩)
আরও পড়ুন ইতিকাফ আল্লাহর ঘরে, আল্লাহর সঙ্গে০৪ এপ্রিল ২০২৩ইতিকাফের সময় কী করতেন
ইতিকাফকালে তিনি কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন না, জানাজায় অংশ নিতেন না, স্ত্রী-সঙ্গ ত্যাগ করতেন। তবে স্ত্রীরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং কথা বলতেন। সাফিয়া (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) ইতিকাফে ছিলেন, আমি তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য এলাম, আলাপ করলাম, এরপর চলে এলাম...। অন্য বর্ণনায় আছে, নবীজি (সা.)তাঁকে পৌঁছে দিতে এগিয়ে গেলেন। অথচ নবীজি(সা.)ইতিকাফে ছিলেন এবং সাফিয়ার আবাস ছিল উসামা বিন জায়েদের বাড়িতে। যদিও তিনি অত্যাবশ্যকীয় কোনো কারণ ব্যতীত ইতেকাফগাহ হতে বের হতেন না। (বুখারি, হাদিস: ৩,২৮১, ৩,০৩৯, ২,০২৯)
ইতিকাফের অজুহাতে যারা পরিবারের কথা ভুলে যায়, তারা এ থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। এমনকি স্ত্রীকে ঘর পর্যন্ত এগিয়ে দিতে তিনি বাইরেও বেরিয়েছেন। কোনো বর্ণনায় আছে, আয়েশা (রা.) তাঁর মাথার চুল গুছিয়ে দিতেন (বুখারি, হাদিস: ২৯৬)। একবার তিনি মসজিদে অবস্থান করছিলেন, স্ত্রীরা তার পাশে ছিলেন এবং তারা ছিলেন আনন্দিত...। (বুখারি, হাদিস: ১,৮৯৭)
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)-কে ভালোবাসার ৭টি নিদর্শন০৬ মার্চ ২০২৫ইতিকাফের কাজা আদায়
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) ইতিকাফ করবেন বলে মনস্থ করলেন, ফজরের নামাজ আদায় করে ইতেকাফগাহে প্রবেশ করলেন। জয়নব (রা.) চাইলেন তার সঙ্গে ইতিকাফ করবেন। তিনি অনুমতি দিলেন। তার জন্যও তাঁবু টানানো হলো। এরপর রাসুলের অন্য স্ত্রীরাও একে একে এসে তাঁবু টানালেন এবং ইতিকাফ করবেন বলে আগ্রহ প্রকাশ করলেন। ফজর নামাজ শেষে রাসুল (সা.) অনেকগুলো তাঁবু দেখে বললেন, তোমরা কি এর মাধ্যমে পুণ্য অর্জন করতে চাইছ? এরপর তিনি নির্দেশ দিলেন তার তাঁবু সরিয়ে নিতে এবং তিনি রমজানে ইতিকাফ পরিত্যাগ করলেন। সে-বছর শাওয়ালের প্রথম দশদিন সেই ইতেকাফের কাজা আদায় করেছেন তিনি। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৩৬৬৩)
আরেকবার সফরে থাকার কারণে ইতিকাফ পালন সম্ভব না হওয়ায় তিনি রাসুল(সা.) পরবর্তী বছর বিশ দিন ইতিকাফ করে তা কাজা করে নেন। (তিরমিজি, হাদিস: ৮০৩)
আরও পড়ুনরোজার নিয়ত কখন করবেন১০ মার্চ ২০২৫