‘ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়ার’ সুপারিশ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের
Published: 22nd, March 2025 GMT
একই কোম্পানি বা মালিকের অধীনে একাধিক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান না রাখার সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। এ ক্ষেত্রে তারা ‘ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়ার’ সুপারিশ করেছে।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন আজ শনিবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদসহ অন্য সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন।
পরে যমুনার সামনে সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন কমিশন প্রধান কামাল আহমেদ। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, একই কোম্পানি, গোষ্ঠী, ব্যক্তি, পরিবার বা উদ্যোক্তা যাতে একই সঙ্গে একাধিক মাধ্যমের মালিক হতে না পারে, সে জন্য বিশ্বের বহু দেশে ‘ক্রস-ওনার শিপ (টেলিভিশনের মালিক সংবাদপত্রের মালিক হতে পারেন না বা সংবাদপত্রের মালিক টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক হতে পারেন না) নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কমিশন মনে করে বাংলাদেশেও অচিরেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ‘ক্রস-ওনার শিপ’ নিষিদ্ধ করে অধ্যাদেশ করা যায়। যেসব ক্ষেত্রে এটি বিদ্যমান সেগুলোয় পরিবর্তন আনার নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তাদের ব্যবসা পুনর্গঠনের লক্ষ্য ঠিক করে দেওয়া প্রয়োজন। এগুলো নানা পদ্ধতিতে হতে পারে। যেসব কোম্পানি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, পরিবার একই সঙ্গে টেলিভিশন ও পত্রিকার মালিক, তারা যেকোনো একটি গণমাধ্যম রেখে অন্যগুলোর মালিকানা বিক্রির মাধ্যমে হস্তান্তর করে দিতে পারে। অথবা দুটি গণমাধ্যমের (টেলিভিশন ও পত্রিকা) সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একত্রিত করে আরও শক্তিশালী ও বড় আকারে একটি গণমাধ্যম (টেলিভিশন অথবা পত্রিকা) পরিচালনা করতে পারে।
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, একক মালিকানায় একই ভাষায় একাধিক দৈনিক পত্রিকা বা একাধিক টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিযোগিতার পরিবেশ নষ্ট করে। সেই সঙ্গে গণমাধ্যমের যে প্রভাবক ক্ষমতা, তা নিজ স্বার্থে কেন্দ্রীভূত করে। সে কারণে এই ব্যবস্থার অবসান হওয়া দরকার। বিদ্যমান এ ব্যবস্থার দ্রুত সমাধান করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, একই সাবান একাধিক মোড়কে বাজারজাত করা যেমন বাজারের প্রতিযোগিতাকে নষ্ট করে, একই মালিকানায় একই ভাষায় একাধিক দৈনিক পত্রিকাও গণমাধ্যমের প্রতিযোগিতাকে নষ্ট করে এবং পাঠক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টেলিভিশনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এ জন্য ‘এক উদ্যোক্তার একটি গণমাধ্যম (ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়া) নীতি কার্যকর করাই গণমাধ্যমের কেন্দ্রীকরণ প্রতিরোধের সেরা উপায় বলে মনে করে কমিশন।
সাংবাদিকতা সুরক্ষায় আইন করারও সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন।
গত বছরের ১৮ নভেম্বর গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। গণমাধ্যমকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষ্যে এই ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হয়। কমিশনের সদস্য হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অ্যাটকোর সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী, বাংলাদেশ টেলিভিশনের অবসরপ্রাপ্ত উপমহাপরিচালক কামরুন নেসা হাসান, দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের প্রতিনিধি শামসুল হক জাহিদ, নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সচিব আখতার হোসেন খান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের ট্রাস্টি ফাহিম আহমেদ, মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক সাংবাদিক জিমি আমির, দ্য ডেইলি স্টারের বগুড়া প্রতিনিধি মোস্তফা সবুজ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের উপসম্পাদক টিটু দত্ত গুপ্ত এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুন।
গত নভেম্বরে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন বিষয়ে পাঁচ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল। যাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ৩১ মার্চ। এর আগে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ইতিমধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লম্বা ছুটিতেও ভোগান্তির শঙ্কা
এবার ঈদুল ফিতরে টানা ৯ দিনের লম্বা ছুটি। ঘরমুখী মানুষের যাত্রা স্বস্তির হওয়ার প্রত্যাশা সরকারের। কিন্তু দেশের দুটি মহাসড়কে উন্নয়নকাজ, অব্যবস্থাপনা ভোগান্তির কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। বিশেষ করে ঈদের আগের দুই দিন যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলে আর ব্যবস্থাপনা ঠিকঠাক না থাকলে তা যানজটে রূপ নিতে পারে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। এই সড়কের নারায়ণগঞ্জ থেকে নরসিংদী পর্যন্ত হাটবাজারের কারণে এমনিতেই চাপ থাকে।
কিন্তু চার লেনের কাজ চলমান থাকায় কোথাও কোথাও সড়ক সরু হয়ে পড়েছে। কোথাও আবার খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। আছে ধুলার ওড়াউড়ি। এই পথে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৯টি জেলার মানুষ যাতায়াত করেন।
টাঙ্গাইল-রংপুর পথে চার লেনের কাজ চলছে ছয় বছর ধরে। এখনো কাজ শেষ হয়নি। বিশেষ করে যমুনা সেতুর আগের অংশের কাজ এখনো চলমান। ঈদের শেষ চার দিনে যমুনা সেতু হয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজারের মতো যানবাহন চলাচল করে। ফলে ভোগান্তির আশঙ্কা এই পথেও আছে। এই পথে ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের ২১টি জেলার মানুষ যাতায়াত করেন।
এর বাইরে ঢাকা-ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন মহাসড়কের নানা স্থানে দুই পাশেই অবৈধ দখলদারদের কারণে সড়ক সংকুচিত হয়ে গেছে। গাজীপুর অঞ্চলে পোশাক কারখানা ছুটি হলে চাপ পড়ে মহাসড়কে। ফলে ব্যবস্থাপনার ঘাটতি হলে যেকোনো সময় যানজট দেখা দিতে পারে।
এবার ঈদযাত্রায় নতুন শঙ্কা যোগ করেছে মহাসড়কে ডাকাতি। পুলিশের হিসাবে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সারা দেশে ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে ৭৪টি। আগের মাস জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ৭১। অথচ গত বছরের প্রথম দুই মাসে সারা দেশে ডাকাতির ঘটনা ছিল ৬২টি। সারা দেশে মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় ১ হাজার ৪০০ জনের একটি তালিকা করেছে হাইওয়ে পুলিশ।
এবার সড়ক পরিবহন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নগরের প্রতিটি বাস, রেল ও লঞ্চ টার্মিনালে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাচ্ছে। এর মাধ্যমে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পর্যবেক্ষণ করবেন। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, তিনিসহ সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঈদযাত্রার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তদারকি ও পরিদর্শন করবেন। যেকোনো অভিযোগ, বিশৃঙ্খলা নজরে এলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা ছাড়েন ১ কোটি ২০ লাখপরিবহন খাতের সূত্রগুলো বলছে, ঈদে ঘরমুখী মানুষের যাত্রায় দুর্ভোগের শুরু হয় একেবারে যাত্রার শুরু থেকেই। প্রথমত, ঈদের শেষ চার দিনে ১ কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ ঢাকা ছাড়েন। ট্রেন, বাস ও লঞ্চে এত বিপুলসংখ্যক যাত্রীর যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। ফলে ঈদযাত্রায় কাঙ্ক্ষিত যানের টিকিট পাওয়া এবং যাত্রা শুরু করাটাই প্রথম বিড়ম্বনা। এরপর রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চঘাটে ভোগান্তি হয়। আছে বাড়তি ভাড়ার চাপ। গতকাল শনিবার ট্রেনের ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। তবে ঢাকা থেকে আন্তনগর ট্রেনে মাত্র ৩৫ হাজার যাত্রী যাতায়াতের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে মূল চাপ পড়বে সড়কেই।
২০২২ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদীউজ্জামান ঈদে বাড়ি ফেরা নিয়ে একটি সমীক্ষা করেন। সমীক্ষা অনুযায়ী, ঈদের আগের চার দিনে ঢাকা ছাড়েন ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ। সে হিসাবে ঈদের সময় প্রতিদিন গড়ে বাড়ি যান ৩০ লাখ মানুষ। কিন্তু ঢাকাকেন্দ্রিক যে গণপরিবহনব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলো দিয়ে বড়জোর দিনে ২২ লাখ মানুষ পরিবহন সম্ভব।
ঈদের আগের কয়েক দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮ লাখ মানুষ বাস-মিনিবাসে, ১ লাখ ৫ হাজার মানুষ ট্রেনে বসে ও দাঁড়িয়ে এবং সোয়া লাখ মানুষ লঞ্চে যাতায়াত করেন। ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাস ভাড়া করে বাড়ি যান সাড়ে ৭ লাখ মানুষ। মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রায় শামিল হন ৪ লাখ মানুষ।
সমীক্ষা বলছে, আরও ৮ লাখ মানুষ ট্রাক, অটোরিকশাসহ নানা অপ্রচলিত বাহনে ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করেন। এর বাইরে কিছু মানুষ উড়োজাহাজেও যাতায়াত করেন।
অধ্যাপক হাদীউজ্জামান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তিন বছর আগে করা সমীক্ষার পরিবর্তন হয়নি; বরং ঘরমুখী মানুষের সংখ্যা কিছু বাড়তে পারে। যানবাহনের সংখ্যা এবং সড়কের অবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি।
ঈদে ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিয়ে হাদীউজ্জামান বলেন, ঈদ সাময়িক সময়ের জন্য মহাসড়কে উন্নয়নকাজ বন্ধ রাখতে হবে। আবার এটাও খেয়াল রাখতে হবে, যাতে ঠিকাদার নির্মাণসামগ্রী যত্রতত্র না রেখে দেন। এমনটা হলে জরিমানা করতে হবে। সরু সড়কে যাতে ওভারটেকিং না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
উত্তরের পথে যত বাধাউত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড়। এই সড়ক দিয়ে উত্তরের ১১৭টি সড়কের কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে।
চন্দ্রা এলাকার লবিবা পরিবাহনের ব্যবস্থাপক মো. ফয়সাল হোসেন জানান, চন্দ্রা এলাকায় উত্তরবঙ্গের পরিবহনের শতাধিক কাউন্টার রয়েছে। সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠাতে হয়। সড়কে অযথা বিভাজক তৈরি করে সংকুচিত করা হয়েছে। এতে সাধারণ সময়েই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঈদযাত্রা শুরু হলে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
এ মহাসড়কে নিয়মিত চলাচল করা দূরপাল্লার পরিবহনের চালক, যাত্রী ও স্থানীয় লোকজন বলছেন, রাস্তার দুই পাশ দখল করে অবৈধ দোকানপাট, কাঁচাবাজার, অবৈধ পার্কিং ও ইজিবাইকের আধিক্যের কারণে সারা বছর যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। ঈদ এলে ঘরমুখী মানুষের এ ভোগান্তি ব্যাপক আকার ধারণ করে। এবারও সে আশঙ্কাই করছেন তাঁরা।
গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশ সুপার আ ক ম আখতারুজ্জামান বসুনিয়া প্রথম আলোকে বলেন, গাজীপুরসহ আশপাশের কয়েকটি মহাসড়কে এবার ঈদে ৯ শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। তাঁরা জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন।
এদিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত চার লেনের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। তবে ইতিমধ্যে দুই লেন সড়কের পাশে ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য লেনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। যানবাহন এই লেন ব্যবহার করতে পারবে এবার ঈদযাত্রায়। ফলে ঢাকা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত যানবাহন চার লেনের সুবিধা নিয়ে চলাচলের সুযোগ পাবে এবার। তারপরও যমুনা সেতু দুই লেন হওয়ায় এবং মহাসড়কে যানবাহন বিকল হলে যানজটের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
গতকাল সকালে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার করাতিপাড়া থেকে যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার রাস্তা সরেজমিনে দেখা যায়, কালিহাতীর এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক ও দুই লেনের ধীরগতির যানবাহন চলাচলের রাস্তা দিয়ে নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচল করছে।
ভোগাতে পারে ঢাকা-ময়মনসিংহের ৬ স্থানঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাড়িগুলো সাধারণত উত্তরা, গাজীপুর দিয়ে বের হয়। ফলে এই সড়কে বিমানবন্দর বিআরটি করিডর, উত্তরা, আবদুল্লাহপুর, গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় গাড়ির জট তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া ভবানীপুর বাজার, হোতাপাড়া, বাঘের বাজার, মাস্টারবাড়ি বাজার, সিডস্টোর বাজার, ভালুকা বাসস্ট্যান্ড—এসব জায়গায় সড়কে বিকেলের পরে বাজার বসার কারণে যানজট হয়। এই মহাসড়কে ছয়টি স্থানে যানজটের আশঙ্কা আছে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার চৌধুরী মো. যাবের সাদেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পবিত্র রমজানের শুরুতেই ঈদের যাত্রার প্রস্তুতি নিয়েছি। এর মধ্যে মহাসড়কের সার্ভিস লেনগুলো দখল হয়ে গিয়েছিল। সেগুলো এরই মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে থাকা বাসস্ট্যান্ডগুলো সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডের দুই পাশে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন দাউদকান্দির সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রেদওয়ান ইসলাম।
ঢাকা-সিলেট পথের বাধা নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদীঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি ছয় লেন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ-আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। ফলে স্বাভাবিক সময়েই মহাসড়কের প্রায় সব স্থানে দুর্ভোগ হচ্ছে। তবে সবচেয়ে দুর্ভোগপ্রবণ এলাকা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের গাউছিয়া থেকে নরসিংদীর ইটাখোলা পর্যন্ত। বিশেষ করে গাউছিয়া ও বাবুরহাট বাজার এলাকায় সড়কে বেশ খানাখন্দ। ধুলায় আচ্ছন্ন থাকে সব সময়। ইটাখোলা মোড়েও নির্মাণকাজের কারণে সড়ক সরু হয়ে পড়েছে। ভৈরব বাসস্ট্যান্ডে চার রাস্তার মোড়। সেখানে অব্যবস্থাপনা যানজটের কারণ হতে পারে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত অংশে ভারতীয় ঋণে দীর্ঘদিন ধরে চার লেনের নির্মাণকাজ চলছে। কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু। কোথাও আবার সড়ক সরু হয়ে পড়েছে। এর বাইরে ধুলার ওড়াউড়ি তো আছেই। বিশ্বরোডের পর যানবাহনের চাপ কিছুটা কমে যায়।
গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত দুই মহাসড়কে ধীরগতিতে চলছে যান। স্বল্প সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ হলেই সড়কে জটলা লেগে যাচ্ছে। বিশ্বরোড মোড়ে সওজের জায়গা দখল করে অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। বিশ্বরোড মোড়ের পূর্ব দিকে সড়কে স্থানীয় প্রভাবশালীদের নির্মাণসামগ্রী পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
ঢাকা-সিলেটগামী বিআরটিসির বাসের চালক শহিদুল ইসলাম বলেন, পুলিশ সড়কে সক্রিয় থাকলে যানজট থাকবে না।
ঢাকা-সিলেট ছয় লেন মহাসড়কের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আমিন এহসান প্রথম আলোকে বলেন, ছয় লেন সড়কের আওতায় সরাইল থেকে হবিগঞ্জের মাধবপুর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার অংশের যেসব জায়গায় ছোট-বড় খানাখন্দ ছিল, তা সংস্কার করে দেওয়া হয়েছে। ১০-১২টি স্থানে মেরামত করা হয়েছে। আরও সংস্কার করা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন মাসুদ রানা, গাজীপুর; কামনাশীষ শেখর, টাঙ্গাইল; শাহাদৎ হোসেন ও বদর উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া; আবদুর রহমান, দাউদকান্দি, কুমিল্লা]