ভিয়েতনাম থেকে ২৯ হাজার টন চাল চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। চাল নিয়ে এমভি ওবিই জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে।
আজ শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়েছে, গত ৩১ জানুয়ারি জি টু জি (সরকারের সঙ্গে সরকার) চুক্তির আওতায় এসব চাল কেনা হয়েছে। এটি ভিয়েতনাম থেকে কেনা তৃতীয় চালান।
ভিয়েতনাম থেকে জি টু জি ভিত্তিতে মোট এক লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে দুই চালানে মোট ৩০ হাজার ৩০০ টন চাল এরই মধ্যে দেশে পৌঁছেছে।
জাহাজে আনা চালের নমুনা পরীক্ষা শেষে খালাসের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সব পক্ষের ধৈর্য ও বিচক্ষণতা কাম্য
আওয়ামী লীগকে ‘পুনর্বাসনচেষ্টার’ অভিযোগকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করেই রাজনীতিতে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে জনমনে। অনন্য এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স সাত মাস পেরোনোর পর এ ধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে জনগণের বিভিন্ন অংশ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে অভূতপূর্ব ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছিল। উত্তরাধিকারসূত্রে অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিপর্যস্ত অর্থনীতি এবং ভেঙে পড়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পেয়েছে। ভুলত্রুটি সত্ত্বেও তঁারা লাইনচ্যুত একটি দেশকে লাইনে ফেরানোর যে গুরুদায়িত্বটা নিয়েছেন, সেটা নিঃসন্দেহে যে কারও জন্যই বিশাল চ্যালেঞ্জের কাজ। এ রকম বাস্তবতায় যেকোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা বহুমুখী সংকট ও ঝুঁকিই তৈরি করবে।
অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই আলোচনায় আসে ‘আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনচেষ্টার’ বিষয়টি। এই স্ট্যাটাসের জেরে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়। এসব কর্মসূচি থেকে বিচারের আগে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হলে তা প্রতিহতের ঘোষণা দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলে নানা বাদ-প্রতিবাদ, জল্পনাকল্পনা।
চব্বিশের অভ্যুত্থানে জনগণের মধ্যে পরিবর্তনের জন্য বিশাল একটা জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জনগণের সব অংশ সমর্থন দিয়ে, প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে, এটিকে ধাপে ধাপে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ দেয়। এই অভ্যুত্থানে ছাত্রদের ও রাজনৈতিক দলগুলোর যেমন ভূমিকা আছে, তেমনি সেনাবাহিনীও সেই সংকটময় সময়ে ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার শুরু থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সেনাবাহিনী সরকারের সহযোগীর ভূমিকা রেখে চলেছে।
এ দেশের মানুষকে আর যাতে পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্তে না ফিরতে হয়, সে জন্য সরকার সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, আমলাতন্ত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও কাঠামো সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। দু-একটি বাদে প্রায় সব কটি কমিশনও তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য একটি ঐকমত্য কমিশনও গঠন করা হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিবেদনগুলোর ওপর মতামত দিতে বলেছে। রাজনৈতিক দলগুলো কমিশনগুলোর প্রতিবেদনের ওপর মতামতও দিচ্ছে। ইতিমধ্যে আলোচনাও শুরু হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যকর গণতান্ত্রিক অনুশীলন।
প্রধান উপদেষ্টা এরই মধ্যে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি কম সংস্কার চায়, তাহলে এ বছরের ডিসেম্বর আর বেশি সংস্কার চাইলে আগামী বছর জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে। এ বক্তব্যের পরে নির্বাচন নিয়ে কারও দ্বিধা, সংশয় থাকার কথা নয়। ফলে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা শুরুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি যে গণতান্ত্রিক রূপান্তর অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে, সেটা বলাই বাহুল্য।
তবে আমরা মনে করি, এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে হলেই সবচেয়ে ভালো হয়।
রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ একটি জটিল ও কঠিন সন্ধিক্ষণ পার করছে। ইতিহাস বলে, এ দেশের মানুষ বারবার রক্ত দিয়েছে, পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছে, কিন্তু তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। এই ব্যর্থতা শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক ব্যর্থতা। ভিন্নমত, মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রশ্নে অভ্যুত্থানের সব শক্তির মধ্যে ঐক্যটা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি দরকার। এটি এমন এক মুহূর্ত, যখন যেকোনো পক্ষের অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ পুরো দেশ ও জাতিকে গভীর অনিশ্চয়তায় ফেলে দেবে।
জনপ্রত্যাশার অঙ্গীকার পূরণে অভ্যুত্থানের সব শক্তির ধৈর্য ধারণ করা ও বিচক্ষণতা দেখানোয় জরুরি কর্তব্য।