সাংবাদিকদের নবম গ্রেডে বেতন দেওয়ার প্রস্তাব সংস্কার কমিশনের
Published: 22nd, March 2025 GMT
গণমাধ্যমকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করার লক্ষ্যে সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা দিতে নবম গ্রেডে বেতন দেওয়ার প্রস্তাব করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। আজ শনিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ।
সাংবাদিকদের বেতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা দিতে হবে। এটি না দেওয়ার ফলে অনেকে অনৈতিক কাজে জড়াচ্ছে। তবে বেতন-ভাতার ওয়েজবোর্ডে আমাদের এখতিয়ার না থাকলেও আর্থিক নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। ন্যূনতম নবম গ্রেড অনুযায়ী একজন সাংবাদিকের বেতন হতে হবে। পাশাপাশি রাজধানীতে কর্মরত সাংবাদিকদের ঢাকা ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিসিএস ক্যাডারদের এন্ট্রি ৯ম গ্রেডের যে বেতন, সাংবাদিকতা শুরুর বেতন তার সঙ্গে মিল রেখে যেন করা হয় প্রতিবেদনে সেই সুপারিশ করা হয়েছে।
কামাল আহমেদ বলেন, এটা সারা দেশেই নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া ঢাকায় এর পাশাপাশি ‘ঢাকা ভাতা’ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সাংবাদিকতা করতে হলে ন্যূনতম স্নাতক পাসের যোগ্যতা থাকতে হবে। প্রথমে ‘শিক্ষানবিশ সাংবাদিক’ হিসেবে কাজ করতে হবে। শিক্ষানবিশ হিসেবে এক বছর কাজ করতে হবে। এরপর প্রমোশন পাবে।
এছাড়াও কমিশন প্রধান বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে সাংবাদিকতা সুরক্ষা আইন তৈরির সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। সেই আইনের খসড়াও তৈরি করে দেয়া হয়েছে। সরকারের হিসাবে ৬০০ পত্রিকা রয়েছে যারা সরকারি বিজ্ঞাপন পাওয়ার যোগ্যতা রাখে, কিন্তু বাস্তবে প্রকাশিত বিক্রিত পত্রিকার সংখ্যা মাত্র ৫২টি। প্রতারণা করে সরকারি বিজ্ঞাপন হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
কামাল আহমেদ বলেন, গণমাধ্যমে কালো টাকা ঢুকেছে। রাজনৈতিক পরিচয় ও অন্ধকারে রেখেই গণমাধ্যমের মালিকানা দেওয়া হয়েছে। সব কয়টি টেলিভিশনের আবেদনে দেখা গেছে জনস্বার্থ কোনোটিতেই ছিল না। সবগুলোই রাজনৈতিক পরিচয়ে দেওয়া হয়েছে।
এর বাইরে একটি প্রতিষ্ঠান একটিমাত্র গণমাধ্যমের মালিক হতে পারবেন এমন প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান।
এছাড়া ওয়ান হাউস ওয়ান মিডিয়ার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারকে স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। দুটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা তৈরি করতে হবে। এই সংস্থাকে স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে। এর বাইরে অনলাইন পোর্টালের জন্য ৭ দফা সুপারিশ করেছে কমিশন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র প রস ত ব
এছাড়াও পড়ুন:
চৈত্রের শেষ দিনে জাবিতে ব্যাঙের পানচিনি ‘বিয়ে’
দিনভর প্রবল উত্তাপের শেষে বাংলা বছরের শেষ সূর্যের মেজাজ তখন কিছুটা হালকা হয়ে এসেছে। গাছের নতুন পাতায় সূর্যের আলোর প্রতিবিম্ব উৎসবের সাজ দিয়েছে৷ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে ফুটে ওঠেছে উৎসবের আমেজ।
উৎসবের পালে নতুন হাওয়া দিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পুরাতন কলা ভবনের সামনে চলছে তখন পানচিনির আয়োজন। সবার মাঝে বিয়ের আমেজ। মঞ্চের একপাশে সেজেগুজে বসে আছে কনে। বরপক্ষের আগমনের অপেক্ষায় কনেপক্ষ। বিকেল ৫টার দিকে এক র্যালি নিয়ে হাজির বরপক্ষ। বরের মাথায় এক ঢাউস ছাতা।
হলুদ, ধান ও দূর্বা দিয়ে কনেপক্ষ বরপক্ষকে বরণ করে নিল। চলল আশীর্বাদ আদান-প্রদান। মন্ত্র পাঠের আগে অভিভাবকরা কথা দিলেন, আসছে আষাঢ়ে তাদের বিয়ে হবে। বরের বাবা হলেন কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, অন্যদিকে কনের বাবার দায়িত্বে ছিলেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক রশীদ হারুন৷
তবে এটি কোনো মানুষের বিয়ে নয়। ব্যাঙের বিয়ে। খরা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টির প্রত্যাশায় কলা ও মানবিকী অনুষদ চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই ‘ব্যাঙের পানচিনি’র আয়োজন করেছিল। পানচিনি অনুষ্ঠান মূলত বিয়ের অঙ্গীকার প্রদান, আশীর্বাদ আদান-প্রদান এবং বর-কনের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর আয়োজন।
ব্যাঙের এই পানচিনি সম্পর্কে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শরণ এহসান জানান, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা অঞ্চলে প্রচণ্ড দাবদাহে যখন মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়, সেসময় বর্ষার আবাহন হিসেবে ব্যাঙের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়৷ প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ তাদের একটা কৃত্য হিসেবে চৈত্র সংক্রান্তির দিনে বৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা করে ব্যাঙের বিয়ে সম্পন্ন হয়৷ বর্তমান সময়ে মানুষের সাথে প্রাণ-প্রকৃতির যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে তা নিরসনের প্রত্যাশায় প্রতি বছর চৈত্রসংক্রান্তির দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ব্যাঙের পান-চিনি’ আয়োজন করা হয়।
ব্যাঙের পানচিনিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সেজেছিলেন বরপক্ষের সাজে। আর পুরাতন কলা ভবন কনেপক্ষ। বাঁশ আর রঙিন কাগজ দিয়ে বানানো হয়েছিল ব্যাঙ-যুগলের বিশাল দুটি প্রতিকৃতি। গতরাতেই কনেপক্ষ বরপক্ষের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে গিয়ে আলাপটা সেরে এসেছিলো।
সকাল থেকেই উভয়পক্ষের বাড়িতে চলছিল সেই প্রস্তুতি। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে নেচে-গেয়ে বরপক্ষ হাজির হয় পুরাতন কলা ভবনের কনেপক্ষের বাড়িতে। কনেপক্ষ হুই-হুল্লোড় করে ‘গেট ধরলে’ চলে মধুর দর-কষাকষি। এরপর জমে ওঠে প্রীতি কথার লড়াই। কারও হার না মানা অবস্থায় মঞ্চে পাশাপাশি বসার সুযোগ হয় হবু বর-কনের।
বরপক্ষ ও কনপক্ষের এ মধুর লড়াই চলে বেশ সময় ধরে। কেউ কাউকে নাহি ছাড়৷ কারো মতে, বিয়ের দেনমোহর হওয়া উচিত কোটি টাকায়। কারো মতে, আরও কম৷ কেউবা বলছেন, ব্যাঙের বিয়ে হওয়া উচিত যে কোনো ধর্ম মেনে৷ তবে কনেপক্ষের মত, মানুষের ধর্ম নয়, ব্যাঙের ধর্ম মেনেই হবে ব্যাঙের বিয়ে৷ শেষ পর্যন্ত সমঝোতায় পৌঁছে দুই পক্ষ। আংটি বদলের মধ্য দিয়ে শেষ হয় চৈত্র সংক্রান্তির ব্যাঙের বিয়ে৷
ব্যাঙের পানিচিনি নিয়ে কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বৈশাখ থেকে প্রকৃতির পরিবর্তন হতে থাকে৷ ফলে প্রকৃতির এই পরিবর্তন আমাদের মানব মনে নাড়া দেয়৷’