ভূগর্ভের পানি শেষ না করে বিকল্প পথ খুঁজতে হবে
Published: 22nd, March 2025 GMT
কয়েক দশক ধরে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ সারা দেশেই জলবায়ুজনিত ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে চলেছে, যা এ অঞ্চলের সার্বিক পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করছে।
উজানে আন্তদেশীয় নদীর ওপর একতরফা বাঁধ নির্মাণ, নতুন বনায়ন বৃদ্ধি না করে ব্যাপক হারে বৃক্ষ কর্তন, নদ-নদী নিয়মিত খনন না করা, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ সিস্টেম, নতুন করে জলাধার তৈরি না করা ও সর্বোপরি নির্বিচার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে নানাবিধ পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে।
৩০ বছর আগে যেখানে ৪০-৫০ ফুট গভীরতায় পানি পাওয়া যেত, তা এখন প্রায় ১৫০-১৬০ ফুট গভীরতায় মিলছে।
এ হারে পানির স্তর নিচে নামতে থাকলে ২০৩৫ সালের পর হয়তো ২৫০ ফুট গভীরতায় পানি পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে পানিদূষণ, পানি উত্তোলন খরচ, চাষাবাদ খরচ বাড়বে এবং কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ক্রয়সীমার বাইরে চলে পারে।
তা ছাড়া সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় ভূগর্ভে নোনা পানি ঢুকে কৃষিকাজের মারাত্মক ক্ষতি হবে। ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানিতে আনুপাতিকভাবে আর্সেনিক, মেঙ্গানিজ, আয়োডিন, লবণাক্ততা অসহনীয় মাত্রায় থাকার কারণে ভয়াবহ প্রাণঘাতী রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে।
তা ছাড়া অধিকতর পানির স্তর নেমে যাওয়া এলাকায় কখনো কখনো মাটি দেবে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে এবং পাশাপাশি খরা ও পানিদূষণ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাবে। এদিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গাছ মাটি থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি শোষণ করতে পারবে না বলে অনেক গাছ মারা যাবে এবং নতুন করে বনায়ন সৃষ্টি করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এমতাবস্থায় পরিবেশের এমন বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বহুমুখী ও সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর রক্ষায় আশু স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন অতীব জরুরি। প্রধানতম সমস্যার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন ও নির্বিচার ভূগর্ভের পানির উত্তোলনের প্রভাবে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মরুকরণের ভয়াবহ আশঙ্কা বিদ্যমান।
এভাবে পানির স্তর নিচে নেমে যেতে থাকলে এবং সরকারের আশু হস্তক্ষেপের অভাবে দুই দশকের মধ্যে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুতরাং ভূগর্ভের জলস্থিতি অক্ষুণ্ন রাখতে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে—
১। ভূগর্ভের পানি নির্বিচার উত্তোলনের বিষয়ে প্রথমেই কৃষক ও সাধারণ জনগণকে সচেতন হতে হবে। ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ সীমিত ও জলস্থিতি দ্রুত কমে যাচ্ছে, এটা সবাইকে অনুধাবন করতে হবে। জলের সীমিত সঞ্চয় থেকে অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলন করলে একদিন ভূগর্ভে আর পানি পাওয়া যাবে না এবং যার ফলে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। সুতরাং সেচ ও গৃহস্থালির কাজে পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে।
২। উজানে আন্তদেশীয় নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা বণ্টনের জন্য চীন, ভারত, নেপালের সঙ্গে কূটনৈতিক সমঝোতা চালিয়ে যেতে হবে। আঞ্চলিক ও সার্কের সদস্যভুক্ত দেশসমূহের অভিন্ন নদীর পানি সুষম বণ্টনের লক্ষ্যে “আঞ্চলিক ও সার্ক ওয়াটার ব্যাংক” গঠন করা যেতে পারে। আন্তদেশীয় নদীগুলোর পানির সুষম বণ্টন দ্রুত সম্ভব না হলে বাংলাদেশকে ভূ–উপরিস্থ জলাশয় ও বৃষ্টির পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৩। শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত পানির প্রাপ্যতা ও নদ-নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে গভীর নদী খনন বা ক্যাপিটাল ড্রেজিং কার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে হবে। এর ফলে নদীর নাব্যতা পুনরুদ্ধারসহ নৌপথে পণ্য পরিবহন বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নদীতে বেশি পরিমাণ পানি ধারণক্ষমতা বাড়বে এবং উত্তোলিত বালু রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে। তা ছাড়া ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের সফলতা কাজে লাগাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং বা রক্ষণাবেক্ষণ খননকাজও প্রয়োজন অনুযায়ী অব্যাহত রাখতে হবে।
৪। পরিবেশ রক্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে সেচ ও গৃহস্থালির প্রয়োজন মেটাতে প্রতিটি মৌজায় কমপক্ষে ১০ একর করে নতুন দুটি গভীর পুকুর ও নতুন একটি খাল খনন করতে হবে। প্রয়োজনে পানি ধরে রাখার জন্য পুকুরের তলদেশ আরসিসি ঢালাই করা যেতে পারে। পুকুর বা দিঘির ডিজাইন নির্বাচনে পানিবিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলীদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে খাল ও পুকুর খননের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে। আমাদের প্রতিবেশের অস্তিত্ব রক্ষায় যেসব মৌজায় খাসজমি পাওয়া যাবে না, সেখানে জমি অধিগ্রহণ করে হলেও পুকুর খনন করতে হবে। তা ছাড়া এই পুকুরগুলো জীববৈচিত্র্য রক্ষা ছাড়াও আগুন নেভানোর সময়ও বেশ কাজে আসবে। এ ক্ষেত্রে পরিবেশের বিরূপ প্রভাব বিবেচনায় উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পুকুর খননের বিষয়টি প্রথমে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ছাড়া পুরোনো খাল ও খাস পুকুরগুলোকেও আলোচ্য প্রকল্পের আওতায় খনন ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫। বেসরকারি খাতকে বিশেষ ঋণসুবিধা দিলে খাল ও পুকুর খননের বিষয়ে আমূল পরিবর্তন হতে পারে। পরিবেশ রক্ষায় পুকুর বা খাল খননে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ কর রেয়াতসুবিধা দিলে পরিবেশ খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে।
৬। ভূগর্ভস্থ পানির ল্যান্ডস্কেপ ম্যাপ সর্বসাধারণের জন্য প্রকাশ করা যেতে পারে, যাতে জনগণ বুঝতে পারে যে কোন কোন এলাকার ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। পাশাপাশি মাথাপিছু পানি ব্যবহারের পরিমাণও প্রকাশ করে পানি অপচয় রোধ করা যেতে পারে। পিডিবি ও তিতাস গ্যাসের প্রিপেইড মিটারের মতো দেশের সব কটি ওয়াসায় প্রিপেইড মিটার ব্যবস্থা চালু করা গেলে নিশ্চিতভাবেই পানির অপচয় রোধ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কমবে বলে আশা করা যায়। পাশাপাশি জনপ্রতি পানি ব্যবহারের সিলিং বেশি হলে অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধের সুযোগ রাখা যেতে পারে।
৭। গৃহস্থালি ও শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে অধিকতর মিতব্যয়ী হতে হবে। শিল্পকারখানা ও গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত পানি পরিশোধন করে পুনরায় ব্যবহার করার প্রক্রিয়া চালু করতে ওয়াসা, বিএডিসি, বরেন্দ্র, জনস্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ উদ্যোগী হতে হবে।
আলট্রা ও মাইক্রো ফিল্ট্রেশন, বিপরীত অসমোসিস, হাইড্রোজেন পারক্সাইড ও অতিবেগুনি রশ্মির সাহায্যে জীবাণুমুক্তকরণের মাধ্যমে গৃহস্থালি ও শিল্পবর্জ্যের পানি থেকে ইতিমধ্যে সিঙ্গাপুর, স্পেন, অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক দেশে রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ায় পানি পুনরায় ব্যবহার করা হচ্ছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত। বাংলাদেশেও সেচ ও সুপেয় পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এরূপ পানির পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা করলে বাংলাদেশের ভূগর্ভের জলস্তরে সঞ্চিত পানি সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে, যা এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয় হবে। এ ক্ষেত্রে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বল্প মূল্যে পানি রিসাইক্লিং ও ফিল্টারিং মেশিন তৈরি এবং বাজারজাত করার জন্য সরকারিভাবে উৎসাহ প্রদানের উদ্যোগ নিতে হবে।
৮। সুপেয় পানি ও সেচ সরবরাহকারী কর্তৃপক্ষ বিএডিসি, ওয়াসা, বরেন্দ্র, জনস্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন ৮০ শতাংশ কমিয়ে আনার জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি বৃষ্টি ও জলাশয়ের পানি ব্যবহারের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৯। ভূগর্ভের সঞ্চিত জলরাশি সংরক্ষণের অন্যতম প্রধান উপায় হলো বৃষ্টির পানির নিয়মতান্ত্রিক ব্যবহার। ভূগর্ভস্থ পানি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় সেচকাজে, যা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে অপরিসীম অবদান রাখছে। অন্যদিকে ভূগর্ভের জলাধারের পানি উত্তোলনের ফলে উক্ত পানির পরিমাণ ক্রমেই নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে প্রতিটি বাড়িতে ছোট ছোট খাদ বা পুকুর খনন করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের জন্য গ্রামের টিনের চালের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য একটি রিজার্ভার করতে হবে। অপর দিকে শহরের অ্যাপার্টমেন্ট বা দালানগুলোর ছাদে পানি সংরক্ষণের জন্য একটি প্রোটোটাইপ বা একই ধরনের রিজার্ভারের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং মোটর ও ফিল্টারের মাধ্যমে উক্ত পানি সব বাসায় সরবরাহ করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে পানিবিশেষজ্ঞ, স্থপতি ও প্রকৌশলীদের সহায়তায় রাজউক, সিডিএ, কেডিএ, আরডিএ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, গণপূর্তের আওতাভুক্ত দালান বা অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণাগার বা রিজার্ভার ব্যবহার করার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। প্রথম পর্যায়ে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে যেসব বাড়ির মালিকেরা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণাগার ব্যবহার করবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে সিটি বা পৌর কর মওকুফ বা বিশেষ ছাড় প্রদানের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
১০। গাছ মাটি, বায়ু ও পানি পরিশোধনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, অন্যদিকে এটি আমাদের স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং সামাজিক সম্পর্কের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। গাছ বিভিন্ন প্রকার পশুপাখি, অন্য জীবজন্তুদের বাস্তুসংস্থান ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে সহায়তা করে এবং মাটির পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধিসহ মরুকরণ ও ভূগর্ভের পানির স্তর সুরক্ষা তথা পরিবেশদূষণ রোধে সহায়তা করে। সুতরাং সুষ্ঠু প্রতিবেশ সুরক্ষায় খাস জায়গাসহ খালি স্থানে পরিকল্পিতভাবে নিবিড় বৃক্ষ রোপণ করা ভীষণ জরুরি।
১১। প্রায় ৭০ ভাগ ভূগর্ভস্থ পানি সেচকাজে ব্যবহার করা হয়। কৃষকের অজ্ঞতা, অসচেতনতা ও প্রচলিত পদ্ধতিতে সেচকাজ করায় প্রচুর পানির অপচয় হয়। ফলে আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক সেচ কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে পানির অপচয় রোধ করে ভূগর্ভের পানির স্তর সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
১২। গভীর নদী খনন, পুকুর, খাল-বিল খনন, ভূগর্ভস্থ পানিস্তরের স্থিতি রক্ষা, বৃষ্টি ও ভূ-উপরিস্থ জলাশয়ের পানির ব্যবহার বাড়াতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে বলে সরকারের পক্ষে একা এই বিশাল অর্থের জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। তাই এ বিষয়ে জাতিসংঘ, উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক এনজিও, দেশীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা পেতে সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া বর্ণিত উৎস হতে কাঙ্ক্ষিত আর্থিক সহায়তা পাওয়া না গেলে প্রয়োজনে সারচার্জ ধার্য করে বা বেসরকারি অংশীদারত্ব বা বিকল্প কোনো মাধ্যমে অর্থায়ন খুঁজে বের করে আনতে হবে। মোটকথা, যেকোনো উপায়ে ভূগর্ভের পানি উত্তোলন সীমিত করে ভূ-উপরিস্থ জলাশয় বা বৃষ্টির পানি ব্যবহার পদ্ধতি দ্রুত চালু করার উদ্যোগ নিতে হবে। এদিকে আগামী ২০২৫-২০৩৫ কে ‘ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ দশক’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবছর বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
১৩। পানি আইন–২০১৩ দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বৃষ্টির পানির সর্বাত্মক ব্যবহারসহ ভূপরিস্থ এবং ভূগর্ভস্থ পানির সমন্বিত ব্যবহারের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগী হতে হবে।
১৪। সর্বোপরি দিন দিন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর যেভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ নিকট ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিঘাত হিসেবে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। ভূগর্ভস্থ পানির সঞ্চয় নিঃশেষ হয়ে গেলে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার মতো বহুমুখী বিপদে পড়তে পারে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ গোটা দেশ। সুতরাং অনিয়ন্ত্রিত, অপরিকল্পিত ও নির্বিচার ভূগর্ভের পানি উত্তোলন মানেই অন্ধকার ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া। এখনই পরিকল্পিত উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে সর্বশক্তি দিয়ে সমস্যা মোকাবিলা করেও তেমন কোনো ফল আসবে না। সুতরাং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে একটি শক্তিশালী কমিটি বা কমিশনের মাধ্যমে বৃষ্টি ও ভূ-উপরিস্থ পানির বহুমুখী ব্যবহার জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে।
পরিশেষে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই, খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি; শিল্প, উদ্ভাবন ও অবকাঠামো; বৈষম্যহীন বিশ্ব; টেকসই ও স্থিতিশীল সমাজবিষয়ক লক্ষ্যসমূহ সরাসরি ভূগর্ভস্থ পানি তথা পরিবেশ ও জলবায়ুর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ায় জাতিসংঘসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার প্রত্যক্ষ অংশীদারিতে এই বহুমাত্রিক সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। তা ছাড়া ‘ভূগর্ভস্থ জল: অদৃশ্যকে দৃশ্যমান করা’ শিরোনামে ২০২২ সালে জাতিসংঘের বিশ্ব পানি উন্নয়ন প্রতিবেদনে ভূগর্ভস্থ পানিস্তর, পানি উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা, সুশাসন ও সবার জন্য মানসম্মত পানির সুযোগ–সম্পর্কিত বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভূ-উপরিস্থ জলাশয় ও বৃষ্টির পানি ব্যবহারে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সুতরাং উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ সারা দেশে মরুকরণ প্রতিরোধে এবং ভূগর্ভের জলস্তর সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত উদ্যোগ আশু প্রয়োজন।
শেখ হাফিজুর রহমান সজলউপসচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য একট ব যবহ র কর র ব যবস থ ব যবহ র র র ব যবহ র প ক র খনন পর ব শ র পর ম ণ ক পর ব র পর ম সমস য আশঙ ক উৎস হ জলব য় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মেঘ-বৃষ্টির স্বস্তি থাকবে আরও কয়েকদিন
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা বৃষ্টিপাত হয়েছে গতকাল। বৃষ্টির কারণে গরম কিছুটা কম অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গরম থেকে এমন স্বস্তি আজ রোববার পর্যন্ত চলতে পারে। আগামীকাল সোমবার থেকে আকাশ আবার পরিষ্কার হবে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো, বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, ঢাকা ও খুলনার কিছু কিছু জায়গায় গতকাল বৃষ্টি হয়েছে। আজ রোববার দেশের অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। শনিবার সর্বোচ্চ ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বগুড়ায়।
এ ছাড়া রাজশাহীতে ৭, চুয়াডাঙ্গা ও তাড়াশে ৪, ঈশ্বরদী ও বগুড়ায় ২ এবং টাঙ্গাইলে ১ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টি হয়েছে। সোমবার বৃষ্টি কমে যাবে। তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও রাতের দিকে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু কম থাকবে। মেঘ কেটে গেলে তাপমাত্রা আবার বাড়বে।