ঘুম থেকে উঠতে ডাকাডাকি করায় বাবাকে কুপিয়ে হত্যা ছেলের
Published: 22nd, March 2025 GMT
সকাল নয়টা পার হয়ে গেলেও ছেলে মানিক হোসেন (২৮) ঘুম থেকে উঠতে গড়িমসি করছিলেন। তাই বাবা আবদুল মালেক (৬০) ছেলেকে ঘুম থেকে উঠে কাজে যাওয়ার তাড়া দেন। এতেই ছেলে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরে রাখা কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে বাবাকে হত্যা করে ফেলেন। আজ শনিবার সকাল নয়টার দিকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার পাইকরহাটি গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনার পর থেকে ছেলে পলাতক।
পুলিশ, প্রতিবেশী ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবদুল মালেক এলাকার একজন অবস্থাপন্ন কৃষক ও বাঁশের ব্যবসায়ী। তাঁর দুই ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে মানিক হোসেন সবার বড়। বছরখানেক আগে তাঁর বিয়ে হয়। তিনি বাবাকে বাঁশের ব্যবসা ও কৃষিকাজে সহায়তা করতেন।
শুক্রবার ঘুমানোর আগেই বাবা ছেলে মানিককে সকালে উঠে তাঁর সঙ্গে কাজে যাওয়ার জন্য বলে রেখেছিলেন। সেই হিসেবে আজ সকাল ৯টার দিকে আবদুল মালেক ছেলেকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে কাজে যাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করতে থাকেন। এ নিয়ে বাবা-ছেলের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এরই এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে মানিক ঘরে থাকা কুড়াল দিয়ে বাবাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। ফলে ঘটনাস্থলেই মারা যান আবদুল মালেক। ঘটনার পর এলাকাবাসী মানিককে আটক করলেও এক পর্যায়ে পালিয়ে যান তিনি।
সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, ‘ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে আমিও ঘটনাস্থলে যাই। ছেলেকে ঘুম থেকে ওঠার জন্য ডাকার পর বাবা-ছেলের কথা-কাটাকাটি হয় এবং এরই জেরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছি। ছেলে পলাতক থাকলেও তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। আমরা ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি পাবনা সদর হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল ম ল ক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হোস্টেল শুধু আশ্বাসেই
ঢাকার সাভারে অবস্থিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) প্রতিষ্ঠার ২৬ বছর পার হলেও এখনো নির্মাণ হয়নি কোনো ছাত্রীনিবাস। নানা সময় উচ্চারিত হয়েছে উন্নয়নের বুলি, সভা-সেমিনারে এসেছে প্রতিশ্রুতির পাহাড়—কিন্তু বাস্তবে অগ্রগতি নেই।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোনো প্রকল্প পরিকল্পনা, বাজেট বরাদ্দ কিংবা নির্ধারিত সময়সীমা। ফলে নারী শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা প্রশ্নে তৈরি হয়েছে চরম উদ্বেগ।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা, জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের পুরোধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নারীর জন্য একটি বিকল্প ধারার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। ফলশ্রুতিতে গবি গড়ে উঠলেও নারী শিক্ষার্থীদের আবাসনের কোনো ব্যবস্থা তৈরি হয়নি।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ২ হাজারেরও বেশি ছাত্রী অধ্যয়নরত, যাদের অধিকাংশ সবাই বাসা ভাড়া করে কিংবা দূরবর্তী এলাকা থেকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। আবাসন না থাকায় ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় থাকতে গেলে এসব শিক্ষার্থীদের গুণতে হয় প্রায় ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা। ফলে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবারে শিক্ষার্থীদের উপর আলাদাই চাপ তৈরি হচ্ছে, যা বহন করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে তাদের পরিবার।
পাশাপাশি রাতে চলাচলের ঝুঁকি, স্থানীয় বাড়িওয়ালা কর্তৃক হেনস্তার শিকার, ইভটিজিংসহ নানা অপ্রিতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে নিয়মিত। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে একাধিকবার আবাসন ব্যবস্থা ‘প্রক্রিয়াধীন’ বললেও তা নিয়ে প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগই চোখে পড়েনি।
পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অভাবেই হল নির্মাণে নীতিনির্ধারকেরা কালক্ষেপণ করছেন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।
বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিমা আমিন বলেন, “আমার প্রতিদিনের যাত্রাটা যুদ্ধের মতো। বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ৪০ কিমি দূরে। প্রতিদিন লোকাল বাসে চেপে আসতে হয়। কখনো বাসে উঠতে দেয় না, কখনো অতিরিক্ত ভাড়া নেয়, কখনো বাজে মন্তব্য শুনতে হয়। নতুন এলাকায় বাসা খুঁজে থাকা কষ্টকর, পরিবারও চিন্তায় থাকে সারাক্ষণ। ক্লাসে মন দিতে পারি না। এ বয়সে বাসা ভাড়া, রান্নাবান্না, নিরাপত্তা—সব মিলিয়ে জীবনটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। একটা ছাত্রী হল থাকলে অন্তত এ লড়াইটুকু করতে হতো না।”
ফার্মেসি বিভাগের প্রভাষক তানিয়া আহমেদ তন্বী বলেন, “আমি একজন শিক্ষক, কিন্তু এর আগে আমি এই প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্রী ছিলাম। জানি, মেয়েদের জন্য এখানে পড়তে আসা মানে প্রতিনিয়ত এক অনিশ্চয়তার সঙ্গে যুদ্ধ। একটা সময় পরে মেয়েরা ক্লাস বাদ দেয়, টিউশন নেওয়া বাদ দেয়—শুধু নিরাপত্তার জন্য।”
তিনি বলেন, “আমাদের বিশাল ক্যাম্পাসে জায়গার অভাব নেই, ইচ্ছার অভাবটাই বড়। ছাত্রীনিবাস শুধু দরকার নয়, এটি ন্যায্য অধিকার। এতে ছাত্রীরা নিরাপদ পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারবে, দূর থেকে আরও শিক্ষার্থীরা আসবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে থাকা তাদের জন্য বেশি স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “হলের জন্য স্থান সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। বিভিন্ন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কাজগুলো চলমান রয়েছে। আমরা আশা করছি, এ বছরের শেষের দিকে নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারব।”
ঢাকা/সানজিদা/মেহেদী