বিলের পাড়ে পড়ে ছিল নারীর গলাকাটা লাশ, কানের দুল বিক্রির সময় যুবক আটক
Published: 22nd, March 2025 GMT
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের রাঙ্গাঝিরি এলাকা থেকে তৈয়বা বেগম (৪৩) নামের এক নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে এলাকার বিলের পাড় থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এদিকে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আজ শনিবার সকালে পাশের বাজারে কানের দুল বিক্রি করতে আসা মোহাম্মদ ফারুক (২২) নামের এক যুবককে এলাকাবাসী আটক করেছেন। এলাকাবাসীর ধারণা, বিক্রি করতে আসা কানের দুল তৈয়বা বেগমের।
নিহত তৈয়বা বেগম রাঙ্গাঝিরি এলাকার সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী। স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, গতকাল বিকেলে বিলের পাড় থেকে গরু আনতে গিয়েছিলেন তৈয়বা বেগম। এরপর আর ফিরে আসেননি। সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যরা খুঁজতে গিয়ে বিলের পাড়ে তৈয়বার লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। লাশের গলায় ও হাতের কবজি কাটা এবং মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। তৈয়বা বেগমের কানে দুল পরা থাকলেও লাশ উদ্ধারের সময় দুল পাওয়া যায়নি বলে দাবি পরিবারের সদস্যদের।
বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম জানান, তৈয়বা বেগমের হত্যাকাণ্ডে এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আজ সকালে পার্শ্ববর্তী ঈদগড় বাজারের একটি সোনার দোকানে এক জোড়া কানের দুল বিক্রি করতে যান রাঙ্গাঝিরি এলাকার তরুণ মোহাম্মদ ফারুক। সোনার দোকানের মালিকের সন্দেহ হলে বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্যকে জানান তিনি। পরে এলাকাবাসী মোহাম্মদ ফারুককে আটক করেন। কানের দুল শনাক্তের জন্য তৈয়বার পরিবারের সদস্যদের সংবাদ দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসরুরুল হক বলেন, তৈয়বা বেগমের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কে বা কারা কেন তাঁকে হত্যা করেছেন, তা তদন্তে জানা যাবে। এলাকাবাসী একজনকে আটক করার খবর শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি দল পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ এল ক ব স ব গম র এল ক র
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনে আবারও আগুন, কাছে নেই পানির উৎস
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ি-সংলগ্ন বনে আগুন লেগেছে। গতকাল শনিবার সকালে ট্যাপার বিলে ধোঁয়া দেখতে পান পাশের বাসিন্দারা। পরে বন বিভাগ ও স্থানীয়রা একসঙ্গে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। বিকেলের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিস। তবে কাছাকাছি জলাশয় না থাকায় পানি ছিটাতে পারেনি।
স্থানীয়দের ভাষ্য, বনাঞ্চলে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখার পর বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। বন বিভাগের সঙ্গে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকসহ শত শত বাসিন্দা আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেন। আগুন যেন আর ছড়াতে না পারে, সে জন্য বনের মাটির ওপর জমা হওয়া শুকনো লতাপাতা সরিয়ে নালা (ফায়ার লাইন) তৈরি করছেন। তবে কাছাকাছি নদী-খাল বা জলাশয় না থাকায় গতকাল পানি ছিটানো শুরু করা যায়নি।
গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় বনের মধ্যে এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে। তবে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, আগুন লেগেছে আরও আগে। পাতার আস্তরের মাঝে আগুন ছড়ানোর আগে ধোঁয়া বাড়ে না। ধোঁয়া বাড়ার পর সবাই দেখেছে। তা ছাড়া ঘটনাস্থল বন বিভাগের অফিস থেকে দূরে। এ কারণে খবর পেতে দেরি হয়েছে।
ফায়ার লাইন কাটার পাশাপাশি বন বিভাগ ভোলা নদীতে পাম্প বসিয়ে পাইপ টানতে শুরু করেছে গতকাল দুপুর থেকে। ঘন গাছপালার মাঝ দিয়ে চলাচল ও পাইপ নিয়ে যাওয়া কষ্টকর। সাড়ে ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিস। তবে সন্ধ্যা নামায় তারা কার্যক্রম স্থগিত করে বন থেকে বের হয়ে আসে।
রাজাপুরের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পান্না মিয়া জানান, সকালে সুন্দরবনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ির টেপার বিলে ধোঁয়া দেখা যায়। পরে দুপুর থেকে স্থানীয় শত শত মানুষ আগুন নিয়ন্ত্রণে বন বিভাগরে সঙ্গে কাজ শুরু করেন। তিনিও সেখানে যান। বেশ দুর্গম পথ। আশপাশে কোনো নদী-খাল নেই। তাই পানি নিতে দেরি হচ্ছে। আগুন যেন না ছড়ায় সে জন্য সরু পথ (ফায়ার লাইন) কাটা হয়েছে এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকায়।
বন রক্ষায় নিয়োজিত কমিউনিটি প্যাট্রলিং গ্রুপের (সিপিজি) সদস্য শাহ্ আলম বলেন, সুন্দরবন জোয়ারের সময় পানিতে ডুবে যাওয়ার কথা। ভোলা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বনভূমি বেশ উঁচু হয়ে গেছে। বর্ষা ছাড়া ওই এলাকা পানিতে ডোবে না। শুকনা মৌসুমে আগুন লাগে।
আগুন যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, এ জন্য স্থানীয় লোকজন নিয়ে বন বিভাগ কিছুটা পাতার স্তূপ সরালেও গভীর ফায়ার লাইন কাটতে পারেনি। তাই রাতে বাতাস উঠলে বা কয়েক বছরের জমা পাতার স্তূপের নিচ দিয়েও আগুন ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি স্টেশন ঘটনাস্থলে যায়। তবে তারা পানি দিতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা আফতাব-ই-আলম বলেন, দেড় কিলোমিটারজুড়ে ফায়ার লাইন কাটা হয়েছে। আশা করা যায় আগুন আর ছাড়াবে না। কোথাও ধোঁয়া আছে, কোথাও একটু একটু করে জ্বলছে। আলো না থাকায় রাতে কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। অর্ধেক পথ পাইপ টানা হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আগুন ততটা বেশি না, বেশি হলো ধোঁয়া। আগুন ছড়ানোর তেমন শঙ্কা নেই।
এর আগে গত বছর মের শুরুতে সুন্দরবনের একই রেঞ্জের আমোরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলায় আগুন লেগে প্রায় ৪ একর বনভূমি পুড়ে যায়। তখন প্রায় তিন দিন ধরে জ্বলে সুন্দরবন। তার আগে ২০২১ সালের ৩ মে শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানিতে আগুন লেগেছিল। শুকনো মৌসুমে গেল ২৩ বছরে সুন্দরবনে অন্তত ২৬ বার আগুন লেগেছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।