আওয়ামী লীগকে ভোটে আনা নিয়ে চলমান সাম্প্রতিক আলোচনা প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘রাজনীতিতে আবার ফেরার জন্য আওয়ামী লীগ নিজে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা কেউ কেউ, যাঁরা খুব গুরুত্বপূর্ণ লোকজন, ঝগড়া করে ফোকাস করে তাদের সবার সামনে নিয়ে আসছি।’

সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা নিয়ে আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুর রহমান মান্না এসব কথা বলেন।

মান্না বলেন, ‘(দেশে) গণতান্ত্রিক পথ থাকতে হবে এবং একই সঙ্গে তাদের (আওয়ামী লীগের) বিচার হতে হবে।’

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করছি না। এটা রাজনৈতিক প্রস্তাব। তবে সরকার ও সরকারপ্রধান জনগণকে আহ্বান জানাবেন, সিদ্ধান্ত জনগণই নেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সাড়ে সাত মাসে সাড়ে সাত সেন্টিমিটারও অগ্রগতি করতে পারেনি। নতুন কোনো রাজনৈতিক বয়ান দিতে পারেনি, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে ও মানুষের সিমপ্যাথি (সহানুভূতি) পাবে এমন কোনো বক্তব্য দিতে পারেনি। এই রকম পরিস্থিতিতে রাজনীতি করে জনগণের সামনে এসে দাঁড়াতে পারবে, সে সম্ভাবনা দেখি না।’

নাগরিক ঐক্যের এই নেতা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ব্যান (নিষিদ্ধ) করা যাবে কি না, সে ব্যাপারে সমঝোতার প্রস্তাব নাকি দেওয়া হয়েছে এবং ছাত্ররা বলছে, এ রকম সমঝোতা কারও কারও সঙ্গে নাকি হয়েছে। এ জন্য কোনো কোনো দল কথা বলেনি এবং এখনো বলছে না। সমঝোতা করেই যদি নির্বাচন হয়, তবে এগুলো করার দরকার কী। সংস্কার তো কোনো কাজই করবে না। যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এত বছর লড়াই করে গণতন্ত্রের পথ এসেছে।’ সরকারকে এ ব্যাপারে সন্তোষজনক ব্যবস্থা নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের পর সংস্কার বলতে নাগরিক ঐক্য চেয়েছে এমন সংস্কার, যাতে দেশে আর কোনো স্বৈরশাসক জন্ম না নেয়, মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পায়, জনগণ তাদের ইচ্ছেমতো প্রার্থী ও দলকে ভোট দিতে পারে সে রকম রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি; সেই সঙ্গে স্বৈরাচার শাসকচক্র ও লুটেরাদের যেন বিচারের সামনে দাঁড় করানো যায়। কিন্তু সংস্কার কমিশন এসব থেকে বেশ দূর দিয়ে হাঁটছে বলে মনে করে নাগরিক ঐক্য।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনজুর কাদের। তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনগুলো জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে এখন সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন, সেদিকে পূর্ণ মনোযোগ না দিয়ে সংস্কারের নামে কিছু অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিক প্রস্তাবের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে চারটি প্রদেশে দেশকে ভাগ করা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা ও সংসদের উচ্চকক্ষ সৃষ্টি, ৫০৫ আসনের আইনসভা ইত্যাদি প্রস্তাবনা নিয়ে অহেতুক সময় এবং সম্পদের অপব্যবহার করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নাগরিক ঐক্য ধরে নিচ্ছে, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ যে ধরনের সংস্কার করবে, তার একধরনের সিদ্ধান্ত তারা আগেই নিয়ে রেখেছে। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জানতে চাচ্ছে, তাদের সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে দলগুলো একমত কি না। যারা একমত, তারা কিসে কিসে একমত ও যারা একমত নয়, তারা কোথায় কোথায় একমত নয়।

নাগরিক ঐক্য ১০৪টি প্রশ্নে একমত, ৫১টি প্রশ্নে একমত নয় ও ১১টি প্রশ্নে আংশিক একমত হয়েছে।

কমিশনের প্রশ্ন তৈরিতে অমনোযোগিতার ছাপ রয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।

ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের পর সংস্কার বলতে নাগরিক ঐক্য চেয়েছে এমন সংস্কার, যাতে দেশে আর কোনো স্বৈরশাসক জন্ম না নেয়, মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পায়, জনগণ তাদের ইচ্ছেমতো প্রার্থী ও দলকে ভোট দিতে পারে সে রকম রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি; সেই সঙ্গে স্বৈরাচার শাসকচক্র ও লুটেরাদের যেন বিচারের সামনে দাঁড় করানো যায়। কিন্তু সংস্কার কমিশন এসব থেকে বেশ দূর দিয়ে হাঁটছে বলে মনে করে নাগরিক ঐক্য।

নাগরিক ঐক্য আরও বলেছে, নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে পক্ষপাতের গুঞ্জন আছে। এ পক্ষপাত দেশের জন্য কতটা মঙ্গল বয়ে আনবে তা বলা মুশকিল, তবে গণতান্ত্রিক উত্তরণ যে ঘটাবে না, তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক প রস ত ব র জন ত ক র স মন আওয় ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সংকট উত্তরণে দ্রুত নির্বাচন দরকার: মির্জা ফখরুল

সংকট উত্তরণে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এখন সমস্যা সমাধানের জন্য অত্যন্ত দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান দরকার। নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় যে সংস্কার দরকার, সেগুলোকে সম্পন্ন করে নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই হবে সবচেয়ে বড় উইজডমের (প্রজ্ঞা) কাজ।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে পেশাজীবীদের সম্মানে বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে একটা অত্যন্ত কঠিন সময় অতিক্রান্ত করছি। একটা ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তাদের পরাজিত করে, বিতাড়িত করে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে এবং নতুন একটা গণতান্ত্রিক পার্লামেন্ট ও সরকার গঠিত হবে, সেই প্রত্যাশা নিয়ে গোটা জনগণ অপেক্ষা করছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই সময়টা আমরা সবাই যে যেখানে আছি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আমাদের ভূমিকা আমরা পালন করব। আমরা যারা রাজনীতি করছি তারা, আমরা যারা বিভিন্ন পেশায় আছি তারা, যারা বিভিন্নভাবে সরকার অথবা জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি, তারা সবাই এমনভাবে কথা বলব, কাজ করব, তা যেন গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে সুযোগ করে দেয়।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তাদের প্রস্তাবগুলোকে পরীক্ষা করছি এবং আমাদের মতামতগুলো সেভাবে উপস্থাপন করছি। তবে একটা জিনিস আমাদের মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশের ঐতিহ্য, বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক ঐতিহ্য, তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, তাদের কৃষ্টি, তাদের সংস্কৃতি—সবকিছুকে সামনে রেখেই আমাদের এই সামনের দিকে সংস্কার এবং এগিয়ে যাওয়ার পথকে বেছে নিতে হবে।’

অলীক ধারণা ও ‘ইউটোপিয়ান’ (কল্পনা) চিন্তা থেকে চিন্তাভাবনা করলেই সমস্যার সমাধান করা যাবে না বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাস্তববাদী চিন্তা করে, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পরিবর্তনকে সামনে নিয়ে একটা নতুন বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করতে হবে।’

ইফতার অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আরও বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম ফায়েজ, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, সাংবাদিক এম এ আজিজ ও সৈয়দ আবদাল আহমেদ।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষক, ওলামা মাশায়েখ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, কৃষিবিদ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা বিএনপির ইফতারে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকতউল্লা, আবদুস সালাম, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, এ এম আবদুল হালিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আরেকটি এক-এগারো কখনো হতে দেব না: নাহিদ ইসলাম
  • আরেকটি এক-এগারো আনার পরিকল্পনা হচ্ছে: রাশেদ খান
  • শুধুমাত্র বয়সের কারণে মতামত দিতে না পারা যৌক্তিক নয়, বলছে এনসিপি
  • ১৬ বছর বয়সে ভোটার আর ২৩ বছরে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব এনসিপির
  • নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির চ‍্যালেঞ্জ
  • সংকট উত্তরণে দ্রুত নির্বাচন দরকার: মির্জা ফখরুল
  • রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শুরু, এলডিপির সঙ্গে বৈঠক
  • রাষ্ট্র সংস্কারে ১২০টি প্রস্তাবে একমত এলডিপি: কর্নেল অলি
  • রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শুরু আজ