দাম কমাতে তুরস্ক-দ. কোরিয়া থেকে ডিম আমদানি করবে যুক্তরাষ্ট্র
Published: 22nd, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়া নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই হইচই চলছে। আর এবার পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন দেশ থেকে ডিম আমদানির পরিকল্পনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন।
শনিবার (২২ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, ট্রাম্প প্রশাসন তুরস্ক এবং দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ডিম আমদানির পরিকল্পনা করছে এবং আমেরিকান ভোক্তাদের জন্য ডিমের দাম হাতের নাগালে রাখতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
আরো পড়ুন:
ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্র মার্কিন মালিকানায় নেওয়ার প্রস্তাব ট্রাম্পের
ইয়েমেনের হুতিদের ‘সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের’ হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের
দেশটির কৃষিমন্ত্রী ব্রুক রোলিন্স শুক্রবার (২১ মার্চ) হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আমরা স্বল্পমেয়াদে লাখ লাখ ডিম আমদানির কথা বলছি।
বার্ড ফ্লুর বিধ্বংসী প্রাদুর্ভাবের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে এবং সেখানে ডিমের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে সেখানে চাহিদার সঙ্গে যোগানের সামঞ্জস্য রাখা যাচ্ছে না।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় ট্রাম্প প্রশাসন এই খাতে সম্প্রতি ১ বিলিয়ন ডলার অনুদানের ঘোষণার দেওয়ার পর, এবার ডিম আমদানিরও ঘোষণা দিলো।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, গত এক বছরে ডিমের দাম ৬৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে এবং ২০২৫ সালে এটি ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিমন্ত্রী রোলিন্স বলেছেন, তার দপ্তর নতুন সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য অন্যান্য দেশের সঙ্গেও আলোচনা করছে। তবে কোন দেশগুলো তা নির্দিষ্ট করে তিনি বলেননি।
পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়ার পোল্ট্রি সমিতিগুলো বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, ডিম রপ্তানির বিষয়ে মার্কিন দূতাবাসগুলোও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
ফেব্রুয়ারিতে, মার্কিন কৃষি বিভাগ ডিমের দাম মোকাবেলায় ১ বিলিয়ন ডলারের একটি পাঁচ-দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যার বাজেট জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার, ভ্যাকসিন গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার এবং কৃষকদের আর্থিক ত্রাণ কর্মসূচির জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলার।
ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, তারা বাণিজ্যিক ডিম খামারগুলোকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ পরিষেবা দেবে। বার্ড ফ্লুর বিস্তার রোধে দুর্বলতা মোকাবেলায় খরচের ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত সহায়তা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে সেখানে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাবের পর ১৬ কোটি ২০ লাখ মুরগী, টার্কি এবং অন্যান্য পাখি নিধন করা হয়। যার ফলে ডিসেম্বর দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গেছে।
গত বছর ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর চলতি মাসের শুরুতে কংগ্রেসে ট্রাম্প তার প্রথম ভাষণে পূর্বসূরী জো বাইডেনকে ডিমের দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী করেন।
ট্রাম্প বলেন, “বিশেষ করে জো বাইডেন ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে দিয়েছিলেন। আমরা দাম কমাতে কঠোর পরিশ্রম করছি।”
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড ম আমদ ন র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ইতিহাস না জানলে পথের দিশা খুঁজে পাব না
বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পর ইতিহাসের চর্চা ক্রমাগত কমে আসছে উল্লেখ করে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘ইতিহাস যেন বিশেষ দিনে জন্মগ্রহণ করেছে, একটা জাতি যেন বিশেষ মুহূর্তে চলে এল। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে আমরা ইতিহাস জানতে চাইছি না। অথচ ইতিহাস না জানলে ভবিষ্যতে কোন দিকে যাব, সেই পথের দিশা খুঁজে পাব না। ইতিহাস না জানলে আমরা আমাদের পরিচয় জানতে পারব না। বর্তমানকে বুঝতে পারব না।’
শনিবার বিকেলে রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে ‘বাংলাদেশের কালচার ও আমাদের রাজনীতি’ শিরোনামে বুক রিভিউ প্রতিযোগিতা-২০২৫–এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ কথাগুলো বলেন।
আবুল মনসুর আহমদের ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদ। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম এ সংগঠনের সভাপতি। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, মানুষের বাঁচার আকাঙ্ক্ষা রাজনীতি ও লেখার মধ্যে প্রকাশ করেছেন আবুল মনসুর আহমদ। তিনি এমন আধুনিকতার কথা বলেছেন, যে আধুনিকতা ঐতিহ্য ও জনজীবনকে অস্বীকার করবে না। যে আধুনিকতা অল্প কয়েকজন মানুষের হবে না।
অপর আলোচকেরা বলেন, বর্তমান সময়ের সংকট মোকাবিলায় দিকনির্দেশনা হতে পারে আবুল মনসুর আহমদের বই।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৬ সালে পাক-বাংলার কালচার শিরোনামে বইটি লেখেন আবুল মনসুর আহমদ। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বইটির নাম পাল্টে বাংলাদেশের কালচার করেন তিনি। বাংলার সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের ওপর লেখা বইটির ১০টি অধ্যায়ের দুটো অধ্যায় তিনি স্বাধীন দেশে লেখেন।
আবুল মনসুর আহমদ ১৮৯৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা গ্রামে জন্ম নেন। ১৯৭৯ সালের ১৮ মার্চ ঢাকায় মারা যান তিনি। আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, আইনজ্ঞ ও সাংবাদিক। তিনি ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলার কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক কৃষক, নবযুগ ও ইত্তেহাদ–এর সম্পাদক ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের যুক্তফ্রন্ট সরকারে প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। ১৯৫৭ সালে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সরকারে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী। বাংলাদেশের কালচার ছাড়াও তাঁর রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আয়না, আসমানী পর্দা, গালিভারের সফরনামা ও ফুড কনফারেন্স, আত্মকথা, আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ইতিহাস না জানলে আমরা আমাদের পরিচয় জানতে পারব না। বর্তমানকে বুঝতে পারব না। ভবিষ্যতে কোন দিকে যাব, সেই পথের দিশা খুঁজে পাব না। সংস্কৃতিও তেমন গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কৃতির যে মূল কথা ‘স্বাতন্ত্র্য’—তা আবুল মনসুর আহমদ তাঁর লেখায় তুলে এনেছেন। সংস্কৃতি দিয়েই আমাদের লড়তে হবে। আমরা আরও দেখছি, যত আমাদের উন্নতি হচ্ছে, তত আমরা দেশপ্রেম হারাচ্ছি।’
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘রাজনীতি ও সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য করা হচ্ছে। যেটাকে আমরা আধুনিকতা বলি। রাজনীতি ও সংস্কৃতি—দুটো যে অবিভাজ্য এবং দুটোই যে সংস্কৃতির অংশ, সেটা আবুল মনসুর আহমদ জানতেন এবং সেই চর্চা করতেন। তাঁর রচনার মধ্যে তিনি দেখিয়েছেন, জীবনের ক্ষুধা, সেটাই প্রধান ক্ষুধা। মানুষ বাঁচতে চায়। মানুষের বাঁচার আকাঙ্ক্ষা তাঁকে রাজনীতিমুখী ও সাহিত্যমুখী করেছে, তাঁর সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে। মানুষের বাঁচার আকাঙ্ক্ষা তিনি রাজনীতি ও লেখার মধ্যে প্রকাশ করেছেন। তিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন। ধর্মজীবী মানুষদের আচরণ তিনি এত বছর আগে যেভাবে দেখিয়েছেন, আজ আমরা তা দেখাতে পারি না।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক মো. আবুল ফজল বলেন, আবুল মনসুর আহমদ মনে করতেন, ব্যক্তির জীবনে যেমন ব্যক্তিত্ব থাকে, তেমনি একটি জাতির ব্যক্তিত্ব হচ্ছে তার সংস্কৃতি। তাঁর লেখায় আরও একটা দাবি উঠে আসে, বাংলাদেশ যে আলাদা হলো, এটা ইতিহাসে যে বঙ্গ ছিল, সেটার বিভাজন নয়। এটা ইংরেজ আমলের বঙ্গের বিভাজন। বাংলা অঞ্চলের কোনো মুসলাম ও হিন্দুর সঙ্গে অন্য কোনো অঞ্চলের মুসলমান ও হিন্দুর মিল নেই। বর্তমান সময়ের সংকট মোকাবিলায় দিকনির্দেশনা হতে পারে তাঁর বই।
আবুল মনসুর আহমদ বাঙালি মুসলমানের মনকে অসাধারণভাবে বুঝতে পেরেছিলেন উল্লেখ করে সাংবাদিক শুভ কিবরিয়া বলেন, মানুষের ভাবাবেগ বোঝার জন্য এই বই (বাংলাদেশের কালচার) দিক নির্দেশনামূলক হতে পারে।
প্রাবন্ধিক সহুল আহমদ বলেন, আবুল মনসুর আহমদের কাছে সংস্কৃতি ছিল নিজেদের স্বাতন্ত্র্যবোধকে ফুটিয়ে তোলার বড় উপাদান। তিনি মনে করতেন, সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল। সংস্কৃতিতে যা ক্ষতিকর, তা বর্জনীয়।
কবি তুহিন খান বলেন, এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ভাবনা ও স্বাতন্ত্র্যবোধ তাঁর লেখায় উঠে এসেছে। তিনি বলেছেন, এ দেশের মানুষকে ইসলামি মোল্লা ও প্রগতি মোল্লার বিরুদ্ধে লড়তে হয়।
আবুল মনসুর আহমদের চিন্তার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার লক্ষ্যে আয়োজিত ‘আবুল মনসুর আহমদ বুক রিভিউ প্রতিযোগিতা ২০২৫’–এ এবারের বই ছিল বাংলাদেশের কালচার। বই পর্যালোচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী চারজনের নাম ঘোষণা করেন প্রতিযোগিতার বিচারক কাজল রশীদ শাহীন। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন আসিফ মাহমুদ। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ হয়েছেন যথাক্রমে এস এ এইচ ওয়ালীউল্লাহ, জুবায়ের দুখু ও শরাবন তহুরা। পুরস্কার হিসেবে তাঁদের হাতে সনদ ও বই তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আবুল মনসুর আহমদের ছেলে দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। অনুষ্ঠানের শুরুতে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনি ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দ্য ডেইলি স্টার–এর সহসম্পাদক ইমরান মাহফুজ।