দুর্বার এক প্রেমের গল্পে নির্মিত হলো ঈদের বিশেষ নাটক ‘অবুঝ প্রেম’। সিএমভি’র ব্যানারে এটির চিত্রনাট্য ও নির্মাণ করেছেন মুহাম্মদ মিফতাহ্ আনান। আর তাতে প্রেমিক-প্রেমিকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইয়াশ রোহান ও নাজনীন নিহা। আরও অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, জয়নাল জ্যাক প্রমুখ।
ফুয়াদ বিন আলমগীরের সিনেমাটোগ্রাফিতে এই নাটকে দুটি ভিন্ন লুক ও চরিত্রে হাজির হবেন ইয়াশ রোহান ও নাজনীন নিহা। এ প্রসঙ্গে নির্মাতা মিফতাহ্ জানান, ‘‘অবুঝ প্রেম’ নাটকের চ্যালেঞ্জিং অংশ ছিল দুটি। একটি কলেজ জীবনের গেটআপ, অন্যটি কারাগার ও পাগলাগারদের গেটআপ, মেকআপ ও অভিনয়। দুটো চ্যালেঞ্জই শতভাগ উতরে গেছেন ইয়াশ-নিহা। এমনটাই প্রতিক্রিয়া নির্মাতা পক্ষের।’’
আরো পড়ুন:
‘কন্যা’ দিয়ে প্রশংসিত সজল
‘সিয়াম, বুবলীর রসায়ন পুরাই মধু মধু’
‘অবুঝ প্রেম’ নাটকের দৃশ্য
এদিকে গল্পের বিষয়ে একেবারেই মুখ খুলুতে চাইছেন না সংশ্লিষ্ট কেউ। নির্মাতা শুধু এটুকু জানালেন, এটি শতভাগ খাঁটি প্রেমের গল্প। যেখানে প্রেম আছে, পাল্লা দিয়ে থাকছে বিরহও।
তবে এই নাটকের দৃশ্যে দেখা যায় কারাগারে ইয়াশ। কি কারণে কারাগারে ইয়াশ তা জানতে দেখতে হবে ‘অবুঝ প্রেম’ নাটক।
‘অবুঝ প্রেম’ ছাড়াও এবারের ঈদ আয়োজনে সিএমভি’র ব্যানারে মুক্তি পাচ্ছি ২০টি নাটক। প্রযোজক-পরিবেশক এসকে সাহেদ আলী পাপ্পু জানান, চাঁদরাত থেকে বিশেষ নাটকগুলো ধারাবাহিকভাবে উন্মুক্ত হতে থাকবে সিএমভি’র ইউটিউব চ্যানেলে।
ঢাকা/রাহাত/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অব ঝ প র ম
এছাড়াও পড়ুন:
মৃত্যুর চেয়েও কালো এক রাত
গত ১৭ মার্চ দিবাগত রাত ২টারও বেশি। গাজাবাসী তখন ঘুমে আচ্ছন্ন। একটু পরই সাহ্রির জন্য তাদের ওঠার কথা। তাদের ঘুম ভাঙে হানাদার বাহিনীর বিমান হামলা আর মানুষের বীভৎস কান্নার শব্দে। ভোরে যখন মুয়াজ্জিন আজান দিচ্ছিলেন, তখনও তিনি কান্না ধরে রাখতে পারছিলেন না। রাতভর চলা ইসরায়েলি গণহত্যা পুনঃনবায়নের প্রথম রাতেই চার শতাধিক মানুষ নিহত হন। ইসরায়েল ১৭ মার্চ রাতে গাজায় গত ১৭ মাসের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা চালায়। এতে চার শতাধিক মানুষ নিহত হন। এর মধ্যে ১৭৪ জন শিশু, ৮৯ জন নারী এবং ৩২ জন বয়স্ক ব্যক্তি রয়েছেন। এর পরদিন দেইর আল-বালাতে আবুবকর আবেদ বলেন, ‘আমি গোলাবর্ষণ ও বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। এটি থামছে না।’ গাজার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বেইত হানুনের হোসাম শাবাত এক শব্দে পরিস্থিতির উত্তর দিয়েছেন– ‘মৃত্যু’। রাশা আবু জালাল একজন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ও মা। সম্প্রতি সেই ভয়াবহ রাতের বর্ণনা তিনি সংবাদমাধ্যম ড্রপ সাইটের কাছে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমি অলৌকিকভাবে আমার পরিবার নিয়ে গত রাতে বেঁচে গেছি। তারা আমাদের বাড়ির পাশের একটি বাড়িতে বোমা হামলা চালায়। বাড়িটি আমাদের বাড়ির ওপর ধসে পড়ে। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা নিরাপদে ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি, কিন্তু আমাদের পাশের বাড়িতে ১১ জন নিহত হন।’ ড্রপ সাইটের প্রতিবেদন অবলম্বনে লিখেছেন শাহেরীন আরাফাত
গাজা সিটি– ১৮ মার্চ ভোর ৩টায় রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে দেওয়া এক বিশাল বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম থেকে জেগে ওঠি। মুহূর্তের জন্য মনে করলাম, আমি বুঝি মারা গেছি। আমি বালিশ থেকে মাথা তুললাম, তখনও আমার চারপাশে কী ঘটছে, বুঝতে পারিনি। বাতাস ধূসর ধুলায় ভরপুর। হঠাৎ আমার পাঁচ সন্তানের চিৎকার আমার কানে বাজল। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে তখন বেঁচে ছিলাম কিনা বুঝতে পারছিলাম না। আমি তাদের জড়িয়ে ধরতে ছুটে গেলাম।
এরপর আরও বিস্ফোরণ। রাতভর ইসরায়েলের বিমান হামলা বিনা সতর্কতায় নিরন্তর গাজায় আঘাত হেনেছে। আমার ভীতসন্ত্রস্ত ১২ বছর বয়সী মেয়ে সাইদার শরীর ভয়ে কাঁপছিল। সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘মা! আমরা কি মারা যাব?’ আমি উত্তর দিতে পারিনি। আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার স্বামীর সন্ধান করলাম। সে আমার পাশে ঘুমাচ্ছিল; কিন্তু তাকে খুঁজে পেলাম না। কিছুক্ষণ পর, সে ধুলো থেকে বেরিয়ে এলো, পানিতে ভেজা কাপড়ের টুকরো হাতে নিয়ে। আমাকে ও বাচ্চাদের মুখ এবং নাক ঢেকে রাখতে বলল; যাতে আমরা দম বন্ধ করা ধুলা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।
আমি লক্ষ্য করলাম, পাশের ঘরের দেয়াল সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে। এটি ছিল সেই ঘর যেখানে আমরা সাধারণত ঘুমাতাম; কিন্তু কাকতালীয়ভাবে গত রাতে আমার স্বামী ও আমি আমাদের পাঁচ সন্তানকে নিয়ে একটি গরম ঘরে ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নিই। আমি জানতাম না, এতটুকু সিদ্ধান্ত আমাদের জীবন বাঁচাবে।
আমি দ্রুত আমার আবায়া পরলাম, আমার তিন বছর বয়সী মেয়ে মাসাককে কোলে নিলাম এবং আমার স্বামী কোলে নিয়েছে আমাদের পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে হুরকে। অন্য তিন সন্তান– ১২ বছর বয়সী সাইদা, ১০ বছর বয়সী জেইন এবং ৮ বছর বয়সী শাম আমাদের পেছনে ছিল। যখন আমরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌড়ালাম, তখন এটাও জানতাম না, আমরা মৃত্যু থেকে পালাচ্ছি নাকি মৃত্যুর দিকে ছুটছি।
বাইরে আমরা প্রতিবেশী জামাসি পরিবারের বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে দেখলাম। এটি সরাসরি বিমান হামলার শিকার হয়। আমরা হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম, প্যারামেডিক এবং সিভিল ডিফেন্স টিম তাদের ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনছে। তারা বাড়ি থেকে তখন ১১ জনকে উদ্ধার করল। তাদের মধ্যে পাঁচজনই নিহত, তাদের মধ্যে আট বছর বয়সী ছোট্ট মেয়ে সিওয়ারও রয়েছে। সে আগের দিন বাড়ির বাইরে খেলছিল। এখন সে আর নেই।
আমরা সেই এলাকা থেকে পালিয়ে গেলাম, আশপাশের একটি এলাকায় আত্মীয়দের সঙ্গে আশ্রয় নিলাম। আমরা যা কিছু নিতে পারলাম তা নিলাম; কিন্তু আমরা নিরাপত্তার সব অনুভূতি পেছনে ফেলে এসেছি। পালানোর সময় আমার স্বামী বলছিল, ‘যখন আমি বাচ্চাদের চিৎকার শুনলাম, আমি অসহায় বোধ করছিলাম। আমি শুধু তাদের জীবিত বের করে আনার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু আমি তাদের কীসের মধ্যে নিয়ে এসেছি– এমন এক জীবনে যেখানে আমরা এক মৃত্যু থেকে আরেক মৃত্যুর দিকে ছুটছি?’
আমরা এখন একটি ঘরে একসঙ্গে অনেকে ঠাসাঠাসি করে আছি। যদিও আমরা অন্য এলাকায় আছি, ভয় সর্বত্র আমাদের অনুসরণ করে। গাজায় কেউই নিরাপদ বোধ করে না। ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান আকাশে অবিরাম ঘুরছে, নির্মমভাবে বেসামরিক বাড়িগুলোতে বোমাবর্ষণ করছে। অকারণে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে।
আমরা এখনও হতবিহ্বল। মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত। আমার আট বছর বয়সী মেয়েটি আর ঘুমাতে পারছে না। আমি তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি; কিন্তু সে কাঁদতে কাঁদতে জেগে উঠেছে। সে আমাকে বলল, ‘মা, আমি যখনই চোখ বন্ধ করি, আমার মনে হয় আরেকটি বোমা আমাদের ওপর এসে পড়ছে।’ আমি তাকে শান্ত করতে তার পাশে শুয়ে পড়লাম। আজ সকালে আমি আবিষ্কার করলাম যে, সে ভয়ে বিছানা ভিজিয়ে ফেলেছে।
আমার ১২ বছর বয়সী মেয়ে সাইদা আমাকে জিজ্ঞাসা করছে, ‘মা, বিমানগুলো কি আবার আসবে?’ আমি তার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারছি না। আমি তাকে কীভাবে আশ্বস্ত করব– যখন আমি আর বিশ্বাস করি না যে, আমি আগামীকাল জেগে উঠব কিনা?
আমি আমার স্বামীর ক্লান্ত, বিষণ্ন চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এই দুঃস্বপ্ন কখন শেষ হবে?’ সে বলল, ‘আমরা এই পৃথিবীতে একা। কেউ আমাদের খেয়াল করে না।’
আমরা জীবন টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি; কিন্তু গাজায় জীবন আর আগের মতো নেই। আমরা এই বিমান হামলা থেকে বেঁচে গেছি; কিন্তু আমরা কি সত্যিই এই যুদ্ধ থেকে বেঁচে গেছি?