আইপিএল মানেই অর্থের ঝনঝনানি। এই টুর্নামেন্ট খেলতে পারলে খেলোয়াড়দের পকেটে ঢোকে বড় অঙ্কের অর্থ। এবারের আইপিএলে ক্রিকেটারদের আয়ের ক্ষেত্র আরও বাড়ছে। প্রথমবারের মতো আইপিএলে ম্যাচ ফি-ও পেতে যাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। ২০ ওভারের ম্যাচ হিসেবে অঙ্কটা বেশ বড়।

আইপিএলে প্রতিটি ম্যাচের জন্য ফি হিসেবে ক্রিকেটাররা পাবেন সাড়ে সাত লাখ রুপি করে। একজন ক্রিকেটার আইপিএলে কমপক্ষে ১৪টি (লিগ পর্বে ১৪ ম্যাচ) করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেতে পারেন।

প্লে-অফ হয়ে ফাইনালে গেলে ১৭টি। মানে এবার আইপিএলে লিগ পর্বের ১৪ ম্যাচে সুযোগ পাওয়া কোনো ক্রিকেটারের পকেটে ঢুকবে ১ কোটি ৫ লাখ রুপি। ফাইনাল পর্যন্ত সব ম্যাচ খেললে ১ কোটি ২৭ লাখ রুপি। এই টাকা ক্রিকেটাররা পাবেন তাঁদের সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজির চুক্তি মূল্যের বাইরে।

প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ম্যাচ ফির জন্য বরাদ্দ রেখেছে মোট ১২ কোটি ৬০ লাখ রুপি। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর এই অর্থ নিলামের বাজেটের বাইরের। অতিরিক্ত প্রণোদনা হিসেবে প্রতি ম্যাচে ম্যাচ ফি পাবেন মাঠে নামা ১২ জন ক্রিকেটার (ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড়সহ)।

আজ শুরু আইপিএল.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

যেদিন প্রথম চট্টগ্রামে নামানো হয়েছিল ‘জাদুর বাক্স’

দিনটি ছিল মঙ্গলবার। ২২ মার্চ। ১৯৭৭ সাল। সকালের জোয়ারের সময় সাগর থেকে জেটিতে আনা হয় ‘এসএস টেনাসিটি’ জাহাজ। জাহাজটি জেটিতে ভেড়ার সময় বন্দরকর্মীদের ছিল ব্যাপক আগ্রহ। কারণ এই জাহাজে প্রথমবারের মতো আনা হয় ধাতব কনটেইনার, যেটিকে তখন বলা হয়েছিল ‘জাদুর বাক্স’।

প্রথমবার আসা সেই জাহাজে ছয়টি কনটেইনার নামানোর জন্য কোনো যন্ত্র ছিল না। না জাহাজে, না জেটিতে। কীভাবে নামানো হবে সেই কনটেইনার, তা নিয়ে গলদঘর্ম অবস্থা তখনকার বন্দর কর্মকর্তাদের। সে সময় ভরসা হয়ে আসে বন্দরে জেটি পুনর্নির্মাণের কাজে থাকা নির্মাণকাজের একটি ক্রেন। সেই ক্রেন দিয়ে দিনভর কৌশল করে নামানো হলো ছয়টি কনটেইনার।

এত দিন শুধু বাল্ক বা ব্রেক বাল্ক জাহাজের হ্যাচ বা খোলে করে খোলা বা বস্তায় ভরে আনা হতো পণ্য। জাহাজ কিংবা জেটিতে থাকা ছোট ছোট ক্রেন দিয়ে তা নামানো হতো। বন্দরের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রার পর এভাবেই কেটে গেছে ৮৯টি বছর। এখন নতুন করে যোগ হতে যাচ্ছে কনটেইনার।

বন্দরকর্মীদের ভাবনায় ফেলে দেওয়া এই ‘জাদুর বাক্স’টি আবিষ্কার করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তা ম্যালকম ম্যাকলিন (১৯১৩-২০০১)। শুরুতে ছিলেন ট্রাকচালক। পরে ট্রাক কোম্পানির কর্ণধার। ট্রাকে করে এনে জাহাজে পণ্য ওঠানো-নামানোর ঝামেলা, ঝুঁকি ও খরচ কমাতেই ধাতব বাক্সে পণ্য পরিবহনের ধারণার উদ্ভাবন করেছিলেন তিনি।

দিনটি ছিল ১৯৫৬ সালের ২৬ এপ্রিল। সেদিন নিউ জার্সির নিউয়ার্ক বন্দর থেকে ‘এসএস আইডিয়াল এক্স’ ট্যাংকারের ডেকে ৫৮টি কনটেইনার নিয়ে টেক্সাসের হিউস্টেন বন্দরে যাত্রা শুরু হয়। ম্যাকলিন দেখলেন, জাহাজের খোলে করে পরিবহন হলে প্রতি টনে খরচ পড়ত ৫ দশমিক ৮৩ ডলার। কনটেইনারে তা নেমে আসে টনপ্রতি প্রায় ১৬ সেন্টে। কমে এল পণ্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। চুরির শঙ্কাও থাকল না।

ম্যাকলিনের ‘সি ল্যান্ড সার্ভিসেস’ শিপিং কোম্পানি ১০ বছর পর ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কনটেইনারে পণ্য পরিবহন ছড়িয়ে দেয় ইউরোপে। প্রায় ২১ বছরের মাথায় বিশ্বঘুরে তা পৌঁছে যায় বাংলাদেশেও। প্রথমবার কনটেইনার পরিবহন শুরুর পর সে সময় বন্দরের ভাবনাচিন্তা কী ছিল, তা জানা যায় বন্দরের সাবেক কর্মকর্তা হাদী হোসাইনের মুখে। কনটেইনারের যাত্রা শুরুর বছর ১৯৭৭ সালে তিনি বন্দরের পরিকল্পনা বিভাগে যোগদান করেছিলেন। অবসরে যান ২০১২ সালে।

৪৮ বছর আগের কাহিনি স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরে আমি বন্দরে যোগ দেওয়ার আগে টেনাসিটি জাহাজ থেকে ছয় কনটেইনার নামানো হয়েছিল। তখন আসলে পরীক্ষামূলকভাবে কনটেইনার পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছিল। প্রথম যে জাহাজে করে কনটেইনার আনা হয়, সেটি ছিল বাল্ক জাহাজ। কনটেইনার নামানো হয় বাল্ক জাহাজের পণ্য ওঠানো-নামানোর জেটিতে। যন্ত্রপাতিও ছিল না। পরের বছরই মূলত কনটেইনার জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯১ সালে তৈরি হয় প্রথম কনটেইনার জেটি-সিসিটি।’

প্রায় ৬৯ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে লোহা দিয়ে তৈরি এই কনটেইনার পাল্টে দিয়েছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এই যেমন যে দেশে আবিষ্কার হয়েছিল কনটেইনার, সেই যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনের পরিবর্তে সমুদ্রপথে ১০ হাজার নটিক্যাল মাইল দূরে বাংলাদেশ থেকে অন্তর্বাস বানিয়ে নিতেও খরচ কম পড়ছে। বাংলাদেশে কোনো আপেল উৎপাদন না হলেও সুদূর চীন থেকে কনটেইনারে এনে ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। বিমানভাড়ার চেয়ে কমে পৌঁছানো যাচ্ছে আস্ত ১৪ টন পণ্যের এক কনটেইনার পণ্য। বাংলাদেশে রপ্তানির বড় অংশই কনটেইনারে করে বিশ্বের নানা গন্তব্যে নেওয়া হচ্ছে।

৪৮ বছর আগে ছয় কনটেইনার দিয়ে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম বন্দরে এখন বছরে ৩০ লাখের বেশি কনটেইনার পরিবহন হচ্ছে। বিশ্বের সেরা ১০০ বন্দরের তালিকায় রয়েছে এই বন্দরের নাম। গতবার ছিল ৬৭তম অবস্থানে। দেশ হিসেবে কনটেইনার পরিবহনে এই অবস্থান আরও এগিয়ে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাডের হিসাবে তা ৪১তম অবস্থানে।

তবে কনটেইনারের সংখ্যায় বাংলাদেশ যত এগিয়ে যাবে ততবার ফিরিয়ে আনবে ২২ মার্চের কথা। কারণ এদিন পণ্য পরিবহনের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল এ দেশে। তিন-চার দশক আগে পিটার হান্টারের দ্য ম্যাজিক বক্স: অ্যা হিস্ট্ররি অব কনটেইনারাইজেশন কিংবা জন এইচ হোয়াইটের দ্য ম্যাজিক বক্স: জেনেসিস অব দ্য কনটেইনার বই লিখে জানিয়ে দিয়ে গেছেন সত্যিকারের ‘জাদুর বাক্স’ কনটেইনার-ই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথমবার বাংলাদেশে গাইবেন পাকিস্তানের আইমা
  • যেদিন প্রথম চট্টগ্রামে নামানো হয়েছিল ‘জাদুর বাক্স’
  • ‘মুজিব’ সিনেমায় অভিনয় নিয়ে প্রথমবার মুখ খুললেন ফারিয়া
  • নতুন পরিচয়ে আসছেন সিয়াম-হিমি
  • ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র
  • বড় স্বপ্ন, হামজা জয়গানে বাংলাদেশের শিলং যাত্রা