রমজানে নবীজির (সা.) ‘সমাধান মজলিস’
Published: 22nd, March 2025 GMT
রমজানের নবীজির (সা.) অন্যতম আমল ছিল দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন সমস্যার শরয়ি সমাধান বিষয়ক আসর বসানো। এ-সময় তিনি সাহাবিদের প্রশ্নের জবাব দিতেন এবং পাপ ঘটে যাওয়ার পরও তওবা করে তার কাছে সমাধানের জন্য এসেছে, তাকে তিনি ভর্ৎসনা করেননি।
আবু হোরাইরা (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি রমজানে স্ত্রী-সঙ্গ গ্রহণ করেছে। সে রাসুল(সা.
একটি হাদিসে আয়েশা (রা.) রমজানে রাসুলের (সা.) কাছে আসা এমনই এক ব্যক্তির কথা বলেন। রাসুল (সা.) বললেন, তুমি সদকা কর। সাহাবি বললেন, আল্লাহর নবী, আল্লাহর শপথ, আমার কিছু নেই, আমি কিছুর মালিক নই। তিনি বললেন, তুমি বসো। সে বসে পড়ল। ইত্যবসরে এক লোক গাধার পিঠে খাবার বোঝাই করে উপস্থিত হলো। রাসুল (সা.) বললেন, কিছুক্ষণ পূর্বের আসা লোকটি কোথায়? লোকটি এসে দাঁড়ালে রাসুল (সা.) বললেন, তুমি এগুলো দিয়ে সদকা করো। লোকটি বলল, আল্লাহর রাসুল(সা.), আমি ছাড়া অন্য কাউকে দেব? আল্লাহর শপথ, আমরা ক্ষুধার্ত, আমাদের কিছুই নেই। রাসুল (সা.) বললেন, তবে তোমরাই সেগুলো খাও। (বুখারি, হাদিস: ১,৯৩৫; মুসলিম, হাদিস: ১,১১২)
আরও পড়ুন যেমন ছিল মহানবীর (সা.) সাহরি১১ মার্চ ২০২৫এভাবে বিভিন্ন পদ্ধতিতে তিনি সকলের সমাধান হাজির করতেন, কখনো রসিকতা করতেন, ঠাট্টাচ্ছলে তাদের সংশয় দূর করতেন। আদি বিন হাতেম (রা.)-এর বর্ণিত এক হাদিসে আমরা এর উত্তম উদাহরণ পাই। তিনি বলেন, ‘যখন কোরআনের এ আয়াত নাজিল হলো, ‘যতক্ষণ না সাদা সুতা কালো সুতা থেকে পৃথক হবে’ আমি একটি সাদা এবং একটি কালো সুতো নিলাম, (রাতে) বালিশের নীচে রেখে দিলাম। কিছুক্ষণ পর সেগুলোর দিকে তাকালাম, কিন্তু অন্ধকারে স্পষ্ট কোনো পার্থক্য দেখতে পেলাম না। বিষয়টি রাসুল (সা.) জানালে তিনি হেসে ফেললেন। বললেন, তবে তো তোমার বালিশ খুব লম্বা-চওড়া। কোরআনের এ-আয়াতের মর্ম হচ্ছে রাত ও দিন। (বুখারি, হাদিস: ১,৮১৭; আবু দাউদ, হাদিস: ২,৩৪৯)
ভিন্নভাবেও রাসুল (সা.) সাহাবিদের রমজান ও রোজা বিষয়ে সমাধান দিয়েছেন। ওমর বিন আবি সালামা (রা.) রাসুল (সা.) কে প্রশ্ন করেন, রোজাদার কি চুমু করতে পারবে? রাসুল (সা.) তাকে বললেন, তুমি উম্মে সালামাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো। উম্মে সালামা (রা.) তাকে জানালেন, হ্যাঁ, এটুকু করা যাবে। (মুসলিম, হাদিস: ১,১০৮)
আরও পড়ুনমহানবীর (সা.) হাঁটা-চলার ধরন০৮ আগস্ট ২০২৪ওপরের হাদিসগুলি একদিকে যেমন রমজানে রাসুলের(সা.) শরয়ি সমাধানমূলক আলোচনার প্রমাণ দেয়, একই সঙ্গে তার সমাধান-পদ্ধতিও আমাদের শিক্ষা দেয়। মজলিশে যারা প্রশ্ন করে এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান জানতে চায়, তাদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করা উচিত। প্রশ্নকারীর সঙ্গে বন্ধু ভাব বজায় রাখা, ব্যক্তির দিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে যাওয়া, মনোযোগ সহকারে তার বক্তব্য শোনা, উত্তর প্রদানে সহনশীল হওয়া এবং হাসিমুখে কথা বলার মাধ্যমে মানুষের হৃদয় জয় করা যায়। এমন আচরণের ফলে যে-কোনো ব্যক্তি তার প্রয়োজনের সময় রাসুলের (সা.) আসতে দ্বিধা করতেন না।
আরও পড়ুনযেমন ছিল মহানবীর (সা.) ইফতার১০ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের দিনক্ষণ, মাস সামনে আনতে হবে: আমীর খসরু
নতুন বাংলাদেশ গড়তে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, নির্বাচনের দিনক্ষণ, মাস সামনে আনতে হবে। যারা দ্বিতীয় পন্থার খোঁজে আছে, তারা দেশের মানুষের ত্যাগের বিরুদ্ধে কাজ করছে।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ১৬ বছর আন্দোলন করেছি বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার মূল বাহক হচ্ছে নির্বাচন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যাওয়ার জন্য মূল বাহক হচ্ছে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার, একটি সংসদ। এই পরিবর্তন করার জন্য আর দ্বিতীয় কোনো পন্থা নেই।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে আরেকটি শক্তি অন্যভাবে নির্বাচনপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। শেখ হাসিনা একভাবে বাধাগ্রস্ত করেছেন, এরা কিন্তু অন্যভাবে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের নির্বাচন না হতে পারলে মনে হয় তারা খুব খুশি।’
বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি নেতা–কর্মীদের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠামাত্র বহিষ্কার করা হচ্ছে। পরে তদন্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুই হাজারের কাছাকাছি নেতা–কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা পত্রিকা বা যেকোনোভাবে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। পরে অপরাধের সঙ্গে জড়িত না বলে প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের দলে ফেরানো হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি যারা অপরাধে জড়িত, তারা যে দলেরই হোক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। এ ক্ষেত্রে দল–মত বিবেচনা করার দরকার নেই। আমরা নিজেরা সরকারে থাকলেও এটাই করতাম।’
আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে বিএনপি সহযোগিতা করছে, এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে প্রশ্নের উত্তরে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির জনপ্রিয়তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য একটি পক্ষ অপপ্রচার করছে। যারা প্রচার করছে তাদের কোনো আদর্শ নেই। তারা নতুন নতুন বয়ান বাজারে ছড়াচ্ছে। বিএনপি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের দ্বারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দল। বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের প্রতিটি স্তরের নেতা–কর্মী জেল-জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমি নিজেও কারাগারে গেছি একাধিকবার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমার পরিবারও। সুতরাং আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো প্রতিহিংসা কিংবা প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। তবে আমরা চাই শেখ হাসিনাসহ যাঁরা অপরাধে জড়িত তাঁদের বিচার হোক। অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি অতি দ্রুত দৃশ্যমান বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার জন্য। বিএনপি বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী না।’
নগর বিএনপির সভাপতি এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র শাহাদাত হোসেন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাজিমুর রহমান, সাবেক সদস্যসচিব আবুল হাশেম, যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াসিন চৌধুরী, এম এ আজিজ প্রমুখ।