অতিরিক্ত বেতন পাবেন না বুচ-সুনীতা, ট্রাম্প বললেন ‘আমিই দেব’
Published: 22nd, March 2025 GMT
নাসার মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর প্রায় ৯ মাস মহাকাশে কাটিয়ে এই সপ্তাহে পৃথিবীতে ফিরেছেন। তাদের আট দিনের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) মিশন ২৭৮ দিন বাড়লেও অতিরিক্ত কোনো বেতন তারা পাচ্ছেন না। তবে এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যতিক্রমী মন্তব্য করেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘এই ব্যাপারটা আমার কাছে কেউ আনেনি। যদি প্রয়োজন হয়, আমি নিজেই নিজের পকেট থেকে টাকা দেব’। খবর: এনডিটিভি
নাসার মহাকাশচারীরা ফেডারেল কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন, তাই তাদের বেতন অন্যান্য সরকারি কর্মচারীদের মতোই নির্ধারিত থাকে। সাধারণত, তারা ওভারটাইম, সাপ্তাহিক ছুটি বা ছুটির দিনে কাজের জন্য অতিরিক্ত অর্থ পান না। মহাকাশে যাওয়াও তাদের সরকারি দায়িত্বের অংশ হিসেবে গণ্য হয়।
নাসা তাদের যাতায়াত, থাকার খরচ এবং খাবারসহ সমস্ত প্রয়োজনীয়তা সরবরাহ করে। এছাড়া, ছোটখাটো ব্যক্তিগত খরচের জন্য দৈনিক ৫ ডলার করে ‘ইনসিডেন্টালস’ দেওয়া হয়। সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর মহাকাশে মোট ২৮৬ দিন কাটিয়েছেন, যার জন্য তারা প্রত্যেকে ১,৪৩০ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১,২২,৯৮০ টাকা) পাবেন।
এ বিষয়ে জানার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘শুধু এতটুকুই? তারা যা সহ্য করেছে, তার জন্য এটা যথেষ্ট নয়’।
ওভাল অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পেসএক্সের সিইও এলন মাস্ককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এলন না থাকলে তারা আরও অনেকদিন মহাকাশে আটকে থাকতে পারতেন। ৯-১০ মাস মহাকাশে থাকলে শরীরের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। এলন মাস্ক এখন কঠিন সময় পার করছেন, কিন্তু তার অবদান অসামান্য’।
গত বুধবার স্পেসএক্সের ড্রাগন ক্যাপসুলে চড়ে সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর ফ্লোরিডার পূর্ব উপকূলে অবতরণ করেন। ক্যাপসুল থেকে স্ট্রেচারে করে তাদের বের করা হয়, যা দীর্ঘ মহাকাশযাত্রার পরে স্বাভাবিক বিষয়।
মহাকাশচারীদের ফিরে আসার দৃশ্য সারা বিশ্বে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। পরিবার এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাদের ফিরে আসাকে আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করেন।
পৃথিবীতে ফিরে এলেও সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কিছুটা সময় লাগবে। তাদের এখন মাসব্যাপী পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যাতে পেশিশক্তি এবং হাড়ের ঘনত্ব পুনরুদ্ধার করা যায়। এর মধ্যে থাকবে বিশেষ শারীরিক ব্যায়াম ও চলাফেরার প্রশিক্ষণ।
মহাকাশে ৯ মাস কাটিয়ে ফিরে আসা এই দুই মহাকাশচারী শুধু তাদের পরিবার নয়, সারা বিশ্বের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব চ উইলম র র জন য উইল য
এছাড়াও পড়ুন:
শূন্য থেকে পৃথিবীর স্বস্তিতে সুনিতারা
মহাকাশে গিয়েছিলেন আট দিনের মিশনে। কিন্তু থাকতে হয়ে ৯ মাস। জানতেন না, কখন ফিরবেন। নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটিয়ে অবশেষে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন নাসার দুই মহাকাশচারী বুচ উইলমোর, সুনিতা উইলিয়ামসসহ চারজন। গতকাল বুধবার ভোর ৩টা ৫৭ মিনিটে তাদের বহনকারী ক্যাপসুলটি বিশেষ প্যারাসুটের সাহায্যে ফ্লোরিডা উপকূল থেকে ৫০ মাইল দূরে সমুদ্রে নেমে আসে।
পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের দৃশ্যটি বিভিন্ন টেলিভিশন ও সামাজিক মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, স্পেসএক্সের তৈরি ক্যাপসুলটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অতি দ্রুতগতিতে প্রবেশ করছে। ক্রমেই এটি এগিয়ে আসছে। এক পর্যায়ে দুটি প্যারাসুট খুলে দিলে গতি কমতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পর আরও দুটি প্যারাসুট খুলে যায় এবং গতি অনেকটাই কমে যায়। এর পরই পানিতে পড়ে ভাসতে থাকে এটি। তখন ক্যাপসুলটি ঘিরে ধরে একঝাঁক ডলফিন। পরে নৌকা ও জাহাজ থেকে উদ্ধারকারী দল এটি পানি থেকে তুলে আনে।
পৃথিবীতে তাদের ফেরানোর নাসার এ অভিযানের নাম ছিল ‘ক্রু-৯’। যে মহাকাশযানে তাদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে সেটি তৈরি করেছে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। আইএসএসের অবস্থান পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০৯ কিলোমিটার ওপরে। প্রায় ২৫ বছর ধরে মহাকাশচারীরা সেখানে যাতায়াত করছেন। রয়েছে ফুটবল মাঠের সমান আকৃতির গবেষণাগার, যা পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া।
দুই মার্কিনি সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর ছাড়াও আরও দু’জন ক্রু ছিলেন। তারা হলেন– নিক হেগ ও রুশ নাগরিক আলেকজান্ডার গরবানভ। ক্যাপসুলের হ্যাচ খুলে বেরিয়ে আসার সময় নভোচারীদের খোশ মেজাজে দেখা গেছে। সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর দর্শনার্থীদের উদ্দেশে হাত নাড়েন। নাসার কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপক স্টিভ স্টিচ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ক্রুয়ের সদস্যরা দারুণ কাজ করছেন।
বিবিসি জানায়, আট দিনের জন্য গেলেও আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা আইএসএসে গিয়ে আটকে যান সুনিতারা। তাদের মহাকাশযানটিতে একাধিক প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দেয়। নাসার স্পেস অপারেশনস মিশন ডিরেক্টরেটের ডেপুটি অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জোয়েল মন্টালবানো বলেন, তাদের ফিরিয়ে আনতে পেরে দারুণ লাগছে। ল্যান্ডিংটি অসাধারণ ছিল।
মহাকাশচারীদের পৃথিবীতে ফেরার যাত্রায় সময় লেগেছে ১৭ ঘণ্টা। তাদের স্ট্রেচারে করে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়। মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে দীর্ঘ সময় কাটানোর পর এটাই নিয়ম। ব্রিটেনের প্রথম নভোচারী হেলেন সারম্যান জানান, সবচেয়ে বড় বিষয় হবে, অভিযান থেকে ফেরার পর পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে যখন তারা দেখা করবেন।
বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামসের সফরের গল্পটি শুরু হয় ২০২৪ সালের জুনে। বোয়িংয়ের তৈরি স্টারলাইনার স্পেসক্রাফ্টের প্রথম মনুষ্যবাহী টেস্ট ফ্লাইট বা পরীক্ষামূলক উড়ানে অংশ নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু তারা যে ক্যাপসুলে মহাকাশ যাত্রা করেন, সেটি একাধিক প্রযুক্তিগত সমস্যার মুখোমুখি হয়। এ অবস্থায় তাদের ফেরানো ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। স্টারলাইনার গত সেপ্টেম্বরে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসে।
আইএসএসের পরিবেশ মাধ্যাকর্ষণহীন। তবে সেখানে বেঁচে থাকার জন্য পৃথিবীর খাবার মজুত রয়েছে। আটকে যাওয়া সুনিতা ও বুচ আইএসএসে ল্যাবরেটরিতে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনা করেন। তারা স্পেসওয়াকও করেছেন। নিউইয়র্ক পোস্ট জানায়, আইএসএসে আটকে থাকা নাসার নভোচারী বুচ ও সুনিতা পিৎজা, রোস্ট মুরগির মাংস ও চিংড়ির ককটেল খেয়েছেন। সেখানে তারা নাশতায় গুঁড়া দুধ, পিৎজা, টুনা ফিশ খাওয়ার সুযোগ পেতেন।
মহাকাশে দীর্ঘমেয়াদি অভিযান মানুষের শরীরের ওপর বিভিন্ন রকমের প্রভাব ফেলে। এ পরিস্থিতিতে নভোচারীদের হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। তাদের শরীরের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেহে রক্ত সঞ্চালনও প্রভাবিত হয়। দৃষ্টিশক্তিও কমে যেতে পারে। এ জন্য পৃথিবীতে ফেরার পর তাদের চিকিৎসা সহায়তা আবশ্যক হয়ে পড়ে। পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে কিছুদিন সময় লাগে। যুক্তরাজ্যের নভোচারী টিম পিক জানান, (মহাকাশে) আপনার শরীর দারুণ অনুভব করে। অনেকটা ছুটি কাটানোর মতো। (সেখানে) আপনার হার্ট একটি সহজ সময় কাটায়। পেশি এবং হাড়ও সহজ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায়। আপনি এ বিস্ময়কর শূন্য মাধ্যাকর্ষণ পরিবেশে স্পেস স্টেশনের চারপাশে ভেসে বেড়াতে থাকেন।
মহাকাশে থাকাকালে বুচ ও সুনিতা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সময় কাটানোর জন্য তারা ভালোভাবেই প্রস্তুত। তবে এমন অনেক কিছুই ছিল, যা করার জন্য উদগ্রীব ছিলেন। সেসব কিছুর কথা ভেবেই ঘরে ফেরার দিকে তাকিয়ে ছিলেন তারা। গত মাসে সিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুনিতা বলেন, ‘আমার পরিবার, পোষা কুকুরদের সঙ্গে দেখা করার জন্য এবং সমুদ্রে ঝাঁপ দেওয়ার অপেক্ষায় আছি। পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারলে, পৃথিবীকে অনুভব করতে পারলে– সত্যিই দারুণ লাগবে।