লিওনেল মেসি ও লাওতারো মার্তিনেজ না থাকায় আক্রমণভাগের ধার তো কমার কথাই, পুরো দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাসও কমে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। এমনই প্রেক্ষাপটে আজ উরুগুয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে নেমে ১–০ গোলে জিতেছে আর্জেন্টিনা। মন্টেভিডিওর ম্যাচটিতে আর্জেন্টিনার একাদশে থাকা খেলোয়াড়েরা কে কেমন করেছেন, সেটিই দেখে নিতে পারেন এখানে। রেটিং দিয়েছে গোলডটকম।এমিলিয়ানো মার্তিনেজ (৬/১০)

মোটে দুটি সেভ, এর মধ্যে প্রথমার্ধে উরুগুয়ের এক ডিফেন্ডারের বিপজ্জনক আক্রমণ সামলাতে হয়েছে। এর বেশি আর তেমন কিছু করতে হয়নি। ম্যাচে মোট ২৫ বার সতীর্থদের বল বাড়িয়ে ১৯ বারই সফল হয়েছেন।

নাহুয়েল মলিনা (৫/১০)

উরুগুয়ে বেশ কয়বার মলিনার পাহারায় থাকা অঞ্চল দিয়ে হানা দিতে পেরেছে। মুখোমুখি লড়াইয়ে হিমশিম খেয়েছেন এই রাইটব্যাক। ৩৩টি পাসের মধ্যে সফল ২৫টিতে। রক্ষণের বাইরে মলিনা দুবার গোলের সুযোগ তৈরি করতে পেরেছেন।

ক্রিস্টিয়ান রোমেরো (৬/১০)

খুব বেশি কিছু করতে হয়নি। শুধু বল এ জায়গায় থেকে ও জায়গায় নড়িয়েছেন। বড় চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়নি, প্রতিপক্ষকেও জায়গা দেননি।

নিকোলাস ওতামেন্দি (৬/১০)

দারউইন নুনিয়েজকে সামলানোর চ্যালেঞ্জ ছিল। ভালোই করেছেন। আটবার পায়ে, দুবার হেডে বল বিপদমুক্ত করেছেন। তিনবার বল উদ্ধারও করেছেন।

নিকোলাস তালিয়াফিকো (৭/১০)

বাঁ পাশে বেশ ভালোভাবে চাপ তৈরি করতে পেরেছেন। কয়েকবার বল উদ্ধারও করেছেন। হেডেই বল ক্লিয়ার করেছেন চারবার। ম্যাচের একমাত্র গোলের ক্ষেত্র প্রস্তুতেও জড়িত ছিলেন। পাসিংয়েও সাফল্য ৮৮ শতাংশ (২৬–এ ২৩)।

লিয়ান্দ্রো পারেদেস (৮/১০)

মাঝমাঠের কেন্দ্রে খুব ভালো করেছেন। ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ৯টি ডুয়েল জিতেছেন, চাপের মধ্যে বলে ডিস্ট্রিবিউশনও ছিল চমৎকার। ফাউলের শিকার হয়েছেন চারবার, আবার তিনটির মধ্যে দুটি ট্যাকলও জিতেছেন।

আলেক্সিস ম্যাক আলিস্টার (৭/১০)

শুরুতে বেশ স্বচ্ছন্দ ছিলেন, পরে লড়াই করতে হয়েছে। কয়েকবারই উরুগুয়ের মাঝমাঠের বাধা ডিঙিয়ে ভেতরে ঢুকেছেন। গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন দুবার।

এনজো ফার্নান্দেজ (৫/১০)

৪৯টি পাসের ১১টিই লক্ষ্যে থাকেনি। ঠিকঠাক বলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। তিনটি শটের মধ্যে লক্ষ্যে রাখতে পেরেছেন একটি।

গিলিয়ানো সিমিওনে (৫/১০)

ফিনিশিংয়ে খুব একটা ভালো করতে পারেননি। গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেননি। দুটি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখতে পেরেছেন একটি।

হুলিয়ান আলভারেজ (৫/১০)

খেলেছেন নাম্বার নাইন হিসেবে। তবে স্ট্রাইকারের ভূমিকায় হিমশিম খেয়েছেন। অবশ্য ম্যাচের একমাত্র গোলের অ্যাসিস্ট তাঁরই। সুযোগ তৈরি করেছেন মোট ৪টি।

থিয়াগো আলমাদা (৮/১০)

প্রথমার্ধেই ভালো কিছু টাচ ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত এক গোল করেছেন, যেটিতে জিতেছে দলও। মোট ৩৬টি পাসের ৩৪টি সঠিক জায়গায় পৌঁছেছে। তিনটি শটের মধ্যে লক্ষ্যে ছিল দুটি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ভায়াবহ শিল্পদূষণ, সুতাং নদীর পানি-মাছে মিলছে মাইক্রোপ্লাস্টিক

হবিগঞ্জে ভয়াবহ শিল্পদূষণে সুতাং নদীর পানি ও মাছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়া নদীর পানির ভৌত-রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সুতাং নদীর পানি ও মাছের উপর একটি গবেষণা পরিচালনা করছেন। প্রায় এক দশক ধরে শিল্পদূষণের শিকার এই নদীর দূষণের মাত্রা নির্ধারণের জন্য গবেষকরা নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে পানি, মাছ ও পলির নমুনা সংগ্রহ করছেন।

গবেষণা প্রকল্পের প্রধান এবং পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. শাকির আহম্মেদ বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়েছি যে, পানি ও মাছের নমুনায় মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে। বর্তমানে ভারী ধাতুর উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য আরও পরীক্ষা চলছে।”

গবেষক দলের সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক ইফতেখার আহমেদ ফাগুন বলেন, “পরীক্ষাগার বিশ্লেষণে ইতোমধ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, পানি ও মাছের নমুনায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি রয়েছে। এছাড়াও, শিল্পদূষণের ফলে নদীর পানির ভৌত-রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলে নদীর নিম্নপ্রবাহে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে।”

প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, নদীতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা অত্যন্ত কম, যা স্বাদুপানির মাছের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক নিচে। এছাড়া, গবেষকরা অক্সিডেশন-রিডাকশন পোটেনশিয়াল-এর এমন একটি মান পেয়েছেন, যা নদীতে হ্রাসকারক অবস্থা নির্দেশ করে। নদীর পানির পরিবাহিতা এবং মোট দ্রবীভূত কঠিন পদার্থের মাত্রাও স্বাদুপানির বাস্তুতন্ত্রের উপযুক্ত সীমার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি পাওয়া গেছে।

নমুনা সংগ্রহের সময় গবেষকরা দেখতে পান যে, নদীর নিম্নপ্রবাহে মাছের সংখ্যা অত্যন্ত কম। বিশেষ করে শৈলজোড়া খালের সংযোগস্থলের আশপাশের এলাকাটি সবচেয়ে উদ্বেগজনক ছিল, যেখানে শিল্পবর্জ্য নদীতে প্রবাহিত হয়। এই অঞ্চলে কোনো মাছ বা জলজ প্রাণি পাওয়া যায়নি।

খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তোফাজ্জল সোহেল বলেন, “কৃষিজমি, প্রাকৃতিক গ্যাস ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজলভ্যতার জন্য এই অঞ্চলে দ্রুত বিস্তৃতি লাভ করেছে বৃহৎ ও মাঝারি কলকারখানার। কারখানাগুলো অপরিশোধিত বর্জ্য নিক্ষেপ করে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটিয়ে আসছে। যত্রতত্র কৃষিজমি, খাল, ছড়াসহ সকল প্রকার জীবন জীবীকা দূষণের শিকার হয়েছে।” 

তিনি আরো বলেন, “কৃষিজমি ধ্বংস, ফসলের ক্ষতি, নিরাপদ পানির অভাবসহ ক্রমাগত দূষণের কারণে চরম পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে সুতাং পাড়ের মানুষের মাঝে।”

তিনি বলেন, “২০১৫ সালের শুরুতে কৃষিকাজে সেচ ব্যবস্থার নামে শৈলজুড়া নামক খালটি পুনঃখনন করে কয়েকটি কারখানার সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়। ফলে কোম্পানি-গুলোর অপরিশোধিত বর্জ্য সহজে খালের মাধ্যমে সুতাং নদীতে ছাড়া হচ্ছে। সুদূর মেঘনা পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে এই দূষণ।”

সম্প্রতি নদীর দূষণ এলাকার ১২টি স্থানে ৩০ বারের অধিক ঝাঁকি জাল ফেলে ৩টি ছোট পুঁটি মাছ, একটি ছোট টাকি মাছ ও একটি খলসে মাছ পাওয়া যায়। 

এলাকাবাসীর অভিযোগ- মাছ, ব্যাঙসহ নদীর পানিতে কোন জলজ প্রাণি নেই। শামুক, ঝিনুক পর্যন্ত মরে গেছে। নদীর দূষণ এলাকায় প্রাণের অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে।

তোফাজ্জল সোহেল আরো বলেন, “দেশের সবথেকে ভয়াবহ দূষণের নদী হিসেবে সুতাং নদী পরিচিতি পেয়েছে। মাটি, পানি, বাতাসের ভয়াবহ দূষণের কারণে নদীপাড়ের জীবন জীবিকা চরম দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও দুর্গন্ধের ভেতর দিয়ে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে গ্রামবাসী। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা পরিবেশ বিমুখ এই শিল্পায়ন উন্নয়ন নয়, বরং এই অঞ্চলে ধ্বংস ডেকে এনেছে। চলমান দূষণ প্রক্রিয়া দ্রুত বন্ধ না করলে পরিবেশ ও জনসাস্থ্য মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে।”

ঢাকা/মামুন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ