এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টাকার নতুন নোট বাজারে আসবে না। এটা পুরোনো খবর। কিন্তু বাচ্চাদের ঈদ সালামি বা ঈদি কি পুরোনো নোটেই দিতে হবে? সাধারণত ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৫০ টাকার নতুন নোটেই ঈদের সালামি বেশি দেন সবাই। ছেলে-মেয়ে, ভাগনে-ভাগনি, ভাতিজি-ভাতিজাসহ প্রিয়জনদের নতুন নোট দিয়ে ঈদের সালামি দেওয়া বছরের পর বছর অনেকটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।

বাজারে এখন ১০ টাকা, ২০ টাকা ও ৫০ টাকার নোটের অবস্থা বেশ খারাপ। ময়লা ও ছেঁড়াফাটা নোটই বেশি। নতুন নোট না থাকায় এবার সালামি দিতে এসব পুরোনো নোট ব্যবহার করতে হবে। পুরোনো নোটে বাচ্চাদের কতটা খুশি করা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ঈদ আনন্দে ভাটা পড়বে না তো?

আবদুল্লাহ আল মামুন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। প্রতিবছর তাঁর ছেলে অনুভব ও ভাইয়ের সন্তানদের ঈদ সালামি দিতে নতুন টাকা সংগ্রহ করেন। কিন্তু গত চার-পাঁচ দিনে উত্তরার একাধিক ব্যাংক শাখায় গিয়ে সংগ্রহ করতে পারেননি। কারণ, ব্যাংকের শাখায় নতুন টাকার নোট নেই। ৫০০ টাকা ও ১ হাজার টাকার নোট আছে শুধু। আবদুল্লাহ আল মামুন চিন্তায় আছেন, কীভাবে বাচ্চাদের বোঝাবেন যে এবার ঈদ সালামিতে নতুন টাকা নেই। পুরোনো টাকাই ভরসা।

ঈদের সালামি পেতে বাচ্চাদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ থাকে। কতটা আগ্রহ আছে, এর একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। আর্থিক খাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এ হক ভূঁইয়া। ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে মালদ্বীপ বেড়াতে যাবেন। কিন্তু তাঁর আট বছরের ছেলে মালদ্বীপ বেড়াতে যেতে আগ্রহী নয়। কারণ, সে তাঁর বাবাকে জানিয়েছে, ঈদের সময় বেড়াতে গেলে তাঁর নতুন টাকার ঈদ সালামি ‘মিস’ হয়ে যাবে। এ নিয়ে তাদের পরিবারে হাসি–মশকরা চলছে।

যে কারণে টাকার নতুন নোট নেই

প্রতিবছর ঈদের সময় ১৫–২০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নোট বাজারে ছাড়া হয় প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ায়। বাজার থেকে সমপরিমাণ পুরোনো নোট তুলে নেওয়া হয়।

১০ মার্চ নতুন নোট বিতরণ স্থগিত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জনসাধারণের মধ্যে নতুন নোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রাখার পাশাপাশি ব্যাংকের শাখায় যে নতুন নোট গচ্ছিত রয়েছে, তা বিনিময় না করে সংশ্লিষ্ট শাখায় সংরক্ষণ করার জন্য বলা হলো। চিঠিতে পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট দ্বারা সব নগদ লেনদেন কার্যক্রম সম্পাদনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, টাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় কয়েকটি পক্ষ থেকে আপত্তি থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ নির্দেশ দিয়েছে। এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, ঈদ উপলক্ষে ১৯ মার্চ থেকে ৫, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোট দেওয়া হবে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যাংকে টাকার নতুন নোট বিতরণ নেই। কোনো কোনো শাখায় ৫০০ টাকা ও ১ হাজার টাকার নতুন নোট মিলছে। ঈদের সালামি হিসেবে ৫০০ টাকা ও ১ হাজার টাকা খুব বেশি জনপ্রিয় নয়।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের তেজগাঁও শাখার ব্যবস্থাপকের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি জানান, তাঁর ব্যাংকের শাখায় গড়ে ২০০ কোটি টাকার মতো আমানত থাকে। প্রতিবছর ঈদের সময় এ শাখায় ৩০-৪০ লাখ টাকার নতুন নোট পাওয়া যায়। ব্যাংকের আমানতের অনুপাত অনুসারে নতুন নোটের সরবরাহ করা হয়। এবার নতুন নোট বিতরণ স্থগিত থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে প্রতিদিন গ্রাহকেরা নতুন নোটের জন্য আসেন। কিন্তু দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

পুরোনো নোটের বাজারে দাম বেশি

এবারের ঈদে নতুন নোট না আসার খবর চাউর হওয়ার পর থেকেই মতিঝিল ও গুলিস্তানের এই নতুন টাকার বাজার চড়া। ২, ৫, ১০, ২০ টাকাসহ সব ধরনের নতুন নোট কিনলে আগের চেয়ে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এবারের ঈদে নতুন নোট বাজারে না ছাড়ার সিদ্ধান্তে এমন প্রভাব পড়েছে।

প্রতি বান্ডিলে গতবারের ঈদের মৌসুমের চেয়ে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ১০ ও ২০ টাকার নতুন নোটের চাহিদাই বেশি।

১০ টাকার এক বান্ডিল নতুন নোট বিক্রির জন্য ১ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা হাঁকছেন। এক বান্ডিলে ১০০টি নোট থাকে এবং এর মূল্যমান ১ হাজার টাকা। দর-কষাকষি করে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে একেকটি বান্ডিল ক্রেতারা কিনছেন। গত বছর পবিত্র রোজার সময় এমন এক বান্ডিল নতুন নোট বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকায়। অর্থাৎ নতুন নোটের বান্ডিলপ্রতি ক্রেতাদের বাড়তি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে, যা গত বছর পবিত্র রোজার সময় ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। একইভাবে ২০ টাকার এক বান্ডিলেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি ৪৫০ টাকার কমবেশি।

নতুন নোট আসবে আগামী মাসে

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নতুন নকশার নোট বাজারে আসবে আগামী এপ্রিল-মে মাসে। টাকার নকশা থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি বাদ দেওয়া হচ্ছে। নতুন নোটের নকশায় স্থান পাবে জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতিসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট ক র নত ন ন ট র নত ন ন ট ব এক ব ন ড ল র ঈদ স ল ম ঈদ র স ল ম নত ন ন ট র নত ন ট ক ৫০০ ট ক ২০ ট ক র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুরে বিএনপির দু’পক্ষের দ্বন্দ্বে সাড়ে তিনশ বছরের মেলা বন্ধ

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির দু’পক্ষের দ্বন্দ্বে বন্ধ হয়ে গেল সাড়ে তিনশ বছরের ঐতিহ্যবাহী কাটাগড় দেওয়ান শাগির শাহর মেলা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় প্রশাসন মেলার অনুমতি দেয়নি।

প্রতি বছর ২৬ মার্চ আধ্যাত্মিক সাধক দেওয়ান শাগির শাহর তিরোধান দিবসে উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড় গ্রামে এ মেলা হয়ে থাকে। এর আগের দিন থেকে শুরু হয়ে সপ্তাহব্যাপী চলে এই মেলা। মেলার প্রধান আকর্ষণ সাজ-বাতাসা, কদমা, বালিশ রসগোল্লা, বাঁশের তৈরি জালি, ডালা, তালপাতার হাত পাখা, বেতের তৈরি ধামাসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র। এখানে কসমেটিক, খেলনা ও বিভিন্ন আসবাবপত্রের কয়েক হাজার দোকান বসে। থাকে নাগরদোলা, যাদু প্রদর্শনী, মোটরসাইকেল খেলা, পুতুল নাচ। মেলায় কয়েক কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। মেলা উপলক্ষে এলাকার ১০-১২ গ্রামে শুরু হয় আনন্দ উৎসব।

স্থানীয়দের দাবি, কয়েকশ’ বছরের মধ্যে কোন কারণেই মেলাটি বন্ধ হয়নি। এমনকি ১৯৭১ সাল এবং করোনা মহামারিতেও স্বল্প পরিসরে মেলাটি চালু ছিল। দীর্ঘ দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউল আজম বাবু মিয়া কমিটির সভাপতি হয়ে মেলা পরিচালনা করেছেন। পট পরিবর্তনের কারণে তারা দৃশ্যপটের বাইরে চলে গেছেন। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ১৫ মার্চ স্থানীয় বিএনপির দু’টি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষ থানায় দু’টি মামলা করে। দুই পক্ষ মেলা পরিচালনার জন্য দুটি কমিটি জমা দেয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় প্রশাসন মেলার অনুমতি না দিয়ে বন্ধ করে দেয়। মেলার এক সপ্তাহ আগেই বিভিন্ন পণ্যের দোকান নিয়ে দোকানিরা চলে আসেন মেলা চত্বরে। এ বছর অনেকে দোকানপাট নিয়ে এসেও ফিরে গেছেন। 

এলাকাবাসী ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দেওয়ান শাগির শাহ’র ৩৫১তম বার্ষিক ওরস উপলক্ষে গ্রামীণ মেলাটি আগামী ২৫ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত অনুমোদনের জন্য রূপাপাত ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আক্কাচ মন্টু ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনিচুর রহমান টিটু ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর গত ৫ মার্চ আবেদন করেন। অপরদিকে ১৬ মার্চ সাতদিনের অনুমোদনের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন কাটাগড় দেওয়ান শাগির শা’র মাজারের খাদেম ইরাদত ফকির।
 
এক পক্ষের মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজাদ মোল্যা বলেন, সাড়ে তিনশ’ বছর ধরে এ মেলা হচ্ছে। এ বছর স্থানীয়দের মধ্যে কোন্দলের কারণে দুই পক্ষ মেলার কমিটি বানিয়ে অনুমতির জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন। মেলা কমিটি নিয়ে দুই পক্ষে মারামারি হয়। মারামারির ঘটনায় মামলাও হয়। অনেকেই জেলে আছে। অনেকে  হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রশাসন জানিয়েছিল, যদি দুই পক্ষ মিলেমিশে মেলা করতে পারেন তাহলে অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু দুই পক্ষ এক হওয়ার কোন সুযোগ নেই, তাই এ বছর মেলা বন্ধ থাকবে।
 
বোয়ালমারী থানার ওসি মাহামুদুল হাসান বলেন, মেলা নিয়ে স্থানীয় দুটি পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। দুই পক্ষের মামলা আছে। অনেকে আহত আছে। মেলার আগেই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে মেলার সময় বা পরে আরও খারাপ অবস্থা হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে এই আশঙ্কায় মেলার অনুমোদন না দেওয়ার জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
 
বোয়ালমারীর ইউএনও তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, স্থানীয় দুটি পক্ষের হানাহানির কারণে নেতিবাচক প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় পক্ষগুলোই চায় না মেলা হোক। তাই তারা কি করতে পারেন বলে আক্ষেপ করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফরিদপুরে বিএনপির দু’পক্ষের দ্বন্দ্বে সাড়ে তিনশ বছরের মেলা বন্ধ
  • ঈদে নৌপথে যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সরকারের কঠোর হুঁশিয়ারি
  • ওয়ালটনের মিলিয়নিয়ার অফার উপলক্ষে নাটোরে শোভাযাত্রা
  • ঈদ উপলক্ষে ২০০ মেগাপিক্সেলের নতুন স্মার্টফোন আনল শাওমি
  • সিদ্ধিরগঞ্জে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ইফতার মাহফিল
  • টানা ৯দিন বন্ধ থাকবে হিলি বন্দরে আমদানি-রপ্তানি
  • ঈদযাত্রার ৩০ মার্চের ট্রেনের টিকিট মিলবে আজ
  • সভা থেকে বের হয়ে আটক ইউপি চেয়ারম্যান
  • শেকৃবিতে ১২০০ শিক্ষার্থীকে কোরআন দিল শিবির