চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় জায়গাজমির বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম সুবীর চক্রবর্তী। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের ফকিরখীলের উত্তরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত সুবীর চক্রবর্তী উপজেলার পুরানগড়ের ফকিরখীলের উত্তরপাড়া এলাকার মৃত অরুণ চক্রবর্তীর ছেলে। তিনি পুরানগড় ইউনিয়নের শীলঘাটা এলাকায় দরজির দোকান করতেন। একই ঘটনায় নিহত সুবীরের বড় ভাই প্রবীর চক্রবর্তীও আহত হয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, সুবীর চক্রবর্তীদের সঙ্গে রূপক দাশ নামে এক প্রতিবেশীর জায়গাজমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। রাতে সুবীর চক্রবর্তী ও তাঁর বড় ভাই প্রবীর চক্রবর্তী মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে ফিরছিলেন। তাঁরা বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালে প্রতিপক্ষের লোকজন মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে তাঁদের ওপর হামলা করেন। একপর্যায়ে ছুরিকাঘাতে সুবীর চক্রবর্তী নিহত হন এবং আহত হন তাঁর বড় ভাই প্রবীর চক্রবর্তী।

আহত প্রবীর চক্রবর্তী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি পুরানগড়ের শীলঘাটা এলাকায় পল্লিচিকিৎসক হিসেবে কাজ করি। আমার ছোট ভাই সুবীর পাশের দোকানে দরজির কাজ করত। প্রতিদিনের মতো শুক্রবার রাতেও আমরা দোকান বন্ধ করে বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালে রূপক দাশসহ তাঁর সঙ্গে থাকা ১০-১২ জন আমাদের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। পরে তাদের হামলা ও ছুরিকাঘাতে সুবীর নিহত হয়।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে রূপক দাশের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পুরানগড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই প্রতিবেশীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জায়গাজমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। ওই বিরোধ নিয়ে বেশ কয়েকবার সালিসি বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। ওই বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে সুবীর চক্রবর্তী নিহত হয়েছেন।’

সাতকানিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো.

খায়রুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। ঘটনার পরপর হামলাকারীরা পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অয়ন ওসমান ও বাদলের সহযোগী জিসান গ্রেপ্তার হলেও অধরা সহযোগীরা 

সিদ্ধিরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা ও হত্যা চেষ্টা মামলায় পলাতক সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমানের পালিত সন্ত্রাসী এবং ৭ খুন মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী নুর হোসেনের ভাতিজা সাবেক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের অপকর্মের অন্যতম সহযোগী নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নাসিক ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার আহমেদ জিসান গ্রেপ্তার হওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।


গত শুক্রবার (২১ মার্চ) দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা ও হত্যা চেষ্টা মামলায় তাকে আদালতে প্রেরণ করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। তবে, জিসান গ্রেপ্তার হলেও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা রয়েছে ধরাছোয়ার বাইরে।

এরআগে গত বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুম বিল্লাহ সঙ্গীয় ফোর্স গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রূপঞ্জের তিনশ ফুট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃত তুষার আহমেদ জিসান সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৩ নং ওয়ার্ডের সানারপাড় লন্ডন মার্কেট এলাকার বরিশাইল্লা মজিবুর রহমানের ছেলে। 

স্থাণীয় সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা তুষার আহমেদ জিসান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমান এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও নাসিক ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের অন্যতম সহযোগী এবং পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। 

অয়ন ওসমান ও কাউন্সিলর বাদলের শেল্টারে নাসিক ৩ নং ওয়ার্ড এলাকায় গত ১৭ বছরে জিসান, তার বাবা বরিশাইল্লা মজিবর, তার মা বিউটি বেগম, খালাত ভাই ইয়াছিন ও ইসলাম ওরফে হাজীসহ একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী, দখলবাজী, মাদক ব্যবসাসহ নানান অপরাধ মূলক কর্মকান্ড চালিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে দমনে শামীম ওসমান, অয়ন ওসমান, শাহ নিজাম ও বাদলের নির্দেশে জিসানসহ এলাকার কিছু সন্ত্রাসী অগ্রনি ভুমিকা পালন করে। সে সময় আন্দোলন চলাকালে সানারপাড় এলাকায় ছাত্র-জনতাসহ কয়েকজন নিহত হয় এবং পঙ্গুত্ব বরণ করেন অনেকে।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, ২০১৮ সালের নিশিরাতের ভোট কারচুপিতে সানারপাড় কেন্দ্রে বাদল, অয়ন ওসমান ও শাহনিজামের নির্দেশনায় জিসান, তার বাবা মজিবর, তার মা বিউটি, তার খালাত ভাই ইয়াছিন জড়িত রয়েছে। তারা আওয়ামী আমলে স্থানীয় এবং জাতীয়  নির্বাচনে ভোটারদের ভয়-ভীতির মাধ্যমে জাল ভোটে সহায়তা করে।

এছাড়াও জিসানের খালাত ভাই ইয়াসিন ও ইসলাম ওরফে হাজীর সাথে জিসান মাদক ব্যবসায় জড়িত। তাদের বাড়িতেই ছিল ফেনসিডিলের স্পট। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামদ মামলা রয়েছে। 

এছাড়াও জিসান এবং তার বাবা বরিশাইল্লা মজিবর সিকোট্যাক্স গার্মেন্টসে দুধ ব্যবসা ও শ্রমিক নিয়োগে প্রতি শ্রমিক থেকে ১০০০ করে টাকা নিত। 

সোনামিয়া মার্কেট থেকে মনু মিয়া মার্কেট পর্যন্ত রাস্তায় ভ্যান গাড়ি থেকে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে চাঁদা তুলত। ৩নং ওয়ার্ডের লিথি গার্মেন্টস, সিকোটেক্স গার্মেন্টস এবং আল আমিন গার্মেন্টসে জুট ব্যবসা ও প্রতি শ্রমিক থেকে ১০ হাজার টাকা করে নিয়ে নতুন শ্রমিক নিয়োগ দিত জিসান। 

অয়ন ওসমানের নির্দেশে ডিশ-ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ সহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজী করত এই জিসান। বাদলের আরেক সহযোগী ভুমিদস্যু শাহজাহান সাজুর পালিত সন্ত্রাসী হয়েও সাধারণ মানুষের ক্ষতি সাধন করত জিসান।

এলাকাবাসী বহু অপকর্মের হোতা জিসান গ্রেপ্তার হলেও তার দোসরদের গ্রেপ্তার করতে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহীনির কাছে আহ্বান জানিয়েছেন ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ