ঘুমানোর আগে রিলস দেখা কতটা ক্ষতিকর?
Published: 22nd, March 2025 GMT
সামাজিক মাধ্যমে বড় ভিডিও দেখার চেয়ে এখন অনেকেই ছোট ছোট রিলস দেখে বিনোদন খোঁজেন। কারও কারও ক্ষেত্রে রিলস দেখা রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সারাদিন তো বটেই,অনেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিলস দেখেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুমোনোর আগে টানা রিলস দেখা শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের উপরই নয়, প্রভাব ফেলে শারীরিক স্বাস্থ্যের উপরও। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে ঘুমানোর আগে একটানা রিলস দেখলে হাইপারটেনশনের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়। যেমন-
হাইপারটেনশনের ঝুঁকি
সম্প্রতি চীনের এক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বয়সের ৪ হাজার ৩১৮ জনের উপর একটি গবেষণা করা হয়। ঘুমোতে যাওয়ার আগে রিলস্ দেখার সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের কোনও সম্পর্ক আছে কি না-তা জানাই ছিল এই গবেষণার লক্ষ্য। ওই গবেষণায় রিলস দেখার সঙ্গে হাইপারটেনশনের ঝুঁকির যোগসূত্র খুঁজে পান গবেষকরা। বিশেষ করে তরুণ এবং মধ্যবয়সীদের মধ্যে এই ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
মানসিক চাপ
গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত রিলস দেখা মনের উপর চাপ ফেলে। পাশাপাশি এর প্রভাবে চিন্তার অভ্যাস কমে যাওয়া, সৃজনশীল চর্চার পরিধি এবং স্থায়ীত্বেরও ব্যাঘাত ঘটে চলেছে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে রিলস দেখার পরিণাম আরও ভয়াবহ।
রিলস দেখার ফলাফল
যেকোন ধরনের স্ক্রিনের দিকে একটানা তাকিয়ে থাকা কারও জন্যই ভালো নয়। এর ফলে শরীর যেটুকু নড়াচড়া করে, সে সবের কোনও অবকাশই থাকে না। ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিলস দেখলে শরীর আড়ষ্ট হয়ে পড়ে। ফলে রক্ত চলাচলও স্তিমিত হয়ে পড়ে। এর ফলে শরীরে হাইপারটেনশনের মতো সমস্যা দানা বাঁধে। আবার এই ভাবে দীর্ঘক্ষণ রিলস দেখার সময় শরীরের সিম্পেথেটিক নার্ভাস সিস্টেম আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে ভিডিও দেখার সময় হৃৎস্পন্দন তুলনামূলক বেড়ে যায়। নিয়মিত একই কাজ করলে এর প্রভাব হতে পারে ভয়াবহ।
প্রতিকার
প্রতিকার হিসেবে গবেষকদের পরামর্শ, যতই রিলস দেখুন না কেন, তাতে আসক্ত হওয়া যাবে না। ঘুমাতে যাওয়ার আগে স্ক্রিন টাইম ঠিক করে নিন। প্রয়োজনে স্মার্ট ফোন দূরে রেখে ঘুমাতে যান। এতে ঘুম ভালো হবে, আবার শরীরও পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঘ ম র সমস য র লস দ খ র
এছাড়াও পড়ুন:
ঠাকুরগাঁওয়ে কালবৈশাখীর তাণ্ডব, ফসল ক্ষতিগ্রস্ত
ঠাকুরগাঁওয়ে কালবৈশাখীর ঝড়ের তাণ্ডব ও শিলাবৃষ্টিতে বাড়িঘর এবং ৬৫ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) রাত ৩টার দিকে কালবৈশাখীর ঝড় জেলায় আঘাত হানে। ঘণ্টাব্যাপী প্রবল বাতাস ও শিলাবৃষ্টিতে বাড়িঘরে তেমন ক্ষতি না হলেও ফসলের ক্ষেত লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠ সরেজমিন দেখা যায়, এই ঝড়ে বিশেষ করে ভুট্টা, পেঁয়াজ বীজ, আম, লিচু, পেঁপে, কলা, মরিচ, বিভিন্ন ধরনের সবজি ক্ষতি হয়েছে।
আরো পড়ুন:
‘সয়াল্যান্ডে’ ৪০০ কোটি টাকার ফলনের আশা
হবিগঞ্জের পাহাড়ে সজনের ফলনে চাষিরা লাভবান
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে, ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচটি উপজেলা মিলে ৪৬ হাজার হেক্টর ভুট্টা, ৫৪৭ হেক্টর পেঁয়াজ বীজ, সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে আম ও লিচু চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সদর উপজেলা আকচা মুন্সীপাড়া গ্রামের কৃষক মো. রবিউল ইসলাম। এক বছর আগে ১০ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছিলেন। সব কিছু মিলিয়ে তার জমিতে গাছ ছিল ৪ হাজার। রাতে কালবৈশাখীর আঘাতে বাগানের প্রায় সব গাছ ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। বিশেষ করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ভুট্টা ও মরিচ ক্ষেত ভেঙে মাটিতে লুটিয়ে গেছে। আম ও লিচুর গুটি ঝরে পড়েছে। এমন অবস্থা কৃষকরা উদ্বিগ্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষক মো. রবিউল ইসলাম জানান, তার পেঁপের বাগানে ৪ হাজার গাছ ছিল। প্রতিটি গাছে বাঁশের খুঁটি দেওয়া থাকা সত্ত্বেও ঝড়ে বাগানের সাড়ে তিন হাজার গাছ ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। তার আশা ছিল, বাগান থেকে আরও ১০-১২ লাখ টাকা আয় করার কিন্তু সেই আশা ও স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।
বেলাল হোসেন বলেন, রাত ৩টা দিকে প্রচণ্ড ঝড় ও বাতাসসহ শিলাবৃষ্টিতে অনেকের বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে। তার থেকেও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আম, লিচু থেকে শুরু করে ভুট্টার অনেক ক্ষতি হয়েছে।
মশিউর রহমান নামে আম ও লিচু চাষি বলেন, রাতে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে আম ও লিচু ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অকল্পনীয়।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম জানান, বৃষ্টি ফসলের জন্য উপকারী হলেও ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে আর ৫-৬ দিন গেলে পেঁয়াজ বীজ কৃষকরা মাঠ থেকে তুলতে পারতেন বা বীজগুলো পরিপক্ক হতো। কিন্তু এমন সময় ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ গাছ ভেঙে পড়ে গেছে। এমন অবস্থা হয়েছে পেঁপে ও ভুট্টার ক্ষেত্রের। যদিও ভেঙে পড়া ভুট্টার গাছগুলো কৃষকেরা কর্তন করে গোখাদ্য হিসেবে বিক্রি করতে পারবে।
তিনি আরো জানান, ঝড়ে বিভিন্ন ফসলের ৬৫ হেক্টর জমি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোন ফসল কত পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের ক্ষতিটা এবং কীভাবে কমানো যায়, সেই বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হবে।
ঢাকা/হিমেল/বকুল