খুলনা নগরের শান্তিধাম মোড়ে অবস্থিত ‘পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্র’ ক্লাব দখলমুক্ত করার সময় সংঘর্ষের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ নেতার নামে মামলা হয়েছে। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৫০-৬০ জনকে। গতকাল শুক্রবার রাতে সদর থানায় মামলাটি করেন গণ অধিকার পরিষদ খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রাশেদুল ইসলাম।

মামলার আসামিরা হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটির সদস্যসচিব সাজিদুল ইসলাম, মহানগরের যুগ্ম সদস্যসচিব নাজমুল হোসেন, মহররম মাহীম, শেখ রাফসান জানি ও রুমি রহমান।

গত ২৭ জানুয়ারি দখল করা ওই ভবনে ব্যানার লাগিয়ে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করত গণ অধিকার পরিষদ। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভবনটি দখলমুক্ত করে ‘ছাত্র-জনতা’। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার দাবি করা হয়।

মামলার বাদী শেখ রাশিদুল ইসলাম বলেন, দল থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও পরে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ভবনটি ব্যবহারের অনুমতি পেতে গণপূর্ত অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা বিনা উসকানিতে হামলা চালিয়ে দলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে মেরে রক্তাক্ত করেছেন। ন্যায়বিচার পেতে তিনি আইনের আশ্রয় নিয়েছেন।

মামলা হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার সানওয়ার হুসাইন। তিনি বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর ক্লাবটি পুলিশি হেফাজতে আছে। আহত একজন মামলা করেছেন। পুলিশ মামলাটি নিয়ে তদন্ত করছে।

শান্তিধাম মোড়ে অবস্থিত ‘পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্র’ ক্লাবটির কার্যক্রম যে ভবনে পরিচালনা করা হতো, সেটি মূলত গণপূর্তের একটি দ্বিতল ভবন। ভবনের দ্বিতীয় তলায় ক্লাবের কার্যক্রম চলত। নিচতলায় ছিল আরও কিছু কার্যালয়। ২০১০ সালের দিকে গণপূর্ত বিভাগ থেকে নিজেদের নামে বরাদ্দ নিয়ে আসে ‘পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্র’। এরপর ১৪ বছর ধরে সেখানে ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্রের কর্মকর্তারা। ২৭ জানুয়ারি দুপুরের দিকে গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা তালা ভেঙে সেখানে প্রবেশ করে তা দখলে নেন। সেদিনই পঞ্চবীথি ক্রীড়াচক্রের সাইনবোর্ড খুলে ফেলে সেখানে ‘গণ অধিকার পরিষদ, খুলনা মহানগর ও জেলা কার্যালয়’ লেখা একটি ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয়।

ক্লাব ভবন দখল করে নিজেদের কার্যালয় করার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই দিন রাতেই গণ অধিকার পরিষদের খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রাশেদুল ইসলামকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। তারপরও রাশেদুল কার্যালয়টি দখলে রেখে সেখানে দলীয় কার্যক্রম চালাতেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

পাবলিক লাইব্রেরি ভবনে কমিউনিটি সেন্টার

পাবলিক লাইব্রেরির জন্য নির্মাণ করা হয় ভবন। তবে পাবলিক লাইব্রেরি না করে করা হয়েছে কমিউনিটি সেন্টার। জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন-নিবেদন করেও ভবনটিতে পাবলিক লাইব্রেরি করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
শিবপুর উপজেলা সদর কলেজ গেট এলাকায় পাবলিক লাইব্রেরির জন্য ভবনটি নির্মাণ করা হয়। ২০০৬ সালের ২৪ মার্চ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। একই বছর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে নরসিংদী জেলা পরিষদের বাস্তবায়নে মেসার্স রহমান কনস্ট্রাকশন। অথচ দীর্ঘ ১৮ বছরেও পাবলিক লাইব্রেরিটি চালু করতে পারেনি নরসিংদী জেলা পরিষদ।
পাবলিক লাইব্রেরি চালু করতে না পারলেও চালু করেছে কমিউনিটি সেন্টার। ভবনটি নির্মাণের ৫ বছর পর থেকে কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। পাবলিক লাইব্রেরি চালুর দাবিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য, ইউএনও, জেলা পরিষদে আবেদন করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভবনের মূল ফটকের ভেতর থেকে তালা লাগানো। ভবনের সামনের সিঁড়িতে বসা নাঈম নামে একজন বলেন, ভেতরে কাইয়ুম নামে কেয়ারটেকার আছে। ডাক দিলে বের হয়ে আসবে। কাইয়ুম ভাই বলে কয়েকটি ডাক দেওয়ার পর ভেতর থেকে বের হয়ে আসেন তিনি। গেট না খুলে পরিচয় জানতে চান। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর তালা খুলে ভেতরে নিয়ে যান এবং পুরো ভবন ঘুরে দেখান।
দেখা গেছে, ভবনটির বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা উঠে যাচ্ছে। ভবনের এক কক্ষে ভাঙাচোরা আসবাব পড়ে রয়েছে। নরসিংদী জেলা পরিষদের নিয়োগ করা কাইয়ুম মিয়া কেয়ারটেকার হিসেবে ভবনের একটি কক্ষে থাকেন ও ভবন দেখাশোনা করেন। ভবনের সামনে রয়েছে একটি নোংরা ডোবা। সেখান থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।
কেয়ারটেকার কাইয়ুম মিয়া জানান, ভবনের কেয়ারটেকার হিসেবে তিন বছর ধরে এখানে থাকেন তিনি। ভবনটি কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। কমিনিউনিটি সেন্টার হিসেবে তেমন ভাড়াও হয় না। মাসেও হয় না।
শিবপুর উপজেলা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি নূরুল ইসলাম নূরচানের ভাষ্য, মননশীলতার কেন্দ্র এভাবে বন্ধ থাকতে পারে না। নির্মাণের পর লাইব্রেরি চালু না করায় এলাকার তরুণ সমাজ অধঃপতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দ্রুত লাইব্রেরি চালুর দাবি তাঁর।
উপজেলা গীতিনাট্য সংসদ সভাপতি কাদির কিবরিয়া বলেন, শিবপুরে মননশীল চর্চার কোনো জায়গা নেই। মননশীল ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার জন্য নির্মিত পাবলিক লাইব্রেরিটি চালু করতে দাবি জানালেও অদৃশ্য কারণে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
শিবপুর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি নূর উদ্দিন মো. আলমগীর জানান, একটি পাবলিক লাইব্রেরি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে বন্ধ থাকবে যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এত টাকা খরচ করে যে উদ্দেশ্যে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে আজ সেই উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হচ্ছে। এখানে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে। এটি দুর্নীতির একটি অংশ।
শিবপুরের ইউএনও মোছা. ফারজানা ইয়াসমিনের ভাষ্য, পাবলিক লাইব্রেরির জন্য নির্মিত ভবনটি সংস্কার করতে হবে। এ জন্য জেলা পরিষদের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। 
নরসিংদী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আ. ওহাব রাশেদ জানান, লাইব্রেরিটিকে একটি মালটিপারপাস অর্থাৎ লাইব্রেরি থেকে আরও উন্নত করার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত চালু করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খসে পড়ছে ছাদ-পলেস্তারা সেবা নিতে দাঁড়াতেও ভয়
  • পাবলিক লাইব্রেরি ভবনে কমিউনিটি সেন্টার