২০০৮ সালের ৮ মে আব্বা মারা গেলেন। আমার দুনিয়াটা একেবারে অন্য রকম হয়ে গেল। পরিবারের সঙ্গে গাজীপুর ছেড়ে কুমিল্লার গ্রামের বাড়িতে চলে গেলাম।

গাজীপুরের কালীগঞ্জে একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলেন আব্বা। পরিবারসহ সেখানেই থাকতাম। আমরা ছয় ভাইবোন আর আম্মা-আব্বা মিলে সুখের সংসার। কোনো অভাব ছিল না। যখন যা চাইতাম, সব আবদারই মেটাতেন আব্বা। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী—সবার মধ্যমণি ছিলাম আমরা।

আব্বার মৃত্যুর পর সবকিছু বদলে গেল। বড় আপু তখন একাদশ শ্রেণিতে পড়ে, বড় ভাইটা নবম, আমি অষ্টম, ছোট ভাই পঞ্চম আর মেজ বোন প্রথম শ্রেণি। আর সবার ছোট বোনের তখনো স্কুলে ভর্তির সময় হয়নি। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী মানুষটাকে হারিয়ে আমার গৃহিণী আম্মা পড়ে গেলেন গভীর চিন্তায়।

তারপরও আম্মা সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁর সব সন্তানকে পড়াশোনা করাবেন। তাঁর দৃঢ়তা দেখে বিভিন্নভাবে সহায়তা করতে এগিয়ে এলেন আব্বার শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ঢাকার তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন আব্বার তেমনই একজন শুভাকাঙ্ক্ষী। তাঁর মাধ্যমে আমার ঠিকানা হলো তা’মীরুল মিল্লাত এতিমখানায়।

আব্বার মাদ্রাসায় একটা এতিমখানা ছিল। তিনি নিজেই দেখভাল করতেন। এতিমখানার ছাত্রদের কখনো আলাদা চোখে দেখিনি। ছোটবেলায় আমার খেলার সাথি ছিল তারা। আমি নিজেই এখন এতিমখানার ছাত্র। এটা মেনে নিতে পারছিলাম না। প্রতি কোরবানির ঈদে ছাত্রদের দিয়ে এতিমখানার জন্য পশুর চামড়া সংগ্রহ করানো হয়। সবাই হাসিমুখেই কাজটা করে। কিন্তু প্রথমবার আমার জন্য এটা সবচেয়ে কঠিন কাজ হয়ে গেল।

তাহসিন আহমেদ.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ঢালাইকার থেকে প্রথম মানুষ হিসেবে যেভাবে মহাকাশে পা রাখলেন গ্যাগারিন

দিনটি ছিল ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল। কাজাখস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়ন পরিচালিত মহাকাশ বন্দর বাইকোনুর কসমোড্রমে শীতের চাদর ভেদ করে ভোরের আলো ফুটতেই শুরু হয়েছে প্রকৌশলীদের দৌড়ঝাঁপ। প্রতিটি যন্ত্র, প্রতিটি সংযোগ—দ্বিগুণ সতর্কতায় পরীক্ষা চলছে। লঞ্চপ্যাডে (যে স্থান থেকে রকেট উৎক্ষেপণ হয়) তখন উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। এর মধ্যে সেখানে অপেক্ষমাণ ভস্তক–১ রকেটের ককপিটে গিয়ে বসলেন এক তরুণ। গায়ে চাপানো কমলা রঙের স্পেস স্যুট আর চোখে বিস্ময়ের ঝিলিক।

সেই ঐতিহাসিক সকালে ২৭ বছর বয়সী ওই তরুণকে নিয়ে ছোট্ট মহাকাশ যানটি ছুটে গেল অসীম অজানার উদ্দেশ্যে। সামনে সীমাহীন অনিশ্চয়তা। আর কখনো চেনা ডেরায় ফিরতে পারবেন কি না, জানা নেই। যে গন্তব্যের উদ্দেশে ছুটে চলেছেন সেখানে পৌঁছাতে পারবেন কি না, তার ঠিক নেই। যাত্রাপথে উনিশ-বিশ হলে নেই বেঁচে ফেরার একরত্তি সম্ভাবনা। এরপরও এক অদম্য নেশায় পাড়ি দিলেন পৃথিবী নামক গ্রহের চৌহদ্দি। আর ফিরলেন ইতিহাসের খোলনলচে বদলে দিয়ে। মহাকাশে যাওয়া প্রথম ব্যক্তি হিসেবে পা রাখলেন পৃথিবীর বুকে।  

ইউরি গাগারিনের ছেলেবেলা কেটেছে সোভিয়েত রাশিয়ার স্মোলেনস্কক অঞ্চলের ক্লুশিনো গ্রামে, জন্মও সেখানেই। বাবা-মা দুজনই ছিলেন কৃষক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁদের পরিবার নাৎসিদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। যুদ্ধের প্রভাব সংসারে এসে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব সংসারের হাল ধরার তাড়না অনুভত করেন তিনি। ১৯৪৯ সালে বয়স যখন ১৫, ঠিক করলেন মাধ্যমিক স্কুলের পড়া ছেড়ে দিয়ে কাজে নেমে পড়বেন।

বলছি বিখ্যাত সোভিয়েত মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিনের কথা। কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া গ্যাগারিন কৈশোরে ছিলেন ঢালাইকার। আকাশে ওড়ার অদম্য নেশা তাঁকে ঢালাই কারখানা থেকে নিয়ে গেছে উড়োজাহাজের ককপিট পর্যন্ত। সময়ের আবর্তে সেই স্বপ্ন আকাশ ছাড়িয়ে ছুঁয়েছে মহাকাশের গণ্ডি। ইউরি গ্যাগারিনের দুঃসাহসী অভিযান খুলে দিয়েছে মহাকাশ গবেষণা নিয়ে অপার সম্ভাবনার দুয়ার।
প্রথম মানব হিসেবে এই তরুণের মহাকাশে পা রাখার ঘটনা সে সময় বিশ্বের বুকে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বিশ্বদরবারে রাতারাতি তারকা বনে যান ইউরি গ্যাগারিন। তাঁকে দেওয়া হয় জাতীয় বীরের খেতাব। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেতর-বাহির থেকে তাঁর ঝুলিতে যোগ হতে থাকে একের পর এক পুরস্কার-সম্মাননা।

সংসারের হাল ধরতে ঢালাইকারের চাকরি

ইউরি গ্যাগারিনের ছেলেবেলা কেটেছে সোভিয়েত রাশিয়ার স্মোলেনস্কক অঞ্চলের ক্লুশিনো গ্রামে, জন্মও সেখানেই। বাবা-মা দুজনই ছিলেন কৃষক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁদের পরিবার নাৎসিদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। যুদ্ধের প্রভাব সংসারে এসে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব সংসারের হাল ধরার তাড়না অনুভব করেন তিনি।

১৯৪৯ সালে বয়স যখন ১৫, ঠিক করলেন মাধ্যমিক স্কুলের পড়া ছেড়ে দিয়ে কাজে নেমে পড়বেন। বাবা-মা ছাড়তে না চাইলেও সিদ্ধান্তে অনড়, চলে গেলেন মস্কোয় চাচার কাছে। তাঁর পরামর্শে মস্কোর উপকণ্ঠে ল্যুবের্তস্কি শহরের কৃষিযন্ত্র বৃত্তি বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন। তরুণ শ্রমিকদের সন্ধ্যাকালীন বিদ্যালয়ে তার ভবিষ্যৎ পেশা নির্ধারিত হলো ঢালাই কলঘরের ঢালাইকার।  

—‘পৃথিবী দেখছি’ শিরোনামে নিজের লেখা বইয়ে ইউরি গ্যাগারিন বলেছেন, ‘পেশাটা সহজ নয়। তাতে শুধু জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নয়, রীতিমতো দৈহিক শক্তিও দরকার।’
আকাশে ওড়ার নেশা

মহাকাশে সফর অভিযানের পর বিশ্বদরবারে রাতারাতি তারকা বনে যান ইউরি গাগারিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ